Author : Kabir Taneja

Published on Aug 01, 2023 Updated 0 Hours ago

আফগানদের অধিকাংশের জন্যই পরিস্থিতি এখনও সঙ্কটজনক

তালিবান বনাম প্রজাতন্ত্র

তেইশ মাস আগে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের হাত ধরে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাক্ষরিত চুক্তির ফলে আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালিবানের হাতে গিয়ে পড়ে। এই সিদ্ধান্তগুলি আফগানদের আবারও অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যেমনটা ১৯৯০-এর দশকে শেষ বার তালিবান ক্ষমতায় থাকার সময়ে দেখা গিয়েছিল।

কাবুলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকারের পতন এবং আফগান সশস্ত্র বাহিনী দেশ গঠনের জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অধীনে প্রতিষ্ঠিত অনুশীলনগুলি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করলেও এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, জাতিগত ও রাজনৈতিক চ্যুতিতে পরিপূর্ণ একটি দেশে ২০ বছর ব্যাপী প্রজাতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রচেষ্টা দেশটির জনসংখ্যার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা থেকে সরকার পর্যন্ত আফগান জনগণ, বিশেষ করে নারীরা এই ধারণাগুলি গ্রহণ করেন, যার মধ্যে রয়েছে কৃষিকেন্দ্রিক চিরাচরিত পদ্ধতি থেকে সরে এসে লাভজনক কর্মসংস্থানের মতো সুযোগ।

তবে উপরোক্ত প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অর্থ এই নয় যে, প্রজাতন্ত্রের নির্মাণ ছিল সামগ্রিক। এটি ছিল ‘নেতাদের’ একটি কাজ চালানোর মতো সাময়িক প্রয়াস যে বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে পশ্চিমী দেশগুলি আগ্রহী ছিল। হামিদ কারজাই এবং তার পরবর্তী গনির সরকারে এমন ব্যক্তিত্বরা ছিলেন, যাঁরা তাঁদের নিজ নিজ ইতিহাসে সমান নিষ্ঠুরতা দর্শিয়েছেন। তালিবান ব্যতীত (যা প্রকৃতপক্ষে একটি  সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত ছিল না) দেশে ২০টিরও বেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ছিল। এই বিচ্যুতির মাঝে ‘সাম্রাজ্যের কবরস্থান’ নামে পরিচিত একটি অঞ্চলে গণতন্ত্রীকরণ এবং মধ্যপন্থী রাজনীতি প্রবর্তনের কঠোর কাজটি কেবল পশ্চিমী দেশগুলিই নয়, সূক্ষ্ম ভাবে ভারতের মতো দেশগুলিও করেছিল।

বিনিময়ে তালিবানরা এই দাবি জানিয়েছে যে, আফগানিস্তানের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মার্কিন অনুমোদিত তহবিল যেন আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে লব্ধ করা হয়।

আফগানিস্তানের সঙ্কট বহুমাত্রিক। আফগানদের জন্য এটি বেঁচে থাকার প্রশ্নটিকেই উস্কে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য তালিবানের বাস্তবতাকে কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা এখনও এক চ্যালেঞ্জ হয়েই রয়েছে। একটি মার্কিন নজরদারি সংস্থা সম্প্রতি দাবি করেছে যে, আমেরিকার প্রদত্ত সাহায্য পরোক্ষ ভাবে তালিবানের অর্থায়ন করছে। বিনিময়ে তালিবানরা এই দাবি জানিয়েছে যে, আফগানিস্তানের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মার্কিন অনুমোদিত তহবিল যেন আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে লব্ধ করা হয়। দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত ও ত্বরান্বিত করার জন্য একটি দূরদর্শী পরিকল্পনা অধরাই রয়ে গিয়েছে। এমন একটি গোষ্ঠীর জন্য নীতি নির্ণয় করা সহজ কাজ নয়, যাঁদের অভিজ্ঞতা ব্যাপক ভাবে যুদ্ধক্ষেত্রেই নিহিত এবং প্রশাসন বা সরকারের ক্ষেত্রে নয়।

মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে তালিবানের শ্রেণিবিন্যাসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান বিরোধে অভিজ্ঞতার অভাব স্পষ্ট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃস্থানীয়রা বিশ্বাস করেন যে, সহজে ফলপ্রসূ প্রসঙ্গে সম্মত হওয়া তার সরকারকে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গতিশীলতা প্রদান করবে। তালিবানদের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এমনটা অর্জন করতে হলে তাদের আদর্শগত সমঝোতা করতে হবে এবং প্রজাতন্ত্র সম্পর্কিত কিছু প্রধান নীতি গ্রহণ করতে হবে। এটি বর্তমানে তাদের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার – যিনি কান্দাহারে গ্রুপের আধ্যাত্মিক সদর দফতরে এখনও সকল কার্যকলাপের নেপথ্যে রয়েছেন – তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলনের মূল আদর্শের নিরিখে একটি অগ্রহণযোগ্য প্রস্তাব। তালিবান এবং আফগানিস্তানের জনগণ… দুই পক্ষের প্রতি কী উপায়ে পৃথক পৃথক মনোভাব অবলম্বন করা যায়, তা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যেও বিভ্রান্তি রয়েছে। এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের আওতাভুক্ত বিভিন্ন সংস্থা একযোগে তালিবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনার দাবি জানায় এবং মহিলা কর্মীদের উপর তালিবান-নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ত্রাণ বিতরণ বন্ধ করার হুমকি দেয়। এর পাশাপাশি ‘ক্ষুধা, জরা এবং মৃত্যু’ সংক্রান্ত টিপিং পয়েন্ট বা সর্বোচ্চ সীমা এড়াতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার-সম মূল্যের ত্রাণের গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতিকে তুলে ধরে।

অধিকাংশ আফগানদের জন্যই পরিস্থিতি এখনও সঙ্কটজনক। তালিবানদের দ্বারা তথ্যের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ অধিকাংশ প্রদেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার অবস্থার একটি সুস্পষ্ট চিত্র অঙ্কনে বাধা দেয়। অনেক আফগান এই সত্যে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন যে, বর্তমানে তাঁদের জীবনে কোনও বড় ধরনের সংঘর্ষ নেই। কিন্তু অগ্রগতি সংক্রান্ত সামাজিক সূচকগুলি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তালিবানরা এই সত্যকে এড়িয়ে যেতে পারে না যে, জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ ইতিমধ্যেই মধ্যপন্থী মতাদর্শ এবং প্রগতিশীল সমাজের স্বাদ পেয়েছে; এ এমন এক বাস্তবতা যা বন্দুকের নলের জোরে বদলে ফেলা সম্ভব নয়।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল দ্য টেলিগ্রাফ-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.