Published on Jan 15, 2022 Updated 0 Hours ago

মৎস্যজীবীদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সমস্যার আন্তর্জাতিকীকরণ কি ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের ক্ষতি করবে?

শ্রীলঙ্কা: মৎস্যজীবীদের নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধের ‘আন্তর্জাতিকীকরণ’ বিরূপ প্রভাব ফেলবে

রিপোর্টে প্রকাশ, শ্রীলঙ্কার মৎস্যমন্ত্রী ডগলাস দেবানন্দ কলম্বোয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্টিন কে কেলির সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ দিনের মৎস্যজীবী সংক্রান্ত সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনায় বসেছেন, যার প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী। এই পদক্ষেপের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকুক বা না থাকুক, এর অর্থ দাঁড়ায় যে, শ্রীলঙ্কা — অথবা অন্তত পক্ষে মন্ত্রী দেবানন্দ — সর্বতো ভাবে দ্বিপাক্ষিক একটি বিষয়ের আন্তর্জাতিকীকরণ চাইছেন।

মন্ত্রী দেবানন্দ শ্রীলঙ্কার তামিল সংখ্যাগুরু উত্তরাঞ্চলের এক জন তামিল মন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ ২০১৯ সালের শেষে যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তিনি প্রথা ভেঙ্গে এক জন তামিলকে মন্ত্রিপদে আসীন করেন। এমনকি পরের বছর পার্লামেন্ট নির্বাচনের পরেও তিনি দেবানন্দকে একই পদে বহাল রাখেন। যে হেতু দ্বিপাক্ষিক মৎস্যজীবী সমস্যায় শুধু মাত্র তামিলনাড়ু এবং দক্ষিণ ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরির তামিলভাষী মৎস্যজীবীরা জড়িত, তাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া হয়তো এমনটা ভেবে থাকবেন যে, বিষয়টিতে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতিগত এবং ভাষাগত সখ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তত এমনটাই মনে হচ্ছে।

রাজনৈতিক সাম্যাবস্থা

মার্কিন দূতের সঙ্গে আলোচনায় দেবানন্দ ভারতীয় মৎস্যজীবীদের ক্রমাগত ‘চোরাশিকার’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে,এই ঘটনায় শ্রীলঙ্কার উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলের গরিব তামিল মৎস্যজীবীদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, যাঁরা দশকের পর দশক সি টাইগারস সহ এল টি টি ই-র যুদ্ধ এবং হিংসার ফলে জীবিকা হারানোর করুণ অবস্থা থেকে এখনও সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। যদিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর অভিযোগের সত্যতা আছে — যা ভারতও অস্বীকার করেনি — তবুও তাঁর এই বিষয়টির সমাধানে আন্তর্জাতিক শক্তিকে জড়িয়ে ফেলার প্রচেষ্টা ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক সাম্যাবস্থাকে বিঘ্নিত করবে। এই সাম্যাবস্থাই এত দিন দুই দেশের সরকারি এবং বেসরকারি অংশীদারদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করেছে।

দ্বিপাক্ষিক মৎস্যশিকার, চোরাশিকার এবং ভারতীয় মৎস্যজীবীদের উপরে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর গুলি চালানোর মতো ঘটনাগুলি শুধু মাত্র কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় কলম্বোর ভারতীয় হাই কমিশন অথবা নয়াদিল্লির শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনের মাধ্যমে।

আমেরিকার সঙ্গে বৈঠকের পরে জারি করা এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কা মৎস্যমন্ত্রক জানিয়েছে, রাষ্ট্রদূত কেলির তরফে জানতে চাওয়া হয় যে বিষয়টি নিয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল কি না। দেবানন্দ জানান যে, তিনি বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন এবং মৎস্যমন্ত্রী অনিতা আর রাধাকৃষ্ণনের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। তাঁরা দেবানন্দের উদ্বেগের প্রতি সমর্থন জানালেও তামিলনাড়ু এবং ভারত সরকার চোরাশিকার রুখতে কোনও নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, এমনটাও দাবি করেন তিনি।

আর ঠিক এখানেই প্রসঙ্গটিতে এমন কিছু নতুন কূটনৈতিক বিষয় জড়িয়ে পড়ছে যেগুলি ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের প্রেক্ষিতে অভূতপূর্ব এবং যেগুলি এড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিল। দেবানন্দের উদ্যোগটি আদৌ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া এবং / অথবা প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপক্ষ দ্বারা সমর্থিত কি না, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি এখনও। এমনকি কে এই বৈঠকটির জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন, সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি এমন এক সময়ে যখন ভারতে স্থিত মার্কিন দূতাবাসগুলি ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে সব দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের উপরে গভীর আগ্রহের সঙ্গে নজর রেখে চলেছে।

তৃতীয়ত, শ্রীলঙ্কা সংক্রান্ত সব বিষয়ে — বিশেষত দ্বীপরাষ্ট্রটির জাতিগত সমস্যা, বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন এবং / অথবা প্রত্যাবর্তন এবং মৎস্যজীবীদের সমস্যা — তামিলনাড়ুর সরকার, রাজনৈতিক এবং নাগরিক সমাজ ধারাবাহিক ভাবে তাদের উদ্বেগের কথা শুধু মাত্র নয়াদিল্লির কাছেই জানিয়েছে যেমনটা নির্দেশিত আছে ভারতীয় সংবিধানে। রাজ্য সরকারের তরফে — কলম্বোয় হোক বা চেন্নাইতে — দ্বিপাক্ষিক মৎস্যজীবী সংক্রান্ত আলোচনার আয়োজন করা হলেও এই সব উদ্যোগের স্বীকৃতি এবং সূচনার জন্য কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়েছে।

বাস্তবে, এই বিষয়ে ভারতীয় সংবিধানের রূপরেখা প্রায় শ্রীলঙ্কার মতোই। ফারাক শুধু এখানেই যে শ্রীলঙ্কার অঞ্চলগুলি ভারতীয় রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মতো ক্ষমতাসম্পন্ন নয়। দ্বিপাক্ষিক মৎস্যশিকার, চোরাশিকার এবং ভারতীয় মৎস্যজীবীদের উপরে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর গুলি চালানোর মতো ঘটনাগুলি শুধু মাত্র কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশন অথবা নয়াদিল্লির শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনের মাধ্যমে।

এই চুক্তিতে আনক্লস বা ইউ এন সি এল ও এস-এর সেই বিধানকে দর্শানো হয় যেখানে মেডিয়ান লাইন বা দুই দেশের মধ্যরেখাকে আই এম বি এল নির্ধারণে ব্যবহার করায় ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং যেখানে অংশীদার দেশগুলির সম্মতিক্রমে সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী দ্বারা তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবী এবং তাঁদের নৌকা আটক করার নির্দিষ্ট ঘটনার সময়েও রাজ্য সরকার এবং চেন্নাইয়ে শ্রীলঙ্কার ডেপুটি হাই কমিশন পরস্পর প্রয়োজনীয় তথ্য আদানপ্রদান করে। অতীতে যখন চেন্নাইয়ে দ্বিপাক্ষিক মৎস্যজীবী সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে, উভয় পক্ষই খুঁটিনাটি তথ্য বিনিময়ে জোর দিয়েছে এবং প্রতি বারই মূল সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশিকা জারির ক্ষমতা থেকেছে কলম্বো এবং নয়াদিল্লির হাতে।

প্রসঙ্গ কাচ্চাতিভু

কলম্বোর তরফে মন্ত্রিপর্যায়ের উদ্যোগকে তামিলনাড়ুর দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা (এ আই ডি এম কে) এবং এম করুণানিধির (ডি এম কে) ১৯৭৪ সালের ‘আই এম বি এল চুক্তি’র বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার প্রেক্ষিতেও দেখা উচিত, যা দুই দেশের মধ্যে প্রথম বারের জন্য ‘আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমান্ত রেখা’ নির্ধারণ করে। এর দু’বছর পরে ১৯৭৬ সালের সংশোধিত চুক্তিতে নতুন ধারাগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

দুই দেশই এর অব্যবহিত পরেই ইউ এন কনভেনশন অন দ্য ল অব সিজ-এর (ইউ এন সি এল ও এস-১) আওতায় নিজেদের চুক্তির কথা বিজ্ঞাপিত করে। এই চুক্তিতে আনক্লস বা ইউ এন সি এল ও এস-এর সেই বিধানকে দর্শানো হয় যেখানে মিডিয়ান লাইন বা দুই দেশের মধ্যরেখাকে আই এম বি এল নির্ধারণে ব্যবহার করায় ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং যেখানে অংশীদার দেশগুলির সম্মতিক্রমে সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এর ফলে কাচ্চাতিভু নামক ক্ষুদ্র দ্বীপটি ভারতীয় সৈকতের নিকটবর্তী হলেও সেটি আই এম বি এল অনুযায়ী শ্রীলঙ্কার আওতাধীন। তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবী এবং রাজনীতিকেরা প্রায়ই এ হেন চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কারণ এর ফলে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর টহলদার নৌকাগুলি তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবীদের নয়াদিল্লি দ্বারা স্বীকৃত শ্রীলঙ্কার জলভাগে যাতায়াতের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের কাছাকাছি আসতে সক্ষম হচ্ছে।

বাস্তবে জয়ললিতা এবং করুণানিধির ব্যক্তিগত উদ্যোগে নথিভুক্ত করা আবেদন দুটি বিগত বছরগুলিতে দুই আবেদনকারীর মৃত্যুর পরে অফলপ্রসূ হয়ে পড়েছে। কিন্তু তা ডি এম কে রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের নেতৃত্বাধীন দল অথবা বিরোধীপক্ষ এ আই এ ডি এম কে-কে একটি সংগঠন হিসেবে অতীতের পথে হেঁটে নতুন করে আবেদন পেশ করা থেকে আটকাতে পারে না। যদিও উভয়ের কেউই এমনটা করার কথা ভাবছে না। এমনটা হলে এই আবেদন স্থায়িত্ব পেতে পারে এবং তা প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত কোনও একক ব্যক্তির জীবদ্দশার উপরে নির্ভর করবে না।

রাজনৈতিক ভাবে জয়ললিতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অন্তত দু’দফায় সর্বসমক্ষে নয়াদিল্লির প্রতি কাচ্চাতিভুকে নিজেদের আওতায় আনার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। ভারতে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে শাসক বিজেপি সরকারের পরিবহণ মন্ত্রী বর্ষীয়ান সেনা প্রধান জেনারেল ভি কে সিং তামিলনাড়ুতে ঘোষণা করেন যে, নয়াদিল্লি ‘উল্লেখযোগ্য চেষ্টা’ চালাচ্ছে যাতে তারা পুনরায় এই ক্ষুদ্র দ্বীপটির দখল নিতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জয়ললিতার মন্তব্যে নয়াদিল্লি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও, তামিলনাড়ু জেনারেল সিংয়ের ঘোষণাকে ফাঁপা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মনে করে তা খারিজ করেছে। এমন প্রতিশ্রুতি রাখা সম্ভব নয় বলেই সকলের ধারণা।

নয়াদিল্লির তরফে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের দ্বারা আই এম বি এল লঙ্ঘন করার কথা স্বীকার করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে ভুল শোধরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি, যাতে তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবীদের জীবিকার সংস্থানে কোনও প্রভাব না পড়ে, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।

যদিও এ কথা অনস্বীকার্য যে সব সরকারের আমলেই নয়াদিল্লি ধারাবাহিক ভাবে আনক্লস বিজ্ঞপ্তির উপরে জোর দিয়েছে এবং নির্দ্বিধায় এ কথা ঘোষণা করেছে যে, সত্তরের দশকের দুই পক্ষের যৌথচুক্তি পুনরায় পর্যালোচনা করার কোনও প্রয়োজন নেই। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে তদানীন্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি সুপ্রিম কোর্টের এক শুনানিতে যুদ্ধ ছাড়া কাচ্চাতিভু ‘পুনরুদ্ধারের’ অসম্ভবতার কথা উল্লেখ করেন।

দ্বিপাক্ষিক পুকুর

এ ছাড়াও অধিক গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক দুশ্চিন্তার একটি কারণ বর্তমান যেটি সম্পর্কে শ্রীলঙ্কা মৎস্যমন্ত্রকের অবগত হওয়া উচিত। যদিও অনেকেই এই বিষয়টা খেয়াল করেননি এবং কেউই এটাকে স্বীকৃতি দেননি যে ১৯৭৪-৭৬ চুক্তির ফলে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার সংযোগকারী পক-প্রণালী একটি ‘দুই দেশীয় পুকুরে’ পরিণত হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে সংশ্লিষ্ট আনক্লস ধারার আওতায় সেখানে অন্য সব দেশের অধিকার খারিজ করার মাধ্যমে।

সহজ কথায়, এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তিটিতে পক-প্রণালীতে আন্তর্জাতিক মৎস্যশিকার এবং জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নয়াদিল্লির তরফে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের দ্বারা আই এম বি এল লঙ্ঘন করার কথা স্বীকার করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে ভুল শোধরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি, যাতে তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবীদের জীবিকার সংস্থানে কোনও প্রভাব না পড়ে, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কা বর্তমানে আই এম বি এল চুক্তি থেকে উদ্ভূত বিশেষ বিশেষ উদ্বেগগুলির ‘আন্তর্জাতিকীকরণ’ করছে, তা ইচ্ছাকৃতই হোক বা অন্য কোনও কারণে। ফলে কাচ্চাতিভু প্রসঙ্গটি পুনরায় আলোচনায় উঠে আসতে পারে। এমনটা ভারতের তরফে করা না হলেও এর ফলে পক প্রণালী সংক্রান্ত যে একচেটিয়া সুবিধে দুই দেশ ভোগ করছে, তাতে এ বার তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি লক্ষ করা যেতে পারে। ভারতীয় সংবিধানের আওতায় পদ্ধতিগত সমস্যাগুলিকে কেন্দ্র করে জয়ললিতা-করুণানিধির পেশ করা আবেদনগুলিতে চুক্তিগুলির ক্ষেত্রে শুধু ভারতের তরফে আধিকারিক মহলে অনুমোদনেই থেমে না থেকে সংসদ দ্বারা অনুমোদনের পক্ষে সওয়াল তোলা হয়েছিল।

দুই দশক আগে নয়াদিল্লির তৎকালীন বাজপেয়ী সরকার শ্রীলঙ্কা প্রদক্ষিণকারী (যা বর্তমানে চিন-প্রভাবিত হাম্বানটোটা) পূর্ব-পশ্চিম-পূর্ব করিডর ধরে ভারতীয় জাহাজ চলাচলের সময় এবং খরচ কমানোর জন্য রাম সেতু প্রকল্পের সূচনা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে দাবি করেছে যে, নতুন প্রকল্পটি চালু হলে যদি পক প্রণালী এবং তৎসংলগ্ন মান্নার উপসাগরে বাণিজ্যিক ভাবে জাহাজ চলাচল সম্ভব হয়, তা হলে তারা আনক্লসের আওতায় ‘সমুদ্রে চলাচলের স্বাধীনতা’ চাইবে, যেমনটা তারা দক্ষিণ চিন এবং পূর্ব চিন সাগরের ক্ষেত্রে দাবি করেছে।

রাম সেতুর বিন্যাস শুধু মাত্র দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগ দ্বারা প্রভাবিত কি না, এই বিষয়টি বর্তমানে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন থাকায় প্রকল্পটির কাজ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আটকে আছে। এই প্রেক্ষিতেও শ্রীলঙ্কার মৎস্যমন্ত্রকের কলম্বোয় তৃতীয় কোনও দেশের কাছে মধ্যস্থতার জন্য শরণাপন্ন হওয়া দুই দেশের মৎস্যজীবী ও সরকারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বিপন্ন করে তুলতে পারে এবং এর পাশাপাশি ভারতে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পরিহারযোগ্য আইনি মারপ্যাঁচের নতুন রাস্তা খুলে দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে তামিলনাড়ুর নাগরিক সমাজ এবং রাজনীতিকদের একাংশ এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়েছেন যেখানে রাজ্যের মৎস্যজীবীদের জীবিকার ক্ষতি এবং প্রাণহানির মতো বিষয়গুলির প্রেক্ষিতে মৎস্যজীবীদের সমস্যাগুলি আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয়ে (আই সি জে) উপস্থাপন করার যুক্তি-বুদ্ধির কথা বার বার উঠে এসেছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.