-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আমেরিকায় উৎপাদন পুনঃনির্দেশিত করার চেষ্টা করছেন, তখন দেশের বাইরে চিন থেকে পরিচালিত মার্কিন সংস্থাগুলি অলৌকিক অর্থনীতি হিসেবে বিবেচিত নতুন মার্কিন অর্থনীতি সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত। জানুয়ারি মাসে ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ট্রাম্প একটি সহজ যুক্তি দিয়েছিলেন, যদি সংস্থাগুলি মার্কিন উৎপাদন ক্ষমতায় বিনিয়োগ করে, তবে তাদের উপর সর্বনিম্ন কর আরোপ করা হবে। ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি - চিনা পণ্যের উপর সর্বনিম্ন ৬০% শুল্ক - পূরণ করতে ব্যর্থ হলেও, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যদি বেজিং ক্ষতিকারক সিন্থেটিক ওপিওয়েডের উপাদান ফেন্টানাইল রফতানির উপর পদক্ষেপ না নেয়। ট্রাম্প প্রথম যে প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন, তার মধ্যে ছিল চিনের সঙ্গে বাণিজ্যের একটি বিস্তৃত পর্যালোচনা, যার মধ্যে শুল্ক এড়াতে অন্যান্য দেশকে ব্যবহার করে এমন সরবরাহ শৃঙ্খলও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এই ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে, রেকর্ড সংখ্যক মার্কিন কর্পোরেট সংস্থা – অর্থাৎ প্রায় ৩০% - হয় চিন থেকে নিজেদের কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে অথবা ইতিমধ্যেই অন্যত্র স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স ইন চায়নার বার্ষিক সমীক্ষায় এই তথ্যই উঠে এসেছে। চিন থেকে মার্কিন সংস্থাগুলির বর্তমান প্রত্যাহার সত্যি বলতে ২০২০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ, যখন কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে চিন আকস্মিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর লকডাউন আরোপ করেছিল।
ট্রাম্প প্রথম যে প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন, তার মধ্যে ছিল চিনের সঙ্গে বাণিজ্যের একটি বিস্তৃত পর্যালোচনা, যার মধ্যে শুল্ক এড়াতে অন্যান্য দেশকে ব্যবহার করে এমন সরবরাহ শৃঙ্খলও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এই ব্যাপক প্রস্থানের অন্যতম কারণ হল, যে কোনও বাণিজ্যিক উদ্যোগের মূল কারণ অর্থাৎ লাভের পরিমাণ। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এমন ৫০%-এরও বেশি সংস্থা জানিয়েছে যে, তারা ২০২৪ সালে খুব একটা লাভবান হতে পারেনি অথবা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে ‘ভোক্তা’ ও ‘পরিষেবা’ ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে সব সংস্থার আর্থিক অবস্থা খারাপ বা খারাপের দিকে এগোচ্ছে, সে সব সংস্থায় ভোক্তা ও পরিষেবার পরিসংখ্যান যথাক্রমে ৬০% ও ৫৭%। ‘শিল্প’ এবং ‘প্রযুক্তি ও গবেষণা’ ক্ষেত্রে এই হার যথাক্রমে ৪৮% এবং ৪৫%। প্রায় ১৭% উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে, তাঁরা সক্রিয় ভাবে উৎপাদন ও পণ্য ক্রয় চিনের বাইরে স্থানান্তর করতে শুরু করেছেন - যা ২০২০ সাল থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪৪% উত্তরদাতা এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ হিসেবে চিন-মার্কিন বাণিজ্য বিরোধের কথাই উল্লেখ করেছেন। সর্বোপরি, প্রায় ৩৮% উত্তরদাতা এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলিকে, যেমন ভারত, ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াকে নিজেদের সংস্থা স্থানান্তরের জন্য পছন্দের গন্তব্য হিসেবে দেখেছেন এবং ১৮% সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই আবার ফিরে যেতে আগ্রহী।
চিনে ব্যবসার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও বিদেশি মালিকানাধীন সংস্থাগুলিও ক্রমশ এই চাপ অনুভব করছে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এ হেন প্রায় ৫০% সংস্থা অভিযোগ করেছে যে, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্থানীয় চিনা উদ্যোগগুলিকে তাদের তুলনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আবার ৯৩% ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বলেছে যে, বাজারে প্রবেশের অভাব তাদের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছে।
যে সব মার্কিন সংস্থা নিজেদের বিনিয়োগ পরিকল্পনায় চিনকে শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে দেখেনি, তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৪ সালে তা ২১%-এ পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চিন বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার জন্য সমস্ত পদক্ষেপ করা সত্ত্বেও এটি ঘটেছে। বিনিয়োগকারীদের মনোভাব উন্নত করার প্রয়াসে গত বছর চিন বাজার প্রবেশের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে এবং ভিসা ও বিনিয়োগ বিধিনিষেধ সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করেছে। তবে, ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা ও অডিট ফার্মগুলির উপর কঠোর ব্যবস্থা বিদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
যে সব মার্কিন সংস্থা নিজেদের বিনিয়োগ পরিকল্পনায় চিনকে শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে দেখেনি, তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৪ সালে তা ২১%-এ পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চিন বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার জন্য সমস্ত পদক্ষেপ করা সত্ত্বেও এটি ঘটেছে।
চিন অন্যান্য জায়গাতেও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে। জার্মানিতে চ্যান্সেলর পদের জন্য অগ্রণী হিসেবে বিবেচিত ফ্রিডরিখ মের্জ দেশের সংস্থাগুলিকে চিনে বিনিয়োগের "ঝুঁকি" সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং চিনকে ‘আইনের শাসন’ মেনে না চলা ‘স্বৈরাচারীদের অক্ষ’র অংশ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
গত বছর চিনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) চেম্বার অফ কমার্স একটি গবেষণাপত্রে এই ধারণাই প্রকাশ করেছে যে, চিনে পরিচালিত বিদেশি ব্যবসাগুলি দেশে বিনিয়োগ করা তাদের মূলধনের উপর লাভের পরিমাণ হ্রাস করছে, যা বাজারে পরিচালনার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিকে ন্যায্যতা প্রদান করে না। বিনিয়োগকারীরা মনে করেছিলেন যে, চিনা বাজারে চ্যালেঞ্জগুলি ‘স্থায়ী প্রকৃতি’র বলে মনে হচ্ছে যা তাঁদের বিনিয়োগের ‘যথেষ্ট কৌশলগত পুনর্বিবেচনা’ করতে বাধ্য করেছে। সর্বোপরি, ইইউ চেম্বারের প্রায় ৪৪% সদস্য ভবিষ্যতের লাভের ক্ষেত্রে হতাশাজনক সম্ভাবনাই অনুমান করেছেন। ইইউ সদস্যদের মনোভাব হ্রাসের জন্য নিয়ন্ত্রক সমস্যা, সরকারি ক্রয়ে অগ্রাধিকার, বাজারে প্রবেশ এবং অতিরিক্ত সক্ষমতাকে দায়ী করা যেতে পারে।
চিনের প্রতি এই মোহভঙ্গের মাঝেই ভারতের জন্য সুযোগের অবকাশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থা আইবিএম চিন থেকে প্রায় ২৫ বছর ধরে চলা গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে। জানা গিয়েছে, প্রযুক্তি প্রধান এই প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা করছে। চিন থেকে আসা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যেই ভারতকে অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Kalpit A Mankikar is a Fellow with Strategic Studies programme and is based out of ORFs Delhi centre. His research focusses on China specifically looking ...
Read More +