Author : Jaibal Naduvath

Published on Feb 15, 2024 Updated 0 Hours ago

সত্তার সন্ধান যুবসমাজকে বিভাজনমূলক মতাদর্শের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করা যেতে পারে।

বিশ্বাসের ছায়া: জিহাদ, জাতীয় সত্তা এবং ভারতের স্থিতিস্থাপকতা

মধ্যপ্রাচ্য (পশ্চিম এশিয়া) এবং আফগানিস্তানের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলি জিহাদি উন্মাদনা দ্বারা চালিত বিদেশি যোদ্ধাদের সমাবেশস্থল হয়ে উঠছে। এমনকি গাজাতেও - যেখানে ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য সেনাদের যুদ্ধে নামার বিষয়টিকে বাধা দেয় – বিদেশি যোদ্ধাদের উদ্দেশ্য বা সম্পৃক্ততাকে হ্রাস করতে পারেনিই একই পরিস্থিতি চেচনিয়ার পাশাপাশি সিরিয়া- ইরাক এবং আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়েছিল, যেখানে হাজার হাজার আদর্শগত ভাবে অনুপ্রাণিত বিদেশি যোদ্ধাদের ধর্মের উস্কানি দিয়ে নানা জটিল সংঘাতে টেনে আনা হয়েছিল। জিহাদি দলগুলি নিজেদের শূন্য পদসংখ্যা পূরণ করার জন্য দুঃখ-দুর্দশার কাহিনি প্রচার করতে এবং আসল ধর্মকে বিকৃত করতে পারদর্শী। একটি বৃহত্তর কর্মকাণ্ডের শরিক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে বহু মানুষই ফ্রান্স এবং মলদ্বীপের মতো দূরবর্তী অঞ্চলে এমন পরিস্থিতি ও দ্বন্দ্বের মাঝে লড়াই করতে চলেছেন, যে সম্পর্কে তাঁরা নিজেরাই খুব একটা অবগত নন। আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, আইএসআইএস যোদ্ধাদের প্রায় আনুমানিক দুই-তৃতীয়াংশ বিদেশি বিদ্রোহী

 

জিহাদি দলগুলি নিজেদের শূন্য পদসংখ্যা পূরণ করার জন্য দুঃখ-দুর্দশার কাহিনি প্রচার করতে এবং আসল ধর্মকে বিকৃত করতে পারদর্শী।

 

ভিন্ন প্রভাব

তা সত্ত্বেও জিহাদি প্রচার আপাতদৃষ্টিতে অন্য দেশের তুলনায় কিছু দেশের উপর বেশি প্রভাব ফেলেছে। এই স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধাদের জনসংখ্যাগত তত্ত্বের উপর মনোনিবেশ করলে এক চিত্তাকর্ষক বিন্যাস লক্ষ করা যায়, যার একটি সুবিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের উৎপত্তি হয় মধ্যপ্রাচ্য মধ্য এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইসলামের কেন্দ্রভূমিতে অথবা পশ্চিমের সমৃদ্ধ, উদারপন্থী ভাবনা দ্বারা চালিত অভিবাসী গোষ্ঠীর মধ্য থেকে। আইএসআইএস-এর বিদেশি যোদ্ধাদের উপর বেনমেলেচ এবং ক্লোর-এর করা ২০১৬ সালের সমীক্ষা দর্শিয়েছে যে, এই বিদেশি যোদ্ধাদের অর্ধেকেরও বেশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে এসেছে। যাই হোক, চমকে দেওয়ার মতো সত্যিটা হল, এক-চতুর্থাংশেরও বেশি যোদ্ধা পশ্চিমী দেশগুলি থেকে আগত। যখন আপেক্ষিক জনসংখ্যার আকার বিবেচনা করা হয়, তখন এই পরিসংখ্যানটি আরও শিক্ষণীয় হয়ে ওঠে। জনসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের (ইউকে) মতো অমুসলিম রাষ্ট্র থেকে আগত বিদেশি যোদ্ধার সংখ্যা প্রতি মিলিয়নে যথাক্রমে ২৬ জন এবং ১২ জন। অন্য দিকে ইন্দোনেশিয়া মিশরের মতো বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে সেই পরিসংখ্যান প্রতি মিলিয়নে যথাক্রমে তিন এবং ছয় এর উলটো দিকে আবার ভারত ও সিঙ্গাপুরের মতো উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা-সহ অ-মুসলিম দেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই), ওমান, বাহরাইন মালয়েশিয়ার মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে নিম্ন স্তরের নিয়োগ দেখা গিয়েছে। ফলে কিছু সমাজ কেন অন্যদের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। এটি এমন এক সময়ে আরও চাপের বিষয় হয়ে উঠেছে, যখন বিস্তৃত বৃত্ত জুড়ে মুসলিম দেশগুলি অশান্তির মধ্যে রয়েছে এবং জিহাদি গোষ্ঠীগুলিকে তাদের বিশ্বাসভিত্তিক নিপীড়নকে কেন্দ্র করে নির্মিত তাদের শিকারের আখ্যানকে আরও শক্তিশালী করে তোলার প্রণোদনা জোগাচ্ছে।

 

উম্মাহ এবং বিবিধ প্রভাবের মাঝে

মুসলিম বিশ্বের কিছু অংশে - যেখানে বিশ্বাস দৈনন্দিন জীবনের দিকগুলিকে পরিচালিত করে - একটি দুর্বল অংশ সহজেই উস্কানিমূলক জিহাদি বক্তব্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এই সংবেদনশীলতার জন্য দায়ী করা যেতে পারে বিশ্বায়ন থেকে শুরু করে প্যান-ইসলামবাদের মতো কারণগুলিকে, যেখানে ‘উম্মাহ’-র অভিন্ন সাধারণ উদ্দেশ্যের মধ্যে নিহিত রয়েছে গোটা বিশ্বের মুসলিম সমষ্টি। প্যান-ইসলামবাদ একটি রাজনৈতিক গঠন উম্মাহ’-র একত্বের উপর জোর দেয় এবং একটি শক্তিশালী ধ্বংসাত্মক সাম্প্রদায়িক পরিচয়কে উৎসাহিত করতে চায়। এটি প্রায়শই ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সংগ্রাম করার মাধ্যমে আত্ম-পরিচয় তৈরির ধারণাকে উস্কানি জোগায়। অন্য দিকে, ইসলামের উপর বিভিন্ন প্রভাব জনগণের আরও বিশুদ্ধবাদী বা সংরক্ষণশীল অংশের মধ্যে কঠোর মতবাদের ব্যাখ্যাকে পুনরুত্থানের দিকে পরিচালিত করছে। এটি জিহাদি মতাদর্শের জন্য উর্বর ভূমি চাষ করারই মতো, যেটিকে তাঁরা নিজেদের ধর্মযুদ্ধে ধর্মীয় বিশুদ্ধতারক্ষায় সুই জেনেরিস বা বিশিষ্টতা বলে মনে করেন। রাষ্ট্রের ইসলামিক ভিত্তি প্রায়শই এই ধরনের মৌলবাদী স্ব-ন্যায্যতার জন্য একটি সুবিধাজনক অজুহাত প্রদান করে, যা এই বিপজ্জনক যৌক্তিকতাকে বৈধতার শান জোগায়।

 

প্যান-ইসলামবাদ একটি রাজনৈতিক গঠন উম্মাহ’-র একত্বের উপর জোর দেয় এবং একটি শক্তিশালী ধ্বংসাত্মক সাম্প্রদায়িক পরিচয়কে উৎসাহিত করতে চায়।

 

নাত্তীকরণের বিপদ

পশ্চিমে এই ধারণাটিই অভিবাসীদের আত্তীকরণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অভিবাসী সম্প্রদায়গুলি আত্তীকরণের সঙ্গে যুঝতে বাধ্য হয় এবং এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যেগুলিকে স্বাধীন সংস্থানের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এগুলি তিন-চার প্রজন্ম থেকে কয়েক দশকব্যাপী বিস্তৃত হতে পারে। প্রতিটি প্রজন্ম এই যাত্রাকে  অনন্য আলোকে দেখে। প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীরা সাধারণত অর্থনৈতিক সুযোগের খোঁজে থাকেন। তবে তাঁদের পরিচয়ের অনুভূতি তাঁদের জন্মভূমিতে গভীর ভাবে প্রোথিত থাকে। ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধন সাংস্কৃতিক বন্ধন-সহ তাঁদের অভিবাসন সাধারণত আশার অভিমুখে এক যাত্রাসমতবে দ্বিতীয় প্রজন্ম নিজেদেরকে একটি আইডেন্টি-লিম্বো বা পরিচয়গত ত্রিশঙ্কু অবস্থানেই খুঁজে পায়। এক দিকে, নিজেদের পৈতৃক জমির সাথে তাঁদের ন্যূনতম পারিবারিক বা সাংস্কৃতিক সংযোগ নেই। অন্য দিকে, কুসংস্কার সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে তাঁরা নিজেদের গৃহীত মাতৃভূমিতে বিচ্ছিন্ন বোধ করে। দুই বিশ্বের মধ্যে আটকা পড়ে তাঁদের পরিচয়কে সংজ্ঞায়িত করার সংগ্রাম সেই সংগ্রামকেই জিহাদি প্রচারের সুস্পষ্ট ও তীব্র আবেদন ভাষা জোগায়। একটি মহৎ উদ্দেশ্যের প্রতিশ্রুতি   নিজেদের জীবনের চাইতেও বড় উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এগিয়ে যাওয়া এই অভিবাসীদের শক্তি এবং বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়, পাশাপাশি তাঁদের পরিচয় সংক্রান্ত শূন্যতা পূরণ করে। পশ্চিমে আল-কায়েদার নিয়োগকারী এবং প্রধান প্রচারক কট্টরপন্থী ইংরেজিভাষী ধর্মগুরু আনোয়ার আল-আওলাকি এবং ৭/৭ লন্ডন বোমারু বিমান হামলাকারীদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠতম হাসিব হুসেন থেকে শুরু করে চেরিফ সাইদের কাউয়াচি ব্রাদারস ২০১৫ সালে প্যারিসে চার্লি হেবডো হামলার জন্য দায়ী। এদের সকলেই ছিল দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসী, যারা আত্তীকরণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে কখনওই মানিয়ে উঠতে পারেনি। এর পাশাপাশি নাত্তীকরণ এবং মৌলবাদের মধ্যে ইতিবাচক পারস্পরিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমী সমাজগুলি এই সমস্যাটি মোকাবিলা করতে অনীহা দেখিয়েছে। ই পরিস্থিতি এ হেন একটি ভুল ধারণার মধ্যেই নিহিত যে, অভিবাসীদের একীকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তাদের নিজস্ব গতিতে আত্তীকরণের স্বাধীনতা প্রদান করা উচিত।

 

ভারতের স্থিতিস্থাপকতা

ভারতে ধর্মীয় পরিচয় একটি জাতীয় পরিচয় দ্বারা সংযোজিত হয় এবং এখানে ভারতীয় হয়ে ওঠা’ অন্যান্য সাম্প্রদায়িক অনুষঙ্গের তুলনায় প্রাধান্য পায়। ভারতীয় অভিজ্ঞতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভারতীয় মুসলিম পরিচয় এতটাই গভীর ভাবে প্রোথিত যে, তা বিশ্বব্যাপী অন্য কোনও ধর্ম বা বিশ্বাসের ধারায় পরিলক্ষিত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, সুফি সাধক এবং ভক্তি আন্দোলনের মধ্যে সদ্ভাবপূর্ণ আন্তঃসম্পর্ক একটি সমন্বিত আধ্যাত্মিক বাস্তুতন্ত্রের জন্ম দিয়েছে। দক্ষিণ ভারতে হিন্দু জামোরিন শাসকরা এমন একটি অঞ্চলের বিকাশ করেছিলেন, যেখানে মুসলমান এবং হিন্দুরা কেবল অবাধে পরস্পরকে বিবাহ করতে পারতো তাই নয়, বরং একই সঙ্গে তাদের স্বতন্ত্র  ঐতিহ্যও বজায় রাখতে সক্ষম ছিল। একজন মুসলিম সাধক ভাভার হিন্দু দেবতা আয়াপ্পার ভক্তদের কাছ থেকে আচারানুষ্ঠানিক সম্মান পান, যাঁরা লক্ষাধিক সংখ্যায় প্রতি বছর তাঁউপাসনাস্থল পরিদর্শনে যান। শিরডির সাইবাবা, আজমিরের মইনুদ্দিন চিশতি, নরসির সন্ত নামদেব এবং কাইঞ্চির নিম করোলি বাবার মতো আরও অনেকের ধর্মীয় পরিসর জুড়ে লক্ষাধিক অনুসারী রয়েছে। এই ধরনের বহু-বিশ্বাসের স্থানগুলি সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং বিশ্বাসের এক সংমেলকেন্দ্র হিসাবে কাজ করে, যা একটি সমন্বিত সামাজিক কাঠামোকে পুষ্ট করে, সামঞ্জস্য অন্তর্ভুক্তি দ্বারা অপরিহার্য সমষ্টিগত পরিচয়কে সশক্ত করে তোলে। এই সংমিশ্রণটি ইনসুলার আইডেন্টিটি বা সীমাবদ্ধ সামাজিক-গোষ্ঠীগত পরিচয়ের প্রতি মানুষের টানকে হ্রাস করে। গুরুত্বপূর্ণ ভাবে এটি ভারতে এমন এক গতিশীলতার জন্ম দিয়েছে যেখানে মৌলবাদের বিরুদ্ধে সতর্কতা একটি সম্মিলিত সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় পরিণত হয়েছে এবং জিহাদি প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতাকে শক্ত করেছে।

 

ভারতীয় অভিজ্ঞতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভারতীয় মুসলিম পরিচয় এতটাই গভীর ভাবে প্রোথিত যে, তা বিশ্বব্যাপী অন্য কোনও ধর্ম বা বিশ্বাসের ধারায় পরিলক্ষিত হয় না।

 

এগুলিরই পরিপূরক হল দৃশ্যমান এবং পরিমাপযোগ্য উপাদান। এক দিকে ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দৃঢ় নীতি হস্তক্ষেপ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিরাসত কা সম্বর্ধন-এর (পিএমবিকাশ) মতো উদ্যোগ এবং ন্যাশনাল মাইনরিটিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্স কর্পোরেশন-এর (এনএমডিএফসি) মতো সংস্থাগুলি দ্বারা প্রদত্ত সহায়ক আর্থিক ব্যবস্থাগুলি এই দিকটিকেই তুলে ধরে। এই প্রচেষ্টাগুলি বিশেষ ভাবে সম্প্রদায়ের প্রান্তিকতম এবং স্বল্পশিক্ষিত অংশগুলির উপরেই মনোযোগ দেয়, যাঁরা জিহাদি বক্তব্যের জন্য সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। অন্য দিকে, ভারতীয় সমাজে মুসলমানদের সাফল্যের দৃশ্যমানতা সমৃদ্ধি এবং কৃতিত্বকেই দর্শায়… তা সে সরকার, ব্যবসা, বিনোদন, অর্থ বা রাজনীতি… যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন। এগুলি ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার যুক্তিকে খারিজ করে জিহাদি যৌক্তিকতার জন্য সামান্য বৈধতা প্রদান করে। এর ফলস্বরূপ, মুসলিমরা ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ১৪ শতাংশ, বিশ্বব্যাপী ১০ শতাংশেরও বেশি মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং ভারতে এই সম্প্রদায় জিহাদি ভাবনাকে মোটেই গ্রহণ করে না। এটি বিভাজনমূলক বাগ্মিতা প্রতিরোধে ভারতের সমন্বিত জাতীয় পরিচয়ের শক্তির প্রমাণ বহন করে। ২০০২ সালে রাসকিন বন্ড এক প্রবন্ধে ভারতীয় পরিচয়ের মূর্ত রূপকে যথার্থই বর্ণনা করে লিখেছেন, ‘নানা ধরনের জাতি আমাকে একাত্ম করেনি। ধর্ম আমাকে একাত্ম করেনি। কিন্তু ইতিহাস করেছে। এবং দীর্ঘমেয়াদে ইতিহাসই অর্থবহ।’

 

সুরক্ষা হিসেবে জাতীয় পরিচয়

জাতীয় পরিচয়ের মধ্যে স্ব-শ্রেণিকরণ এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত। ভারতের মতো মূর্ত জাতীয় পরিচয় - যা ইতিবাচক স্ব-শ্রেণিকরণের জন্ম দেয় - ধ্বংসাত্মক মতাদর্শের আবেদনকে খর্ব করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। বিভিন্ন সমাজে র‍্যাডিক্যালাইজেশন বা মৌলবাদীকরণের বিভিন্ন সংবেদনশীলতা শক্তিশালী জাতীয় পরিচয়ের তাৎপর্যকে দর্শায়, যা সংকীর্ণ, মুনাফা-সন্ধানী মতাদর্শকে খর্ব করে। পশ্চিমীরা ভারত ও সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে, যেহেতু ভারত সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে এবং সিঙ্গাপুসেই প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করেছে। যত্ন সহকারে স্কুল পাঠ্যক্রম তৈরি করার মাধ্যমে - যেখানে তার বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি প্রদর্শন করে একটি জাতিগত সংহতি কর্মসূচিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং যা সাম্প্রদায়িক ঘেটোর বিনাশ করে - সিঙ্গাপুর স্বল্প সময়সীমার মধ্যে এক সুরক্ষিত জাতীয় পরিচয়ের প্রতি আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া সফল ভাবে গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। এই ধরনের প্রচেষ্টা জিহাদি প্রচারের আবেদনকে ক্ষুণ্ণ করেছে এবং দেশটির ক্রমবর্ধমান অভিবাসী জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও খুব কম সংখ্যক সিঙ্গাপুরবাসী বিদেশি যোদ্ধা হিসেবে যোগদান করেছেন।

 

বিভিন্ন সমাজে র‍্যাডিক্যালাইজেশন বা মৌলবাদীকরণের বিভিন্ন সংবেদনশীলতা শক্তিশালী জাতীয় পরিচয়ের তাৎপর্যকে দর্শায়, যা সংকীর্ণ, মুনাফা-সন্ধানী মতাদর্শকে খর্ব করে।

 

পুরনো যুদ্ধের শেষে মৌলবাদী যোদ্ধারা নিজেদের দেশে ফিরে বিভিন্ন ধরনের অভ্যর্থনার সম্মুখীন হন। পরিস্থিতি অনেকটা ‘কৃষক ও বিষধর সাপ’ শীর্ষক ঈশপের গল্পের সেই বিষধর সাপের মতোই, যে কৃষককে শীতের কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেই কামড় বসিয়েছিল। এটি শুধু সময়ের অপেক্ষা, এই প্রত্যাবর্তনকারী যোদ্ধারা নিজ দেশে ফিরে যে সম্প্রদায়ে বাস করেন, সেটিকেই নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করবেন। অনুমান দর্শিয়েছে যে, ১১ থেকে ২৬ শতাংশ প্রত্যাবর্তনকারী যোদ্ধা ফের সন্ত্রাসবাদে ফিরে যা। পরিচয়ের সন্ধান চ্যালেঞ্জের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গিয়েছে। এটি জাতিগুলির জন্য শক্তিশালী, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিচয় নির্মাণের চরম প্রয়োজনীয়তার কথাই মনে করিয়ে দেয়, যা বিভাজনমূলক মতাদর্শের হাতছানিতে প্রলুব্ধ হওয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে। ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার সময় তাই যে প্রশ্ন রয়ে যায়: কী ভাবে জাতিগুলি স্থিতিস্থাপক, অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিচয় তৈরি করতে পারে, যা উগ্র মতাদর্শের বিপদধ্বনিকে প্রতিরোধ করবে? আমরা কী ভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করব, তা নির্ধারণ করবে একটি ভবিষ্য গড়ে তোলার জন্য আমাদের সম্মিলিত ক্ষমতার গতিপথ, যা সাম্প্রদায়িকতা ঘৃণার সংকীর্ণ সীমানার ঊর্ধ্বে উঠে নিজের দিশা খুঁজে নেবে।

 


জয়বল নাদুভাথ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.