Author : Navdeep Suri

Published on Jun 25, 2023 Updated 0 Hours ago

চিন ও রাশিয়াকে অঞ্চলে নিয়ে আসা এবং ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ শক্তির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে রিয়াধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। মোহাম্মদ বিন সালমান বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে জোটের নীতি নিয়েছেন, যা বৃহত্তর কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে।

সৌদি পদক্ষেপ পশ্চিম এশিয়ার ভূ–রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে

সৌদি আরবের বিদেশনীতিতে এমন একটি অসাধারণ নতুন শক্তি দেখা যাচ্ছে যা দেশটিকে আঞ্চলিক রাজনীতির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ফিরিয়ে এনেছে, এবং পশ্চিম  এশিয়ার ভূ–রাজনৈতিক মানচিত্রের দ্রুত পুনর্বিন্যাস করছে। বিদেশমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহান আল–সৌদ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসাদ বিন মোহম্মদ আল আইবানের নেতৃত্বে একটি দল যুবরাজ তথা প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)–এর রূপরেখাঙ্কিত ‘‌ভিশন ২০৩০’‌ অনুযায়ী বৈদেশিক নীতিকে একটি স্বতন্ত্র অ–মতাদর্শভিত্তিক রূপ দিচ্ছে। বিষয়টি এখন শীর্ষ কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

মাত্র পাঁচ বছর আগে ইস্তাম্বুলে সৌদি সাংবাদিক জামাল আহমেদ খাশোগির নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেশটিকে নজরে এনেছিল, এবং এমবিএস–কে পশ্চিমীরা জোরজার করে নিজের দেশকে ইয়েমেনের সঙ্কটের মধ্যে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছিল।

দুই মাসের মধ্যে দূতাবাস পুনরায় চালু করার জন্য ১০ মার্চ বেজিংয়ে চিরশত্রু ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের স্বাক্ষরিত চুক্তিটি সম্ভবত সবচেয়ে হাই–প্রোফাইল কূটনৈতিক পদক্ষেপ ছিল।

ইরাক ও ওমানে দুই বছরের চুপচাপ, শ্রমসাধ্য আলোচনা এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রিয়াধ সফর এই চুক্তিতে চিনের একটি সফল মধ্যস্থতাকারী হওয়ার পথ প্রশস্ত করেছিল। এই কথা মনে রাখার মতো যে চার দশকেরও কম সময়ের মধ্যে এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে আবার যুক্ত হল। তাদের মধ্যে বিদ্বেষ ইসলামের শিয়া ও সুন্নি ধারার মধ্যে প্রাচীন ফাটলটিকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গিয়েছে।‌ সৌদি আরব, ইয়েমেন, বাহারিন, ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে শিয়া সম্প্রদায়কে উসকে দেওয়ার জন্য তেহরানের প্ররোচনা এমন একটি বৈধ ভয়ের জন্ম দেয় যে ইরান চেষ্টা করছে একটি ‘‌শিয়া ক্রেসেন্ট’‌ তৈরি করার, যা উপসাগরের সুন্নি রাজতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করবে।

ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত হুথিরা সৌদি আরবে তেল স্থাপনা ও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে, এবং অপ্রতিসম যুদ্ধের প্রকৃত ও বর্তমান বিপদকে তুলে ধরেছে।

ইয়েমেনের হুথিরা প্রধানত জায়েদি শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত, এবং তাদের অগোছালো মিলিশিয়াকে একটি শক্তিশালী যোদ্ধা বাহিনীতে পরিণত করার ক্ষেত্রে ইরানের আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও সামরিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই মিলিশিয়া শুধু ২০১৫ সালে রাজধানী সানা থেকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদরাব্বু মনসুর হাদির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুতই করেনি, দেশের উত্তরার্ধে হুথিদের নিয়ন্ত্রণও প্রতিষ্ঠা করেছে। ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত হুথিরা সৌদি আরবে তেল স্থাপনা ও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে, এবং অপ্রতিসম যুদ্ধের প্রকৃত ও বর্তমান বিপদকে তুলে ধরেছে।

রিয়াধের জন্য ইরানের সঙ্গে সমঝোতার মূল লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি হল ইয়েমেনে একটি গ্রহণযোগ্য ফলাফল, এবং দেশটি এখন আশা করবে চিন তেহরানের উপর তার প্রভাব ব্যবহার করে সমাধানের একটি পরিমিত মাত্রা অর্জনে সফল হবে, অন্তত সৌদি–হুথি বিরোধের ক্ষেত্রে। ইয়েমেনে যদি চুক্তিটি কাজ করে, তবে রিয়াধ একযোগে দুটি বোঝাকে তার পিঠ থেকে নামিয়ে ফেলার তৃপ্তি উপভোগ করবে। ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি প্রসারিত হওয়া এবং সৌদি ও হুথিদের দ্বারা বন্দি-বিনিময়ের মতো প্রাথমিক লক্ষণগুলি আশাকে অনুপ্রাণিত করে, তবে অন্য অনেক কারণ রয়েছে যা এ ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

ইরান ও ইয়েমেনের বাইরে গত কয়েক বছরে আরও বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ দেখা গিয়েছে। সৌদি আরবে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে আল–উলা চুক্তি হয়েছিল, যা সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও বাহারিনের সমন্বয়ে তৈরি চার আরব রাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যে একটি বিরোধের অবসান ঘটায়; তুর্কিয়ের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও, যা ২০১২ সালে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারকে আঙ্কারার সমর্থনের পরে চাপে পড়েছিল এবং ২০১৯ সালে খাশোগি হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে একেবারে তলানিতে পৌঁছেছিল, একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে এমবিএস–কে আলিঙ্গন করতে জেড্ডা সফর করেন এই আশা নিয়ে যে সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ শুধু পতনশীল তুর্কি অর্থনীতিতে সৌদি বিনিয়োগই আনবে না, বরং তুর্কি ঠিকাদারদের সৌদি আরবের লাভজনক ও প্রসারমান নির্মাণক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেবে।

সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের সরকারের পতন ঘটাতে আরব ও পশ্চিমী প্রচেষ্টাগুলি যে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে রিয়াধ সে দেশের জন্য এমন অর্থনৈতিক প্রশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে চায় যা সে দেশের সরকারকে আরও বেশি ইরান–ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে বিরত করবে। মস্কোতে সৌদি ও সিরিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার আয়োজন করে রাশিয়া তার নিজস্ব প্রভাবকে চিহ্নিত করেছে, যার ফলে ১২ এপ্রিল সিরিয়ার বিদেশমন্ত্রী রিয়াধ সফরে যান এবং ছয় দিন পর সৌদি বিদেশমন্ত্রী দামেস্ক সফরে যান। এক দশকের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের ফলে কূটনৈতিক সম্পর্ক শীঘ্রই স্বাভাবিক হতে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে।

ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি প্রসারিত হওয়া এবং সৌদি ও হুথিদের দ্বারা বন্দি-বিনিময়ের মতো প্রাথমিক লক্ষণগুলি আশাকে অনুপ্রাণিত করে, তবে অন্য অনেক কারণ রয়েছে যা এ ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

সৌদি আরব এখন ইরাক ও লেবাননের প্রতি, এবং এমনকি ইজরায়েলের প্রতিও তার অবস্থানের পুনর্মূল্যায়ন করছে, এবং আগামী মাসগুলিতে এই বিষয়ে আরও খবর আসতে পারে।

এগুলি এমন ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ যা গত দুই বছরে পরিশ্রমের সঙ্গে সম্পাদিত এবং সম্ভবত কমপক্ষে তিনটি স্বতন্ত্র কিন্তু আন্তঃসংযুক্ত কারণ দ্বারা চালিত হয়েছে। প্রথমত, এমবিএস তাঁর ‘‌ভিশন ২০৩০’‌–এ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তিনি তাঁর দেশকে একটি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের পাওয়ার হাউস করতে চান, যা ‘‌তিনটি মহাদেশ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকাকে সংযুক্ত করে আমাদের অনন্য কৌশলগত অবস্থানকে একটি বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত করবে’‌, এবং ‘‌গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক জলপথের মধ্যে আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান সৌদি আরব রাজ্যকে বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ও বিশ্বের প্রবেশদ্বার’‌ করে তুলবে। কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন অর্থনীতির উপর নিরলস মনোযোগ, এবং দেশের শক্তি ও আর্থিক সম্পদের উপর যা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তেমন আন্তঃআঞ্চলিক দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য আজ যে ধরনের সচেতন প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে তা চালিয়ে যাওয়া।

দ্বিতীয়ত, চিন ও রাশিয়াকে এই অঞ্চলে নিয়ে আসা এবং ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ শক্তির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে রিয়াধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর মানে এই নয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর সৌদি আরব বা উপসাগরীয় অন্যান্য দেশের জন্য পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদার থাকবে না। কিন্তু এর মানে এই যে ভারত ও অন্যান্য মধ্যম শক্তির মতো এমবিএসও দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে জোটের নীতির দিকে যা অনেক বেশি কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে।

তৃতীয়ত, ইসলামে মধ্যপন্থার উপর ‘ভিশন ২০৩০’-এর গুরুত্ব আরোপণ একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেয় যে বিদেশনীতি চালিত হবে বাস্তববাদ, জাতীয় স্বার্থ ও বাস্তব রাজনীতির বিবেচনার ভিত্তিতে, এবং ইসলামি উম্মা-র প্রতি আনুগত্যের অস্পষ্ট ধারণার ভিত্তিতে নয়।

এই উপাদানগুলির প্রতিটি রিয়াধ ও নয়াদিল্লির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার জন্য একটি শক্তিশালী যুক্তি প্রদান করে। এই বিষয়টি দৃশ্যমান হচ্ছে উদীয়মান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, জম্মু ও কাশ্মীরে পাকিস্তানের লাইন অনুসরণে সৌদি আরবের অনাগ্রহ, এবং ভারতে অনেক বড় সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনার মধ্যে। এই বছরের আইপিএল বিলবোর্ডে যে আরামকো ও ‘ভিজিট সৌদি আরব’ উভয়েই ছিল, তা সম্ভবত এক অনেক বেশি গতিশীল সম্পর্কের বার্তাবহ।


এই ভাষ্যটি প্রথম ‘দ্য ট্রিবিউন’-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.