Published on Sep 07, 2024 Updated 13 Hours ago

পেতংটার্ন সিনাওয়াত্রা তাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কার্যকাল শুরু করার পর সকলের দৃষ্টি থাকবে তাঁর নীতি এবং দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বের প্রভাবের দিকে।

উত্তরাধিকার নিয়ে এগিয়ে চলা: তাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী

তাইল্যান্ড রাজনৈতিক অসন্তোষের বৃদ্ধি নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে, আর সাংবিধানিক আদালত ক্রমাগত সামরিক শক্তি, ধর্মযাজক ও রাজপন্থীদের প্রভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে রায় দিয়ে চলেছে। 

সাম্প্রতিক ঘটনাক্রমে বিশিষ্ট শিনাওয়াত্রা পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যা পেতংটার্ন সিনাওয়াত্রা ১৬ আগস্ট প্রতিনিধি পরিষদ কর্তৃক
তাইল্যান্ডের ৩১তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার দুই দিন আগে এই পদ থেকে স্রেথা থাভিসিনকে অপসারণ করা হয়। পূর্বে আদালত ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তিকে স্রেথার বিদেশমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করাকে নৈতিক মান লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছিল। থাভিসিন, যিনি অফিসে এক বছর পূর্ণ করার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন, এমন উদ্দেশ্যমূলক রায়গুলির আরও একটি শিকার হয়েছেন যা তাইল্যান্ডের রাজনৈতিক গতিপথে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন এনেছে।

ক্ষমতা ও এক্তিয়ার
 
সাংবিধানিক আদালত তাই জনসংখ্যার মধ্যে শাসন প্রয়োগ ও বজায় রাখার জন্য একটি অপরিহার্য রাষ্ট্রীয় যন্ত্র হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে, এমন একটি যা রাজপন্থীদের পক্ষে। যদিও তাই সমাজ ১৯৩০ সাল থেকে সরকারি অভ্যুত্থান ও রদবদল প্রত্যক্ষ করেছে, গত দুই দশকে
চারজন প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করা হয়েছে এবং তিনটি নির্বাচনে জয়ী রাজনৈতিক দলকে সামান্য কারণে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই ক্রিয়াকলাপগুলি, যা প্রায়শই ঐতিহ্যগত ক্ষমতা কাঠামোর জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচিত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করে, স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আদালতের মুখ্য ভূমিকার উপর জোর দেয়।


সাংবিধানিক আদালত তাই জনসংখ্যার মধ্যে শাসন প্রয়োগ ও বজায় রাখার জন্য একটি অপরিহার্য রাষ্ট্রীয় যন্ত্র হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে, এমন একটি যা রাজপন্থীদের পক্ষে।



অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা, যেমন নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশন, পদাধিকারীদের অপসারণের জন্য তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করেছে। এই সব ঘটনা ক্ষমতার সম্ভাব্য অপব্যবহার এবং সংস্কারের জরুরি প্রয়োজন সম্পর্কে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

কয়েক দশকের অভ্যুত্থান ও অস্থিতিশীলতার পরে সংবিধানকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা সাংবিধানিক আদালত তাই শাসনের একটি স্থিতিশীল শক্তি হিসাবে কাজ করবে বলে ভাবা হয়েছিল। যাই হোক, এর বিস্তৃত ক্ষমতা, আইনের সাংবিধানিকতা পর্যালোচনা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলিকে ভেঙে দেওয়া পর্যন্ত, শ্রেণিবিন্যাসের শীর্ষে থাকা ব্যক্তিদের ইচ্ছা এবং খেয়ালখুশিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

তাইল্যান্ডের রাজনৈতিক গতিপথে গভীর প্রভাব ফেলেছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে
আদালতের বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলি  — যার মধ্যে তাই রাক তাই পার্টি ও পিপলস পাওয়ার পার্টির বিলুপ্তি রয়েছে, যা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে যুক্ত। থাকসিন সিনাওয়াত্রা তাঁর বিরুদ্ধে আনীত স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রধানত দুবাই ও ব্রিটেনে নির্বাসিত জীবনযাপন করেছেন। এর পরে আরও একটি প্রগতিশীল শক্তির বিলুপ্তি ঘটে যা সমাজের রাজপন্থী কাঠামোর পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলেছিল। ২০২০ সালে ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির উত্তরসূরী মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি, এবং  যাদের মানুষ ২০২৩ সালে দেশ চালানোর জন্য নির্বাচিত করেছিল, অগস্ট মাসের শুরুতে বিলুপ্ত হয়েছে, যা রাজতান্ত্রিক স্থিতি বজায় রাখতে আদালতের ভূমিকার উপর আরও গুরুত্ব দেয়। এর ফলে উদারনৈতিক পরিবর্তনগুলির সম্ভাবনা ধাক্কা খায়।

একজন প্রেসিডেন্ট এবং আটজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত এই আদালতটিকে, যেখানে বিচারপতিরা সেনেটরদের দ্বারা নির্বাচিত এবং রাজা কর্তৃক অনুমোদিত, নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু একে সীমানা অতিক্রম করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে, এবং কিছু সমালোচক দাবি করেছেন যে এটি বিচারবিভাগীয় অভ্যুত্থান আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উপলব্ধি ২০০৬ ও ২০১৪ সালের রাজনৈতিক সংকটের সময় আরও স্বচ্ছ হয়েছিল, যেখানে আদালতের রায়গুলি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীদের অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং সামরিক শাসনের পথ প্রশস্ত করেছিল।


আদালতের হস্তক্ষেপ তাই রাজনীতিতে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখেছে। রাজনৈতিক দলগুলির বারবার বিলুপ্তি এবং নির্বাচিত নেতাদের অযোগ্য ঘোষণা করার ঘটনাগুলি বিচার বিভাগ এবং সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থাকে দুর্বল করেছে।



আদালতের হস্তক্ষেপ তাই রাজনীতিতে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখেছে। রাজনৈতিক দলগুলির বারবার বিলুপ্তি এবং নির্বাচিত নেতাদের অযোগ্য ঘোষণা করার ঘটনাগুলি বিচার বিভাগ এবং সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থাকে দুর্বল করেছে। তবুও, সাংবিধানিক আদালত তাইল্যান্ডের শাসনব্যবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসাবে রয়ে গিয়েছে, এবং এর সিদ্ধান্তগুলি দেশের রাজনৈতিক গতিপথকে আকার দিয়ে চলেছে।

নতুন নেতৃত্ব
 
পেতংটার্ন সিনাওয়াত্রা যখন প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন, তখন তিনি তাঁর পরিবারের জটিল রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের ভারও বহন করছেন। মাত্র ৩৭ বছর বয়সী পেতংটার্ন তাঁর পিসি ইংলাক সিনাওয়াত্রার পরে তাইল্যান্ডের নেতৃত্বদানকারী দ্বিতীয় মহিলা, এবং এই পদে সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি। ইংলাক সিনাওয়াত্রা একটি সামরিক অভ্যুত্থানের ঠিক আগে
২০১৪ সালে সাংবিধানিক আদালত কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হন।

কোনও পূর্ব রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ব্যতিরেকে তাঁকে অবশ্যই
অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ভরা একটি ভূচিত্রের মধ্যে দিয়ে এগোতে হবে, বিশেষ করে যেহেতু বিরোধী দল হিসাবে মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি, এখন পিপলস পার্টি নামে পুনর্নামাঙ্কিত, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ভোটারদের পছন্দ হিসাবে জনসমর্থন অর্জন অব্যাহত রেখেছে। তাঁর প্রতিকূলতা আরও বাড়িয়ে তুলবে ক্ষমতাসীন দল ফিউ তাই-‌এর প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষমতার বিষয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংশয়, বিশেষ করে ১৪.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের নগদ অর্থ প্রদানের বিষয়ে।

অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি যখন তাঁর নেতৃত্বকে পরীক্ষা করবে, সেই সময় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক, বিশেষ করে মায়ানমারের সঙ্গে তাইল্যান্ডের সূক্ষ্ম সম্পর্ক, তিনি কীভাবে পরিচালনা করেন তা পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তাঁর পূর্বসূরি প্রধানমন্ত্রী স্রেথা মায়ানমারে আসিয়ানের শান্তি পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মানবিক সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়েছিলেন, পেতংটার্ন মায়ানমারের অ-রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলির সঙ্গে জড়িত হওয়ার ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবেন কি না তা তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। ইতিমধ্যে মার্চ এবং এপ্রিলে মায়ানমারের ছায়া সরকারের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে 
তাঁর বাবা একটি পথ বেছে নিয়েছেন


যদিও সিনিয়র শিনাওয়াত্রার কোনও আনুষ্ঠানিক ভূমিকা নেই, তিনি ফিউ তাই পার্টি-নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে প্রভাবশালী, আর তাঁর অনেক মিত্র মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত।



১৫ বছর স্বেচ্ছানির্বাসনের পর গত বছর তাইল্যান্ডে থাকসিনের প্রত্যাবর্তন তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, এবং এই ঘটনা সামরিক বাহিনীর উপগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে তাঁর সারিবদ্ধতার ইঙ্গিত দেয়, যা কিনা তাঁর শাস্তি কমাতে সাহায্য করেছিল। এই বছরের জুনে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তবে দক্ষিণ কোরিয়ার চোসুন ইলবোর সঙ্গে ২০১৫ সালের একটি সাক্ষাৎকারের জন্য লেজ মাজেস্তি (‌রাজাকে অপমান)‌ অভিযোগে থাকসিন আদালতে শুনানির মুখোমুখি হলেও তা
আগামী বছরের জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এই অভিযোগটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার ক্ষমতার খেলার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে সিনাওয়াত্রাকে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেওয়া হলেও রাষ্ট্র তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব সীমিত করার উপায় হিসাবে আইনি পথ ব্যবহারের হুমকি বজায় রেখেছে। যদিও সিনিয়র শিনাওয়াত্রার কোনও আনুষ্ঠানিক ভূমিকা নেই, তিনি ফিউ তাই পার্টি-নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে প্রভাবশালী, আর তাঁর অনেক মিত্র মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত।
 
পেতংটার্ন তাঁর মন্ত্রিসভা গঠনের মাধ্যমে তাঁর মেয়াদ শুরু করেছেন। এরপর তিনি শুধুমাত্র তাঁর বাবার প্রভাবের অধীনে কাজ করেন, নাকি তাঁর নিজস্ব পথ নির্ধারণ করেন, তা পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ হবে। তাঁর কার্যকালকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে তিনি যে নীতিগুলি বাস্তবায়ন করবেন তার জন্য নয়, বরং তাঁর নেতৃত্ব দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য কী নির্দেশ করবে তার জন্য। তিনি কি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার চক্র ভাঙতে সক্ষম হবেন, না কি তিনিও সেই শক্তির শিকার হবেন যা তাইল্যান্ডের ইতিহাস এবং তাঁর পরিবারের ভাগ্য নির্ধারণ করে চলেছে, তা প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন।



শ্রীপর্ণা ব্যানার্জি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের জুনিয়র ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.