Published on Jun 28, 2024 Updated 0 Hours ago

ইইউ-‌এর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কৌশলের সাম্প্রতিক আধুনিকীকরণের লক্ষ্য একটি ভূ-রাজনৈতিক ও সেইসঙ্গে একটি ভূ-অর্থনৈতিক ব্লক হিসাবে অবস্থান করা

ইইউ-এর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কৌশল আধুনিকীকরণ: একটি নতুন যুগের প্রস্তুতি?

জানুয়ারির শেষের দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কৌশলের একটি আপডেট বা আধুনিকীকরণ জারি করেছে। এটি ২৭-সদস্যের ব্লকের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য পাঁচটি নতুন উদ্যোগের রূপরেখা দিয়েছে। আপডেটটি ২০ জুন ২০২৩-এ ইইউ দ্বারা প্রকাশিত মূল ইউরোপীয় অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কৌশলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

ইউরোপীয় অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কৌশলের সূচনা

কোভিড-১৯ অতিমারির ফলস্বরূপ সারা বিশ্বের অর্থনীতিগুলি সরবরাহ-শৃঙ্খল ধাক্কার ফলে এলোমেলো হয় পড়েছে, বিশেষ করে রেয়ার আর্থ ধাতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে। এইভাবে, বাণিজ্য সম্পর্কের একটি মৌলিক ত্রুটি সামনে এসেছে: চিনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা। এটি বিশেষ করে ইইউ-এর ক্ষেত্রে সত্য, যার চিনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য ছিল, এবং উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতি সহ এখনও রয়ে গেছে। তার উপরে ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার উপর ইউরোপীয়দের বড় ধরনের শক্তি-‌নির্ভরতাও ইইউ-এর একটি বিশেষ দুর্বলতা তুলে ধরে। এছাড়াও, সর্বদা পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিগত পরিসরটি ব্রাসেলসের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের জরু্রি পদক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ করেছে, যাতে ইইউ এই নির্দিষ্ট দৌড়ে পিছিয়ে না থাকে, যা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিণতি ঘটাবে। ততক্ষণে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক প্রচারিত 'ডিকাপলিং' বা বিযুক্তিকরণ শব্দটিও অভিধানে প্রবেশ করেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি 'ডি-রিস্কিং'-এ পরিণত হয়েছে। সুতরাং, এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন, যাতে ব্লকটি তার পথে আসা যে কোনও অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে আরও ভালভাবে সুরক্ষিত থাকতে পারে।


২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার উপর ইউরোপীয়দের বড় ধরনের শক্তি-‌নির্ভরতাও ইইউ-এর একটি বিশেষ দুর্বলতা তুলে ধরে। 


জুন ২০২৩ কৌশলটিতে কী ছিল?

২০২৩ সালের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কৌশলটি তিনটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল: ইইউ-এর প্রতিযোগিতার প্রচার; ইইউতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রতিরোধ; এবং, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অর্জনের ক্ষেত্রে সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে দলবদ্ধ হওয়া। এটি চারটি ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে যা ইইউকে জরুরি ভিত্তিতে মোকাবিলা করতে হবে: সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিস্থাপকতা; গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোর ভৌত এবং সাইবার নিরাপত্তা; প্রযুক্তি নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তি ছিদ্র (‌লিকেজ)‌; এবং, অর্থনৈতিক নির্ভরতার অস্ত্রায়ণ বা অর্থনৈতিক জবরদস্তি। যদি কেউ এগুলি খতিয়ে দেখেন, তাহলে কোনও সন্দেহ থাকবে না যে এই ঝুঁকিগুলির উৎস হল রাশিয়া ও চিন। এটি জোর দিয়ে আরও বলেছে যে, যেভাবে ঝুঁকিগুলি মোকাবিলা করা প্রয়োজন তা ইউনিয়নের "মুক্ত অর্থনীতির সুবিধাগুলি" উপলব্ধি করার পথে অন্তরায় হওয়া উচিত নয়।

কৌশলটি
প্রধান প্রধান ইইউ উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেছিল, যা এর অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করবে। এর উদাহরণ হল নেক্সট জেনারেশন ইইউ, ইইউ শিল্প কৌশল, অতি ‌গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল আইন, ইউরোপীয় চিপস আইন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জবরদস্তি বিরোধী উপকরণ।

সর্বশেষ আপডেট

সর্বশেষ আপডেটটি ২০২৩ কৌশলের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি পূর্বে জারি করা কৌশলটিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য পাঁচটি নতুন উদ্যোগের রূপরেখা দেয়।
প্রথমত, ইইউতে আগত বিদেশী বিনিয়োগের উন্নত পরীক্ষার (‌স্ক্রিনিং)‌ প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্লকের নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে বলা হয়েছে যে, সমস্ত  সদস্য রাষ্ট্রের এমন একটি স্ক্রিনিং সিস্টেম নিয়োগ করা উচিত যা জাতীয় নিয়মগুলির বিরোধিতা করে না। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল এই স্ক্রিনিংকে সেইসব ইইউ সত্তা থেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রসারিত করা যাদের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ একটি অ-ইইউ দেশে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, এএসএমএল কেস অনুসরণ করে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডাচ সরকারকে চিনে সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং মেশিনের রপ্তানি সীমিত করার জন্য চাপ দিয়েছিল, ইইউ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে ইইউ-ব্যাপী সমন্বয়ের একটি নতুন উদ্যোগ চালু করেছে, বিশেষ করে দ্বৈত ব্যবহারের পণ্যের ক্ষেত্রে। তৃতীয়ত, বহির্মুখী বিনিয়োগের স্ক্রিনিং, যাতে তারা ইইউ-‌এর ক্ষতি না করে বা আন্তর্জাতিক শান্তিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত না করে (এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির রপ্তানির উপর জোর দেওয়া হয়)। এখনও বহিরাগত বিনিয়োগ এবং ইইউ-এর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ক্ষতি করার সম্ভাবনার উপর নজর রাখার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই। সেই ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কমিশন বহির্মুখী বিনিয়োগের উপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে, যা বহির্মুখী বিনিয়োগের জন্য স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া বিকাশের উদ্দেশ্যে একটি বিশ্লেষণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলছে। এই ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি হবে দ্বিমুখী: তিন মাস মেয়াদে অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ এবং ১২ মাস মেয়াদে সদস্য-রাষ্ট্র পর্যায়ে বহির্গামী বিনিয়োগের নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন। এই দুটির ফলে একটি 'যৌথ ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রতিবেদন' তৈরি হবে, যার ফলাফল তারপর একটি নীতিগত পদক্ষেপের প্রয়োজন কি না তা নির্ধারণ করবে। চতুর্থত, দ্বৈত-ব্যবহারের প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নের (আরঅ্যান্ডডি) জন্য সমর্থন প্রসারিত করা। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এখন কমিশন জনসাধারণের পরামর্শ নিতে শুরু করেছে। এই বিষয়ে ইইউ-এর লক্ষ্য উদীয়মান অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে অগ্রণী হওয়া। পঞ্চমত , ক্ষেত্রভিত্তির পাশাপাশি সদস্য-রাষ্ট্র পর্যায়ে ইইউ গবেষণা নিরাপত্তা বাড়ানোর পক্ষে কথা বলেছে। ইইউ-এর নির্দেশনার অধীনে সদস্য-রাষ্ট্রগুলিকে এমন প্রযুক্তির ফাঁস রোধ করতে সাহায্য করা হবে যা দীর্ঘমেয়াদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে। চিনের মতো দেশ থেকে ইউরোপে উন্নত প্রযুক্তি ফাঁস আসছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগের কারণে এটি সামনে এসেছে।


ইউরোপীয় কমিশন বহির্মুখী বিনিয়োগের উপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে, যা বহির্মুখী বিনিয়োগের জন্য স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া বিকাশের উদ্দেশ্যে একটি বিশ্লেষণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলছে।


মূল্যায়ন

ইইউ দ্বারা প্রকাশিত জানুয়ারির আপডেটটির লক্ষ্য
একটি ভূ-রাজনৈতিক ও সেইসঙ্গে একটি ভূ-অর্থনৈতিক ব্লক হিসাবে অবস্থান করা। সেই দিনগুলি চলে গিয়েছে যখন এটি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে একটি অর্থনৈতিক ব্লক হিসাবে উপস্থাপন করেছিল, যেখানে বাণিজ্য অগ্রভাগে ছিল। যদিও এটি মূলত রাশিয়া ও চিনকে লক্ষ্য করে ঘটেছিল, তবে ২০২৩ সালের মূল কৌশল নথিতে শুধুমাত্র রাশিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল (যা ইউরোপের প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগ), কিন্তু জানুয়ারির আপডেট কোনও দেশের উল্লেখ করেনি। এটি ইইউকে তার পূর্বাভাসযোগ্য অপ্রত্যাশিততার সঙ্গে দিগন্তে ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সির সম্ভাবনার সঙ্গে ভালভাবে স্থাপন করে।

রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের সমন্বিত প্রক্রিয়ার উপর জোর দেওয়ার অর্থ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত চাপের পুনরাবৃত্তি এড়াতে চাওয়া, যেমনটি এএসএমএল পর্বে ঘটেছিল। আউটবাউন্ড ইনভেস্টমেন্ট স্ক্রিনিংও একটি আকর্ষণীয় উদ্যোগ, কিন্তু ইইউ কতটা এগোতে পারল তা শুধুমাত্র ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে প্রকাশ করা হবে। আরঅ্যান্ডডি এবং প্রযুক্তি ফাঁস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে উদ্যোগগুলি বর্তমান ভূ-রাজনীতির যুগে ইইউ-‌এর গুরুতর প্রচেষ্টার প্রতিনিধিত্ব করে।

এটা বলা যেতে পারে যে তার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কৌশল এবং এর পরবর্তী আপডেটের মাধ্যমে ইইউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন উভয়ের থেকে নিজের অবস্থান আলাদা করেছে, এবং আজকের বিশ্বে তার নিজস্ব গতিপথ বার করার চেষ্টা করেছে। ইইউ অভিধানে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রবর্তন আমরা যেভাবে ইইউ-কে জানি তার পরিপ্রেক্ষিতে ইইউ-তে একধরনের "
বিপ্লব", কারণ এটি প্রবর্তনের অর্থ হল এতদিন যেভাবে বাণিজ্য নীতি (ইইউ সক্ষমতা) ও জাতীয় নিরাপত্তা (সদস্য-রাষ্ট্র সক্ষমতা) পরিচালিত হয়েছে এটি তার উপর একটি জোরালো আঘাত। দীর্ঘমেয়াদে কমিশন এবং সদস্য-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দক্ষতা ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাজের উপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে।


রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের সমন্বিত প্রক্রিয়ার উপর জোর দেওয়ার অর্থ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত চাপের পুনরাবৃত্তি এড়াতে চাওয়া, যেমনটি এএসএমএল পর্বে ঘটেছিল।


এরপর কী?

বিশ্ব আজ যে মন্থনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার জন্য ইইউ-‌র এমন পদক্ষেপের প্রয়োজন। তবে, এটি ইইউ এবং সদস্য-রাষ্ট্র সম্পর্কের উপর কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। ইইউ নির্বাচন এবং এই বছরের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদার করার প্রেক্ষিতে ইইউ কী পদক্ষেপ করবে তার নির্ধারক হবে। যেহেতু অনেকগুলি বিধান
উপদেশমূলক এবং অ-বাধ্যতামূলক , তাই সদস্য-রাষ্ট্রগুলির সহমত তৈরি করা একটি কাজের কাজ হবে। একই কথা প্রযোজ্য কোনও বাধ্যতামূলক নিয়ম, জরিমানা বা প্রণোদনার (যেমনটি ঝুঁকিমুক্ত করার বিষয়ে উদ্বেগ ছিল) অনুপস্থিতিতে ইইউ-এর উদ্দেশ্যগুলির সঙ্গে ব্যবসাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ক্ষেত্রেও। কৌশল বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সংগ্রহ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। ইইউ তার পাশার দান ফেলেছে, সময়ই বলে দেবে খেলাটি কীভাবে হবে।



অভিষেক খাজুরিয়া অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন রিসার্চ ইন্টার্ন

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.