Author : Harsh V. Pant

Published on Apr 26, 2023 Updated 0 Hours ago

ইতালির ইন্দো–প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রে আছে এই ধারণা যে এই অঞ্চলটি হল তার কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমধ্যসাগরের প্রতিবেশী

শক্তিশালী ভারত–ইতালি সম্পর্ক ইন্দো–প্যাসিফিককে বদলে দিতে পারে

২ মার্চ ইতালির প্রধানমন্ত্রী  জর্জিয়া মেলোনি বিদেশমন্ত্রক ও অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত রাইসিনা ডায়ালগ ২০২৩ উদ্বোধন করেন। আগের দিন, দিল্লিতে তাঁর প্রথম সরকারি সফরের সময়, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং ভারত–ইতালি সম্পর্ককে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করে একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

তাঁর ভাষণে চারটি প্রধান বার্তা নতুন ইতালীয় নীতির দিকনির্দেশ করেছে: জাতীয় স্বার্থ ও ইউরোপীয় যৌথ পদ্ধতির মধ্যে একটি স্পষ্ট ভারসাম্য; আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার কীভাবে কাজ করা উচিত, বিশেষ করে ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে, সে সম্পর্কে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিয়মভিত্তিক বোঝাপড়া; আঞ্চলিক গতিশীলতায় ইউরোপের একটি পুনর্নবীকৃত ও শক্তিশালী ভূমিকার প্রতি সমর্থন; এবং নিজস্ব পরিচয়ের অভিন্ন ধারা ও আজকের বিশ্বের নতুন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের উপর ভিত্তি করে ভারত–ইতালি সম্পর্কের একটি বৃহত্তর ক্যানভাস।

ইতালির ইন্দো–প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রে আছে এই ধারণা যে এই অঞ্চলটি হল তার কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমধ্যসাগরের প্রতিবেশী। এই ভূরাজনৈতিক সংযোগ ভূমধ্যসাগরে ইতালির জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে বৃহত্তর ইন্দো–প্যাসিফিকের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে গভীরভাবে যুক্ত করে। একুশ শতকে যেভাবে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মিলন জাপানের জন্য তার বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির নতুন মাত্রার প্রতিনিধিত্ব করেছিল, রোম সেভাবে আজ একটি আন্তঃসংযুক্ত কিন্তু অশান্ত বিশ্বে ভূমধ্যসাগরীয় পৃথিবী ও ইন্দো–প্যাসিফিকের মধ্যে সংযোগগুলিকে ইতালীয় দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্র হিসাবে দেখে।

সরাসরি চিনের উল্লেখ না–করলেও, তাঁর ভাষণে বেশ কয়েকবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রতি তাঁর দেশের যে দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করেছেন তা হল আইনের শাসন সংরক্ষণের মাধ্যমে অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো–প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা ইতালি ও ভারত ধারাবাহিকভাবে সমর্থন করে আসছে। ইতালীয় সরকার উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য একটি উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ ‘‌মাত্তেই প্ল্যান’‌ শুরু করার পর রাইসিনাতে এসেছিল। মেলোনির সম্প্রতি উদ্বোধিত এই পরিকল্পনার মূল ধারণা হল ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ সীমান্তের জাতি–রাষ্ট্রগুলিকে সহায়তা করা, যাতে উগ্র মতাদর্শ ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তারকে ইতিবাচকভাবে রোধ করা যায় এবং চরম দারিদ্র্যের কারণে অবৈধ অভিবাসন হ্রাস করা যায়।

ইতালীয় সরকার উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য একটি উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ ‘‌মাত্তেই প্ল্যান’‌ শুরু করার পর রাইসিনাতে এসেছিল।

মেলোনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, “(‌এ হল)‌ সকলের জন্য বাস্তব সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে একটি সহযোগিতা। কোনও শিকারী উচ্চাকাঙ্ক্ষা ব্যতীত। অর্থনৈতিক বা অন্য কোনও রকমের জবরদস্তি ব্যতীত।’‌’‌ একথা বলার মাধ্যমে তিনি দক্ষিণ–পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকায় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)–এর মাধ্যমে চিনের ঋণের ফাঁদ পাতার অভিযানের থেকে একটি স্পষ্ট পার্থক্য চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে অতীতে ইউরোপ অন্যদের সমস্যায় পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছিল, এবং শুধুই নিজের দিকে মনোনিবেশ করেছিল। তাইওয়ানে চিনা হুমকি অথবা ভারতের সীমান্তে বা দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা উস্কানির কথা সরাসরি উল্লেখ না করলেও মেলোনি ইন্দো–প্যাসিফিকের জন্য সাম্প্রতিক ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যা এখানকার নিরাপত্তা অগ্রাধিকারের বিবেচনা–সহ এই অঞ্চলে ইউরোপের যুক্ত হওয়ার স্পষ্ট সংকেত।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দুই নেতা সম্পর্ককে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করতে সম্মত হয়ে একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। জাপানের সঙ্গে অনুরূপ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে এই ঘটনা ঘটল, এবং এরপর শীঘ্রই এমন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করার কথা আছে যা গভীর সামরিক সহযোগিতা এবং যৌথ প্রশিক্ষণের পথ প্রশস্ত করবে।

ইতালি–ভারত সম্পর্কের বর্ণনা দিয়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রী দুটি দেশের পরিচয়ের সমান্তরাল আঁকেন – উভয়েই যথাক্রমে ভূমধ্যসাগর ও ভারত মহাসাগরের প্রাকৃতিক কেন্দ্র, এবং প্রাচীন সংস্কৃতির আবাসস্থল। এখন ভারত–ইতালি স্টার্ট আপ ব্রিজ চালু করা এবং কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতায় ইতালীয় কনস্যুলেট জেনারেলের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই সম্পর্ককে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। এ ভাবে অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন থেকে সংস্কৃতি ও জ্ঞান উৎপাদনে পারস্পরিক উপযোগী সম্পর্ককে আরও বৈচিত্র্যময় করার অভিপ্রায় স্পষ্ট হয়েছে।

এই সবের আলোকে মেলোনির সফরের প্রাথমিক মূল্যায়ন ইতালির ইন্দো–প্যাসিফিক নীতিতে এই অঞ্চলের জন্য একটি আমূল ও ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় বলে মনে হয়। প্রায়শই নয়াদিল্লির প্রত্যাশা অনুযায়ী এই অঞ্চলে আরও সমমনস্ক অংশীদার আবির্ভূত হচ্ছে, এবং স্বল্পপাক্ষিক উদ্যোগের পরিবর্তনীয় ভূগোলকে গ্রহণ করে তার মধ্যে একীভূত হওয়ার জন্য এগিয়ে আসছে। পরবর্তী পদক্ষেপগুলি হবে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে এই উন্মুক্ততার কর্ষণ এবং ইতালির উপস্থিতি বজায় রাখা। এই উপস্থিতি ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে দুই নৌবাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তুলবে, এবং ভারত ও ইতালির ইন্দো–প্যাসিফিকে যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে তা উপলব্ধি করার জন্য সম্ভবত ইতালিকে একটি স্বল্পপাক্ষিক সূত্রে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।


এই ভাষ্যটি প্রথম ‘হিন্দুস্তান টাইমস’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.