-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারত ও চিনের যৌথ ত্রাণ প্রচেষ্টা কি গভীর অবিশ্বাসের জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে?
তাইল্যান্ড ও মায়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে বহু মানুষের প্রাণহানির পর চিন ও ভারতের মতো প্রতিবেশী শক্তিগুলি মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ প্রচেষ্টা প্রদানে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা ১৯-এ পৌঁছলেও মায়ানমার এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। কারণ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের কাছে। এখনও পর্যন্ত ২০০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন, শত শত নিখোঁজ রয়েছেন এবং অনেকেরই জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ ভাবে মৌলিক সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন। মায়ানমার এমন একটি দেশ যেখানে ২০২৫ সালের ২৮ মার্চের ভূমিকম্পের আগে থেকেই ১ কোটি ৯৯ লক্ষ মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল। ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতির ফলে অনেক বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং জনসংখ্যার একটি সুবিশাল অংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি এখনও ব্যাহতই রয়েছে এবং যোগাযোগ টাওয়ার, রাস্তাঘাট ও স্বাস্থ্যসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষের কাছে জরুরি প্রতিক্রিয়া পৌঁছনোর কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাব ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতির কারণে অনুমান করা হচ্ছে যে, মৃতের সংখ্যা ১০,০০০-এ পৌঁছতে পারে এবং সম্পদের ক্ষতি মায়ানমারের বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক ও স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার দাবি করে। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রে চিন এই আহ্বানে প্রথম সাড়া দেয়। ভারত দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অপারেশন ব্রহ্মার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে, যাতে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করা যায়। বর্তমানে ১৩টি দেশের ২৫টি দল অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে এই প্রবন্ধটিতে দুর্যোগ ত্রাণে ভারত-চিন সহযোগিতার সম্ভাবনা এবং বৃহত্তর প্রভাবগুলি অন্বেষণ করার লক্ষ্যে কাজ করার বিষয়টির উপর আলোকপাত করে সহযোগিতার নানাবিধ এমন উপায়ের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যা পরিস্থিতির মধ্যেই নিহিত রয়েছে।
প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাব ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতির কারণে অনুমান করা হচ্ছে যে, মৃতের সংখ্যা ১০,০০০-এ পৌঁছতে পারে এবং সম্পদের ক্ষতি মায়ানমারের বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মায়ানমারে চিনের মানবিক প্রতিক্রিয়া
মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ (হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড ডিজাস্টার রিলিফ বা এইচএডিআর) অভিযানের অংশ হিসেবে, চিন প্রথম দফায় দুর্যোগ-ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে। সেই সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে তাঁবু, কম্বল ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম। চিনের মিনিস্ট্রি অফ ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট-এর অধীনে পাঁচটি বেসামরিক জরুরি প্রতিক্রিয়া বাহিনীর মোট ৯১ জন কর্মী এবং চাইনিজ রেড ক্রস ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের ১৫ সদস্যের একটি দল বর্তমানে উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত। মায়ানমারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধের পর চিন সরকার তার সমর্থন আরও জোরদার করে ১৩.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরুরি মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে। চিনের ইউনান প্রদেশ অতিরিক্ত টন টন সামগ্রীর ত্রাণ সরবরাহ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিন যে শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, তার ফলে এই সময়োপযোগী ও কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে, গত দশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের এইচডিএআর-এ জড়িত থাকার কিছু ঘটনার দিকে আলোকপাত করা জরুরি (দ্রষ্টব্য সারণি ১)।
সারণি ১. গত দশকে চিনের এইচএডিআর উদ্যোগ
বর্ষ |
দুর্যোগ |
প্রভাব |
চিনের এইচএডিআর উদ্যোগ |
২০১৫ |
নেপালে ভূমিকম্প |
ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম প্রেরণ করে এবং নেপালে মোট ১৪০ মিলিয়ন আরএমবি (১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) জরুরি সহায়তা প্রদান করে। |
|
২০১৮ |
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প ও সুনামি |
||
২০১৮ |
লাওস ড্যাম ভেঙে পড়া |
কমপক্ষে ন’জন মানুষের মৃত্যু হয়, ১৬,০০০ জন মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হন |
দুর্যোগের দু’দিনের মধ্যে চিনই প্রথম সাড়া দেয় এবং উদ্ধারকারী দল পাঠানো দেশগুলির অন্যতম ছিল। |
২০২১ |
টাইফুন রাই (ফিলিপিন্স) |
৪০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, কমপক্ষে অর্ধ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয় |
|
২০২২ |
আফগানিস্তানে ভূমিকম্প |
১০০০-এরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, দশ হাজারেরও বেশি মানুষের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে |
৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের জরুরি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। |
২০২২ |
পাকিস্তানে বন্যা |
||
২০২৪ |
শ্রীলঙ্কায় বন্যা |
শ্রীলঙ্কাকে ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার এবং ৪০০ মিলিয়ন টাকার ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করেছে। |
উৎস: লেখকদের দ্বারা সঙ্কলিত
অপারেশন ব্রহ্মা: মায়ানমারে ভারতের সমন্বিত মানবিক প্রচেষ্টা
২০২৫ সালের ২৯ মার্চ অপারেশন ব্রহ্মার অধীনে ভারত মায়ানমারে ১৫ টন প্রয়োজনীয় পোশাক, পানীয় জল, খাদ্য, ওষুধ এবং জরুরি জিনিসপত্র পাঠিয়েছিল। এর পরে ৩০ মার্চ দু’টি বিমান ৮০ জন অনুসন্ধান ও উদ্ধার (সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ বা এসএআর) বিশেষজ্ঞ, সরঞ্জাম এবং আরও ত্রাণ নিয়ে মায়ানমারে পৌঁছেছিল। পরবর্তী সময়ে ১১৮ জন কর্মীর সমন্বয়ে গঠিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিল্ড হসপিটাল টিম ৬০ টন জল, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি এবং মহিলা ও শিশুদের জন্য অন্যান্য সহায়তা নিয়ে মায়ানমারে পৌঁছেছিল। আরও বিমান পরিবহণ এবং দু’টি জাহাজ ভারী সরবরাহ নিয়ে এসেছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ভারত তার ‘প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল’ দেশ হিসেবে প্রতিশ্রুতি রেখেছে ও ‘প্রতিবেশ প্রথম’ নীতির অধীনে অতিরিক্ত সাহায্য প্রেরণের জন্য প্রস্তুত। যদিও এই ক্ষেত্রে ভারত ছিল দ্বিতীয় দেশ, যারা মায়ানমারকে সহায়তা প্রদান করেছিল। বিলম্বের কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, এই ধরনের ত্রাণ প্রচেষ্টার জন্য বিদেশ মন্ত্রক (এমইএ), জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ), ভারতীয় সেনাবাহিনী, ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং ভারতীয় নৌবাহিনী-সহ আন্তঃসংস্থার সহযোগিতা প্রয়োজন। তা ছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত দেশ কর্তৃক আনুষ্ঠানিক অনুরোধের পরই কেবল মাত্র যে কোনও সহায়তা প্রদান করা উচিত, যার পরেই ভারত সরকার তার পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে পারে। প্রতিক্রিয়ার তৎপরতার চাইতেও ‘প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল’ হওয়ার মর্যাদা ভারতের সক্রিয় দুর্যোগ ত্রাণ কূটনীতি ও দশকের পর দশক ধরে সক্রিয় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ও অন্তর্দৃষ্টি থেকে উদ্ভূত। এর পাশাপাশি, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ভারত প্রথম মানবিক সহায়তা প্রেরণ করেছে এবং কার্যক্রমে বিশ্বাসযোগ্য, স্থিতিশীল এবং সর্বাঙ্গীন ভূমিকার মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেছে।
সারণি ২. গত দশকে ভারতের এইচএডিআর উদ্যোগ
বর্ষ |
দুর্যোগ |
প্রভাব |
ভারতের এইচএডিআর উদ্যোগ |
২০১৪ |
মালে জল সঙ্কট (মলদ্বীপ) |
পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট |
অপারেশন নীর - ভারত প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল ছিল এবং মোট ২,৩৭৫ টনেরও বেশি পানীয় জল আকাশপথে এবং পরে দু’টি জাহাজের মাধ্যমে পাঠিয়েছিল। |
২০১৫ |
নেপালের ভূমিকম্প |
অপারেশন মৈত্রী - ভূমিকম্পের ছ’ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ভারতীয় বিমানবাহিনী জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ) ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে পৌঁছয়। পরবর্তী কয়েক দিনে ৫২০ টন ত্রাণ নিয়ে ৩২টি বিমান নেপালে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ৫০টিরও বেশি মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং উদ্ধারকারী দল রয়েছে। |
|
২০১৭ |
সাইক্লোন মোরা (শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ) |
|
শ্রীলঙ্কাকে ত্রাণ সামগ্রী এবং উদ্ধারকারী দল আকারে সহায়তাকারী প্রথম দেশ ভারতই। বাংলাদেশে ভারতীয় নৌবাহিনী ৩৩ জন জেলেকে উদ্ধার করেছে। |
২০১৮ |
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প ও সুনামি |
অপারেশন সমুদ্র মৈত্রী – দু’টি ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমান এবং তিনটি নৌবাহিনীর জাহাজ ইন্দোনেশিয়ায় চিকিৎসা কর্মী এবং ত্রাণ সামগ্রী বহন করে। |
|
২০২৩ |
সাইক্লোন মোকা (মায়ানমার) |
কমপক্ষে ১৪৫ জন মারা যান; ২.২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি অনুমান করা হয়। |
অপারেশন করুণা - ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহের জন্য চারটি জাহাজ পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি বহনযোগ্য কন্টেনারযুক্ত চিকিৎসা সুবিধা, ওষুধ এবং মেডিকেল অফিসার ও নার্সদের একটি দলও পাঠানো হয়েছে। |
উৎস: লেখকদের দ্বারা সঙ্কলিত
ভারত, চিন এবং ব্রিকস
এইচএডিআর-এ ভারত ও চিন উভয়ের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করলে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতার একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র রয়েছে। ২০১৬ সালে ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীদের দুই দিনের বৈঠকের পর উদয়পুর ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়, যার ফলে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি যৌথ টাস্ক ফোর্স (জেটিএফ) তৈরি হয়। এই ঘোষণার অধীনে ভারত ও চিন-সহ ব্রিকস দেশগুলি নিয়মিত আলাপ-আলোচনা, বিনিময় ও সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়। সর্বোপরি, ২০২২ সালে ব্রিকস দেশগুলি যোগাযোগ আরও উন্নত করা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি প্রতিরোধ ও প্রশমন সম্পর্কিত জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা ও মানদণ্ডে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। চিনের মিনিস্ট্রি অফ ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত ব্রিকস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীদের তৃতীয় বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এত বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সত্ত্বেও ভারত ও চিনের মধ্যে আরও মনোযোগী দ্বিপাক্ষিক পদ্ধতি সীমিত রয়েছে। সীমান্ত উত্তেজনা ও প্রতিযোগিতামূলক কৌশলগত স্বার্থ নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতায় বাধা দেয়। তবে ২০১৫ সালের নেপালে ভূমিকম্পের পর এইচএডিএআর কার্যক্রম আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও মানবিক সহায়তার প্রতি উভয় দেশের যৌথ প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। উভয় দেশই তাদের নিজ নিজ স্বাধীন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও নেপালি কর্মকর্তা ও ভারতে চিনা দূতাবাসের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে স্থল যোগাযোগ ভবিষ্যতে দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার সম্ভাবনার উপর আলোকপাত করে।
ব্রিকস দেশগুলি যোগাযোগ আরও উন্নত করার এবং দুর্যোগ ঝুঁকি প্রতিরোধ ও প্রশমন সম্পর্কিত জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা ও মানদণ্ডে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
এইচএডিআর সমন্বয়: এশিয়ায় ভারত ও চীন
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ব্যাপক ছাঁটাইয়ের কারণে এক সময়ের বিখ্যাতই ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-এর দক্ষতা যখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে, তখন ভারত-চিন সহযোগিতা কেবল মানবিক কারণেই নয়, বরং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের নিজ নিজ কৌশলগত স্বার্থের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এইচএডিআর-এ ভারত-চিন সহযোগিতার সফলতার ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ হল আস্থার অভাব, যা সরবরাহ ও সামরিক-নেতৃত্বাধীন অভিযান সম্পর্কিত সংবেদনশীল তথ্য ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছাকে সীমিত করে। উপরন্তু, ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি এবং চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) মিথস্ক্রিয়া মাঝে মাঝে সমন্বিত পদক্ষেপের পরিবর্তে সমান্তরাল প্রচেষ্টার দিকে পরিচালিত করতে পারে, যেখানে উভয় দেশ তাদের কৌশলগত পদ্ধতির মাধ্যমে অবদান রাখতে চায়। সর্বোপরি, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির (নির্দিষ্ট মানদণ্ড ও নিয়মাবলি) অনুপস্থিতি অভিযানগুলির সমন্বয় সাধনের কাজটিকে কঠিন করে তোলে। কারণ ভারত এবং চিন উভয় দেশেরই এইচএডিআর সহযোগিতার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামোর অভাব রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলির বিরুদ্ধে আস্থা তৈরির জন্য দুর্যোগ ত্রাণ প্রশিক্ষণ এবং ভারতের এনডিআরএফ ও চিনের মিনিস্ট্রি অফ ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্টের মধ্যে বার্ষিক আলাপ-আলোচনা-সহ যৌথ সামরিক মহড়া কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে। আসিয়ান (অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সভা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জরুরি প্রতিক্রিয়া চুক্তির মতো মঞ্চের মাধ্যমে বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ভারত ও চিন উভয়ই পূর্বে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে স্বাধীন প্রচেষ্টার দরুন সম্পৃক্ত ছিল।
উপরন্তু, ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি এবং চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) মিথস্ক্রিয়া মাঝে মাঝে সমন্বিত পদক্ষেপের পরিবর্তে সমান্তরাল প্রচেষ্টার দিকে পরিচালিত করতে পারে, যেখানে উভয় দেশ তাদের কৌশলগত পদ্ধতির মাধ্যমে অবদান রাখতে চায়।
এইচএডিআর-এ সহযোগিতা ও যৌথ উদ্যোগ কেবল আরও দক্ষ ও কার্যকর প্রতিক্রিয়া প্রদানের সুযোগই দেবে না, বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে তাদের সুনামও বৃদ্ধি করবে। তা ছাড়া, এটি ভারত ও চিনকে আঞ্চলিক ফোরামে সংহতি প্রদর্শনের জন্য একটি মঞ্চ প্রদান করবে, যা কূটনৈতিক প্রভাব ও মানবিক আদর্শের প্রতি অঙ্গীকার গড়ে তোলার জন্য সহায়ক। এই ধরনের সহযোগিতা তাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য শুভ লক্ষণ। এইচএডিআর-এ ভারত-চিন সহযোগিতা আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য একটি মডেল স্থাপন করতে পারে এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনুরূপ বহুপাক্ষিক পদ্ধতির বিকাশ ও আন্তঃজাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
অনসূয়া বসু রায়চৌধুরী অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নেবারহুড ইনিশিয়েটিভ-এর সিনিয়র ফেলো।
শ্রীদীপ্তা রায় অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ইন্টার্ন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Anasua Basu Ray Chaudhury is Senior Fellow with ORF’s Neighbourhood Initiative. She is the Editor, ORF Bangla. She specialises in regional and sub-regional cooperation in ...
Read More +