Author : Harsh V. Pant

Published on Jan 02, 2023 Updated 0 Hours ago

কোভিড প্রসঙ্গে বেজিংয়ের কর্তৃত্ববাদী পদ্ধতির ব্যর্থতা এ কথাই দর্শিয়েছে যে, গণতন্ত্রগুলি মানব উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সঠিক দিশা দেখাতে পারে।

চিনা প্রশাসনিক মডেল সারবত্তাহীন প্রমাণিত হয়েছে

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর কঠোর ‘জিরো কোভিড’ বা ‘শূন্য কোভিড’ নীতি নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগের প্রতি সহমর্মিতার অভাবের কারণে চিনে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে। সম্প্রতি জিনজিয়াং প্রদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর উরুমচিতে আবাসনের বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাটে আগুন লেগে দশ জনের মৃত্যুর পর এই বিক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে এবং সাংহাই, বেজিং, জিনজিয়াং এবং তিব্বতের প্রধান চিনা শহরগুলিতে তীব্র ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিক্ষোভগুলির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল চিনা প্রেসিডেন্টের অবাধ সমালোচনা এবং শি-এর পদত্যাগের জোরালো দাবি। লক্ষ লক্ষ চিনা মাসের পর মাস ধরে ব্যাপক বিধিনিষেধের সম্মুখীন হলেও অবশেষে তাঁদের উদ্বেগ এই জনক্ষোভের মাধ্যমেই ফুটে উঠেছে।

চিনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় অধিবেশনের আলোয় আলোকিত হয়ে শি জিনপিং অভূতপূর্ব ভাবে তৃতীয় বারের জন্য চিনের শীর্ষ নেতার পদে বহাল হন এবং তার পর থেকেই তিনি বিদেশ সফরের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তাঁর ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে তাঁর গৃহীত নীতিগুলির ফলে যে ক্ষোভ ও রাগের সৃষ্টি হয়েছে, তিনি সে খবর রাখেন বলে মনে হয় না। জাতীয় অধিবেশনে তাঁকে তাঁর কঠোর  কোভিড নীতির ‘সাফল্য’-এর গুণগান করতে এবং এই নীতি বহাল রাখার দায়বদ্ধতা পুনর্ব্যক্ত করতে দেখা গিয়েছে। কোভিড সংক্রামিত অঞ্চলগুলিতে কঠোর লকডাউন আরোপ করার ফলে অসন্তোষ যে ক্রমশ বেড়েই চলেছে, সেই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ধরনের লকডাউনগুলি সর্বদাই সাধারণত গণ কোভিড পরীক্ষা, কোয়ারেন্টাইন অবস্থা এবং ব্যবসা বন্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

ক্ষ ক্ষ চিনা মাসের পর মাস ধরে ব্যাপক বিধিনিষেধের সম্মুখীন হলেও অবশেষে তাঁদের উদ্বেগ এই জনক্ষোভের মাধ্যমেই ফুটে উঠেছে।

ক্লান্ত চিনা জনসাধারণ – যাঁরা এত দিন নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং রাজনৈতিক কর্তাদের তরফে তাঁদের কথা শোনার প্রতি অনীহার সম্মুখীন হয়েছেন – বর্তমানে তাঁরাই একজোট হয়ে শি-এর অতি-এককেন্দ্রিকতার বিরুদ্ধে তীব্র শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। কার্যকর টিকার অভাব এবং কম টিকা প্রদানের হারের কারণে কমিউনিস্ট পার্টির জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলি দেশে সংক্রমণের সঙ্গেই সমানুপাতে বৃদ্ধি পাবে। নিজের সাফল্য সম্পর্কে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী একটি ব্যবস্থা ও শীর্ষ নেতৃত্বের উচ্চ মূল্য দেশটিকে চোকাতে হতে পারে।

বাকি বিশ্ব যখন লকডাউনের ফলে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাগুলিকে স্বীকৃতি দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে, শি-র কর্মসূচি তখন তাঁর নীতিগুলিকে সঠিক প্রমাণ করার তাগিদ দ্বারা চালিত, কারণ সেগুলি শি-র মস্তিষ্কপ্রসূত। চিনের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ দেশটিতে প্রশাসনের কর্তৃত্ববাদী মডেলের বিপদগুলিকেই দর্শায়, যেখানে একটি বদ্ধ ব্যবস্থা সাধারণ চিনাদের দুর্দশার উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনটা হওয়ার ফলে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির অবস্থান বিপন্ন হয়েছে যারা বিগত দশকগুলিতে অত্যন্ত সূক্ষ্মতার সঙ্গে দেশ জুড়ে নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য বজায় রেখে এসেছে।

চিনের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে তাইওয়ানের ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে এক অন্য উপায়ে অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন – যিনি ২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক ব্যবধানে জয়লাভ করেন – স্থানীয় নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের পর ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির প্রধান হিসাবে পদত্যাগ করেছেন। এই নির্বাচনগুলি মূলত অভ্যন্তরীণ আর্থ-সামাজিক সমস্যার উপরে ভিত্তি করে লড়া হলেও প্রেসিডেন্ট সাই চিনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান চাপানউতোর এবং গণতন্ত্র সম্পর্কে চিনা কমিউনিস্ট পার্টিকে একটি বার্তা দেওয়ার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ভোটের প্রচার চালান। কিন্তু ভোটাররা এতে সহমত হননি এবং সাই-এর কাছে সেই বার্তা সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি মুক্ত মনে জনাদেশ স্বীকার করেন এবং তাইওয়ানের ভোটারদের দেওয়া বার্তার কাছে মাথা নত করে তাঁর দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

তাইওয়ান এবং চিনের সমকালীন ঘটনাপ্রবাহ আমাদের শুধু মাত্র কর্তৃত্ববাদের বিপদগুলি সম্পর্কেই সতর্ক করে না, বরং তাইওয়ানের পক্ষাবলম্বনের গুরুত্বকেও তুলে ধরে। একাধিক উপায়ে এই ঘটনাপ্রবাহ সমসাময়িক বৈশ্বিক ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি বিশ্বের একটি বড় অংশকে এ কথা বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছে যে, তার প্রশাসনিক মডেলটি উন্নততর। কারণ এটি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদান করতে সক্ষম। আশ্চর্য ভাবে, গণতান্ত্রিক বিশ্বের বহু মানুষ এই ব্যাখ্যা মেনেও নিয়েছেন। সংজ্ঞা অনুসারে কোনও গণতন্ত্রই কখনই নিখুঁত হতে পারে না। যেহেতু একটি জাতীয় প্রকল্পকে ঘিরে বহু অংশীদারের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা অবশ্যম্ভাবী ভাবেই দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক বিশ্ব কাল্পনিক পূর্ণতা খোঁজার প্রয়াসে স্বৈরাচারী শক্তিদের চ্যালেঞ্জ করার চেয়ে নিজের ত্রুটি খুঁজে বের করার কাজে বেশি মনোযোগী হয়েছে। গণতান্ত্রিক বিশ্বে নিজের ঢাক পেটানোর এক অন্তহীন চক্র ‘চিনা প্রশাসনিক মডেল’ অথবা ‘চায়না মডেল অফ গভর্নেন্স’-এর ভ্রান্ততাকেই সুদৃঢ় করেছে। যদি বিশ্বের গণতন্ত্রগুলি নিজেদের মূল্যবোধের স্বপক্ষে অবস্থান না গ্রহণ করে, তা হলে বাকিরাই বা কেন তাদের দৃষ্টান্ত বলে মনে করবে?

চিনা কমিউনিস্ট পার্টি বিশ্বের একটি বড় অংশকে এ কথা বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছে যেতার প্রশাসনিক মডেলটি উন্নততর। কারণ এটি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদান করতে সক্ষম।

চিনের আগ্রাসন এবং তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা বর্তমানে গণতান্ত্রিক বিশ্বের জন্য এক বৃহত্তর পরিসর সৃষ্টি করেছে, যেখানে তারা এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারে যে, সকল দুর্বলতা-সহ চিনা মডেলটি কখনও লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করার কাজে গণতন্ত্রগুলির সমকক্ষ ছিল না এবং হতেও পারবে না।

অতীতেও চিনে বিক্ষোভ হয়েছে এবং সম্ভবত চিনা কমিউনিস্ট পার্টিব্যবস্থার নির্মমতা অসন্তোষের সাম্প্রতিক বিস্ফোরণকেও দমন করবে। শি-এর পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় গুটিকয়েক গণবিক্ষোভ শি-এর গতিবিধিকে রুদ্ধ করতে পারবে না। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ নীতি সংক্রান্ত চিনের নিরলস নীতিগত ভুল পদক্ষেপ এ কথাই তুলে ধরে যে, বহু প্রশংসিত চিনা মডেলটি ধীর গতিতে হলেও নিশ্চিত ভাবেই ভেঙে পড়ছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.