-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
মস্কোর মূল দাবিগুলি অপরিবর্তিত থাকলেও তার গৌণ দাবিগুলি পরিবর্তিত হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ইউক্রেনের ইইউ-তে যোগদানের বিষয়ে রাশিয়ার আর আপত্তি নেই।
ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে - পশ্চিমি বিশ্ব থেকে আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসার প্রেক্ষিতে - এই সংঘাত একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করছে বলে মনে হচ্ছে। ১৮ মার্চ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে দুই ঘণ্টার ফোনালাপের মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেখানে তাঁরা শত্রুতা বন্ধের সম্ভাব্য পথনির্দেশিকা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। রাশিয়ার শর্তে যুদ্ধ শেষ হবে, এ বিষয়ে রাশিয়া আশাবাদী হলেও মস্কো সাবধানতার পথেই হাঁটছে।
রাশিয়া যুদ্ধে স্থায়ী শান্তি আনার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। যদিও ২০২২ সালে প্রথম সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিতই থেকেছে। ক্রমবর্ধমান আগ্রহ সত্ত্বেও স্থায়ী শান্তি আনার পথটি জটিলতায় জর্জরিত। কারণ সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার ধারণাগুলিতেই মৌলিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উন্নত কূটনৈতিক সংযোগের অতিরিক্ত পরিবর্তনশীলতার পাশাপাশি সংঘাতের ভবিষ্যৎ গতিপথ চিত্রিত করা এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে একটি সমাপ্তি সম্পর্কে মস্কোর বোঝাপড়ার বিষয়টির উপর আলোকপাত করা জরুরি।
সংঘাতের বিষয়ে মার্কিন অবস্থান ইউক্রেনীয় দাবিগুলিকে সমর্থন করা থেকে শুরু হলেও এখন রাশিয়ার কিছু দাবি শর্তসাপেক্ষে মেনে নিচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি আরবে আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে যুদ্ধ সমাপ্তির সুনির্দিষ্ট পরামিতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সংঘাতের বিষয়ে মার্কিন অবস্থান ইউক্রেনীয় দাবিগুলিকে সমর্থন করা থেকে শুরু হলেও এখন রাশিয়ার কিছু দাবি শর্তসাপেক্ষে মেনে নিচ্ছে। এই দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের তরফে দোনেৎস্ক, লুগানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলগুলিকে মস্কোর কাছে হস্তান্তর করা, ইউক্রেনে ইউরোপীয় সৈন্যের অনুপস্থিতি এবং ন্যাটোতে যোগদানের দাবি ত্যাগ করে কিয়েভের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। অন্য দিকে, ইউক্রেন রাশিয়ার আক্রমণের আর একটি প্রবাহের প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তার অঙ্গীকার চায়, যা রাশিয়ার বিপদসীমা অতিক্রম করবে। কারণ এটি ইউরোপের সামরিকীকরণের অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হবে এবং মস্কোর জন্য হুমকির ধারণাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
রাশিয়ার হিসাব অনুযায়ী, একটি সাধারণ যুদ্ধবিরতি ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোয় রাশিয়ার উদ্বেগের সমাধান করবে না। অতীতে ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা - যেমন মিনস্ক ১ এবং মিনস্ক ২ চুক্তি, যা রাষ্ট্রপুঞ্জের সমর্থন পেয়েছিল - তা অনুসরণ করা হয়নি। এ ভাবে ১১ মার্চ রিয়াধে আলোচনার পর কিয়েভ ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রস্তাবে সম্মত হয়। মস্কো নীতিগত ভাবে এই দাবিগুলিতে সম্মত হয় এবং পুনর্ব্যক্ত করে যে, সংঘাতের মূল কারণটিকে নির্মূল করতে হবে।
সর্বোপরি, যুদ্ধবিরতি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রের গতিতে প্রভাব ফেলবে, যারা ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দোনেৎস্ক অঞ্চলে আভদিভকা দখলের পর থেকে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। রাশিয়া বর্তমানে লুগানস্কের ৯৯ শতাংশেরও বেশি এবং দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার ৭৫ শতাংশ অঞ্চল নিজেদের দখলে রয়েছে বলে দাবি করেছে। মস্কোর নজরে, যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনকে তার সম্পদ একত্রিত করতে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার জন্য যথেষ্ট সময় প্রদান করবে। সর্বোপরি, রাশিয়া চায়নি যে ইউক্রেন কুরস্কে দখল করা অঞ্চলটিকে শান্তি আলোচনায় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করুক। তাই রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী কুরস্ক ওব্লাস্টে হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধারের জন্য তাদের অভিযান তীব্রতর করেছে।
সবশেষে, বর্তমান সীমারেখা বরাবর সংঘাত স্থগিত করা এবং তা কার্যকর করা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ হবে। ৯৭০ কিলোমিটার ফ্রন্টলাইনে সামরিকীকরণমুক্ত অঞ্চলটি সুরক্ষিত করার জন্য ৮৩,০০০-এরও বেশি শান্তিরক্ষী মোতায়েন করতে হবে। সর্বোপরি, শান্তিরক্ষী বাহিনীর অর্থায়ন কে করবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে, যা সম্ভাব্য চুক্তি সমাপনের বিষয়টিকে আরও জটিল করে তোলে।
ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের দ্বিতীয় ফোনালাপের সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট উভয় দেশকে ৩০ দিনের জন্য একে অপরের জ্বালানি অবকাঠামোতে আক্রমণ থেকে বিরত থাকা, সামরিক ও বেসামরিক জাহাজে হামলা স্থগিত রাখা এবং যুদ্ধবন্দিদের বিনিময়ের বিষয়ে সম্মত হন। পুতিন ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিত করারও আহ্বান জানান। পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প পরের দিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেন। মস্কোর সুর ইউক্রেনের যুদ্ধের পর্যায়ক্রমে হ্রাসের প্রতিফলন ঘটালেও এর মূল উদ্বেগগুলি অপরিবর্তিতই রয়েছে।
রাশিয়ার অনমনীয় অবস্থান সংঘাতে তার অনুভূত সুযোগকেই দর্শায়। তবে নিষেধাজ্ঞাগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা উল্লেখযোগ্য ছাড় প্রদান করতে বাধ্য করতে পারে।
জ্বালানি অবকাঠামোর উপর আক্রমণ বন্ধ করা কোনও নতুন ঘটনা নয়। গত বছর কুরস্কে ইউক্রেনের আক্রমণের আগে এই ধরনের হামলা বন্ধ করার জন্য প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল। বর্তমান যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনের চেয়ে মস্কোর জন্যই আরও স্পষ্ট সুবিধা প্রদান করে। ফোনালাপের পর তেলের দাম স্থিতিশীল হয়েছে। কারণ ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকির অনুপস্থিতির কারণে উৎপাদনের পরিমাণ ও সরবরাহ সম্ভবত স্থিতিশীল থাকবে।
রাশিয়ার অনমনীয় অবস্থান সংঘাতে তার অনুভূত সুযোগকেই দর্শায়। তবে নিষেধাজ্ঞাগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা উল্লেখযোগ্য ছাড় প্রদান করতে বাধ্য করতে পারে। ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ার উপর ২৫,৫৯৫টিরও বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা সত্ত্বেও রাশিয়ার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। রাশিয়ার ৪৫ শতাংশেরও বেশি রাজস্ব জ্বালানি রফতানির সঙ্গে যুক্ত এবং ইইউ তার তেল ও গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস করার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া পশ্চিমি দেশগুলিতে নিজের ব্যবসার বাজার পুনরুদ্ধার করতে আগ্রহী। তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলির জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন এবং ইইউ ইউক্রেনের স্বার্থের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রত্যাহার করবে না।
পর্যায়ক্রমে উত্তেজনা হ্রাসের খেলায় মস্কো আলোচনায় অনিচ্ছুক… এ হেন ভাবমূর্তি এড়িয়ে যেতে চায়। কারণ এমনটা হলে তা রাশিয়ার ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হতে পারে। এটি রাশিয়ার অবস্থানের সূক্ষ্মতাকেই ব্যাখ্যা করে – রাশিয়ার মূল দাবিগুলি অপরিবর্তিত থাকলেও তার গৌণ দাবিগুলি পরিবর্তিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে ইউক্রেন সঙ্কটের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের জন্য ইউক্রেনের আকাঙ্ক্ষা। যাই হোক, আজ রাশিয়া ইউক্রেনের সম্ভাব্য ইইউ সদস্যপদকে গ্রহণ করেছে।
শান্তির পথ দীর্ঘ এবং আলোচনা খানিক হলেও এগিয়েছে। অগ্রগতি ধীর গতিতে হবে। কারণ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির বাস্তবসম্মত দাবি দ্বারা এটি আকার পাবে এবং শান্তি প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে কেউই লাভবান হবে না। তবে রাশিয়ার অংশগ্রহণে অস্বীকৃতির কারণে যদি আলোচনা ভেস্তে যায়, তা হলে প্রত্যাহারই সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের প্রতি তার সমর্থন তীব্র করতে প্ররোচিত করবে, যা যুদ্ধকে নিঃসন্দেহে দীর্ঘায়িত করবে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Rajoli Siddharth Jayaprakash is a Research Assistant with the ORF Strategic Studies programme, focusing on Russia's domestic politics and economy, Russia's grand strategy, and India-Russia ...
Read More +