-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পর যদি দুই দেশ ইউক্রেনে যুদ্ধ অবসানের জন্য একটি পথনির্দেশিকা চূড়ান্ত করে, তা হলে অতিরিক্ত শুল্ক নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অব্যাহত আগ্রাসনের পটভূমিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে নিষেধাজ্ঞা জোরদার করার বিতর্ক জোরদার হয়েছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে অন্যান্য পদক্ষেপের মাঝেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৮তম দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং প্রধান ভারতীয় তেল আমদানিকারকদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভারতের উপর ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত সাম্প্রতিক ২৫% শুল্ক ও রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির উপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক মার্কিন রাষ্ট্রপতির রাশিয়ার সঙ্গে আচরণের পদ্ধতির পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে।
এই ঘটনাপ্রবাহ বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলেছে। আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকির আলোকে, নয়াদিল্লি একতরফা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে একমাত্র কর্তৃত্ব হিসাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের কেন্দ্রীয়তা পুনর্ব্যক্ত করে তার ক্রয় রক্ষা করে চলেছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেই সন্তুষ্ট থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর দ্বিতীয় দফায় শুল্ক আরোপ করায় মার্কিন-ভারত সম্পর্কের প্রকৃতির উপর কাঠামোগত প্রভাব পড়বে। কারণ এই বিষয়টিকে ভারত তার মূল জাতীয় স্বার্থ বলে মনে করে। ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে নয়াদিল্লির সুরে পরিবর্তন এসেছে।
নিষেধাজ্ঞার হুমকির প্রতি রাষ্ট্রগুলি কী ভাবে প্রতিক্রিয়া দর্শায়, তা বেশ কয়েকটি কাঠামোগত বাস্তবতার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহারের পর ইইউ নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলেও, নয়াদিল্লি ইরানি তেলের ব্যবহার ব্যাপক ভাবে হ্রাস করে। ওয়াশিংটন কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত দেশ থেকে তেল কেনার জন্য বিকল্প শৃঙ্খল তৈরির ফলে সুবিধার চেয়ে খরচ বেশি ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হল, ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়া থেকে নয়াদিল্লির তেল আমদানি বাড়তে শুরু করে, এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও ৬০ মার্কিন ডলার মূল্যসীমা প্রবর্তনের পরেও এমনটা হয়।
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেই সন্তুষ্ট থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর দ্বিতীয় দফায় শুল্ক আরোপ করায় মার্কিন-ভারত সম্পর্কের প্রকৃতির উপর কাঠামোগত প্রভাব পড়বে। কারণ এই বিষয়টিকে ভারত তার মূল জাতীয় স্বার্থ বলে মনে করে। ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে নয়াদিল্লির সুরে পরিবর্তন এসেছে।
ভারতীয় পরিশোধকরা রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় অব্যাহত রেখেছে - চালিকাশক্তির কারণগুলি ছিল ১) দাম। যা ২০২২ এবং ২০২৩ সালে প্রতি ব্যারেল ছাড় ছিল ১৮-২০ ডলার পর্যন্ত ২) অ-পশ্চিমা মুদ্রায় বাণিজ্য নিষ্পত্তির জন্য ব্যবস্থা তৈরি করা এবং রাশিয়ান সংস্থাগুলিকে ভারতে রুপি ভোস্ট্রো অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা এবং গ) জ্বালানি খাতের ভূপরিসরের সম্প্রসারণ - সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতের তেল সংরক্ষণ ও পরিশোধন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। তবে ক্রমবর্ধমান ভাবে রুশ তেল কেনার ক্ষেত্রে ভারতের সিদ্ধান্তকে সমর্থনকারী সবচেয়ে বড় কাঠামোগত কারণ ছিল বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একটি সামগ্রিক বোঝাপড়া, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন বিশ্ব অর্থনীতি অতিমারির সময় সৃষ্ট ধাক্কা থেকে সেরে উঠছিল। ছাড়যুক্ত অপরিশোধিত তেলের আমদানি ভারতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক বহুগুণ প্রভাব ফেলেছে।
এই কাঠামোগত বাস্তবতাগুলির পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং তেলের দামের উপর ছাড় ব্যারেল প্রতি ২.৫ মার্কিন ডলার থেকে ৪ মার্কিন ডলার হয়ে আসতে শুরু করে। উপরন্তু, সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি নিয়ে আলোচনা ইউক্রেনের উদ্বেগের মধ্যে আসে যেখানে রাশিয়া আগ্রাসন কমাতে অস্বীকার করেছে। রাশিয়ার কিছু দাবির শর্তসাপেক্ষে ট্রাম্প প্রথমে রাশিয়ার প্রতি সমঝোতামূলক অবস্থান গ্রহণ করলেও, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনা কোনও বাস্তব ফলাফল প্রদান করেনি। এই অচলাবস্থার ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের উপর চাপ বেড়েছে, যা রাশিয়াকে একটি চেতাবনি দিতে বাধ্য করেছে - ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছনো অথবা শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকা।
নতুন বাজারের সন্ধান
তবে বিশ্বব্যাপী তেল আমদানির ১০% রাশিয়ার তেল। সরবরাহে হঠাৎ ব্যাঘাতের ফলে তেলের দাম ১২০ ডলার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ দেশগুলি চায় না। এটি জ্বালানি খরচ কম রাখা এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ট্রাম্পের লক্ষ্যেরও বিরোধিতা করবে। এটি এই যুক্তিকেই ব্যাখ্যা করে যে, সাম্প্রতিক শুল্কের ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই উভয় দেশের একটি চুক্তিতে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি শুল্ক প্রয়োগ করা হয়, তা হলে দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞাগুলি ভারতের উপর স্বল্পমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। তেল ছাড় হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার বিনিময়ে বাণিজ্য সহজতর করার জন্য উপায় তৈরি ভারতের স্বার্থের জন্য উপকারী হবে না। রাশিয়ার তেলের উপর নির্ভরতা কমাতে নয়াদিল্লি আজারবাইজান, নাইজেরিয়া, গায়ানা ও ব্রাজিলের মতো নতুন বাজার খুঁজতে শুরু করেছে। যদিও বেশ কয়েকটি পরিশোধক সংস্থা তাদের বিকল্পগুলিকে বৈচিত্র্যময় করে তুলছে, তবুও রুশ তেল থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া এখনও তাড়াহুড়োই করা হবে।
নয়াদিল্লির রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার আলোচনায় বিশেষ ভাবে বিচলিত হয়নি। বিপরীতে, একাধিক অনুষ্ঠানে নেতারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্কের হুমকি দেশের সার্বভৌমত্বের উপর প্রভাব ফেলবে, যা তার জ্বালানি নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রকেও প্রভাবিত করবে। তারা পশ্চিমা দ্বৈত মানের কথাও তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় দফার শুল্কের দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান সুরক্ষাবাদী আলোচনা, ব্রিকস ও এসসিওর মতো আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি জোরদার করার জন্য নয়াদিল্লিতে ক্রমবর্ধমান উৎসাহের কারণ হতে পারে। এটি উভয় দেশের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতার গতিও কমিয়ে দিতে পারে।
তবে এই বিতর্কও রয়েছে যে উভয় দেশ সম্ভবত একটি চুক্তিতে পৌঁছতে সক্ষম হবে। ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের দরুন যদি দু’টি দেশ ইউক্রেনের শত্রুতা শেষ করার জন্য একটি পথনির্দেশিকা চূড়ান্ত করে, তবে অতিরিক্ত শুল্ক নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ডেকান হেরাল্ড-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Rajoli Siddharth Jayaprakash is a Junior Fellow with the ORF Strategic Studies programme, focusing on Russia’s foreign policy and economy, and India-Russia relations. Siddharth is a ...
Read More +