-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
যখন মার্কিন শুল্ক ভারতে আঘাত হানছে, সেই সময় নয়াদিল্লি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি জীবিকার উপর আরও বেশি করে জোর দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের চাপের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতার ভারসাম্য বজায় রাখে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসাবে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের "ন্যাপকিন ডিল" অনাকাঙ্ক্ষিত, যদিও অপ্রত্যাশিত নয়। নয়াদিল্লি ধারাবাহিকভাবে লাল রেখা টেনেছে। এটি কৃষি সম্পর্কিত বাণিজ্য আলোচনার ক্ষেত্রে তার দীর্ঘস্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়, যেখানে অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতাগুলি একটি সংবেদনশীল ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভারসাম্য বজায় রাখার চেয়ে অগ্রাধিকার পায়।
উরুগুয়ে রাউন্ড অফ দ্য জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেড (গ্যাট) ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কৃষি সংক্রান্ত চুক্তি (এওএ)-র ভিত্তি স্থাপন করে, যা ছিল একটি মুক্ত ও ন্যায্য কৃষি বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রচেষ্টা। ভারত এবং অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে কৃষির উদারীকরণ দেশীয় খাদ্য উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধি করবে, এবং অন্যান্য উন্নত অর্থনীতির ভারী ভর্তুকিযুক্ত কৃষি রপ্তানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে অক্ষম ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষতি করবে।
যদিও ভারত সর্বদা ডব্লিউটিও-র নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থাকে সমর্থন করে আসছে, ডব্লিউটিও-র দুর্বল হয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে নিজের স্বার্থ সুরক্ষিত করা এবং গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণতা নিশ্চিত করার জন্য ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সরবরাহ শৃঙ্খল সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।
দোহা ও নাইরোবি রাউন্ডসহ পরবর্তী আলোচনায় ভারতের মূল দাবিগুলির মধ্যে ছিল উন্নত দেশগুলির রপ্তানি ভর্তুকি অপসারণ, খাদ্য সংগ্রহের জন্য অভ্যন্তরীণ ভর্তুকি অব্যাহত রাখা, এবং খাদ্য নিরাপত্তা সমর্থন করার জন্য বাফার স্টক অপারেশন। ২০২৪ সালে জেনেভায় ডব্লিউটিও-র ১৩তম মন্ত্রী-পর্যায়ের সম্মেলনে (এমসি১৩) ভারত তার ‘খাদ্যের অধিকার’ পুনর্ব্যক্ত করে, কৃষিনীতিতে সার্বভৌম স্থান দাবি করে, এবং খাদ্য নিরাপত্তার স্থায়ী সমাধান হিসাবে পাবলিক স্টকহোল্ডিংয়ের গুরুত্বের উপর জোর দেয়।
দেশীয় উন্নয়ন অপরিহার্য
২০২৪-২৫ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে প্রায় ৪৬.১ শতাংশ কর্মী কৃষি ক্ষেত্রে নিযুক্ত আছেন, এবং এই কারণে এই ক্ষেত্রটি ভারতের অভ্যন্তরীণ উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারগুলিকে প্রতিফলিত করে, বিশেষ করে কৃষকদের জীবিকা সম্পর্কে। ৮৯ শতাংশ ভারতীয় কৃষক ক্ষুদ্র মালিক হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ — দুই হেক্টরের কম জমির মালিক। কাজেই এই ক্ষেত্রটি বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা করার জন্য লড়াই করছে। তাই ভারতের অবস্থান হল উদীয়মান অর্থনীতির জন্য উচ্চতর অভ্যন্তরীণ ভর্তুকি অনুমোদন করে কৃষি বাণিজ্যে ঐতিহাসিক ভারসাম্যহীনতা সংশোধন করা।
উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলির জন্য বিশেষ ও পৃথগীকৃত আচরণের বিধানের পাশাপাশি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘গ্রিন বক্স’-এর অধীনে গ্রামীণ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বকে অ-বাণিজ্য-বিকৃতির বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আরও বিতর্কিত বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে ভারতীয় কৃষকদের জন্য ন্যূনতম সহায়তা মূল্য (এমএসপি), যা 'অ্যাম্বার বক্স'-এর অধীনে বাণিজ্য-বিকৃতিকারী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। তবে, ভারত যুক্তি দেয় যে এমএসপি-গুলি প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি এবং প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা (পিএমজিকেএআওযাই)-র মতো দেশের উন্নয়ন-কেন্দ্রিক প্রকল্পগুলির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারত প্রায়শই বলেছে যে এমএসপি-গুলি শুধু কৃষকদের জন্য ঝুঁকিহ্রাসের হাতিয়ার নয়, বরং কৃষকদের জীবনযাত্রার উন্নতির মতো বৃহত্তর উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)-র সঙ্গে সংযুক্ত হাতিয়ার।
এদিকে, ভারত যুক্তি দিয়েছে যে খাদ্যশস্য, দুগ্ধজাত পণ্য, জিনগতভাবে পরিবর্তিত (জিএম) ফসল এবং ইথানল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলিতে অত্যন্ত ভর্তুকিযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্য ক্ষতি কভারেজ (পিএলসি) রয়েছে — যা ভারতের এমএসপির অনুরূপ — যার মাধ্যমে বাজার মূল্য রেফারেন্স মূল্যের নিচে নেমে গেলে রাষ্ট্র কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়। কৃষি ঝুঁকি কভারেজ (এআরসি), ডেয়ারি মার্জিন কভারেজ (ডিএমসি), এবং ফসল বিমা প্রিমিয়াম ভর্তুকি (সিআইপিএস)-র মতো অন্যান্য বাণিজ্য-বিকৃতিকারী ভর্তুকি রয়েছে। একইভাবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তার সাধারণ কৃষি নীতি (ক্যাপ)-র অধীনে সরাসরি অর্থ প্রদান করে, যেখানে কৃষকদের গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচির ভর্তুকির পাশাপাশি প্রতি হেক্টর বার্ষিক অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করা হয়। যদিও উন্নত দেশগুলি এই ভর্তুকিগুলিকে ডব্লিউটিও সীমার মধ্যে রেখেছে, ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির যুক্তি হল যে তারা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রদানের জন্য "গ্রিন বক্স" ফাঁকগুলি কাজে লাগায়, যেখানে উদীয়মান অর্থনীতিগুলিকে তাদের লাল রেখা থেকে সরে আসতে বাধ্য করা হয়।
দমে যাওয়া নয়, সংস্কার করা
ভারতের কৃষিক্ষেত্রের অবস্থানের বিপরীতে একটি পাল্টা যুক্তি হল দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের প্রয়োজন, যদিও এটি অনেক বেশি জলবায়ু-কেন্দ্রিক হবে। যদিও ভারতের শস্য নির্ভরতা কম, এবং কৃষি এখন খাদ্য নিরাপত্তার বাইরে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করবে বলে আশা করা হচ্ছে, ভারতের জন্য তার কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং মোট আভ্যন্তর উৎপাদনে (জিডিপি) অবদান উন্নত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আরেকটি যুক্তি হল যে, উচ্চ আমদানি নির্ভরতা অনুপাত (IDR), যাকে সংজ্ঞায়িত করা হয় যে, একটি দেশ তার চাহিদা পূরণের জন্য, সাধারণত খাদ্যের জন্য, আমদানির উপর কতটা নির্ভর করে, তা আসলে সস্তা খাদ্য এবং এর ফলে জনসংখ্যার জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।
একটি সম্পর্কিত যুক্তি হল যে, উচ্চ আমদানি নির্ভরতা অনুপাত (আইডিআর) — অর্থাৎ একটি দেশ তার চাহিদা পূরণের জন্য, সাধারণত খাদ্যের জন্য, যে পরিমাণ আমদানির উপর নির্ভর করে — সস্তা খাদ্য এবং উচ্চ জীবনযাত্রার মান অর্জন করতে পারে। নীতি বিশ্লেষক বেন চু, তাঁর 'এক্সাইল ইকনমিক্স’' বইতে, জাপানকে এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আরও দেখা গিয়েছে যে জাতীয় আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে উপভোক্তারা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পছন্দের দাবি করতে থাকে, এবং খাদ্যশস্য থেকে প্রোটিন, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ফলের মতো সমৃদ্ধ খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমদানি শুল্ক হ্রাস এবং অনুকূল শুল্ক কাঠামোর কারণে ভারতে ডাল, ভোজ্যতেল এবং ফলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল হয়েছে। প্রযুক্তি স্থানান্তর হল আরেকটি ক্ষেত্র যেখানে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলি বাণিজ্য উদারীকরণের ফলে উপকৃত হয়েছে — মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক নির্ভুল কৃষি-প্রযুক্তি ভারতীয় কৃষকদের সম্পদ বরাদ্দ সর্বোত্তম করার সুযোগ দিয়েছে, বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে।
জলবায়ু সংকট, যার মধ্যে পতিত জমি এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাত রয়েছে, জরুরিভাবে প্রযুক্তি-সক্ষম নির্ভুল কৃষিকাজ এবং উন্নত টেকসই কৃষি কৌশল ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে। বৃহত্তর বাজারে প্রবেশাধিকার প্রদান করলে ভারতীয় কৃষকদের জন্য আয়ের সুযোগ, জ্ঞান স্থানান্তর এবং প্রতি হেক্টর উৎপাদনশীলতা উন্নত হতে পারে। তবে, এ সবের জন্য কখনওই শুল্ক চাপের মুখে নতি স্বীকার করা উচিত নয়; ন্যায্য বাণিজ্যের প্রয়োজনীয়তা পূরণ নিশ্চিত করার জন্য দর কষাকষি অ-জবরদস্তিমূলক এবং ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
সামনের দিকে তাকালে রপ্তানি প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ভারতকে গবেষণা ও উন্নয়ন, দক্ষ ভর্তুকি, জলবায়ু-স্থিতিশীল কৃষিকাজ এবং ফসল কাটার পরবর্তী উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষিকে শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায়, তার জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলা এবং নতুন বাণিজ্য অংশীদারিত্বও অপরিহার্য হবে। এওএ-তে সংস্কারের জন্য ভারতকে আরও চাপ দিতে হবে, বিশেষ করে এগ্রিগেট মেজারমেন্ট অফ সাপোর্ট (এএমএস) এনটাইটেলমেন্টের ক্ষেত্রে।
এওএ-এর প্রায় ৩০ বছর পরেও, কৃষি বাণিজ্যে ভারতের অগ্রাধিকারগুলি মূলত অপরিবর্তিত রয়েছে। তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ শুল্ক পদক্ষেপ অভূতপূর্ব চাপ তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় প্রশ্ন হল ভারত কি বৃহত্তর বাজার প্রবেশের জন্য ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাহিদার সঙ্গে কৃষি জীবিকা রক্ষার্থে তার অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয়তার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে?
শ্রুতি জৈন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-এর অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Shruti is an Associate Fellow at the Centre for Development Studies, Observer Research Foundation (ORF), where her research examines the intersections between policy, economic diplomacy ...
Read More +