টাস্কফোর্স ৬: অ্যাক্সিলারেটিং এসডিজি: এক্সপ্লোরিং নিউ পাথওয়েজ টু দ্য ২০৩০ এজেন্ডা
সারসংক্ষেপ
ভারত প্রাচীন সভ্যতা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিকতা এবং সুস্থতার ভিত্তিতে নির্মিত একটি বহু-সাংস্কৃতিক পরিসর। আয়ুর্বেদ হল জীবনধারা এবং সুস্থতা সংক্রান্ত ভারতীয় দর্শনের একটি মূল অংশ। প্রকৃত পক্ষে, ভারত সরকার আয়ুষ(ক) কর্মসূচির অধীনে সুস্থতার জন্য একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে, যা ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত গবেষণা ও চর্চাকে উৎসাহ দেয়।
এই পলিসি ব্রিফটিতে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা এবং ন্যায়সঙ্গত ও স্থিতিশীল বৃদ্ধির জন্য একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে উত্সাহিত করার উদ্দেশ্যে আয়ুর্বেদ নীতিগুলি গ্রহণের নিরিখে নতুন পথের অন্বেষণে একটি জি২০-ব্যাপী পরিকাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
১. প্রতিবন্ধকতা
আয়ুর্বেদ প্রাকৃতিক প্রতিকারের ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যের নিরিখে একটি সামগ্রিক পদ্ধতির উপর জোর দেয়। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য আধুনিক অনুসন্ধান আয়ুর্বেদিক এবং ভেষজ পণ্যগুলির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার দিকে পরিচালিত করে এবং বিশ্বব্যাপী ভেষজ পরিসর সংক্রান্ত ভাল বাজারের পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।(১) ঔষধি ও সুগন্ধি উদ্ভিদ, ভেষজ ওষুধ, ভেষজ নির্যাস, উদ্ভিজ্জ পণ্য এবং সম্পূরক-সহ বিভিন্ন উপক্ষেত্র দ্বারা ভেষজ বাজারটি গঠিত। ভেষজ পণ্যের রফতানিতে ভারতের অংশ মোট আন্তর্জাতিক ভেষজ বাজারের ২.৫ শতাংশ, যেখানে এই বাজারে চিনা অংশের পরিমাণ ১৩ শতাংশ।(২) ২০১৪-২০১৯ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক ভেষজ ক্ষেত্রটি ৭.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।(৩) ২০২০ সালে ভেষজ পরিসরে আন্তর্জাতিক বাজারের আকার ছিল আনুমানিক ৬৫৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২২ সালের মধ্যে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ৭৪৬.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।(৪)
ভারত সরকার তার আয়ুষ মন্ত্রকের মাধ্যমে ভেষজ পণ্যের ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়ার জন্য নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সমস্ত আয়ুষ পণ্যের রফতানি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২০ সালে এই রফতানির পরিমাণ প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছিল।(৫) আয়ুর্বেদ সংক্রান্ত পণ্যে ভারতের বাণিজ্যে গত দশকে একটি মিশ্র প্রবণতা দেখা দিয়েছে: ২০০৮-০৯ এবং ২০১১-১২-র মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ আগের চেয়ে হ্রাস পায় এবং ২০১৫-১৬ সালে সেটিতে আবার বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়।(৬) ২০১৭-১৮ সালে আয়ুর্বেদ পণ্যের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৫০.৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০০৮-০৯ পর্যায়ের তুলনায় ১০.৩ শতাংশ বৃদ্ধিকেই সূচিত করে।(৭) যদিও বিশ্বব্যাপী ভেষজ পণ্যে ভারতের আয়ুর্বেদিক পণ্যের পরিমাণ নিতান্তই নগণ্য এবং ২০২২ সালে তার পরিমাণ ছিল মোট পণ্যের মাত্র ২ শতাংশ।(৮) যেহেতু বিশ্বব্যাপী আয়ুর্বেদ বাজার বার্ষিক ১৫.৫ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে মনে করা হচ্ছে, তাই ভারতের আয়ুর্বেদ রফতানির জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।(৯)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি হল ভারতীয় আয়ুষ পণ্যের বৃহত্তম বাজার, যা ২০২১ সালে মোট রফতানির প্রায় ৫৯.১২ শতাংশ জুড়ে ছিল।(১০) যাই হোক, আয়ুষ শিল্পের পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে।
একটি প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতা হল অনুশীলনকারী এবং প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সংক্রান্ত বিধিবিধান। কারণ আয়ুষ ক্ষেত্রগুলি পশ্চিমী দেশগুলিতে বিকল্প ওষুধ হিসাবে ব্যাপক ভাবে স্বীকৃত বা গৃহীত নয়। উপরন্তু বিশ্ব বাজারে আয়ুষ পণ্যগুলিকে বিক্রি করার জন্য কিছু নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে, যা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউতে ওষুধ হিসাবে নয়, বরং প্রায়শই ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট বা খাদ্য সম্পূরক হিসাবে আয়ুর্বেদ পণ্যগুলি বিপণন ও বিক্রি করা হয়। কারণ এই ধরনের প্রবিধানগুলির সঙ্গে মানিয়ে চলা সহজতর।(১১) শুল্ক এবং অশুল্ক উভয় ব্যবস্থাই ভেষজ ওষুধের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য প্রযোজ্য, যা সরকারি আমদানি নিষেধাজ্ঞার উপর ভিত্তি করে বাণিজ্যে বাধা হয়ে উঠতে পারে। যেমন স্যানিটারি এবং ফাইটোস্যানিটারি ব্যবস্থা (এসপিএস), এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত কৌশলগত বাধার (টিবিটি) মতো কৌশলী পদক্ষেপ এবং অ-স্বয়ংক্রিয় আমদানি লাইসেন্সিং, কোটা, নিষেধাজ্ঞা, গুণমান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ও এসপিএস ও টিবিটি ছাড়া অন্যান্য বিধিনিষেধ এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মতো অকৌশলী ব্যবস্থা আয়ুর্বেদ পণ্যের বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে।(১২)
পণ্যের পেটেন্ট এবং গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) সম্পর্কিত সমস্যাগুলিও আয়ুর্বেদের জন্য উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আয়ুর্বেদ পণ্যগুলি প্রায়শই পেটেন্ট করা হয় না। কারণ চিকিৎসা ব্যবস্থাকে চিরাচরিত জ্ঞান হিসাবে দেখা হয়, যার ফলে এ ক্ষেত্রে ওষুধের মালিকানার অধিকার নির্বাচন কঠিন হয়ে পড়ে। এই পরিসরে আরঅ্যান্ডডি-এর জন্য সীমিত তহবিল রয়েছে এবং বিদেশি ক্ষেত্রে ওষুধ হিসাবে পণ্যটি নিবন্ধন করার অসুবিধা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনাকে প্রতিবন্ধকতাময় করে তোলে। আয়ুর্বেদ পণ্য, বিশেষ করে একক ভেষজ প্রস্তুতি, কিছু দেশে খাদ্য সম্পূরক বা খাদ্যতালিকাগত সম্পূরক হিসাবে বিক্রি করা যেতে পারে। কিন্তু আয়ুর্বেদ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অধীনে স্বীকৃত না হওয়ায় ওষুধ হিসাবে সেগুলিকে বিক্রি করা যাবে না।
আয়ুর্বেদের জন্য আর একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা হল পরিসরটিতে উপলভ্য তথ্যের অভাব, এটির আকার, আন্তর্জাতিক জিডিপিতে তার অবদান, কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা এবং আর্থ-সামাজিক প্রভাব অনুমান করা কঠিনতর। এই ধরনের তথ্য ছাড়া, ক্ষেত্রটির সর্বাঙ্গীন আকার নির্ধারণ ও মূল্যায়ন, তার ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির অনুমান এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই পরিসরের উপস্থাপন কঠিন হয়ে পড়ে।
এই সকল প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলায় নীতিনির্ধারক, শিল্প এবং অন্য অংশীদারদের মধ্যে আন্তঃসহযোগিতা প্রয়োজন।
২. জি২০-র ভূমিকা
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জি২০ সদস্য দেশগুলির মধ্যে স্থিতিশীল জীবনধারা ও সামগ্রিক সুস্থতার প্রচার এবং সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের গুরুত্ব স্বীকৃতি পেয়েছে।(১৩)
স্থিতিশীল জীবনধারা ও সুস্থতার উপর মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি জি২০ ঐতিহ্যগত ওষুধ এবং বিকল্প স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১৬ সালে বেজিংয়ে জি২০ স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে একটি ঘোষণা করা হয়েছিল যে, ‘ঐতিহ্যগত ওষুধ এবং বিকল্প স্বাস্থ্যসেবা অনুশীলনগুলি এসডিজি অর্জনে এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সুরক্ষা বৃদ্ধি করায় অবদান রাখতে পারে।’(১৪) ঘোষণাটিতে ঐতিহ্যগত ওষুধ এবং বিকল্প স্বাস্থ্যসেবাতে আরঅ্যান্ডডি বৃদ্ধি ও জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তাদের সমন্বিতকরণকে উন্নীত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে তার প্রথম হেলথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক ডেকেছিল, যা চিকিৎসা সংক্রান্ত ভ্রমণের মাধ্যমে সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী চাহিদা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা সরবরাহ ব্যবস্থায় আয়ুর্বেদ কেন্দ্রের ভূমিকাকে চিহ্নিত করে।(১৫)
মানসিক স্বাস্থ্য, শারীরিক সুস্থতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার গুরুত্বের ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি দ্বারা চালিত সামগ্রিক সুস্থতার চাহিদা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বব্যাপী বেড়েছে। প্রমাণভিত্তিক সমন্বিত অনুশীলনের মাধ্যমে বিশ্ব জুড়ে জনস্বাস্থ্যের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করার সম্ভাবনা আয়ুর্বেদের রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মানুষের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য শারীরিক কার্যকলাপ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্রচারের পাশাপাশি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ক্যানসারের মতো অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) প্রতিরোধের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। জীবনযাত্রায় হস্তক্ষেপের উপর খাদ্য ও ব্যায়ামের মতো আয়ুর্বেদিক ব্যবস্থার মনোযোগ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, আয়ুর্বেদ জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে ইচ্ছুক মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং স্বতন্ত্র চিকিৎসার উপর তার ইতিবাচক মনোভাবও স্পষ্ট।(১৬) জার্মানিতে আর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, আয়ুর্বেদিক থেরাপিগুলি মানসিক চাপ কমাতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে কার্যকর।(১৭) ডব্লিউএইচও দ্বারা রোগের পরিমার্জিত আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিভাগে ঐতিহ্যগত ওষুধের কার্যকারিতা ও সুরক্ষাকে উন্নত করার জন্য আয়ুষের পরিভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এটি আয়ুর্বেদের বিশ্বায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।(১৮)
ফাইটোফার্মাসিউটিক্যালস-সহ জীববৈচিত্র্য-ভিত্তিক পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভেষজ ওষুধগুলি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি চাহিদার সম্মুখীন হয়েছে।(১৯) ভেষজ ঔষধি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতের উপস্থিতি ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই রফতানির পরিমাণ ২০১৭ সালের ০.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালে ১.২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।(২০) এনসিডিতে আয়ুষ শিল্পের মনোযোগ বিকল্প স্বাস্থ্যসেবার সমাধানে আগ্রহী এমন ভোক্তা পরিসর তৈরি করেছে, যেখানে আয়ুষ পণ্যগুলির চাহিদা রয়েছে। সুস্থতার ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা আয়ুষ শিল্পের রয়েছে, যা আয়ুষ পণ্য এবং পরিষেবার চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারে।
যোগব্যায়াম এবং আয়ুর্বেদের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশ তাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় এই অনুশীলনগুলি অন্তর্ভুক্ত করেছে। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং জাপানের মতো দেশে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার বিকল্প রূপ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।(২১) বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ২০০০ আয়ুর্বেদিক রিট্রিট সেন্টার রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১০০টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। এই কেন্দ্রগুলিতে সুস্থতা শিল্পে পেশা নির্মাণে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং শংসাপত্র প্রদানকারী পাঠ্যক্রম বা সার্টিফিকেশন কোর্সের সুযোগ রয়েছে। ভারতের ঐতিহ্যবাহী ওষুধের উত্তরাধিকারও দেশে চিকিৎসা পর্যটনের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভারতে পর্যটন শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই অনুশীলনগুলির প্রচার শিল্পটির বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।(২২)
যেহেতু আয়ুর্বেদ স্বাস্থ্যকর এবং সামগ্রিক জীবনযাপনের উপর মনোনিবেশ করে, তাই এটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির একটি মঞ্চ হিসাবে জি২০ সদস্য দেশগুলিকে আয়ুর্বেদিক পণ্যের রফতানি-সহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা ও সহযোগিতা করার জন্য একটি মঞ্চ প্রদান করতে পারে। জি২০ সদস্য দেশগুলি আয়ুর্বেদিক পণ্যগুলির নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিতকারী গুণমান ও প্রবিধান-সহ সেগুলির রফতানির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে একত্রে কাজ করতে পারে।
৩. জি২০-র জন্য সুপারিশ
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রচার এবং স্থিতিশীল বৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির একটি মঞ্চ হিসাবে স্থিতিশীল জীবনধারা এবং সামগ্রিক সুস্থতার প্রচারে জি২০-র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিম্নলিখিত উপায়ে গোষ্ঠীটি সেই ভূমিকা পালন করতে পারে:
- আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করার জন্য এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক কৌশল, নীতি ও চিরাচরিত চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নের সুবিধার্থে গোষ্ঠীটিকে অবশ্যই একটি কমিটি গঠন করতে হবে। আয়ুর্বেদের নিরাপদ ও কার্যকর অনুশীলনের প্রচারের উদ্দেশ্যে কমিটি তাদের সদস্য দেশগুলির জন্য একটি সমন্বিত পেশাদার মানও নির্ধারণ করতে পারে। এটি অবশ্যই আয়ুর্বেদ অনুশীলনকারীদের সার্টিফিকেশন বা শংসাপত্র এবং আয়ুর্বেদ শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রতিষ্ঠানের মানসম্মত স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণ করবে।
- জি২০ সদস্য দেশগুলির প্রধান আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অংশীদারদের সমন্বয় করার পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া উচিত, যাতে আয়ুর্বেদের মতো ঐতিহ্যগত ওষুধ ব্যবস্থার মাধ্যমে সামগ্রিক জীবনধারার প্রচারের জন্য নিয়ম ও মান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।
- জি২০ ঐতিহ্যগত, পরিপূরক এবং বিকল্প স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত জাতীয় নীতি ও প্রবিধান প্রণয়নে আগ্রহী সদস্য রাষ্ট্রগুলির প্রচেষ্টাকে সহজতর করতে পারে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে নিয়ন্ত্রক নীতিগুলির অভিন্ন জ্ঞান এবং সহযোগিতার প্রচার করতে পারে৷ মূলত, জি২০-র সদস্য দেশগুলিকে এই বাজারে আয়ুর্বেদিক ফার্মাসিউটিক্যালস প্রবেশের সুবিধার্থে নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াগুলির একটি সহজতর পথকে উত্সাহিত করতে হবে।
- জি২০ মঞ্চটি ব্যবসা ক্ষেত্র থেকে ভোক্তার কাছে বিক্রি, সেলস এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রচারের মাধ্যমে ছোট নির্মাতাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। এই শৃঙ্খলগুলির মধ্যে পাইকারি বিতরণকারী দোকানগুলিতে পরিষেবা প্রদানকারী, অনুশীলনকারী, গ্রাহকদের পরিষেবা প্রদানকারী মেল অর্ডার সংস্থাগুলি, অনলাইন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দোকান, ক্লিনিক, ডে কেয়ার সেন্টার ও স্পা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
- গোষ্ঠীটিকে অবশ্যই তার সদস্য সরকারগুলিকে শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে একত্রে কাজ করতে উত্সাহ জোগাতে হবে, যাতে তথ্যের অসঙ্গতিকে সনাক্ত করা যায় এবং বেসরকারি খাতের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা করা যায়। ভবিষ্যতের চাহিদা বজায় রাখার জন্য কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্যগুলি সংক্রান্ত তথ্যের প্রয়োজন রয়েছে এবং তা সরকারগুলিকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে৷
- জি২০-র সদস্য দেশগুলিকে পণ্যের গুণমান ও কার্যকারিতা, নির্দেশিকা ও সুরক্ষা গুণমান সংক্রান্ত আনুগত্য এবং আয়ুর্বেদ অনুশীলনের সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়কে উন্নীত করার জন্য একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গঠনের উদ্দেশ্যে বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা উচিত।
- অন্য মূল অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতায় গোষ্ঠীটি মেডিকেল ট্যুরিজম সার্কিটগুলিকে উন্নীত করার জন্য সদস্য দেশগুলির মধ্যে অংশীদারিত্বকে সহজতর করে তুলতে পারে।
- জি২০ সদস্য দেশগুলিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তিগুলিতে বিনিয়োগ করতে, ক্লিনিক্যাল ডেটা বিশ্লেষণ করতে এবং ক্রেতা ও ভোক্তাদের সুবিধার জন্য ই-কমার্স মঞ্চ ব্যবহার করতে উত্সাহ জোগাতে হবে।
আরোপণ: অনিশ্রী সুরেশ এবং ধর্মরাজন ধনুরাজ, ‘প্রোমোটিং আয়ুর্বেদ অ্যাজ আ পাথওয়ে টু হোলিস্টিক ওয়েল-বিয়িং’, টি২০ পলিসি ব্রিফ, জুন ২০২৩
ক) আয়ুষ হল আয়ুর্বেদ, যোগ এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসা, ইউনানি, সিদ্ধ ও হোমিওপ্যাথির সংক্ষিপ্ত রূপ।
১) অবিনাশ নারাইন, ফতেমা মোয়াজ্জামি পিয়েরো এবং গোপেশ মঙ্গল, ‘গ্লোবালাইজেশন অফ আয়ুর্বেদ’, ইন্টারন্যাশনাল আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল জার্নাল, ৯ (১০), ২০২১
২) নারাইন, পিয়েরো এবং মঙ্গল, ‘গ্লোবালাইজেশন অফ আয়ুর্বেদ’
৩) নম্রতা পাঠক এবং সঞ্জনা অগরওয়াল, ‘আয়ুষ এক্সপোর্টস: রেগুলেটরি অপারচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ইন কি মার্কেটস’ (ফোরাম অন ইন্ডিয়ান ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন-রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ, ২০২৩)
৪) আয়ুষ এক্সপোর্টস: রেগুলেটরি অপারচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ইন কি মার্কেটস
৫) এক্সপোর্ট ভ্যালু অফ আয়ুষ অ্যান্ড হার্বাল প্রোডাক্টস ফ্রম ইন্ডিয়া ফ্রম এফওয়াই ২০১৫ টু এফওয়াই ২০২৩, স্ট্যাটিস্টা, ২০২৩
৬) কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি, আয়ুর্বেদ ইন্ডাস্ট্রি- মার্কেট সাইজ, স্ট্রেন্থ অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড, ২০১৮, সিআইআই
৭) আয়ুর্বেদ ইন্ডাস্ট্রি- মার্কেট সাইজ, স্ট্রেন্থ অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড
৮) আয়ুর্বেদ ইন্ডাস্ট্রি- মার্কেট সাইজ, স্ট্রেন্থ অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড
৯) সুহেল আবিদি, ‘আয়ুর্বেদ: এ ইউএস ডলার ১০ বিলিয়ন এক্সপোর্ট অপরচুনিটি’, ট্রেড প্রোমোশন কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া, মার্চ ২৪, ২০২৩
১০) আয়ুষ এক্সপোর্টস: রেগুলেটরি অপারচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ইন কি মার্কেটস
১১) আয়ুষ এক্সপোর্টস: রেগুলেটরি অপারচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ইন কি মার্কেটস
১২) মাথিয়াস হেলবেল এবং বেন শেফার্ড, ‘উইন-উইন: হাউ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ক্যান হেল্প মিট দ্য সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ (টোকিয়ো: এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট, ২০১৭)
১৩) জি২০ ২০২০, জি২০ রিয়াধ সামিট লিডারস ডিক্লেয়ারেশন
১৪) জি২০ ২০১৭, জি২০ বার্লিন হেলথ মিনিস্টারস’ মিটিং ডিক্লেয়ারেশন, জি২০, ২০১৮
১৫) জি২০ ২০২৩, ‘ফার্স্ট জি২০ হেলথ ওয়ার্কিং গ্রুপ মিটিং টু কমেন্স ফ্রম ১৮-২০ জানুয়ারি অ্যাট তিরুঅনন্তপুরম, কেরালা’, জি২০, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
১৬) টোবিয়াজ এস্ক, গ্রেগরি এল ফ্রিক্কিয়নে এবং জর্জ বি স্তেফানো, ‘দ্য থেরাপিউটিক ইউজ অব দ্য রিল্যাক্সেশন রেসপন্স ইন স্ট্রেস-রিলেটেড ডিজিজ’, মেডিক্যাল সায়েন্স মনিটর: ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ১৪, নম্বর ২ (মার্চ ২০০৩)
১৭) প্রিয়ব্রত শর্মা, চরক সংহিতা চৌখাম্বা সংস্কৃত প্রতিষ্ঠান, ভলিউম ১, (বারাণসী: চৌখাম্বা ওরিয়েন্টালিয়া, ১৯৮৩)
১৮) ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজ (আইসিডি) ১১ ফর মর্টালিটি অ্যান্ড মর্বিডিটি স্ট্যাটিস্টিকস’, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, ২০২৩
১৯) ইউএনসিটিএডি, ‘ইমপ্লিকেশনস অব কোভিড-১৯ ফর বায়োডাইভার্সিটি-বেসড প্রোডাক্টস অ্যান্ড সার্ভিসেস, ইনক্লুডিং বায়োট্রেড’, ইউনাইটেড নেশনস কন্ফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, জেনেভা, ২০২২
২০) আয়ুষ এক্সপোর্টস: রেগুলেটরি অপারচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ইন কি মার্কেটস
২১) সি রাজা মোহন, ‘মোদীজ ডিপ্লোমেসি: যোগ, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইন্ডিয়াজ সফট পাওয়ার’, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪
২২) মোদীজ ডিপ্লোমেসি: যোগ, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইন্ডিয়াজ সফট পাওয়ার
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.