-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অভিন্ন সাধারণ উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভুটান-তাইল্যান্ড সম্পর্ককে প্রতীকবাদের ঊর্ধ্বে উঠে কৌশলগত সম্পর্কে পরিণত করেছে, যার মূলে রয়েছে বাণিজ্য ও সংযোগ।
২০২৫ সালের ১৯ জুন ২০২৫ ভুটানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা জাতীয় পরিষদ ভুটান ও তাইল্যান্ডের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা করে। এই আলোচনায় ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তাইল্যান্ডের রাজা এবং রানির ভুটান সফরের বিষয়টির উপর নিবিড় আলোকপাত করা হয়েছে। ২০১৬ সালে সিংহাসন গ্রহণের পর থেকে তাঁদের প্রথম সরকারি রাষ্ট্রীয় সফর ছিল এটিই। এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা ও উচ্চ স্তরের সম্পৃক্ততাকেই দর্শায়। উভয় দেশই একটি আন্তরিক অংশীদারিত্ব উপভোগ করলেও তাদের সম্পর্ক মূলত রাজপরিবারের সম্পর্ক, কূটনৈতিক শক্তি এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। তবে ভূ-রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থ তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে এবং সহযোগিতার নতুন নতুন পথ তৈরি করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
বিনীত সূচনা
১৯৮৯ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আগেও ভুটান ও তাইল্যান্ডের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, যা দুই দেশের রাজপরিবারের মধ্যে সাংস্কৃতিক সখ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধন দ্বারা চালিত হয়েছিল। এই সম্পর্কগুলি ভুটানের তাইল্যান্ডের উপর আস্থা রাখার এবং ভারতের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হওয়ার কৌশলে দেশটিকে সম্পৃক্ত করার পথ প্রশস্ত করেছিল। তাইল্যান্ড সেই প্রথম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম, যার সঙ্গে ভুটান নিজের সম্পর্ককে বৈচিত্র্যময় করে তোলে। ১৯৮০ সাল থেকে ভুটান ক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য তাইল্যান্ডের সহায়তা চেয়েছে। ১৯৯৭ সালে ভুটান তাইল্যান্ডে একটি মিশনের সূচনাও করে। বিশ্ব জুড়ে চলতে থাকা ভুটানের মাত্র ১০টি কূটনৈতিক মিশনের অন্যতম ছিল এটি। এই মিশন আরও সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করে।
তাইল্যান্ডের উন্নয়নমূলক কূটনীতি এই সম্পৃক্ততার একটি মূল স্তম্ভ, যা দেশটিকে একটি দায়িত্বশীল আঞ্চলিক নেতা এবং সহযোগিতামূলক এশীয় অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি নরম শক্তি কৌশলও বটে।
তাইল্যান্ডের জন্য কূটনৈতিক শক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অর্থনৈতিক কৌশল ও সাংস্কৃতিক সৌহার্দ্যের সমন্বয় তাদের ভুটানের উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী করেছে। তাইল্যান্ডের উন্নয়নমূলক কূটনীতি এই সম্পৃক্ততার একটি মূল স্তম্ভ, যা দেশটিকে একটি দায়িত্বশীল আঞ্চলিক নেতা এবং সহযোগিতামূলক এশীয় অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি নরম শক্তি কৌশলও বটে। তাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (টিআইসিএ) মাধ্যমে ব্যাঙ্কক এশিয়া ও আফ্রিকা জুড়ে উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি চালু করেছে, যা এমন একটি দেশের ভাবমূর্তি তৈরি করেছে, যেটির সাহায্য গ্রহীতা থেকে দাতায় সফল ‘উত্তরণ’ হয়েছে। ভুটানের ক্ষেত্রে এই ধরনের সহায়তা ভুটানের জনসাধারণ এবং নেতৃত্ব উভয়ের মধ্যে সদিচ্ছা জাগিয়ে তোলে। ভুটানের প্রায়শই একচেটিয়া আন্তর্জাতিক অবস্থান বিবেচনা করে এটি বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ; তাইল্যান্ডের সঙ্গে ভুটানের উষ্ণ সম্পর্ক ব্যাঙ্ককের বিশ্বব্যাপী ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করে। তাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা নিয়মিত ভাবে টিআইসিএ-এর কর্মসূচির ‘সন্তোষজনক সাফল্য’ তুলে ধরেন, যা ভুটান জুড়ে সম্প্রদায়গুলির ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছে। তাইল্যান্ডে বা তাই রাজকীয় প্রকল্প দ্বারা সমর্থিত স্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রত্যেক ভুটানি সরকারি কর্মচারি কর্মক্ষেত্রে তাই নরম শক্তির জীবন্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
কূটনৈতিক শক্তি এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক
দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু পারস্পরিক স্বার্থ ও ধারণা রয়েছে। তাইল্যান্ড ও ভুটানের নিজ নিজ দেশে রাজতন্ত্রের ভূমিকা ও দায়িত্ব একে অপরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। উভয় দেশই গণতান্ত্রিক নীতির পাশাপাশিই সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কায়েম করেছে, প্রতিটি দেশের একজন সম্মানিত রাজা আছেন, যিনি ঐক্যের প্রতীক ও ঐতিহ্যের অভিভাবক হিসেবে কাজ করেন, যার ফলে প্রাকৃতিক কূটনৈতিক সাযুজ্যতাও বৃদ্ধি পায়। তাইল্যান্ডের সাফিশিয়েন্ট ইকোনমি ফিলোজফি (এসইপি) এবং ভুটানের গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস-এর (জিএনএইচ) মধ্যেও মিল রয়েছে, যা দুই দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকেও আকার দেয়। সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বেচ্ছাসেবকতা, কৃষি, উদ্যোক্তা এবং পর্যটনের কারণে এই বন্ধন আরও সমন্বিত সরকার ও রাজকীয় উন্নয়ন উদ্যোগে রূপান্তরিত হয় (দ্রষ্টব্য সারণি ১) । ভুটান ও তাইল্যান্ড সহযোগিতার অতিরিক্ত ক্ষেত্রগুলিকে শক্তিশালী ও তা নিয়ে আরও অন্বেষণ করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ ও কর্মী গোষ্ঠীর সভাও শুরু করেছে।
সারণি ১. দুই দেশের সরকারের মধ্যে প্রধান উন্নয়নমূলক উদ্যোগ (২০১৪-২০২৫)
|
উদ্যোগ |
লক্ষ্য |
বর্তমান পরিস্থিতি |
|
ভুটান-তাইল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন প্রোগ্রাম – স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ (বার্ষিক) |
তাইল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভুটানে মানবসম্পদ সক্ষমতা তৈরি করা। |
২০১৯-২৪ সালের মধ্যে ৬১ জন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে এই কর্মসূচিটি চলছে। |
|
‘ফ্রেন্ডস ফ্রম তাইল্যান্ড’ স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মসূচি (এফএফটি) |
কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পর্যটন, ভাষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে স্থানীয় উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য এবং দক্ষতার ঘাটতি পূরণের জন্য তাইল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ এবং তরুণ পেশাদারদের ভুটানে পাঠানো। |
স্বেচ্ছাসেবকরা তাই ভাষা শেখানো, বিপণন ও পর্যটন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সহায়তা করা, মানুষে মানুষে সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। |
|
কোলাবোরেটিভ চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট (বিভিন্ন স্কুলে রয়্যাল প্রজেক্ট) |
ভুটানে শিক্ষার মান এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণের উন্নতির জন্য রাজকুমারী সিরিনধর্নের পৃষ্ঠপোষকতায় স্কুল কৃষি, পুষ্টি এবং জীবন দক্ষতা কর্মসূচি চালু করা। |
|
|
ওয়ান গেওগ ওয়ান প্রোডাক্ট (ওজিওপি) উন্নয়নমূলক কর্মসূচি |
তাইল্যান্ডের ওয়ান তাম্বন ওয়ান প্রোডাক্ট (ওটিওপ) মডেলকে ‘ওজিওপি” হিসাবে স্থানীয়করণ করে গ্রামীণ আয় ও উদ্যোক্তা বৃদ্ধি করা। |
২০১৬ সালে থিম্পুতে একটি ওজিওপি দোকান খোলা হয়েছিল এবং ২০১৭ সালে তাইল্যান্ডের ওটিওপি মেলায় ভুটানি পণ্য আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিতি লাভ করে; ওজিওপি কুইন্স প্রজেক্টের অধীনে গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলিকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে। |
|
রোগ নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ও ওষুধের নিরাপত্তা, চিরাচরিত ওষুধ এবং চিকিৎসা শিক্ষা-সহ স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করার কাঠামো। |
প্রযুক্তিগত আদান-প্রদান সক্ষম করেছে এবং নির্দিষ্ট প্রকল্পগুলির (যেমন, যৌথ রোগ সংক্রান্ত নজরদারি কর্মশালা, ল্যাব সক্ষমতা বৃদ্ধি) পথ প্রশস্ত করেছে। এর পাশাপাশি তাইল্যান্ডের |
|
|
ভুটানের উচ্চতর স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা উন্নত করার জন্য তাইল্যান্ডের প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তায় থিম্পুতে একটি ইয়ার, নোজ, থ্রোট (ইএনটি) কেন্দ্র স্থাপন করা। |
ইএনটি কেন্দ্রটি ২০২২ সালের মধ্যে কার্যকর হয়, যা ইএনটি পরিষেবায় ভুটানের স্বনির্ভরতাকে শক্তিশালী করে। |
|
|
চিকিৎসা সংক্রান্ত পড়াশোনার জন্য শিক্ষা সহযোগিতা |
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের আদান-প্রদান, বিশেষ করে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এন্ডোস্কোপিতে - ভুটানের ডাক্তার এবং নার্সদের প্রশিক্ষণ, সহযোগিতামূলক গবেষণা এবং উন্নত ক্লিনিকাল পরিষেবা। |
২০২৪ সালে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রাথমিক বিনিময় ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ২০২৫ সাল থেকে নির্ধারিত হচ্ছে। |
|
পর্যটন সহযোগিতা – ‘টু কিংডমস, ওয়ান ডেস্টিনেশন’ |
ভুটান ও তাইল্যান্ডকে সংযুক্ত গন্তব্য হিসেবে যৌথ ভাবে বিপণন করে স্থিতিশীল পর্যটন ও |
২০২৪ সালে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৫ সালের এপ্রিলে যৌথ পর্যটন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। |
উৎস: লেখকদের সঙ্কলন
এই সহযোগিতা জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ককেও শক্তিশালী করেছে। ১,২০০ জনেরও বেশি ভুটানি সরকারি কর্মচারী তাইল্যান্ডে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তাইল্যান্ড বাণিজ্য, তীর্থযাত্রা, অবসর ও চিকিৎসার জন্যও একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালে ১,৩০০ জনেরও বেশি ভুটানি তাইল্যান্ডে বসবাস করতেন বলে অনুমান করা হয়েছিল। অতিমারির আগে তাইল্যান্ড ভুটানের জন্য শিক্ষার বিষয়েও একটি জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল এবং সেখানে ৪০০-৪৫০ জনেরও বেশি ভুটানি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতেন। অতিমারি-পরবর্তী সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের পরে এই পরিসংখ্যান উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত হলেও দেশটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল হিসেবেই রয়ে গিয়েছে।
অর্থনীতি ও বাণিজ্য
এই সম্পর্ক কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান হলেও অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতাগুলি দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলেছে। ভুটান বর্তমানে গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন; যুব বেকারত্ব (২০২৪ সালে যা ছিল ১৮ শতাংশ) এ বার কোভিড-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্যাপক ভাবে দেশত্যাগের সূচনা করেছে। ২০২৪ সালে ভুটান সরকার প্রকাশ করেছে যে, ৯ শতাংশেরও বেশি ভুটানি বিদেশে বাস করেন, যার মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৩ শতাংশেরও বেশি মানুষ কেবল অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। এটি দেশের ভবিষ্যৎ এবং অর্থনীতি সম্পর্কে তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ভুটান ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে - গেলফুতে মাইন্ডফুলনেস সিটি (জিএমসি)। এই শহরটি স্থিতিশীল উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জিএনএইচ নীতির উপর ভিত্তি করে একটি অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। প্রকল্পটি দেশের ২.৫ শতাংশেরও বেশি ভূমি জুড়ে বিস্তৃত হবে এবং ১-২ মিলিয়ন জনসংখ্যা থাকবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভুটান দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করার লক্ষ্য রাখে। কারণ তাদের আঞ্চলিক বাণিজ্য ২০০০ সালে ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে ৩৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তাইল্যান্ড ভুটানে একটি উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগকারী হওয়ায় এবং ২০১৭-২০২৪ সালের মধ্যে সামগ্রিক বার্ষিক বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে (এফডিআই) ১০-১৭ শতাংশ অবদান রাখার কারণে থিম্পু তার প্রচারণা ত্বরান্বিত করছে। তাইল্যান্ড অবকাঠামো, রিটেল, স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভুটানের জিএমসি-তে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাইল্যান্ডের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক আগ্রহ স্পষ্ট, যেখানে পরিকল্পনা পর্যায়ে একটি বিশিষ্ট তাই পরামর্শদাতা সংস্থাও জড়িত ছিল।
দুই দেশ ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাণিজ্য বৃদ্ধি করে ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার আশা করছে। এফটিএ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং পর্যটনে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধিরও চেষ্টা করে।
সর্বোপরি, ভুটান ও তাইল্যান্ড তাদের এফটিএ আলোচনা ত্বরান্বিত করেছে এবং মাত্র নয় মাসের মধ্যে এই চুক্তির সমাপ্তি ঘটেছে। ২০২৬ সালে বাস্তবায়িত হতে চলা এই চুক্তিটি ভুটানের ৯৪ শতাংশ রফতানির উপর শুল্ক প্রত্যাহার করবে, বিশেষ করে কৃষি পণ্যের উপর। এই ক্ষেত্রে আপাতত ৫-৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সম্মুখীন হতে হয়। এর ফলে কৃষি খাতের উপর নির্ভরশীল দেশের ৪৩ শতাংশ সরাসরি উপকৃত হবে। অন্য দিকে, ভুটান তাইল্যান্ড থেকে ৫,৮৬৭টি শুল্ক লাইনের উপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করতে চায়, যার ফলে প্রক্রিয়াজাত ও হিমায়িত খাবার, পোশাক, ইলেকট্রনিক্স ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি প্রতিযোগিতামূলক ও আরও সাশ্রয়ী হবে। এ ভাবে দুই দেশ ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাণিজ্য বৃদ্ধি করে ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার আশা করছে। এফটিএ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং পর্যটনে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধিরও চেষ্টা করে। ভুটান তার কৃষি-শিল্প ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১০০ শতাংশ এফডিআই ইক্যুইটি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার প্রস্তাবও করেছে এবং তাইল্যান্ডের সংস্থাগুলি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে। তাইল্যান্ডের সংস্থাগুলি প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার প্রদানেও ভুটানকে সহায়তা করছে।
ভুটান একটি ছোট বাজার হলেও তাইল্যান্ডের সক্রিয় উপস্থিতি আঞ্চলিক গুরুত্ব বহন করে। ভুটানের উন্নয়নে সহায়তা করার মাধ্যমে তাইল্যান্ড তার ব্যবসার জন্য দরজা খুলে দেয় এবং বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করে। তাইল্যান্ড ইতিমধ্যেই ভুটানের শীর্ষ তিনটি আমদানি উৎসের অন্যতম। এই ধরনের উদ্যোগগুলি ভুটানের ভবিষ্যতের উন্নয়নের পথে অর্থনৈতিক লভ্যাংশ ও কৌশলগত প্রবেশাধিকার প্রদান করে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানকে ঘনিষ্ঠ মিত্র ও অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাইল্যান্ড দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সুবিধা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
স্বার্থ, ভূ-অর্থনীতি এবং সংযোগ
ভারতের উপর নির্ভরতা হ্রাস, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করার লক্ষ্যে তাইল্যান্ড ভুটানের একটি সম্ভাব্য অংশীদার। ত্রিপাক্ষিক মহাসড়কের মাধ্যমে মায়ানমার ও তাইল্যান্ডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ভারতের লক্ষ্য ভুটানের আকাঙ্ক্ষাকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে। ভারতের সড়ক প্রকল্পের অংশটি বর্তমানে কলকাতায় শুরু হয়ে অসমের কোকরাঝাড়ের মধ্য দিয়ে মোরে-তে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশিই জিএমসি প্রকল্পের পরিপূরক হিসেবে কোকরাঝাড়কে ভুটানের গেলফুর সঙ্গে তাদের প্রথম রেল লাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারত ও তাইল্যান্ড রানং বন্দর ও কলকাতা বন্দরের মধ্যে ভ্রমণের সময় কমাতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যা ভুটানের জন্য একটি প্রধান ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিট হাব। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য ভুটানের প্রবেশ ও প্রস্থান বিন্দু হিসেবে যোগিঘোপা মাল্টি-মোডাল লজিস্টিক পার্ক এবং অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ টার্মিনালকেও মনোনীত করেছে। সর্বোপরি, পরিবহণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর প্রদান তৃতীয় দেশগুলির সঙ্গে, বিশেষ করে তাইল্যান্ডের সঙ্গে ভুটানের বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।
ভুটানের সঙ্গে তাইল্যান্ডের সম্পৃক্ততার পাশাপাশি নেপাল ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি সেতু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সদিচ্ছাকেই দর্শায়।
ভুটানের সঙ্গে তাইল্যান্ডের সম্পৃক্ততা বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক হিসেব-নিকেশকেও দর্শায়। দক্ষিণ এশিয়া চিরাচরিত ভাবে ভারতের প্রভাবের ক্ষেত্র। তবে ভুটানের সঙ্গে তাইল্যান্ডের সম্পৃক্ততার পাশাপাশি নেপাল ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি সেতু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সদিচ্ছাকেই দর্শায়। এই উদ্যোগগুলি বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন-এর (বিমস্টেক) মধ্যে ভুটানের বৃহত্তর সংযোগ উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি করবে। আকারে ছোট হলেও ভুটান তার পরিবেশগত তত্ত্বাবধান এবং কার্বন-নেগেটিভ দেশ হিসেবে মূল্যবোধ-চালিত শাসনের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করে। ভুটানকে সমর্থন করলে তাইল্যান্ডও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা জোরদার করতে এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতায় নিজেকে একজন নেতা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে পারবে। ভুটানে প্রতিটি সফল হস্তক্ষেপ, বিনিয়োগ ও উদ্যোগ তাইল্যান্ডের উন্নয়ন মডেলকেই প্রদর্শন করে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাইল্যান্ডের কূটনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করে।
ভুটান ও তাইল্যান্ডের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও রাজকীয় সংযোগের মাধ্যমে সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। চিরাচরিত ভাবে তাদের সম্পর্ক নরম শক্তি ও জনগণের সঙ্গে মানুষের সংযোগের উপর কেন্দ্রীভূত থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুই দেশেরই প্রচারমূলক প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুটান বর্তমানে তাইল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার বলে মনে করে, যার সঙ্গে ভুটান সম্পর্ককে বৈচিত্র্যময় করতে পারে এবং তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। অন্য দিকে, তাইল্যান্ড ভুটানকে কেবল একটি অংশীদার হিসেবেই দেখে না, বরং তার উন্নয়ন মডেল প্রদর্শন, দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান অর্জন এবং তার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ভাবমূর্তিকে উন্নত করার একটি মঞ্চ বলেও মনে করে। ভুটান ও তাইল্যান্ড এ ভাবে নিজেদের এবং এই অঞ্চলের বাকি অংশের জন্য আরও বেশি লাভজনক সম্পর্ক স্থাপনের পথ তৈরি করছে।
আদিত্য গৌদারা শিবমূর্তি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
শ্রীপর্ণা ব্যানার্জি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখক(দের) ব্যক্তিগত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Aditya Gowdara Shivamurthy is an Associate Fellow with the Strategic Studies Programme’s Neighbourhood Studies Initiative. He focuses on strategic and security-related developments in the South Asian ...
Read More +
Sreeparna Banerjee is an Associate Fellow in the Strategic Studies Programme. Her work focuses on the geopolitical and strategic affairs concerning two Southeast Asian countries, namely ...
Read More +