গ্লোবাল সাউথের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মনোযোগের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার ক্ষমতা ভারতীয় জি২০ সভাপতিত্বের জন্য তেমন অসাধারণ কিছু নয়। বিশ্বের জনসংখ্যা এবং উদীয়মান অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধি হিসাবে ভারত গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে এবং নানাবিধ উদ্বেগকে কার্যকর ভাবে আরও মনোযোগের আলোকে তুলে ধরতে পেরেছে। জি২০-র সভাপতি থাকাকালীন ভারত ধারাবাহিক ভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত নীতির জন্য চাপ দিয়েছে, টিকার লভ্যতা, ন্যায্য বাণিজ্যিক অনুশীলন এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের মতো সমস্যাগুলির মোকাবিলা করেছে। গ্লোবাল সাউথের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি এই মনোযোগ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভাজনের নিরিখে সেতুবন্ধনের কাজ করেছে।
এই সমাবেশগুলিতে সুমহান বক্তৃতা, উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ও শক্তি, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আন্তঃসম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য উচ্চ প্রতিশ্রুতির বিনিময় ঘটে থাকে। যাই হোক, এই বাস্তবতাকে কোনও মতেই অস্বীকার করা যায় না যে, নানাবিধ আলোচনা ও বাগাড়ম্বর সত্ত্বেও অনেক সমস্যা অমীমাংসিতই রয়ে গিয়েছে।
যাই হোক, এ ক্ষেত্রে এই উদ্বেগ স্পষ্ট যে, এই প্রশংসনীয় প্রচেষ্টার অধিকাংশই মাঠে মারা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক চুক্তির ইতিহাস, বিশেষ করে কপ-এর মতো জলবায়ু মঞ্চে দেখা গিয়েছে যে, ধনী দেশগুলির তরফে দেওয়া প্রতিশ্রুতি সব সময় পালিত হয় না। ধনী দেশগুলির দ্বারা জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ থেকে গিয়েছে। এই উদাহরণ তাদের অঙ্গীকারগুলি রক্ষা করার সদিচ্ছা সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহের জন্ম দেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন এই দেশগুলির কাছে জবাবদিহি চায় এবং এ কথা সুনিশ্চিত করে যে, বারবার দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাগাড়ম্বর নয়, বরং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করা জরুরি, যা সমগ্র বিশ্বের, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের দুর্বল দেশগুলির জন্য লাভজনক হবে। ভারতের সভাপতিত্বের সাফল্যকে শুধু বাগ্মিতা নয়, বরং বাস্তবিক পরিবর্তনের আলোকেও পরিমাপ করা উচিত, যে দেশটি সর্বদাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি উন্নতি সাধন করে এসেছে।
বিশ্ব জি২০ থেকে কপ২৭ পর্যন্ত একগুচ্ছ আন্তর্জাতিক মঞ্চের সাক্ষী থেকেছে,
যেখানে দেশগুলি আলোচনা করতে এবং আমাদের পৃথিবীর জন্য একটি উন্নততর ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি প্রদানে সমবেত হয়। এই সমাবেশগুলিতে সুমহান বক্তৃতা, উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ও শক্তি, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আন্তঃসম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য উচ্চ প্রতিশ্রুতির বিনিময় ঘটে থাকে। যাই হোক, এই বাস্তবতাকে কোনও মতেই অস্বীকার করা যায় না যে, নানাবিধ আলোচনা ও বাগাড়ম্বর সত্ত্বেও অনেক সমস্যা অমীমাংসিতই রয়ে গিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলি ক্রমশই বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুমহান ঘোষণা এবং উচ্চ প্রতিশ্রুতি প্রদানের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। এই ঘোষণাগুলির একটি পুনরাবৃত্তিমূলক বিষয় হল সবুজ বা দূষণহীন উদ্যোগ এবং জলবায়ু পদক্ষেপের নিরিখে জরুরি প্রয়োজনীয়তা। যাই হোক, সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন সম্মেলনের নানাবিধ প্রতিশ্রুতি বস্তাবন্দিই হয়ে থেকেছে, তখন এই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তিকে কোনও মতেই এড়ানো যায় না যে: এই সিদ্ধান্তগুলি কি পরিবর্তনের পথে আক্ষরিক পদক্ষেপ না কি সেগুলি আসলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার লক্ষ্যে নিছকই রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর?
গড়পড়তা আন্তর্জাতিক নাগরিক, যাঁরা আশায় বুক বেঁধে সেই সব প্রতিশ্রুতির দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাঁদের জন্য নিষ্ক্রিয়তার এই চক্রটি হতাশাজনক।
এ হেন উদ্বেগ শুধু মাত্র জি২০-তেই সীমাবদ্ধ নয়; এই উদ্বেগ কপ সিরিজ-সহ একাধিক বহুপাক্ষিক মঞ্চ এবং বহু-দেশীয় ব্লক জুড়েও বিস্তৃত। প্রতিশ্রুতি এবং নানাবিধ অঙ্গীকারের প্রয়াস সত্ত্বেও এই আন্তর্জাতিক সমাবেশের ইতিহাস সুনিয়ন্ত্রিত রেজোলিউশন বা ঘোষণায় পরিপূর্ণ, যা বিশ্বের মনোযোগ অন্যত্র সরে গেলে ম্লান হয়ে যায়। গড়পড়তা আন্তর্জাতিক নাগরিক, যাঁরা আশায় বুক বেঁধে সেই সব প্রতিশ্রুতির দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাঁদের জন্য নিষ্ক্রিয়তার এই চক্রটি হতাশাজনক। ‘পাওয়া’ এবং ‘না-পাওয়া’র মাঝের বিভাজন আরও গভীর হয় এবং অরক্ষিত জনসংখ্যা ও উন্নয়নশীল দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি থেকে বৈষম্যের শিকার হতে থাকে।
প্রতিবন্ধকতার পাহাড়
একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা হল দেশগুলিকে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির জন্য দায়বদ্ধ রাখা। এটি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এক জটিল চক্র, যেখানে নেতাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক মঞ্চে কূটনৈতিক ভাবে যা সঠিক বলে মনে হচ্ছে, তার সঙ্গে দেশে ফিরে যা সম্ভব ও রাজনৈতিক ভাবে কার্যকর বিষয়গুলির মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এই সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলায় দেশের স্বার্থ কখনও কখনও গোটা পৃথিবীর স্বার্থের তুলনায় বেশি প্রাধান্য পায়। বিভিন্ন বহুপাক্ষিক মঞ্চে দেশকে তাদের প্রতিশ্রুতির প্রতি দায়বদ্ধ রাখার রাজনৈতিক সমীকরণ জটিল এবং প্রায়শই কূটনৈতিক বিবেচনা দ্বারা চালিত হয়। বিভিন্ন দেশে ক্রমাগত পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ অবস্থানের ভূ-রাজনৈতিক পরিসরও বহুপাক্ষিক মঞ্চে করা প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে একটি উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করে। এই অস্থিরতা বহুপাক্ষিক চুক্তিতে দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতার জন্য শক্তিশালী প্রক্রিয়ার গুরুত্বের উপরই জোর দেয়, যাতে ভূ-রাজনৈতিক স্রোত পরিবর্তনের পরেও প্রতিশ্রুতিগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
একই ভাবে আর একটি প্রতিবন্ধকতা হল এই প্রতিশ্রুতিগুলিকে অর্থপূর্ণ বাস্তবে রূপান্তরিত করার অনিশ্চয়তা। কখনও কখনও একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি বজায় রাখার ইচ্ছা প্রকৃত বাস্তবায়নের পরিবর্তে সমীকরণের উপর মনোনিবেশ করতে পারে। এটি প্রকৃত দেখভাল ছাড়াই প্রতিশ্রুতির একটি ধারণা তৈরি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই প্রতিশ্রুতির নেপথ্যে থাকা আসল আন্তরিকতা বা উদ্দেশ্যে সম্পর্কে আরও সন্দিহান করে তোলে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারের পুনঃপ্রতিশ্রুতি এবং কর্মক্ষমতা সম্পর্কে স্বচ্ছ প্রতিবেদন স্ব-শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকাশ্যে তাদের অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতাগুলি ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে দেশগুলি দায়বদ্ধতা এবং আস্থার সংস্কৃতিতে অবদান রাখে। এই ধরনের স্বচ্ছতা প্রতিটি সরকার তার প্রতিশ্রুতির নিরিখে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, সে বিষয়টি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা প্রদান করে এবং একটি স্ব-মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রদান করে, যার অবস্থান আক্ষরিক অর্থেই কূটনৈতিক বাগাড়ম্বরের ঊর্ধ্বে।
জনসাধারণের তরফে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুধু মাত্র নেতাদের নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের কাছে দায়বদ্ধই করে তোলে না, বরং একটি গঠনমূলক প্রতিক্রিয়ার আবর্তও সৃষ্টি করে। সরকার সাফল্য ও ত্রুটিগুলি থেকে শিক্ষা নিতে পারে এবং সেই অনুযায়ী নীতি ও কৌশলগুলিকে সাযুজ্যপূর্ণ করে তুলতে পারে। এই পুনরাবৃত্তির প্রক্রিয়াটি স্ব-শাসনের জন্য একটি সক্রিয় পদ্ধতির প্রচার করে, দেশগুলিকে তাদের প্রতিশ্রুতি পালনে কেবল কূটনৈতিক সমীকরণের জন্যই নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতাগুলির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার প্রকৃত প্রতিফলনকেও দর্শায়।
প্রকাশ্যে তাদের অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতাগুলি ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে দেশগুলি দায়বদ্ধতা এবং আস্থার সংস্কৃতিতে অবদান রাখে। এই ধরনের স্বচ্ছতা প্রতিটি সরকার তার প্রতিশ্রুতির নিরিখে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, সে বিষয়টি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা প্রদান করে এবং একটি স্ব-মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রদান করে, যার অবস্থান আক্ষরিক অর্থেই কূটনৈতিক বাগাড়ম্বরের ঊর্ধ্বে।
প্রতিশ্রুতির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিটি মঞ্চের মধ্যে একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন ব্যবস্থাও কার্যকর করা যেতে পারে, যা প্রতিটি মঞ্চের পরবর্তী অধিবেশনে আলোচনার জন্য একটি অ্যাজেন্ডা পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জি২০ ২০২৪ সালের জি২০-র আগের পর্যায়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারে এবং তার পর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এগিয়ে যেতে পারে। আগে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেই একই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার কোনও অর্থই নেই। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর, কার্বন মূল্য বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক অবকাঠামোতে বিনিয়োগের মতো বাস্তববাদী প্রতিশ্রুতিকে অর্থপূর্ণ কর্মে পরিণত করার প্রয়োজন রয়েছে। এর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় যাতে সমস্ত দেশ অংশগ্রহণ করতে পারে, তা সুনিশ্চিত করার জন্য সম্পদ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ন্যায়সঙ্গত লভ্যতাও অপরিহার্য। এটি স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন, অগ্রগতির স্বচ্ছ নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া এবং প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতার পরিণতিগুলির জন্য নানাবিধ প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক নাগরিকদেরও এই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাঁদের কণ্ঠস্বর এবং উদ্বেগকে নেহাতই পাশে সরিয়ে রাখার পরিবর্তে আরও বেশি করে তুলে ধরা উচিত। প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নকে সুনিশ্চিত করার জন্য, আমাদের এমন ব্যবস্থার প্রয়োজন যা ব্যক্তি এবং সুশীল সমাজকে তাদের সরকারের কাছ থেকে পদক্ষেপ ও স্বচ্ছতা সংক্রান্ত দাবি করার ক্ষমতা প্রদান করে।
কোন পথে এগোনো?
বিশ্ব যেহেতু সদ্য কপ২৮ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে, তাই এই জরুরি প্রশ্ন তোলা অপরিহার্য। আমরা কি প্রতিশ্রুতি এবং হতাশার একই চক্রের পুনরাবৃত্তি করব? না কি আমরা শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারগুলিকে অর্থপূর্ণ কাজে পরিণত করতে পারি? পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলনের সময় পৃথিবীকে আরও সবুজ দেখাতে পারে, কিন্তু বিশ্ববাসী, নীতিনির্ধারক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুনিশ্চিত করতে হবে যে এবার আর সেটা নেহাত মরীচিকা হবে না। বিশ্বব্যাপী সরকারগুলি তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম না হলে আমরা নানাবিধ আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে খুব বেশি এগোতে পারব না। আর ঠিক এখানেই আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলির উচিত শক্তিশালী ও স্থিতিস্থাপক স্ব-শাসনের প্রয়োজনীয়তা প্রদর্শন করা। আমাদের গ্রহের ভবিষ্যৎ এই সব প্রয়োজনীয়তার উপরেই নির্ভর করে এগিয়ে চলেছে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.