কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ (সিএসসি) ৩০ আগস্ট, ২০২৪-এ একটি মাইলফলক অতিক্রম করেছে। সেদিন সিএসসি সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত, শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ ও মরিশাস একটি সনদ ও একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছে। যদিও বাংলাদেশ গোষ্ঠীটির সদ্য-অন্তর্ভুক্ত সদস্য হওয়া সত্ত্বেও অনুপস্থিত ছিল, এ বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। সেশেলস একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসাবে অংশগ্রহণ করেছে।
কৌশলগত থিয়েটার হিসাবে বঙ্গোপসাগর
এই অর্জন, সিএসসি-র জন্য, সূচনা থেকেই গোষ্ঠীটির ভাগ করে নেওয়া সমন্বয় ও প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চিহ্নিত করে। সদস্য-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ভাগ করা ভূগোল ছড়িয়ে আছে বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম ভারত মহাসাগরকে ঘিরে। ভারতের জন্য বঙ্গোপসাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত থিয়েটার হিসাবে রয়ে গিয়েছে, এবং সিএসসি এই অঞ্চলের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার মাত্রা যোগ করার সুযোগ দেয়।
নিরাপত্তার ইস্যুতে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে একত্রিত করা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির ক্রমবর্ধমান প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক ফোরামগুলি প্রভাব বিস্তারের এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার বৃহত্তর স্থাপত্য গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণভাবে, এই জাতীয় ফোরামগুলি সাধারণ উদ্বেগের বিষয়গুলির প্রতি একটি আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির কাঠামো হিসাবেও কাজ করে। নিরাপত্তার ইস্যুতে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে একত্রিত করা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কো-অপারেশন (বিমস্টেক) সমন্বয় ও সহযোগিতার উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম। কিন্তু গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতার পরিধি মূলত অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংযোগের ক্ষেত্রেই আবদ্ধ রয়ে গিয়েছে, এবং নিরাপত্তার উপর সামান্যই গুরুত্ব দিয়েছে। এটি বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা-ভিত্তিক অ্যাজেন্ডা নিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য একটি ফোরাম গড়ে তোলা ভারতের জন্য অপরিহার্য করে তুলেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, সিএসসি-র নিয়মিত অগ্রগতি ভারত এবং অন্য সদস্য-রাষ্ট্রগুলিকে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সহযোগিতার মূল স্তম্ভের সঙ্গে — যার মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা; সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ প্রতিরোধ; পাচার ও আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা; সাইবার নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ও প্রযুক্তি সুরক্ষা; এবং মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ — সিএসসি-র অধীনে সহযোগিতার সুযোগ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের এখনকার সামুদ্রিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের উপযুক্ত।
চিনের কর্মকাণ্ড
কেন ভারতের জন্য বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা-ভিত্তিক পন্থা অপরিহার্য? ভারত মহাসাগরে চিনের নৌবাহিনীর ক্রমবর্ধমান পদচিহ্ন এবং বর্ধিত রাজনৈতিক প্রভাব ভারতের কৌশলগত বৃত্তে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বেজিং মূলত ভারত মহাসাগরে তার শক্তি নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ এবং বাণিজ্য জালিকা সম্প্রসারণের জন্য আগ্রহ প্রদর্শন করে চলেছে। দক্ষিণ চিন সাগরে ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধে চিনের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা ও ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য চিনের জবরদস্তিমূলক প্রক্রিয়া অবলম্বন করার মরিয়া চেষ্টা প্রদর্শন করেছে।
বেজিং মূলত ভারত মহাসাগরে তার শক্তি নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ এবং বাণিজ্য জালিকা সম্প্রসারণের জন্য আগ্রহ প্রদর্শন করে চলেছে।
চিনের যুদ্ধজাহাজ, গবেষণা জাহাজ, এবং সাবমেরিন ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করার সঙ্গে এটি স্পষ্ট যে বেজিং এখানে একটি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে চায়, এবং এই অঞ্চলে একটি উল্লেখযোগ্য নৌ-উপস্থিতি রাখতে চায়। বঙ্গোপসাগরের ভূগোল দক্ষিণ চিন সাগর এবং বিস্তৃত ভারত মহাসাগরের মধ্যে একটি সেতু। গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক স্বার্থসহ এই অঞ্চলটি ভারতের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ চিন সাগর অঞ্চলের বিপরীতে, যেখানে চিন একটি জবরদস্তিমূলক পন্থা নিয়েছে, ভারত মহাসাগরে তার কৌশল আরও সূক্ষ্ম। এখানে চিন এই অঞ্চলের উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে তার প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছে, যা তার নৌ-উপস্থিতি সহজতর করেছে। উপরন্তু, বঙ্গোপসাগর অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ-প্ররোচিত নিরাপত্তা হুমকি, যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি পাচার এবং এই জাতীয় অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা-ভিত্তিক পদ্ধতির যৌক্তিকতা তৈরি করেছে।
সংশোধিত দৃষ্টিভঙ্গি
যদিও সিএসসি ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত স্থবির হয়ে ছিল, এর পুনরুজ্জীবনের পর থেকে গোষ্ঠীটি সহযোগিতা বাড়ানোর ইচ্ছা প্রদর্শনের জন্য পদক্ষেপ করেছে, যার ফলে এমনকি এর সদস্যপদের সম্প্রসারণ ঘটেছ। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মলদ্বীপের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় হিসাবে প্রস্তাবিত হলেও গোষ্ঠীটি পরে বাংলাদেশ ও মরিশাসকে অন্তর্ভুক্ত করে। স্পষ্টতই, গোষ্ঠীটির স্থানিক পরিধিতে বঙ্গোপসাগরের ভূগোল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গোপসাগরে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য কোনও নিরাপত্তা-ভিত্তিক ফোরামের অনুপস্থিতি, এবং এই অঞ্চলে বিকশিত কৌশলগত গতিশীলতার দ্বারা সৃষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে, সিএসসি-র অগ্রগতি একটি সুযোগ উপস্থাপন করে এই অঞ্চলের জরুরি নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীল একটি ফোরাম গঠনের। ভারতের জন্য সিএসসি বঙ্গোপসাগরের প্রতি একটি নিরাপত্তা-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশ করছে বলে মনে হচ্ছে, যেটি এমন একটি অঞ্চল যা সম্ভবত গুরুতর সামুদ্রিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তুলে ধরতেই থাকবে।
এই ভাষ্যটি প্রথম দ্য হিন্দু -তে প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.