Author : Snehashish Mitra

Published on Dec 30, 2023 Updated 0 Hours ago

সাইকেলের ব্যবহারকে একীভূত করা এবং একটি ভালো সাইকেল চালানোর পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠা করা ভারতকে স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করবে

টেকসই শহুরে পরিবহণ — সাইকেল–বান্ধব শহর প্রয়োজন

রাষ্ট্রপুঞ্জ (ইউএন) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী মূল্যের পরিবহণ ব্যবস্থা হিসাবে সাইকেলের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ৩ জুনকে বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ সাধারণ পরিষদে ১৫ মার্চ ২০২২–এ স্থিতিশীল উন্নয়নকে উৎসাহিত করার জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে সাইকেল চালানোকে  অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। ডব্লিউএইচও বলেছে যে, স্বাস্থ্যের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে হাঁটা ও সাইকেল চালানোর জন্য নিরাপদ পরিকাঠামো অপরিহার্য। বিশ্বের কিছু বিশিষ্ট শহর একটি প্রাণবন্ত, কার্যকর ও সক্রিয় সাইক্লিং পরিকাঠামো দ্বারা চিহ্নিত। যাই হোক, বোগোটা (কলম্বিয়া) ব্যতীত হেলসিঙ্কি, আমস্টারডাম, কোপেনহেগেন, বার্লিন, তাইপে ও টোকিওর মতো শহরগুলির বেশিরভাগই উন্নত দেশগুলিতে অবস্থিত। একটি উন্নয়নশীল দেশের একটি শহরের পক্ষে সাইকেল চালানোর ভাল পরিকাঠামো থাকা বিরল। যদিও এই দেশগুলিতে নগর সম্প্রসারণ ও নগরায়ণ দ্রুত গতিতে ঘটছে, তবে গণপরিবহণের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসাবে সাইকেল চালানোর প্রতি মনোযোগ প্রায় নগণ্য।

বিশ্বের কিছু বিশিষ্ট শহর একটি প্রাণবন্ত, কার্যকর ও সক্রিয় সাইক্লিং পরিকাঠামো দ্বারা চিহ্নিত।



ভারতের শহরে সাইকেল

ভারতীয় শহরগুলিতে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির কর্মীদের বিশাল অংশের কারণে সাইকেলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। এই শ্রমিকেরা বিভিন্ন পেশায় জড়িত, যেমন সংবাদপত্র বিতরণ, গৃহকর্ম, নির্মাণ, ডেলিভারি/কুরিয়ার পরিষেবা ইত্যাদি। দুর্ভাগ্যবশত, ভারতে নগর পরিকল্পনা ও আইনে
মোটরচালিত যানবাহনের প্রতি উল্লেখযোগ্য পক্ষপাতিত্ব থাকার কারণে সাইকেল চালানোর অনুশীলনকে একীভূত করার বিষয়টিকে ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে, যা ভারতীয় শহরগুলিতে সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তার সমস্যাও তৈরি করেছে। কলকাতার মতো নির্দিষ্ট কিছু শহরে আবার শহরের ট্র্যাফিকের বিঘ্ন প্রতিরোধ ও শাস্তির জন্য প্রণীত ঔপনিবেশিক যুগের আইনকে, যেমন ‘ক্যালকাটা পুলিশ আইন ১৮৬৬’ (১৯১০ সালে সংশোধিত), পুলিশ কর্তৃপক্ষ সাইকেল আরোহীদের জরিমানা করার জন্য অপব্যবহার করে। পরিকল্পনা এবং কখনও কখনও আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে মোটরচালিত পরিবহণের পক্ষে এই কারণগুলি থাকা সত্ত্বেও, ভারতীয় শহরগুলিতে পরিবহণের ক্ষেত্রে হাঁটা এবং সাইকেল চালানো প্রাধান্য পায়।

সাম্প্রতিক
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (এনএফএইচএস) অনুসারে, ভারতের প্রায় ৫০ শতাংশ পরিবারের একটি করে সাইকেল রয়েছে। যদিও শহরাঞ্চলের মাত্র ১৩.৮ শতাংশ মানুষ যাতায়াতের জন্য গাড়ি ব্যবহার করেন, বেশিরভাগ পরিকাঠামোগত বিনিয়োগ গাড়ি পরিবহণের কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়। মুম্বইয়ের ক্ষেত্রে, ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা নির্দেশ করে যে মাত্র ২ শতাংশ ভ্রমণ সাইকেলে করা হয়।  এছাড়াও, বান্দ্রা–ওরলি সি–লিঙ্ক এবং ইস্টার্ন ফ্রিওয়ের মতো বেশ কয়েকটি নতুন সড়ক পরিকাঠামো প্রকল্পে সাইকেল যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। এই ধরনের উন্নয়নগুলি ২০১৬ সালে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেট অফ গ্রেটার মুম্বই (এমসিজিএম)–এর তৈরি করা ‘‌বৃহত্তর মুম্বইয়ের জন্য ব্যাপক গতিশীলতা পরিকল্পনা’‌ যে ধরনের  ‘‌নন–মোটরাইজড ট্রান্সপোর্ট (এনএমটি) ফার্স্ট পলিসি’‌–র কথা বলেছিল, তার বিপরীত। সেখানে পথচারীদের হাঁটা ও সাইকেল চালানোর সুযোগ বাড়ানোর পথনির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও নিরাপত্তার দিক থেকে ভারতীয় রাস্তায় মহিলা সাইক্লিস্টদের জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মহিলা সাইক্লিস্টরা রাস্তায় পুরুষ গাড়ি চালকদের অবাঞ্ছিত অঙ্গভঙ্গি এবং প্রতিকূল ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে অরক্ষিত, এবং এই ধরনের পরিস্থিতি ভারতে সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে একটি লিঙ্গ ব্যবধানের দিকে চালিত করেছে। শুধু তাই নয়, এই পরিস্থিতি মহিলাদের নির্জন রাস্তা এড়াতে তাদের যাতায়াতের ধরন পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে৷  


ভারতে নগর পরিকল্পনা ও আইনে মোটরচালিত যানবাহনের প্রতি উল্লেখযোগ্য পক্ষপাতিত্ব থাকার কারণে সাইকেল চালানোর অনুশীলনকে একীভূত করার বিষয়টিকে ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করেছে, যা ভারতীয় শহরগুলিতে সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তার সমস্যাও তৈরি করেছে।


সাইকেল চালানোর সুবিধা

দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট (টিইআরআই)–এর একটি
সমীক্ষা অনুসারে, যদি বাইসাইকেল স্বল্প দূরত্বের ভ্রমণের জন্য মোটরচালিত যানকে প্রতিস্থাপন করে, তবে বার্ষিক ১.৮ ট্রিলিয়ন ভারতীয় টাকা (২০১৫–১৬ সালে ভারতের বার্ষিক জিডিপির ১.৬ শতাংশ) মূল্যের উপকার পাওয়া যেতে পারে শক্তি সঞ্চয় (তেল সমতুল্য) ও সিওটু নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে পরিবহণ ক্ষেত্রে মোট সিওটু নির্গমনের ৮৭ শতাংশ ঘটে মোটর চালিত সড়ক পরিবহণের কারণে, এবং ভারতীয় শহরগুলিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের বড় কারণ যানবাহন নির্গমন।

কোভিড লকডাউন সময়কালে সাইকেল অনেকের কাছে পরিবহণের একটি পছন্দের মাধ্যম হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল, যখন অনেকে সাইকেলকে শারীরিক ও বিনোদনমূলক কার্যকলাপের জন্যও গ্রহণ করেছিল। পেট্রোল–চালিত যানবাহন ব্যবহারের উচ্চ খরচ এবং কম বেতনের কারণে গিগ–কর্মীদের (ডেলিভারি কর্মীদের) মধ্যে সাইকেলের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গ্রীষ্মের গরমে সাইকেল চালানো তাঁদের
শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলেছে। ভারতীয় শহরগুলি জুড়ে জনপ্রিয় ফুড জয়েন্টগুলির বাইরে এখন বিপুল সংখ্যক সাইকেল দেখা যায়, যেগুলি পরের অর্ডার আসার পরে ডেলিভারি কর্মীদের দ্বারা ব্যবহৃত হবে।

ভারতীয় শহরগুলিতে সাইক্লিং বাড়ানোর জন্য কী করা দরকার?

ভারতীয় শহরগুলিকে ‘‌বিশ্বমানের’‌ করার আকাঙ্ক্ষাকে অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই ফলাফলের দিকে চালিত সর্বোত্তম রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো তৈরির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। জলবায়ুর দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতীয় শহরগুলি চরম তাপ, তাপপ্রবাহ, বন্যা ও রোগের সূত্রপাতের আকারে বড় বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে, যার প্রতিকারের ব্যবস্থা হিসাবে সাইকেল চালানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া
নতুন শহরগুলির পরিকল্পনার সময় যেমন প্রয়োজন, তেমনই সেই উদ্দেশ্যে পুরনো শহরগুলিকে নতুনভাবে ডিজাইন করাও প্রয়োজন৷ সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সরকার ভারতীয় শহরগুলিতে সাইক্লিং অনুশীলনকে  মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে কিছু পদক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে স্মার্ট সিটি প্রোগ্রামের অধীনে ইন্ডিয়া সাইকেল ফর চেঞ্জ চ্যালেঞ্জ


ভারতের নগর পরিকল্পনা এই ধরনের নীতিগুলি থেকে শিখতে পারে এবং এমন পরিকাঠামো তৈরি করতে পারে যা সাইকেল চালানোর সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করবে।



রাজ্য স্তরে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ স্কুলের ছাত্রীদের সাইকেল প্রদানের জন্য কর্মসূচি শুরু করেছে, যা
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিঙ্গ ব্যবধান হ্রাস করার ক্ষেত্রে সফল বলে প্রশংসিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সবুজসাথী প্রোগ্রাম (সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নথিভুক্ত স্কুল শিশুদের সাইকেল প্রদান) স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে সামাজিক প্রভাবের কারণে ই–গভর্নেন্স বিভাগের অধীনে ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার জিতেছে। এই ধরনের দৃষ্টান্তগুলি দেখায় যে সাইকেলের মাধ্যমে চলাফেরার সুবিধা বহুগুণ প্রভাব ফেলতে পারে এবং মুক্তির লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ভারতের নগর পরিকল্পনা এই ধরনের নীতিগুলি থেকে শিখতে পারে এবং পরিকাঠামো তৈরি করতে পারে, এবং তা সাইকেল চালানোর সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করবে। ছোট শহরগুলির উদাহরণ, যেমন রাঁচি কলকাতার নিউটাউনের মতো সাম্প্রতিক শহুরে সমষ্টিগুলি, এমন পথ তৈরি করতে পারে যা সাইকেল–বান্ধব ভারতীয় শহরগুলির জন্য অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কিছু মৌলিক পদক্ষেপ, যেমন গর্তমুক্ত রাস্তা এবং সাইকেল লেন নিশ্চিত করা, সাইকেল ক্রয়ের উপর কর হ্রাস করা এবং প্রধান ট্রানজিট হাবগুলিতে (বাস, রেল, মেট্রো স্টেশন) সাইকেল পার্কিং স্টেশন তৈরি করা — ভারতীয় শহরগুলিতে সাইক্লিং অনুশীলনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মেট্রো রেলে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতীয় শহরগুলিতে গণ–পরিবহণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে, এমনকি রাজধানী শহর নয়াদিল্লিতেও, শেষ মাইলের সংযোগ একটি সমস্যা রয়ে গেছে। একটি মাল্টিমোডাল ইন্টিগ্রেশন প্ল্যানের মাধ্যমে শহুরে ভারতের মেট্রো স্টেশনগুলিতে সাইকেল বে তৈরি করা সমস্যাটি সমাধানের জন্য একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিশ্বব্যাপী, ভারতের সাইক্লিং অনুশীলনের সম্প্রসারণ তার
কপ২৬ (কনফারেন্স অফ পার্টিজ ২৬) প্রতিশ্রুতিগুলির অর্জনকেও
এগিয়ে নিয়ে যাবে, যার মধ্যে রয়েছে ‘‌২০৩০ সালের মধ্যে মোট প্রক্ষিপ্ত কার্বন নির্গমন এক বিলিয়ন টন কমানো’‌। সেই লক্ষ্যে সাইকেল ব্যবহারের কারণে ভারতের অর্জিত ক্রেডিটের মূল্যায়ন হবে প্রথম ধাপ, যা নিয়মিত সাইকেল ব্যবহারকারীদের উৎসাহিত করার জন্যও ব্যবহার করা উচিত। একটি সাইকেল এবং এনএমটি–বান্ধব শহুরে ভারত অবশ্যই সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল, সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন শক্তি, বৈষম্য হ্রাস ও টেকসই শহর ও জনসম্প্রদায়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সারিবদ্ধ হবে। যদিও বাইসাইকেল–বান্ধব শহরের লক্ষ্যে তৈরি একটি জাতীয় স্তরের নীতি অপরিহার্য, স্থানীয় অংশীদারদের (পৌরসভা, নগর স্থানীয় সংস্থা ও ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ) জড়িত করা ভারতীয় শহরগুলিতে সাইকেলের ফলাফল নির্ধারণ করবে।



স্নেহাশিস মিত্র অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আরবান স্টাডিজ–এর ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.