Published on May 09, 2023 Updated 0 Hours ago

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিতে জাপানের গভীর সম্পৃক্ততা আশ্বাসব্যঞ্জক

ইন্দো-প্যাসিফিক ভূ-রাজনীতিতে জাপানের ‘বিদায়’ঘণ্টা এখনও বাজেনি

২০২৩ সালের মার্চ মাসে ভারত সফরে জাপানের প্রাইম মিনিস্টার ফুমিও কিশিদা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈশ্বিক এবং দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা চালান এবং এই সফরের প্রধান অগ্রাধিকার ছিল জি৭ ও জি২০-র মধ্যে আন্তঃসহযোগিতার উপর মনোনিবেশ করা (যে দু’টির সভাপতিত্বের ভার যথাক্রমে জাপান এবং ভারতের উপর ন্যস্ত হয়েছে)। এর পাশাপাশি কিশিদা ‘একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য জাপানের নতুন পরিকল্পনা’র (এফওআইপি) সূচনা করেন এবং ‘জাপান-ভারত বিশেষ কৌশলগত এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব’ গভীরতর করে তোলার বিষয়ে মতামত বিনিময় করেছেন।

জাপানের এফওআইপি স্পষ্টতই দর্শায় যে, জাপান এই ধারণাই পুনর্বহাল করতে চায় যে দেশটি এফওআইপি ভাবনার প্রধান প্রবক্তা এবং কিশিদার বক্তব্যে বিদ্যমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, দক্ষিণ চিন সাগর, পূর্ব চিন সাগর, ভারতীয় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং তাইওয়ান প্রণালীতে ক্রমবর্ধমান চিনা আগ্রাসনের ভূ-রাজনৈতিক পটভূমিতে এই ধারণাকে নতুন করে গতিশীল করে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়। এফওআইপি-এর জন্য নতুন পরিকল্পনাটি শাসনভিত্তিক ব্যবস্থা বজায় রাখার এবং একে অপরের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। কিশিদা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ‘এমন এক সময়ে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক ঐতিহাসিক বাঁক বদলের মুখে দাঁড়িয়ে, তখন আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য অভিন্ন এক পথনির্দেশিকামূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রস্তাবনার উদ্দেশ্যে এফওআইপি-এর ধারণাটিকে আবারও তুলে ধরতে চাই। এবং এটি মেনে চলা না হলে সমগ্র ব্যবস্থাটি বিভাজন ও সংঘর্ষে পর্যবসিত হবে।’

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সামনে প্রতিবন্ধকতা

জাপানের নতুন নীতিটি ইউক্রেন যুদ্ধ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সাইবার পরিসরের পাশাপাশি সমুদ্রের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করা ও অন্যদের মধ্যে সংযোগ রক্ষার মতো যেসব সমস্যা ইন্দো-প্যাসিফিকের সামনে রয়েছে, তার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

এফওআইপি-এর অধীনে জাপানকে উল্লিখিত অঞ্চলস্থিত সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে ভারত দেশটির এক ‘অপরিহার্য’ অংশীদার মনে করা হচ্ছে।

অন্যতম যে প্রতিবন্ধকতা প্রকাশ্যে এসেছে, তা হল ‘আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা কী হওয়া উচিত’ – সেই বিষয়ে এক ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের অভাব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দেশগুলির ভিন্ন অবস্থান এই সমস্যাটিকে প্রকট করে তুলেছে। তবে দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে, এফওআইপি বিভিন্ন স্বরকে স্বাগত জানিয়ে একজোট হয়ে কাজ করার পাশাপাশি বিভাজন ও দ্বন্দ্বের বদলে আন্তঃসহযোগিতা ও সমন্বয়ের পরিবেশ গড়ে তুলতে করতে সক্ষম হবে। আন্তঃসহযোগিতার এই পরিবেশ অর্জনের জন্য ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ক্রম নির্মাণ’-এর বিষয়টিকে উৎসাহ জোগাতে হবে। এফওআইপি-এর অধীনে জাপানকে উল্লিখিত অঞ্চলস্থিত সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে ভারত দেশটির এক ‘অপরিহার্য’ অংশীদার মনে করা হচ্ছে।

ভিত্তি

জাপানকে এই অঞ্চলে অনেক কিছু করতে হবে এবং তার জন্য নতুন এফওআইপি-এর অধীনে ‘সহযোগিতার চারটি স্তম্ভ’র রূপরেখা দেওয়া হয়েছে: শান্তির নীতি এবং সমৃদ্ধির নিয়ম; ইন্দো-প্যাসিফিক উপায়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা; বহুস্তরীয় সংযোগ ব্যবস্থা; এবং ‘আকাশপথ’ থেকে শুরু করে ‘জলপথ’… উভয়ের সুরক্ষা এবং নিরাপদ ব্যবহারের জন্য প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করা।

প্রথম স্তম্ভে এটি নির্দেশ করা হয়েছে যে, আইনের শাসনের ক্ষয় হলে দুর্বল দেশগুলি সাধারণত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই, জাপান ‘গুণমানসম্পন্ন পরিকাঠামো বিনিয়োগ’-এর জন্য জি২০ নীতিমালা বাস্তবায়নের প্রচার চালানোর মতো অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হতে চায়।

দ্বিতীয় স্তম্ভের অধীনে কিশিদা ‘জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো বিস্তৃত ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত এবং সর্বাঙ্গীন প্রকল্পগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে এফওআইপি-এর জন্য সহযোগিতার সম্প্রসারণ’-এর কথা বলেছেন। জাপান ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একাধিক দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ভাবে সংযোগ প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে।

তৃতীয় স্তম্ভের অধীনে, এই ধরনের আরও প্রকল্প চালু করার জন্য যে তিনটি এলাকার কথা ভাবা হচ্ছে, সেগুলি হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ প্যাসিফিক/প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলি। জাপান-আসিয়ান ইন্টিগ্রেশন ফান্ডের জন্য জাপান ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের একটি নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; এটি ভারত ও বাংলাদেশের আন্তঃসহযোগিতায় বঙ্গোপসাগর-উত্তর পূর্ব ভারতের শিল্প মূল্যশৃঙ্খল ধারণার প্রচার চালাবে। এর পাশাপাশি জাপান দ্বারা সমর্থিত নতুন পালাউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল প্রকল্পও (পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জ) চালু হয়েছে।

তৃতীয় স্তম্ভের অধীনে, এই ধরনের আরও প্রকল্প চালু করার জন্য যে তিনটি এলাকার কথা ভাবা হচ্ছে, সেগুলি হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ প্যাসিফিক/প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলি।

চতুর্থ স্তম্ভের অধীনে, জাপান অন্যান্য দেশের সামুদ্রিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সক্ষমতা জোরদার করতে সহায়তা জোগাবে। এই উদ্দেশ্যে জাপান ‘অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স-এর (ওডিএ) কৌশলগত ব্যবহার’-এর বাস্তবায়ন করবে, উন্নয়ন সহযোগিতা সনদ সংশোধন করবে এবং পরবর্তী ১০ বছরের জন্য ওডিএ-এর নির্দেশিকা নির্ধারণ করার পাশাপাশি ‘ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগ সম্পর্কিত’ অনুদানমূলক সাহায্যের জন্য একটি নতুন পরিকাঠামো এবং একটি ‘প্রস্তাবনামূলক’ আন্তঃসহযোগিতার প্রচার করবে। কিশিদা জাপান দ্বারা ২০৩০ সালের মধ্যে পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মোট ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সরকারি ও বেসরকারি তহবিল বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন।

টোকিওর ভূমিকা

কিশিদার সফরের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ইন্দো-প্যাসিফিকের উদীয়মান ভূ-রাজনীতিতে জাপানের কেন্দ্রীয়তাকে সশক্ত করা। অতীতে তিনি বলেছিলেন যে, ‘আজ ইউক্রেনে যা ঘটছে, তা আগামিকাল পূর্ব এশিয়াতেও ঘটতে পারে’, যা এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চিনা আগ্রাসন সম্পর্কে জাপানের উদ্বেগকেই দর্শায়। একটি শান্তিপূর্ণ এবং আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর কিশিদা জোর দেন। একই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে আঞ্চলিক শৃঙ্খলা স্থিতিশীল করতে সাহায্যকারী নতুন এফওআইপি-এর অধীনে নীতি ও প্রক্রিয়াগুলিকে তুলে ধরা এবং এই সংঘাতের বিষয়ে দেশগুলির ভিন্ন অবস্থান এ কথাই দর্শায় যে, জাপান তার নিজের এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য যে কোনও অপ্রত্যাশিত হুমকির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিতে জাপানের গভীর সম্পৃক্ততা ভারত এবং বিস্তৃত অঞ্চলটির জন্য সুসংবাদই বয়ে আনে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Premesha Saha

Premesha Saha

Premesha Saha is a Fellow with ORF’s Strategic Studies Programme. Her research focuses on Southeast Asia, East Asia, Oceania and the emerging dynamics of the ...

Read More +