Author : Sunaina Kumar

Published on Jan 06, 2024 Updated 0 Hours ago
মহিলাদের ক্রমবর্ধমান আমানতের বিষয়ে আরবিআই রিপোর্ট মহিলাদের উপর আরও বেশি নির্ভর করার একটি সোচ্চার আহ্বান

নারীরা পুরুষদের তুলনায় ভালো সঞ্চয়কারী হিসেবে পরিচিত, যদিও তাঁদের আয় কম এবং অনেক নারীর বৈতনিক কাজের সুযোগ নেই। পরিবারে তাঁদের ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলারা পরিবারের কল্যাণের জন্য উচ্চ অনুপাতে সঞ্চয় করেন, যা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে সরাসরি উন্নতির দিকে চালিত করে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট ‘‌তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিতে আমানত — মার্চ ২০২৩’‌ এই বিষয়টি নিশ্চিত করে যে ভারতে মহিলারা আরও বেশি সঞ্চয় করছেন, কারণ মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আমানত গত বছরের ১৯.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে
২০.৫ শতাংশ হয়েছে৷ প্রতিবেদনটি যেহেতু বছরের মোট আমানতে সামগ্রিক ব্যক্তিগত অংশের হ্রাস প্রতিফলিত করেছে, তাই মহিলাদের অংশের বৃদ্ধি তার নিজস্ব গল্প বলে।

প্রতিবেদনে দেখা যায় যে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মহিলাদের মাথাপিছু আমানত ৪,৬১৮ টাকা বেড়েছে৷ কর্ণাটক ও কেরালার মতো রাজ্যগুলিতে, যেখানে শ্রমশক্তিতে মহিলাদের বেশি অংশগ্রহণ রয়েছে, সেখানে মহিলাদের মাথাপিছু আমানত সবচেয়ে বেশি ছিল;‌ আর ওডিশা ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি পিছিয়ে ছিল৷


নীতির ভূমিকা


মহিলাদের ব্যাঙ্ক আমানতের অংশ বৃদ্ধিকে বিশেষ নীতিগত হস্তক্ষেপের দ্বারা সক্ষম করা হয়েছে, যেমন প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা (পিএমজেডিওয়াই)–র অধীনে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অভিযান, যা মহিলাদের বেসিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি খুলতে এবং এই অ্যাকাউন্টগুলিকে অনন্য পরিচয় (আধার) ও মোবাইল প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করতে সহায়তা করেছে৷  এই জেএএম ট্রিনিটি চার দশক ধরে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত করেছে। পিএমজেডিওয়াই–এর অধীনে প্রায় ৫৫ শতাংশ অ্যাকাউন্ট মহিলাদের হাতে রয়েছে, যা ভারতকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে লিঙ্গ ব্যবধান কম করতে সাহায্য করেছে।

এই বৃদ্ধিকে ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (ডিবিটি) প্রোগ্রামের প্রভাবের সঙ্গেও যুক্ত করা যেতে পারে, যা অতিমারির পর থেকে বাড়ানো হয়েছে এবং এখন ভারতে প্রায় সমস্ত কল্যাণমূলক প্রকল্প যার আওতায় এসে গিয়েছে। এই কর্মসূচির অধীনে সরকার সরাসরি নাগরিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ স্থানান্তর করে। এটি ভারতে মহিলাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে চালিত করেছে, এবং এমন প্রমাণ রয়েছে যে সুবিধাভোগীরা সরকারের কাছ থেকে যখন অর্থ পায় তখন তারা সম্ভবত আরও বেশি সঞ্চয় করতে পারে এবং ঋণ নিতে পারে।


পিএমজেডিওয়াই–এর অধীনে প্রায় ৫৫ শতাংশ অ্যাকাউন্ট মহিলাদের হাতে রয়েছে, যা ভারতকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে লিঙ্গ ব্যবধান কম করতে সাহায্য করেছে।



ডিবিটি–র আওতায় থাকা স্কিমগুলির মধ্যে একটি হল গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা কর্মসূচি। নারীরা মনরেগা’‌র অধীনে কর্মশক্তির ৫০ শতাংশের বেশি এবং মজুরি সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেটা নিয়ে
ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষণা অনুযায়ী, মহিলাদের ব্যাঙ্ক আমানত বৃদ্ধিতে এটি অবদান রেখেছে।


অব্যবহৃত ব্যাঙ্কিং সম্ভাবনা


আরবিআই–এর ডেটা ব্যক্তিদের গৃহীত ঋণের ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশীদারিত্বের বৃদ্ধিও দেখায়, যা ২০১৯ সালে ২১.১ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ২২.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে৷ মহিলা উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানকে অগ্রাধিকার দিয়ে মহিলা উদ্যোক্তাদের আগে অর্থায়নের প্রশ্নে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হত সেই ফাঁক মোকাবিলায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে৷ এর উদাহরণ হল প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা, যা জামানতমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তির প্রসার ঘটায়।

যদি দেশে নারী উদ্যোগ আরও ত্বরান্বিত করা যায় তবে তা ২০৩০ সাল পর্যন্ত
১৫০–১৭০ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। এর জন্য, মহিলাদের ঋণগ্রহণের সুযোগ পাওয়া প্রয়োজন, যা শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ঋণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

মহিলারা ব্যাঙ্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অব্যবহৃত ভোক্তা বিভাগ।  মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠানগুলির একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক উইমেনস ওয়র্ল্ড ব্যাঙ্কিং–এর
একটি রিপোর্ট দেখিয়েছে যে মহিলা জন ধন গ্রাহকেরা পুরুষদের তুলনায় বেশি লাভজনক, কারণ মহিলারা দায়বদ্ধ সঞ্চয়কারী। একজন মহিলা জন ধন গ্রাহকের আজীবন আয় একজন পুরুষের তুলনায় কমপক্ষে ১২ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০ মিলিয়ন নিম্ন–আয়ের নারীকে ছোট–বড় সঞ্চয় প্রকল্প গ্রহণে সক্ষম করার মাধ্যমে তাঁদের পরিবারের ৪০০ মিলিয়ন নিম্ন–আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছনো যেতে পারে। হিসাব করে দেখা গিয়েছে, ব্যাঙ্কগুলি এইভাবে আমানত হিসাবে ২৫,০০০ কোটি (২৫০ বিলিয়ন) রুপির সম্ভাব্য প্রবাহ উন্মুক্ত করতে পারে, যেখন ১০,০০০ কোটি (১০০ বিলিয়ন) রুপির মতো ওভারড্রাফ্ট ২০ মিলিয়ন সুবিধাভোগীকে দিতে হবে।



বাধা, সুযোগ


কিছু বাধা আছে যেগুলির সমাধান করতে হবে। ভারতে প্রতি পাঁচজন মহিলার মধ্যে একজনের এখনও একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির ব্যবহারে লিঙ্গগত পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের গ্লোবাল ফাইন্ডেক্স ডেটাবেস ২০২১ অনুসারে, ভারতে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির ৩২ শতাংশ নিষ্ক্রিয় বা সুপ্ত, যা যে কোনও দেশের জন্য সর্বোচ্চ।

যাঁদের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে এমন মহিলাদের এক–পঞ্চমাংশেরও কম আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাঙ্কে সঞ্চয় করেন, কারণ তাঁদের মধ্যে জনসম্প্রদায়ভিত্তিক সঞ্চয় গোষ্ঠীর মতো অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থায় সঞ্চয় করার প্রবণতা বেশি। অনেক মহিলার জন্যই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যবহার জরুরি অবস্থার জন্য টাকা তোলা, বেতন তোলা বা সরকারি সুবিধা গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

মহিলাদের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকাই যথেষ্ট নয়, আরও মহিলার সঞ্চয়, ঋণ ও বিমার মতো প্রয়োজনীয় আর্থিক পরিষেবাগুলিতে প্রবেশের প্রয়োজন। এখানে কিছু সুযোগ রয়েছে, যা ব্যবহারের জন্য মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা ও আচরণগত পরিবর্তনগুলি প্রচার করা প্রয়োজন, নিশ্চিত করা প্রয়োজন আর্থিক পরিষেবাগুলিতে যেন একটি লিঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, এবং মহিলাদের নির্দিষ্ট  চাহিদাগুলি যেন পূরণ করা হয়। এভাবেই তাঁদের অংশকে আরও প্রসারিত করা যেতে পারে। এর ফলে দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক লাভ হতে পারে, এবং নারীদের মধ্যে অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।



এই ভাষ্যটি প্রথমে
মানিকন্ট্রোল
–এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.