Author : Ajay Bisaria

Published on Jan 23, 2025 Updated 0 Hours ago

ন্দি ইমরান খান যে ভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় প্রতিবাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য কাঁটা হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইসলামাবাদের ‘বহুমুখী সঙ্কট’কে আরও তীব্র করে তুলেছে।

এমন এক প্রাক্তন, যাকে জনমানস থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়

পাকিস্তানের কয়েদি নম্বর ৮০৪ তথা দেশটির প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ২৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে হামলার জন্য তাঁদল পিটিআই ক্যাডারদের ‘চূড়ান্ত আহ্বান’ জানান এবং যতক্ষণ না তাঁর মুক্তি সুনিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর সমর্থকদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া’র আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের অপ্রতিরোধ্য শক্তির মুখে এ হেন লড়াই তৃতীয় দিনেই শেষ হয়ে যায়কারণ তৃতীয় সারির পিটিআই নেতৃত্ব লড়াইয়ের মাঠ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে।

একটি ব্যর্থ বাজি

এ হেন লড়াইয়ের জন্য ইমরানের প্রধান মনোনীত প্রার্থী তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি ওরফে পিঙ্কি পিরনি সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি এই লড়াইয়ে সমর্থকদের নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করলেও প্রশাসনের তরফে রাজধানীর উপকণ্ঠে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে কৌশলগত ভাবে ভুল করে ফেলেন। বুশরা বিবি সেই সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম, যিনি অন্তিম শ্বাস পর্যন্ত বা ইমরানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে থেকে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।

কিন্তু ইসলামাবাদের রেড জোনে স্নাইপার ফায়ার, টিয়ারগ্যাস এবং হত্যার পরিকল্পনার গুজবের সম্মুখে তিনি প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গন্ডাপুরের সঙ্গে পিটিআইয়ের শক্ত ঘাঁটি খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) আঁধারে গা ঢাকা দেন। পথবিক্ষোভ চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর এটি তৃতীয় বারের জন্য গা ঢাকা দেওয়ার ঘটনা, যা প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর গোপন আঁতাতের সম্ভাবনাকে উস্কে দিয়েছে এবং পিটিআই কর্মীরা ইমরানের অনুপস্থিতিতে দলটির নেতাদের আন্তরিকতা ও ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে

পিটিআই সমর্থকরা এ হেন ধরপাকড়কে ১৯৭১ সালে সামরিক বাহিনীর নৃশংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা পাকিস্তানের বিভাজন ঘটিয়েছিল।

পিটিআই প্রায় ১০,০০০ বিক্ষোভকারীকে পথে নামিয়েছিল, যার মধ্যে পুলিশি হামলায় অন্তত এক ডজন নিহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যাই হোক, সোশ্যাল মিডিয়ার মতে, এই মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি এবং এ হেন দাবি উঠেছে যে, সেনাবাহিনীর তরফে গণহত্যা চালানোর পরে রাতারাতি মৃতদেহ লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। পিটিআই সমর্থকরা এ হেন ধরপাকড়কে ১৯৭১ সালে সামরিক বাহিনীর নৃশংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা পাকিস্তানের বিভাজন ঘটিয়েছিল। কিন্তু গত বছরের মে হওয়া ‘স্ট্রবেরি বিপ্লব’-এর তুলনায় এই প্রতিবাদ ফিকে হয়ে গিয়েছে, যখন একটি অপ্রস্তুত সেনাবাহিনী ইমরানের গ্রেফতারের কারণে ক্ষুব্ধ পিটিআই সমর্থকদের তাণ্ডবলীলার সম্মুখীন হয়েছিল। ইমরান এখন সেই ঘটনার কারণেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগের সম্মুখীন এবং তাঁর বিরুদ্ধে সামরিক বিচারের সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশাসনের সমর্থকরা এ বিষয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছে যে, পিটিআই-এর জাদুকর’ (পিঙ্কি পিরনি) প্রশাসনের জাদুকর’ অর্থাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নকভির কাছে গো হারান হেরেছেন এবং পিরনির ‘চূড়ান্ত আহ্বান’ একটি ‘ব্যর্থ আহ্বান’-এ পরিণত হয়েছে। কিন্তু ডন পত্রিকার ভাষ্যকার এই বিজয়কে ‘অত্যন্ত দুর্মূল্য’ বলে অভিহিত করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, প্রশাসন এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হয়েছিল পঞ্জাব প্রদেশকে অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল, যাতে কেপি বিক্ষোভকারীরা শুধু মাত্র রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ থাকেন।

ছত্রভঙ্গ সামরিকবাহিনী

ইমরান খানের রাজনৈতিক কৌশল বহুল পরিচিত। তিনি ২০১৪ সালে গোপনে আইএসআই-কে সমর্থনের মাধ্যমে বিশিষ্টতা অর্জন করেছিলেন এবং ২০১৩ সালের নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যে নির্বাচনের দরুন নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় আসেন। ইমরানের চাপের মুখে ২০১৭ সালে শরিফ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ২০১৮ সালে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হন। এর নেপথ্যে ছিল এমন এক সেনাবাহিনীর সমর্থন, যারা পিএমএল-এন এবং পিপিপি-ঊর্ধ্বে উঠে তৃতীয় কোনও রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছিল।

কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে; রিভ্রাতৃদ্বয় অর্থাৎ নওয়াজ এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ – ফেব্রুয়ারি মাসে গজিয়ে ওঠা এক মিশ্র শাসনের অধীনে সামরিক সমর্থন উপভোগ করছেন, যখন অন্য দিকে ইমরান খান জেলে ন্দি রয়েছেন।

তা সত্ত্বেও ইমরান একটি চ্যালেঞ্জ হয়েই রয়ে গিয়েছেন, যিনি চুক্তি বা অপ্রাসঙ্গিকতা প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতাচ্যুত অতীতের রাজনীতিবিদদের বিপরীতে হেঁটেছেন, যা আসলে বিচার ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য ইমরানের অভিপ্রায়কেই দর্শায় এবং এই সব কিছুই সেনাবাহিনীর পথে ইমরানকে কাঁটা করে তুলেছে।

দীর্ঘদিন ধরে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জেনারেল আসিম মুনিরের অধীনে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুনিক্ষমতার অলিন্দে থাকা পিটিআই সহানুভূতিশীলদের অপসারণ করেছেন, নির্বাচনে কারচুপি করেছেন এবং বিচার বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করেছেন। সম্প্রতি মুনির একটি সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’-এর নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা তাঁর তিন বছরব্যাপী মেয়াদকে আইনি ভাবে বর্ধিত করেছে। এই মেয়াদ ২০২৫ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা ২০৩২ সাল অথবা এমনকি যাবজ্জীবন বহাল থাকতে পারে। ভিন্নমত দমিয়ে রাখার জন্য সেনাবাহিনী এমন সাংবিধানিক পরিবর্তন এনেছে, যা বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে খর্ব করে। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে বিকৃত করতে সক্ষম এমন এক নমনীয় সাংবিধানিক বেঞ্চ’-এর সূচনাও করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও ইমরান একটি চ্যালেঞ্জ হয়েই রয়ে গিয়েছেন, যিনি চুক্তি বা অপ্রাসঙ্গিকতা প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতাচ্যুত অতীতের রাজনীতিবিদদের বিপরীতে হেঁটেছেন, যা আসলে বিচার ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য ইমরানের অভিপ্রায়কেই দর্শায় এবং এই সব কিছুই সেনাবাহিনীর পথে ইমরানকে কাঁটা করে তুলেছে।

ক্রমশ প্রকাশ্যে উঠে আসা রাষ্ট্র

কারাগারের আড়ালে থেকে ইমরানের জনপ্রিয় বাগ্মিতার অনুরণন অব্যাহত রয়েছে, বিশেষ করে তরুণ পাকিস্তানি, মধ্যবিত্ত এবং স্থিতাবস্থার ফলে ক্ষুব্ধ প্রবাসীদের মধ্যে। বিদেশে কিছু পিটিআই সমর্থক এমনকি এমনটাও মনে করছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো ইমরান খানের মুক্তির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। তবে ইমরানের অনুপস্থিতিতে তাঁর আন্দোলন অসংলগ্ন ও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। ডি-চকের আর কটি ব্যর্থ বিপ্লবের স্মৃতি হালকা হয়ে আসার আগেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আরও জোরালো হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন যে, সেনাবাহিনী হয়তো কয়েক মাসের মধ্যে একটি মাইনাস’ (বা অপসারণ) চুক্তির মাধ্যমে ইতিমধ্যেই জব্দ ইমরানকে মুক্তি দিতে চাইবে, যা এমন এক নতুন পিটিআই নেতার জন্ম দেবে, যিনি পথবিক্ষোভের বদলে সংসদীয় সমন্বয়কারী হয়ে উঠবেন। আর কটি সর্বনাশা ইঙ্গিত হল এই যে, ইমরানকে হত্যা করার জন্য দ্রুতই তাঁকে আদিয়ালা জেল থেকে স্থানান্তর করা হতে পারে। রাজনৈতিক টানাপড়েন চলতে থাকায় পাকিস্তান আরও ভয়ঙ্কর সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে। সাম্প্রতিক আইএমএফ ঋণের সমর্থন সত্ত্বেও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রাভাণ্ডার হ্রাস বেকারত্ব বাড়তে থাকার দরুন দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারা দাঁড়িয়ে। পশ্চিম প্রান্তে ভয়ঙ্কর টিটিপি-তরফে নিরাপত্তা হুমকি পাশতুন বালোচ বিদ্রোহের সঙ্গে সম্মিলিত হয়েছে, যা চিনা বিনিয়োগে হ্রাস ঘটিয়েছে এবং সেনাবাহিনীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের সঙ্গে ইমরানের বিদ্যমান সংঘাত পাকিস্তানে একটি বৃহত্তর কাঠামোগত অস্বস্তিকেই দর্শায় এবং তা হল দেশের ক্রমবর্ধমান ‘বহুমুখী সঙ্কট’ মোকাবিলায় শাসকগোষ্ঠীর অক্ষমতা। সেনাবাহিনী তার নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ পাকিস্তানিরা আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারেন, যাঁদের বেশির ভাগই ইতিমধ্যে সামরিক বাহিনীকে সমাধানের বদলে আসল সমস্যার কারণ বলে মনে করেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইমরানের সঙ্গে অন্তিম ম্যাচে জয়লাভ করলেও স্পষ্টতই সিরিজ হারতে চলেছে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া-য়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.