-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের উত্থানের মাঝেই ইইউ এখন তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে জোরদার করার জন্য বহুমুখী পন্থা গ্রহণ করছে।
এ কথা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেওয়ার পর থেকেই এ কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, ইউরোপকে তার প্রতিরক্ষার জন্য সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তা সত্ত্বেও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের পরেই বিষয়টির গুরুত্ব সকলের বোধগম্য হয়েছে।
এই বছরের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবির্ভাবের ফলে সেই গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জোট ন্যাটোর প্রতি ট্রাম্পের ঘৃণা এখন সর্বজনবিদিত। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বাস করেন যে, ন্যাটো ‘আসলে সেই অকৃতজ্ঞ সুবিধাবাদী, যে মার্কিন সম্পদের ভাণ্ডার ক্রমশ নিংড়ে নিচ্ছে’।
ট্রাম্প ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে এক প্রকার রাজনৈতিক বোমাই ফেলেছিলেন। দক্ষিণ ক্যারোলিনায় একটি সমাবেশে ট্রাম্প একটি অভিজ্ঞতার কথা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন। একটি ‘বৃহৎ দেশের’ নেতা নাকি একবার ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি রুশদের বিরুদ্ধে কোনও মিত্রদেশকে আদৌ রক্ষা করবেন কি না, এমনকি যদি সেই মিত্রদেশ নিজেদের জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করতে ব্যর্থও হয়। তাতে নাকি ট্রাম্প উত্তর দিয়েছিলেন, ‘না, আমি সেই মিত্রদেশকে রক্ষা করব তো না-ই, বরং রাশিয়া যাতে সেই মিত্রদেশের সঙ্গে যা খুশি তাই করতে পারে, তার জন্য রাশিয়াকে আরও উৎসাহ দেব।’
সম্প্রতি রক্ষণশীল ব্রিটিশ জিবি নিউজ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, যদি ন্যাটোয় থাকা ইউরোপীয় দেশগুলি নিজেদের ‘ন্যায্য অংশ’ প্রদান করে, তা হলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় ফিরে এলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যাটোর সঙ্গেই সংযুক্ত রাখবেন… এ কথা ‘১০০ শতাংশ’ সুনিশ্চিত। তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নিজের ভাগ মিটিয়ে দেওয়া। কিন্তু অন্যের প্রদেয় ভাগ মেটানোর কাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়।’ যাই হোক, ন্যাটো থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কাজটি ট্রাম্পের জন্য মোটেও সহজ হবে না। ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেস ইতিমধ্যেই একটি বিল পাস করেছে, যাতে কোনও প্রেসিডেন্টই যেন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া জোট থেকে নিজের দেশকে প্রত্যাহার করতে না পারে।
ইউরোপ সম্পর্কে ট্রাম্পের চিন্তাভাবনার সবচেয়ে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে ইউক্রেনের উপর। রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে গত দু’বছরে ন্যাটো ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নাকি যুদ্ধের নিষ্পত্তি করতে পারতেন। এই কথার মাধ্যমে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। তবে তাঁর করা অন্যান্য মন্তব্য থেকে এ কথা সহজেই বোঝা যায় যে, ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকলে তিনি এমন একটি চুক্তির দিকে পরিস্থিতিকে ঠেলে দিতেন, যাতে ইউক্রেন তার পূর্বাঞ্চলের ভূমি রাশিয়ার কাছে সমর্পণ করতে বাধ্য হত।
ইতিমধ্যেই ২০২৪ সালে ইউক্রেনের যুদ্ধে অর্থায়ন চালিয়ে যাওয়ার জন্য রিপাবলিকান পার্টির ৬০ বিলিয়ন ডলারের একটি বিল পাস করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রভাবের যথেষ্ট লক্ষণ রয়েছে। গোলাবারুদের অভাবের দরুন ইউক্রেনীয়রা একটি পুনরুজ্জীবিত রাশিয়ার সম্মুখীন হচ্ছে, যার অস্ত্র শিল্প গত দু’বছরে নাটকীয় ভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ২০২৪ সালে ইউক্রেনের যুদ্ধে অর্থায়ন চালিয়ে যাওয়ার জন্য রিপাবলিকান পার্টির ৬০ বিলিয়ন ডলারের একটি বিল পাস করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রভাবের যথেষ্ট লক্ষণ রয়েছে। গোলাবারুদের অভাবের দরুন ইউক্রেনীয়রা একটি পুনরুজ্জীবিত রাশিয়ার সম্মুখীন হচ্ছে, যার অস্ত্র শিল্প গত দু’বছরে নাটকীয় ভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।
ইউক্রেনের পতন খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইউরোপের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে এবং এস্তোনিয়া ও লাটভিয়ার মতো বাল্টিক দেশগুলির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসনের আশঙ্কা তৈরি করবে, যে সব দেশের জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশই জাতিগত ভাবে রুশ। এটি অবশ্যই বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিকেও দুর্বল করে দেবে।
ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সম্প্রসারণ
ধীরে ধীরে অথচ স্থির ভাবে এখন ইউরোপীয়রা তাদের প্রতিরক্ষা ভঙ্গি পুনরুজ্জীবিত করার পথে এগোচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যরা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রায় ৩৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে, যা পিপিপি শর্তে রাশিয়ার সমান। কিন্তু এই ব্যয় অনেক দেশের মধ্যে বণ্টন করা হয়। ফলে তার প্রভাব যায় কমে। ইইউ-এর সামনে চ্যালেঞ্জটি শুধু অর্থ ব্যয় করাই নয়, বরং তার প্রতিরক্ষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত ২৭টি সদস্য ও নরওয়ের মধ্যে সমতা বজায় রেখে বণ্টন করাও।
সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশন তার অ্যাক্ট ইন সাপোর্ট অফ অ্যামিউনিশন প্রোডাকশন-এর (এএসএপি) অধীনে ৫০০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে, যাতে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প আগামী বছরের শেষ নাগাদ তার গোলাবারুদ উৎপাদন ক্ষমতা ২ মিলিয়ন শেল-এ উন্নীত করতে সমর্থ হয়। এটি কার্যকর ভাবে বর্তমান ক্ষমতাকে দ্বিগুণ করে দেবে। কমিশন ইউরোপীয় গোলাবারুদ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৩১টি ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প নির্বাচন করেছে।
এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, এএসএপি ইউক্রেনের ঘটনাপ্রবাহ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে, যেখানে গত অক্টোবর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা ইজরায়েলের কাছে গোলাবারুদ সংক্রান্ত ঘটনা ইউক্রেনীয়দের জন্য একটি গুরুতর ধাক্কা ছিল।
ইউরোপিয়ান ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি থ্রু কমিশন কমন প্রকিউরমেন্ট (ইডিআইআরপিএ) প্রকল্পটি ইউরোপিয়ান ডিফেন্স ফান্ডের (ইডিএফ) মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে সমন্বিত করার কথা বলে। এই প্রকল্পগুলির সম্মিলিত বাজেট হল ২ বিলিয়ন ইউরো এবং তার লক্ষ্য হল মৃতপ্রায় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিগত ও শিল্প ভিত্তিকে শক্তিশালী করা।
৩১০ মিলিয়ন ইউরোসম্পন্ন মোট বাজেটের ইডিআইআরপিএ তিনটি ক্ষেত্রে সাধারণ আমদানিকে সমর্থন করবে- ১) ছোট অস্ত্র, কামান, মর্টার এবং রকেটের জন্য গোলাবারুদ; ২) বায়ু এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা; এবং ৩) প্ল্যাটফর্ম এবং লিগ্যাসি ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান, ড্রোন ও সমর্থন ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন। এই বছরের জুলাই মাসের মধ্যে সদস্য দেশগুলির তরফে এই অঞ্চলগুলিতে এই প্রকল্পের প্রস্তাব পাওয়ার আশা রয়েছে। ইডিআইআরপিএ-র লক্ষ্য হল, ইইউ সদস্যদের তাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সাধারণত সরঞ্জাম আমদানি করতে উত্সাহিত করে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে ইউরোপীয় সক্ষমতা সুনিশ্চিত করার জন্য ইডিএফ কর্মপ্রকল্পের আবেদনের আহ্বান জানিয়েছে, যার জন্য ১.১ বিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে ইইউ ডিফেন্স ইনোভেশন স্কিমের (ইইউডিআইএস) মাধ্যমে পরিচালিত প্রতিরক্ষা স্টার্ট আপ।
পরিকল্পনাটি হল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ, বায়ু এবং স্থল মানববিহীন যানবাহন উন্নয়ন, মহাকাশে নিরাপদ যোগাযোগ সুনিশ্চিত করার প্রকল্পগুলিতে অর্থায়ন করা।
পরিকল্পনাটি হল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ, বায়ু এবং স্থল মানববিহীন যানবাহন উন্নয়ন, মহাকাশে নিরাপদ যোগাযোগ সুনিশ্চিত করার প্রকল্পগুলিতে অর্থায়ন করা।
ইডিএফ হল সেই সাধনী, যার সাহায্যে কমিশন ইইউ ও নরওয়ে জুড়ে বড় ও ছোট সংস্থাগুলির মধ্যে গবেষণার প্রচারের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির আশা করছে। এটি তার সদস্যদের মধ্যে নতুন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সহযোগিতামূলক গবেষণা ও উন্নয়নকে সমর্থন জোগানোর জন্য ২০২১-২০২৭ সময়কালের মধ্যে ৮ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের একটি তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছে।
এই সমস্ত ব্যবস্থা কমিশনের ইউরোপিয়ান ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি প্রোগ্রাম (ইডিআইপি) দ্বারা আকার পেয়েছে, যা শিল্প প্রস্তুতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিকে সুনিশ্চিত করতে চায়। প্রথম ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প কৌশলটি এই বছরের মার্চের শুরুতে অনুমোদিত হয়েছিল। এটিতে ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রতিযোগিতা ও প্রস্তুতিকে সমর্থন জোগানোর জন্য একটি উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।
এর অংশ হিসেবে একটি ইউরোপিয়ান ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি প্রোগ্রামের (ইডিআইপি) ইডিআইএস-এর অধীনে সুদৃঢ় ব্যবস্থা বাস্তবায়ন শুরু করার জন্য কমিশন তার প্রথম কার্যকরী ব্যবস্থার অনুমোদন করেছে। এর আওতায় ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। সর্বোপরি, এটির লক্ষ্য হল ইইউ-এর প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিগত এবং শিল্প ভিত্তির প্রতিযোগিতা ও স্থিতিস্থাপকতাকে জোরদার করা। এটি ইউক্রেনীয় পুনরুদ্ধার, পুনর্গঠন এবং আধুনিকীকরণ-সহ সহযোগিতা প্রদান করবে। এর মূল লক্ষ্য হবে স্থির ও নিয়মিত পরিমাণে প্রতিরক্ষা পণ্যগুলি সরবরাহ করা।
সুতরাং সামগ্রিক ভাবে, ইইউ এখন তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করার জন্য একটি বহুমুখী পন্থা গ্রহণ করছে, যার মধ্যে প্রথম ও সর্বাগ্রে রয়েছে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি। দ্বিতীয়টি হল ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ইডিএফ-এর প্রতিষ্ঠা। তৃতীয় পন্থার আওতায় অনুকরণের পরিমাণ কমাতে ইডিআইপি-র মতো উদ্যোগের মাধ্যমে যৌথ আমদানিকে চালিত করা হবে। এ ছাড়াও, ইইউ সদস্যদের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে এবং গোলাবারুদ সরবরাহ ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মতো সুস্পষ্ট ব্যবধানগুলি পূরণ করার চেষ্টা চলছে।
তা সত্ত্বেও ইউরোপ অতীতের বোঝাকে অস্বীকার করতে পারে না। এখনও পর্যন্ত ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ৫৬ বিলিয়ন ইউরো কম রয়েছে। তবে ভাল দিক হল এই যে, গত এক দশকে এই ঘাটতির পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ন্যাটো কর্মকর্তাদের মতে, এর দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য এই বছর তাদের জিডিপি-র ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে, যা ২০১৪ সালের সংখ্যার তুলনায় মাত্র তিনটি বেশি।
এমনকি এখনও নিজেদের আর্থিক অবস্থার কারণে ইতালি, স্পেন, বেলজিয়ামের মতো অনেক বড় দেশই ২ শতাংশ বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। জার্মানির মতো মহাশক্তিধর দেশও বেঞ্চমার্ক পূরণের জন্য মাত্র ১.৩৯ শতাংশ ব্যয় করেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় ১৪ বিলিয়ন ইউরো কম। গত বছর ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ১.২ ট্রিলিয়ন ইউরোর দুই তৃতীয়াংশ এসেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে, যা কিনা ইইউ, ব্রিটেন ও নরওয়ের তরফে সম্মিলিত ভাবে ব্যয় করা ৩৬১ বিলিয়ন ইউরোর দ্বিগুণেরও বেশি।
এমনটা নয় যে, ইউরোপের দেশগুলি চেষ্টা করছে না। পোল্যান্ডের মতো দেশও রয়েছে, যাদের রাশিয়ার প্রতি চিরাচরিত ভয় রয়েছে এবং যারা ২০২৪ সালে তার জিডিপি-র ৪ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করার লক্ষ্য স্থির করেছে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রচেষ্টার কারণে ইউক্রেন গোলাবারুদের বড় চালান পেতে চলেছে, যারা বিভিন্ন উত্স থেকে প্রায় এক মিলিয়ন শেল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল।
সম্প্রতি ওয়েমার ট্রায়াঙ্গল নামে পরিচিত ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতারা ইউক্রেনের বর্তমান গ্লানিময় পরিস্থিতির মুখে শক্তি ও ঐক্যের ধারণা প্রদর্শনের জন্য সম্মিলিত হয়েছেন। তাঁরা যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম হল এই ফরাসি পরামর্শ পরিত্যাগ করা যে, গোলাবারুদ সংগ্রহ কেবল ইউরোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বরং তারা বলেছে, গোটা বিশ্বকে সাহায্যের হাত এগিয়ে দিতে হবে। ফ্রান্স এবং জার্মানিকে ইউরোপে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হবে এবং তারা ভবিষ্যতের যুদ্ধ বিমান ব্যবস্থা ও প্রধান গ্রাউন্ড কমব্যাট সিস্টেমের মতো যৌথ সামরিক প্রকল্পগুলির নেতৃত্বও দিচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত মার্কিন ক্ষমতার আকস্মিক প্রত্যাহার ইউরোপের জন্য যে ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ভূ-রাজনৈতিক বিষয় থেকে শুরু করে কৌশলগত বিষয়গুলি পর্যন্ত… এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলি সামলানোর দায়িত্ব নিতে হবে ইউরোপকে।
তবে রাশিয়া থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ সমগ্র বিশ্বের কাছে ইউরোপকে দর্শাতে হবে যে, তারা নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দেখভাল করতে সক্ষম এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তারা সমর্থ।
ভারতের উপর প্রভাব
ভারতের উপর এর কি আদৌ প্রভাব পড়বে? তেমন গুরুতর কিছু অবশ্যই নয়। ইইউ প্রতিরক্ষা শিল্পের সমন্বিতকরণ প্রতিরক্ষা কর্মসূচিতে সম্ভাব্য ভবিষ্যতের সহযোগিতাকে সক্ষম করে তুলবে।
ভারত তার প্রতিরক্ষা শিল্প ঘাঁটির প্রচার করতে চাইছে এবং মার্কিন শিল্পের শক্তির বিকল্প হিসেবে ইউরোপের সঙ্গে সহযোগিতা ভারতের জন্য কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে।
ভারত তার প্রতিরক্ষা শিল্প ঘাঁটির প্রচার করতে চাইছে এবং মার্কিন শিল্পের শক্তির বিকল্প হিসেবে ইউরোপের সঙ্গে সহযোগিতা ভারতের জন্য কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে।
আর একটি প্রেক্ষিত হল ন্যাটো থেকে মার্কিন প্রত্যাহার এবং তার ফলস্বরূপ ইউক্রেনের পতনের ক্ষেত্রে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। নিঃসন্দেহে নির্ভরযোগ্য মিত্র ও অংশীদার হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির উপর প্রভাব পড়বে এবং তা কেবল মাত্র তার মিত্রদের জন্যই নয়, ভারতের মতো অংশীদারের উপরেও গুরুতর প্রভাব ফেলবে।
মনোজ জোশি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Manoj Joshi is a Distinguished Fellow at the ORF. He has been a journalist specialising on national and international politics and is a commentator and ...
Read More +