Author : Ramanath Jha

Published on Feb 22, 2025 Updated 0 Hours ago

ভারতীয় শহরগুলিতে জলবায়ু-সম্পর্কিত সংকটের ক্রমবর্ধমান পুনরাবৃত্তির সঙ্গে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরির চ্যালেঞ্জটি জাতীয় নগরায়ণ আলোচনার অগ্রভাগে এসেছে।

জলবায়ু সক্রিয়তাকে নগর পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখা

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি)[১]  থেকে ডেটা ও বিশ্লেষণগুলি দেখায় যে, দেশের শহরগুলি তাপপ্রবাহ, শৈত্য ও বন্যাসহ চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির জন্য আরও খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে৷ বিশেষ করে উপকূলীয় শহরগুলি ঘূর্ণিঝড়, চরম বৃষ্টিপাতের ঘটনা ও সমুদ্রের জলস্তরের উচ্চতাবৃদ্ধি থেকে বৃহত্তর ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। ওয়র্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) ও ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-‌এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিও জলবায়ু পরিবর্তন-প্ররোচিত আবহাওয়ার ঘটনাগুলি নিয়ে সতর্ক-বার্তা দিচ্ছে, যার পুনরাবর্তনের সময় ও তীব্রতা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।


ভারতীয় শহরগুলিতে জলবায়ু-সম্পর্কিত সংকটের ক্রমবর্ধমান পুনরাবৃত্তির সঙ্গে, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরির চ্যালেঞ্জটি জাতীয় নগরায়ণ  আলোচনার অগ্রভাগে এসেছে।



২০২২ সালে আইএমডি সারা দেশে, বিশেষ করে ১৬টি রাজ্য জুড়ে,
প্রচুর পরিমাণে তাপপ্রবাহের দিন (প্রায় ২৮০) রিপোর্ট করেছে। আইএমডি আরও উল্লেখ করেছে যে ১৯৮১-১৯৯১ সময়কালের  দীর্ঘমেয়াদি গড় থেকে বার্ষিক গড় স্থলপৃষ্ঠের বায়ু তাপমাত্রা +০.৫১ ০ সেন্টিগ্রেড বেড়ে গিয়েছে। ২০২২ সালটি ১৯০১ সালের পর পঞ্চম উষ্ণতম ছিল৷ একই সময়ে, ২০২২ সালে, দেশে ৫৭টি শৈত্যপ্রবাহের দিন রেকর্ড করা হয়েছিল, যার মধ্যে হরিয়ানা রাজ্য সর্বাধিক সংখ্যার সম্মুখীন হয়েছিল৷ অধিকন্তু, অনেক শহর বন্যার শিকার হয়েছে, যা জীবন ও জীবিকার ব্যাপক ক্ষতি করেছে।

ভারতীয় শহরগুলিতে জলবায়ু-সম্পর্কিত সংকটের ক্রমবর্ধমান পুনরাবৃত্তির সঙ্গে, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরির চ্যালেঞ্জটি জাতীয় নগরায়ণ আলোচনার অগ্রভাগে এসেছে। আগামী বছরগুলিতে ভারতে আরও নগরায়ণ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে জনগণের বৃহত্তর অংশ শহরগুলিতে বাস করবে। এখন নগর অধ্যয়নের পণ্ডিত, সুশীল সমাজ ও সরকারি প্রশাসকদের মধ্যে ব্যাপক  ঐকমত্য রয়েছে যে, শহরগুলিকে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জগুলিকে প্রশমিত করতে এমন পদক্ষেপ করতে হবে যা বিজ্ঞানসম্মত ও সু-সংজ্ঞায়িত। যেহেতু পৃথিবী এখনও কার্বন-‌নিরপেক্ষতা থেকে অনেক দূরে, তাই জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজন ক্ষমতা গড়ে তোলার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য।

জলবায়ু পরিবর্তন শহরগুলির জন্য
বিশাল নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ভারতে ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণে নতুন দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, চেন্নাই ও লখনউতে এমন ১,২০,০০০ মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে যার জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করা যেতে পারে। চরম জলবায়ু ঘটনাগুলি পৌরসভার পরিকাঠামো ও মানুষের জীবিকা ধ্বংস করে, এবং শহরের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) সতর্ক করেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত চাকরি হ্রাসের দরুন ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি ৪.৫ শতাংশ হ্রাস পাবে


চরম জলবায়ু ঘটনাগুলি পৌরসভার পরিকাঠামো ও মানুষের জীবিকা ধ্বংস করে, এবং শহরের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়ায়।



তাই প্রশ্ন হল, ভারতীয় শহরগুলি জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতাকে শাসন ও প্রস্তুতি পরিকল্পনার মূল উপাদান হিসাবে বিবেচনা করছে কিনা।

সামগ্রিকভাবে, ভারত-নির্দিষ্ট শহরগুলির রিপোর্ট খুব একটা ভাল নয়। ১৭টি স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) মধ্যে, শহরগুলির জন্য যেটি প্রযোজ্য তা হল এসডিজি ১১ ('স্থিতিশীল শহর ও জনসম্প্রদায়'), যার প্রাথমিক লক্ষ্য হল শহর ও মানব বসতিগুলিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, স্থিতিস্থাপক ও স্থিতিশীল করা। স্থিতিশীল উন্নয়ন রিপোর্ট ২০২২ অনুসারে, ভারত এসডিজি ১১ অর্জনের
পথ ধরে চলছে না। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহরের — জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং আর্থিক কেন্দ্র মুম্বইয়ের — বায়ুর গুণমানের নির্দিষ্ট উল্লেখসহ অধঃপতনের দৃশ্যটি শিরোনাম দখল করে রেখেছে। দিল্লির ক্ষেত্রে, চরম শীতের অনেক আগেই বাতাসের গুণমান অনেক নেমে গিয়েছিল, যা বায়ুর গুণমান খারাপ হওয়ার সাধারণ ধরন। মুম্বইয়ের ক্ষেত্রে, যেখানে আগে মনে করা হয়েছিল যে সমুদ্রের বাতাস শহরকে রক্ষা করে, বায়ুদূষণ ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছিল
 
দিল্লি ও মুম্বইয়ের মতো শহরগুলির পরিস্থিতি দেখায় যে, এই শহুরে অঞ্চলগুলি সাধারণত জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার দিকে খুব কম মনোযোগ দেয়। এমনটি ঘটছে ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার মিশন (সিএএম-ইন্ডিয়া)-‌এর মতো উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও, যার লক্ষ্য ভারতের সবচেয়ে দূষিত ১০০টি শহরে পাঁচ বছরে পিএম ২.৫ এক-তৃতীয়াংশ কমানো। জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের অবদানের ক্ষেত্রে শহরগুলির প্রতিক্রিয়া গা–ছাড়া বলে মনে হয়: তারা
বিশ্বব্যাপী প্রাথমিক শক্তির প্রায় ৭৫ শতাংশ ব্যবহার করে, এবং বিশ্বব্যাপী সিওটু নির্গমনের প্রায় ৭৫ শতাংশ উৎপন্ন করে। তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শহরগুলির একটি বড় ভূমিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক৷

জলবায়ু সহনশীল শহর তৈরিতে রাজ্য সরকারগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ এখন জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতাকে নিছকই একটি গ্রহণযোগ্য কার্যকলাপ হিসাবে দেখা, বা শহরগুলির দ্বারা তা গ্রহণে আন্তরিকতা দেখানো, এসব আর কাজ করবে না। নিছক একটি বিকল্প হিসাবে দেখার থেকে কাজটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় শহরগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন আইনগুলিতে জলবায়ু সক্রিয়তা পরিকল্পনার প্রস্তুতি ও বাস্তবায়নের উল্লেখ নেই। কাজেই নগর স্থানীয় সংস্থাগুলি (ইউএলবি) যাতে এটিকে একটি বাধ্যতামূলক কাজ হিসাবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, তার জন্য শহরের আইনগুলিকে এখন সংশোধন করতে হবে৷


দিল্লি ও মুম্বইয়ের মতো শহরগুলির পরিস্থিতি দেখায় যে, এই শহুরে অঞ্চলগুলি সাধারণত জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার দিকে খুব কম মনোযোগ দেয়।



প্রতিটি শহরকে অবশ্যই একটি জলবায়ু সক্রিয়তা পরিকল্পনা (সিএপি) তৈরি করতে বাধ্য করতে হবে, এবং তাদের বার্ষিক বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে বার্ষিক ভিত্তিতে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি কোনও অভিনব, কল্পনাপ্রসূত ধারণা নয়। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, স্লোভাকিয়া ও ডেনমার্কের মতো দেশগুলি ইতিমধ্যে স্থানীয় জলবায়ু পরিকল্পনা বাধ্যতামূলক করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহর (সান ফ্রান্সিসকো, শিকাগো, বোস্টন, লস এঞ্জেলস), দক্ষিণ কোরিয়া (সিওল), জাপান (টোকিও), অস্ট্রেলিয়া (সিডনি, মেলবোর্ন), ইন্দোনেশিয়া (জাকার্তা) এবং দক্ষিণ আফ্রিকা (কেপ টাউন, ডারবান)
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সিএপি তৈরি করেছে।

 
মুম্বইতে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (বিএমসি) একটি সিএপি তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং চেন্নাই তা অনুসরণ করেছে। এমসিএপি ২০২২-এর লক্ষ্য হল
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিএমসি-র মনোযোগ বাড়ানো এবং মুম্বইয়ের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতাকে শক্তিশালী করা। এটি শহুরে বন্যা, উপকূলীয় ঝুঁকি, শহুরে তাপ, ভূমিধস ও বায়ুদূষণকে সবচেয়ে বড় বিপদ হিসাবে চিহ্নিত করে, এবং কর্ম পরিকল্পনা থেকে কৌশলগত প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য সম্পদ সংগ্রহের উপায়ের রূপরেখা দেয়। এমসিএপি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সমস্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের সমন্বয়ের জন্য একটি 'জলবায়ু সেল'-‌এর আকারে একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ারও পরামর্শ দেয়। যাই হোক, সিএপি তৈরি করা হলেও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না, এবং বিএমসি কে আরও অনেক কিছু করতে হবে। অন্য সমস্ত শহরকে একইভাবে সিএপি প্রস্তুত করতে হবে এবং এর বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক এবং আর্থিক ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে।



একটি শহর কতটা মানব ঘনত্ব বজায় রাখতে পারে, নির্মাণের পরিমাণ কী যা অনুমোদিত হতে পারে, এবং কতটা উন্মুক্ততা বজায় রাখতে হবে, সেই বৃহত্তর প্রশ্নগুলি উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়।



ছোট শহরগুলির ক্ষেত্রে জটিল পর্যায়গুলিতে রাজ্য সরকারকে তাদের হাত ধরতে হবে। শহরগুলি যে সমস্ত কাজ সম্পাদন করে তা বাধ্যতামূলকভাবে জলবায়ু দৃষ্টিকোণ থেকে পরীক্ষা করা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে নির্মাণ অনুশীলন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ পৃষ্ঠের সর্বাধিকীকরণ ও সবুজ প্রযুক্তি গ্রহণ। একই সময়ে, প্রতিটি রাজ্যের একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা উচিত, যেখানে জলবায়ু সক্রিয়তার সর্বোত্তম অনুশীলনগুলি ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। শিক্ষাগত ও সক্ষমতা-নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের শক্তি বহু-অংশীদার সক্ষমতা-নির্মাণ এবং পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল আচরণের প্রসারের জন্য উৎসর্গ করতে হবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বিভিন্ন অভ্যাস গড়ে তোলা, যেমন জল সংরক্ষণ, ন্যূনতম বর্জ্য উৎপাদন, গণ-‌যানবাহনের বৃহত্তর ব্যবহার, এবং বাড়ি ও ভবনে শহুরে কৃষির অনুশীলন।

প্রশমন ও অভিযোজন ব্যবস্থা চালু করার সময় এটি অত্যাবশ্যক যে কৌশলগুলি যেন স্থায়িত্বের নীতিগুলি দ্বারা চালিত হয়। একটি শহর কতটা মানব ঘনত্ব বজায় রাখতে পারে, নির্মাণের পরিমাণ কী যা অনুমোদিত হতে পারে, এবং কতটা উন্মুক্ততা বজায় রাখতে হবে, সেই বৃহত্তর প্রশ্নগুলি উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। কোনও শহর স্থিতিশীলতার বিপরীত এমন কার্যক্রম চালিয়ে গেলে আশা করতে পারে না যে প্রশমন ও অভিযোজন ব্যবস্থা সফলভাবে নেতিবাচক পরিণতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।



রমানাথ ঝা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন বিশিষ্ট ফেলো।

এই প্রবন্ধটি একটি বৃহত্তর সংকলনের অংশ:‌"
কনফ্রন্টিং দ্য ক্লাইমেট ক্রাইসিস:‌ পাথওয়েজ টু আরবান রেজিলিয়েন্স‌

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.