Author : Sohini Bose

Published on Aug 01, 2024 Updated 0 Hours ago

ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর সাম্প্রতিক হিংসা নবনির্বাচিত হাসিনা সরকারের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং সম্ভাব্য ভাবে জনসমর্থন হ্রাস করতে পারে।

কোটা আন্দোলন: যে চ্যুতিরেখা বাংলাদেশে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বয়ে আনবে

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ গভীর টালমাটাল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী, সরকারের সমর্থক এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য চাকরিতে কোটা বা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হিংসার ঘটনা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ২১ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৩৩ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রদের বর্ণনা অনুযায়ী, পুলিশ তাঁদের উপর কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছুড়েছে। একই সময়ে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে, প্রায় ৩০০ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং সরকারি ভবনের বাইরে মোতায়েন করা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী বাংলাদেশ টেলিভিশনেও অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র লিগে কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের পর হামলা করার আগে পর্যন্ত বিক্ষোভটি প্রাথমিক ভাবে শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে পরে হিংসার ঘটনা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে।

 

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ গভীর টালমাটাল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী, সরকারের সমর্থক এবং ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য চাকরিতে কোটা বা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হিংসার ঘটনা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার গুলি করার নির্দেশ দিয়ে ক্রমবর্ধমান ভাবে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করে। উপরন্তু, জাতীয় স্তরে কারফিউ জারি করা হয়। ফলে স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়, পরিবহণ পরিষেবা থমকে যায় এবং মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাপক ভাবে বিপর্যস্ত হয়। যাই হোক, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৬টি জেলার হিংসার ঘটনার প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে যে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য কোটা বা সংরক্ষণ উল্লেখযোগ্য ভাবে ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশরা হয়েছে এবং আদালত অঙ্গীকার করেছে যে, ৯৩ শতাংশ সরকারি চাকরি মেধার ভিত্তিতে নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল উদ্বেগের সমাধান করা হয়েছে। ছাত্রদের অন্যান্য দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ দাবির মধ্যে রয়েছে ‘যাঁদের ইতিমধ্যে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি এবং হিংসাত্মক ঘটনার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের পদত্যাগ। তবে এই প্রতিবাদ কেন গড়ে উঠেছে, সরকারের প্রতিক্রিয়াই বা কী এবং তার প্রভাব বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য।

 

সংরক্ষণ নিয়ে দ্বন্দ্ব

১৯৭১ সালের যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত কোটা পুনর্বহাল করার উদ্দেশ্যে এই বছরের জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায়ের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ সংগঠিত হয়১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশি সমাজে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রণীত একটি সাংবিধানিক আদেশের জন্য এই সংরক্ষণের উৎপত্তি হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সরকার প্রজাতন্ত্রের সেবায় তাদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে কোন অনগ্রসর অংশের পক্ষে বিশেষ বিধান দিতে পারে। পরবর্তী কালে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের হাতে নিজেদের জমি ও সম্পত্তি হারানো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়েছিল এবং আরও ১০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।

 

১৯৭১ সালের যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত কোটা পুনর্বহাল করার উদ্দেশ্যে এই বছরের জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায়ের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ সংগঠিত হয়

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় এবং ২০০৯ সালে পুনর্নির্বাচনের পর তাঁদের নাতি-নাতনিদের সুবিধা প্রদানের সময় পর্যন্তও এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ ছিল। এর ফলে সরকারি পদের মোট ৫৬ শতাংশ আসন (মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, পিছিয়ে পড়া জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য ১ শতাংশ) স্থিতিশীলতা ও নিশ্চিত আয়ের উদ্দেশ্যে লোভনীয় এবং তা শুধু মাত্র নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত থাকে। তাই এই ব্যবস্থা শুধু মাত্র ৪৪ শতাংশ মানুষকে যোগ্যতার মাধ্যমে চাকরি সুরক্ষিত করার সুযোগ করে দেয় এবং বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশে এটি নিঃসন্দেহে একটি চ্যালেঞ্জিং সম্ভাবনা। ফল স্বরূপ, ২০১৮ সালে হাসিনা সরকার সংসদীয় নির্বাচনের আগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সম্মুখীন হওয়ার পর কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছিল। যাই হোক, ২০২১ সালে জাতীয় ভাবে স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন, যার ফলে পূর্ববর্তী ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ পুনঃস্থাপন করা হয়তিন বছর পরে এই সংরক্ষণ ফের বহাল করা হয়। এবং তার জন্য এই যুক্তিই দর্শানো হয়েছিল যে, মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধররা দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অংশগুলির মধ্যে অন্যতম

 

হামলা ও আশ্বাসবাণী

বাংলাদেশে দারিদ্র্যের পরিমাণ ২০১৬ সালে শতাংশ থেকে ২০২২ সালে শতাংশে নেমে এসেছে এবং দেশটি ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ’-এর মর্যাদা অতিক্রম করবে, ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০২২ সালে সরকার তার ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারকে চাঙ্গা করার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল। কোভিড-১৯-এর পরে বেকারত্বের হার উচ্চতর ছিল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের কারণে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের রায় সংরক্ষণ কোটা কমানোর জন্য ছাত্রদের বিক্ষোভকে উত্সাহিত করেছে এবং সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। পরবর্তী কালে যখন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল, হাইকোর্টের আদেশ চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। তবে এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে উস্কানি দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশেষ মন্তব্য, যখন তিনি বলেছিলেন, যদি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরি সংরক্ষিত না করা হয়, তা হলে কাদের জন্য চাকরি সংরক্ষিত করা উচিত? রাজাকারের সন্তানদের জন্য?’

 

বাংলাদেশে দারিদ্র্যের পরিমাণ ২০১৬ সালে শতাংশ থেকে ২০২২ সালে শতাংশে নেমে এসেছে এবং দেশটি ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ’-এর মর্যাদা অতিক্রম করবে, ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

উর্দু শব্দ রাজাকারের অর্থ স্বেচ্ছাসেবক’। বাংলাদেশে এই শব্দবন্ধটি আসলে প্রদাহজনক কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজাকার তাঁদেরকেই বলা হয়, যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি শাসনকে সমর্থন করেছিল এবং যারা পূর্ব পাকিস্তানে ধর্ষণ গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত ছিল। ছাত্ররা স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পাল্টা জবাব দেয়, আমি কে? রাজাকার! তবে সরকার ছাত্রদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করলেও এবং ৭ অগস্ট আদালতের রায়ের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলেও বিক্ষোভ দমন করার জন্য বলপূর্বক প্রচেষ্টা সহিংস সংঘর্ষের দিকে চালিত করেপরিস্থিতির অবনতি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সরকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের দ্রুত শুনানির জন্য অনুরোধ করেছিলেন এবং যার ফলস্বরূপ সেই রায় ২১ জুলাই প্রকাশ করা হয়েছিল। এই রায় কোটা সংস্কারের দাবিকে প্রশমিত করলেও ছাত্র আন্দোলন জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের পুনঃনির্বাচনের পর থেকে আওয়ামি লিগ সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে বলে জানা গিয়েছে।

 

ভবিষ্যতের উপর প্রভাব

প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এই বছর টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরেছেন এবং বাংলাদেশের দীর্ঘতম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিজের উত্তরাধিকারে একপ্রকার সিলমোহর দিয়েছেন। যাই হোক, তাঁর বিজয়ের বৈধতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, বিরোধীরা নির্বাচন বয়কট করেছে এবং ৪০ শতাংশের মতো কম সংখ্যক ভোটার ভোট প্রদান করেছিলেন। নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে সরকার তিস্তা প্রকল্পে ভারতের সহায়তা নিশ্চিত করা-সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই অর্জন হাসিনা সরকারের জন্য তাৎপর্যপূর্ণকারণ নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় হাসিনা সরকার বিরোধীদের সমালোচনা সহ্য করে চলেছে

তা সত্ত্বেও, ছাত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হিংসা সরকারের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে এবং সম্ভাব্য ভাবে তার জনসমর্থন হ্রাস করতে পারে। বিরোধী দল হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ইতিমধ্যেই বিক্ষোভের প্রতি নিজেদের সমর্থন দর্শিয়েছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের নিন্দা জানিয়েছে। যদি হিংসা অব্যাহত থাকে এবং বিরোধী বাহিনীদের আখ্যান চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে এ সম্ভাবনা শক্তিশালী হবে যে, এ হেন প্রতিবাদের ক্রমবর্ধমান রাজনীতিকরণ হবে, সম্ভাব্য ভাবে তা পরিস্থিতিকে গুরুতর করে তুলবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টাকে খর্ব করবে। যেহেতু বাংলাদেশ যথেষ্ট পরিমাণ কোটা হ্রাসের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তাই হিংসা বন্ধ করতে এবং শিক্ষার্থীদের অবশিষ্ট দাবিগুলি সমাধানের জন্য জরুরি পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।

 


সোহিনী বোস অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.