Author : Arya Roy Bardhan

Published on Jan 30, 2025 Updated 0 Hours ago

অতীতের নীতি সত্ত্বেও কর্মসংস্থানে দক্ষতার অপ্রতুলতা  অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে। নতুন বাজেটে উৎপাদন দক্ষতার ঘাটতি পূরণে বিনিয়োগ করা উচিত।

ভারতের কর্মসংস্থান সমস্যার মোকাবিলা: বাজেট ২০২৫-২৬

২০২৫-২৬ কেন্দ্রীয় বাজেটের উপস্থাপনা এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমের বিশ্লেষকরা সরকারের নতুন অগ্রাধিকারগুলি কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছেন, যা ব্যাপক জল্পনা-কল্পনায় পরিণত হয়েছে। সরকারের তরফে একাধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করা সত্ত্বেও যে সমস্যাটি অব্যাহত রয়েছে, তা হল কর্মসংস্থানের সমস্যা। সমস্যাটি শুধু মাত্র বেকারত্বে সীমিত নয়। কারণ সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশটি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ভালই অগ্রগতি করেছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বরাদ্দ সংক্রান্ত এক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে অর্থাৎ তা সকল ক্ষেত্রব্যাপী কর্মসংস্থান এবং উৎপাদন-কেন্দ্রিক। এই সব কিছুই দক্ষতার গরমিল সংক্রান্ত সমস্যার দরুন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভারতের কর্মসংস্থানজনিত সমস্যাটিকে অনেকাংশে গুণগত করে তুলেছে।

নিম্ন স্তরের দক্ষতাসম্পন্ন কৃষি শ্রমিকরা সাধারণত কাঠামোগত রূপান্তরের মাধ্যমে শিল্পে নিযুক্ত হন।

ভারতীয় শ্রম বাজারের দুটি চ্যালেঞ্জ

চিত্র ১-এ দৃশ্যমান বিভিন্ন ক্ষেত্র জুড়ে কর্মসংস্থান ও উৎপাদনের মধ্যে ব্যাপক ফারাকের কারণ হিসেবে ১৯৯১ সালের সংস্কারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শক্তির জন্য উন্মুক্ত এক অপরিণত শিল্পক্ষেত্রের সূচনাকে আংশিক ভাবে দায়ী করা যেতে পারে। এর ফলে পরিষেবা ক্ষেত্রটির আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। এই পরিষেবা ক্ষেত্র এখনও অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের ধারা অব্যাহত রেখেছে। যাই হোক, সীমায়িত উত্পাদন বৃদ্ধি কর্মসংস্থানের কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য বাধা হয়ে উঠেছে। নিম্ন স্তরের দক্ষতাসম্পন্ন কৃষি শ্রমিকরা সাধারণত কাঠামোগত রূপান্তরের মাধ্যমে শিল্পে নিযুক্ত হন। ভারতের নিরিখে পরিষেবা ক্ষেত্রের উত্থান - যার জন্য উচ্চ-দক্ষ কর্মীদের প্রয়োজন - এই রূপান্তরকে বাধা দেয়, যার ফলে কর্মী ও উৎপাদনের অসম বণ্টন লক্ষ করা যায়

 Tackling India S Employment Problem Budget 2025 26

উত্স: পিএলএফএস ২০২৩-২৪ এবং এমওএসপিআই

অভ্যন্তরীণ গতি আন্তর্জাতিক চাহিদার কারণে পরিষেবা ক্ষেত্র ক্রমাগত বাড়তে  থাকলেও এই ক্ষেত্রে কর্মীদের প্রবেশকে বাজেটে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সারণি ১-এ শিক্ষার স্তর জুড়ে কর্মী-জনসংখ্যা অনুপাত (ডব্লিউপিআর) উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি হল কর্মশক্তিতে নিযুক্ত জনসংখ্যার অনুপাত। এমন একটি স্বতন্ত্র প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কর্মীদের অনুপাত অশিক্ষিত স্তরের কর্মীদের তুলনায় কম এটি এমন একটি কাঠামোর ইঙ্গিত দেয়, যেখানে অশিক্ষিত শ্রমিকরা কৃষিতে নিমগ্ন থাকতে পারে অস্পষ্ট কর্মসংস্থানে নিযুক্ত হতে পারে। যাই হোক, ডিপ্লোমা বা শংসাপত্রের অধিকারী ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ ডব্লিউপিআর প্রদর্শন করে এবং এটি দক্ষতা বা বৃত্তিমূলক কোর্সের প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন জোগায়, যা আসলে কর্মীদের চাকরির জন্য প্রস্তুত করে তোলে

সারণি ১: শিক্ষার স্তর অনুযায়ী শ্রমিক জনসংখ্যার অনুপাত

শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর

ডব্লিউপিআর

অশিক্ষিত

৫৯.৬

শিক্ষিত ও প্রাইমারি স্তর পর্যন্ত

৬৮.৫

মিডল

৬০.৭

সেকেন্ডারি

৪৯.৭

হায়ার সেকেন্ডারি

৪৫.৯

ডিপ্লোমা/ সার্টিফিকেট কোর্স

৭৩.৬

স্নাতক

৫৭.৫

স্নাতকোত্তর ও উচ্চ

৬২.২

সেকেন্ডারি ও উচ্চ

৫২.১

মোট

৫৮.২

সূত্র: এমওএসপিআই

অতীতে সরকারের অবিরাম হস্তক্ষেপ

সরকার এর আগে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উভয় সমস্যা মোকাবিলা উদ্যোগ নিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিযোগিতামূলক শিল্পক্ষেত্র গড়ে তোলার জন্য এবং আমদানির উপর নির্ভরতা সীমিত করার জন্য সরকার প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেয়। এর পাশাপাশি পিএম গতি শক্তির অধীনে লজিস্টিক হাব গড়ে তোলা হয়, সৌর মডিউল ব্যাটারি স্টোরেজ সিস্টেমের জন্য পিএলআই প্রকল্প-সহ সবুজ শক্তি উৎপাদনের সম্প্রসারণ করা হয় এবং ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য ইমার্জেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি স্কিম-এর (ইসিএলজিএস) সম্প্রসারণ করা হয়এই সব কিছুর লক্ষ্য ছিল উৎপাদন বৃদ্ধিকে জোরদার করাএটি অস্পষ্ট বেকারত্ব বা অনুৎপাদনশীল কার্যকলাপে আটকে থাকা স্বল্প-দক্ষ কৃষি শ্রমিকদের সমস্যাটির সমাধান করবে।

কর্মসংস্থানের প্রতি সরকারের মনোযোগ বিশেষত পূর্ববর্তী বাজেটে কর্মসংস্থান প্রকল্পে অধিক বরাদ্দের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছিল।

দ্বিতীয় সমস্যাটি মোকাবিলা করার জন্য, সরকার পূর্ববর্তী বাজেটগুলিতে দক্ষতা বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং যুবকদের দক্ষ করে তোলার জন্য পরিষেবা ক্ষেত্রের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা(পিএমকেভিওয়াই) সূচনা করেছে। কর্মসংস্থানের প্রতি সরকারের মনোযোগ বিশেষত পূর্ববর্তী বাজেটে কর্মসংস্থান প্রকল্পে অধিক বরাদ্দের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে স্কিল ইন্ডিয়া উদ্যোগ এবং এমপ্লয়মেন্ট-লিঙ্কড ইনসেনটিভ (ইএলআই) প্রকল্পইএলআই-এর পরিধির অধীনে তিনটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্প এ অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নতুন প্রবেশকারীদের এক মাসের মূল্যের মজুরি প্রদান করা হবে। অর্থাৎ যাঁদের মাসিক আয় এক লাখ টাকা পর্যন্ত, তাঁদের জন্য ১৫০০০ টাকার সীমা বরাদ্দ করা হয়। প্রকল্প বি অনুযায়ী, কর্মসংস্থানের প্রথম চার বছরে তাঁদের ভবিষ্য তহবিলের অবদানের জন্য কর্মচারী নিয়োগকর্তা উভয়কে সরাসরি একটি নির্দিষ্ট হারে প্রণোদনা প্রদান করা হবে। পরিশেষে, প্রকল্প সি-তে সরকার নিয়োগকর্তাদের সর্বাধিক দু’বছরের জন্য ৩০০০ টাকা করে দেবে, যেটি নিয়োগকর্তারা প্রতিটি অতিরিক্ত কর্মীর ভবিষ্য তহবিল অবদান খাতে ব্যবহার করতে পারবেন।

যাই হোক, দুই প্রসঙ্গই ভারতের বৃদ্ধি সমস্যাকে খর্ব করে চলেছে। অধিকতর তহবিল থাকা সত্ত্বেও উত্পাদন সংস্কারগুলি রফতানি প্রতিযোগিতা শক্তি ব্যয়ের কারণে গুরুতর বাধার সম্মুখীন হয়েছে, যার ফলে সম্ভাবনাও হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও, আইটি (তথ্য প্রযুক্তি), স্বাস্থ্যসেবা পর্যটনের মতো উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন পরিষেবা ক্ষেত্রে দক্ষতার ব্যবধান পূরণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। সরকারের দ্বৈত পন্থা অব্যাহত রেখে দক্ষতা গরমিল সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। শ্রম-নিবিড় ক্ষেত্রে উত্পাদন বৃদ্ধি কর্মসংস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে, যখন বিদ্যমান কর্মীদের প্রশিক্ষণ তাদের পরিষেবা ক্ষেত্রে মসৃণভাবে রূপান্তরকে সহজ করে তোলে।

জাতীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে উচ্চ স্তরের শিক্ষা এবং উচ্চ-দক্ষ চাকরির মধ্যে অস্পষ্ট ব্যবধান দূর করা যেতে পারে, যা আসলে ব্যবধানকে চিহ্নিত করবে দক্ষ শ্রমের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে

উপসংহারমূলক পরামর্শ

শিক্ষা, স্কিল ইন্ডিয়া এবং ইতিমধ্যে উচ্চ-দক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে এমন নতুন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সমস্যাগুলি প্রশমিত করা যেতে পারে। জাতীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে উচ্চ স্তরের শিক্ষা এবং উচ্চ-দক্ষ চাকরির মধ্যে অস্পষ্ট ব্যবধান দূর করা যেতে পারে, যা আসলে ব্যবধানকে চিহ্নিত করবে দক্ষ শ্রমের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে২০২৫-২৬ বাজেটে শিল্প বৃদ্ধির উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। অনুৎপাদনশীল শ্রমকে আনুষ্ঠানিক উদ্যোগের আওতায় আনতে হবে এবং দেশীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে।

বিকশিত ভারত-এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য অর্থাৎ ২০৪৭ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের স্তরে পৌঁছনোর জন্য বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধির হারের প্রয়োজন। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ ফলাফল প্রয়োজন, যা উচ্চ উত্পাদনশীলতার মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে। কম রাজস্ব ঘাটতি দেশে বিনিয়োগ প্রবাহকে সক্ষম করতে পারলেও সরকারের শিল্পে বৃহত্তর মূলধন ব্যয় বরাদ্দ করা থেকে পিছপা হওয়া উচিত নয়। সরকারকে অবশ্যই উচ্চ ঘাটতি নিম্ন কর্মসংস্থানের মধ্যকার ফারাক দূর করতে হবে। এই বাজেটে বরাদ্দ করার বিষয়টি এক গুরুত্বপূর্ণের সন্ধিক্ষণের সূচনা করবে, যা বিকশিত ভারত-এর মঞ্চ তৈরি করতে পারে

 


আর্য রায় বর্ধন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি-র রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.