-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
কানাডিয়ান রকি পর্বতের গভীরে কানানাস্কিসে অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনটি সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে নানা অস্থিরতার মাঝে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের উত্তেজনা, কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্রতা, শুল্ক যুদ্ধ… সব মিলিয়ে বৈশ্বিক অস্থিরতার আবহ বিদ্যমান। তবুও এই সঙ্কটময় শিরোনামের আড়ালে সম্মেলনটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনেরও সাক্ষী হয়েছে। নানা টানাপড়েনের মধ্যে ভারত ও কানাডা নিজেদের ২১ মাসের কূটনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর ইঙ্গিত দিয়েছে এবং বহুপাক্ষিক এই সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ভঙ্গুর বিশ্ব, ভঙ্গুর গোষ্ঠী
প্রতি বছরের মতো জি৭ সম্মেলন এ বারও দ্বৈত উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়েছে: এক দিকে তাৎক্ষণিক বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবিলা এবং অন্য দিকে জলবায়ু, বাণিজ্য, নিরাপত্তার মতো বৈশ্বিক স্বার্থ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিশেষ করে ট্রাম্প-পরবর্তী অনিশ্চয়তার যুগে ব্যক্তিগত পুনর্মিলন ও নতুন সমীকরণের ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করা।
নবনির্বাচিত অর্থনীতিবিদ ও প্রাইম মিনিস্টার মার্ক কার্নি নির্বাচনের মাত্র ছ’সপ্তাহ পর এই বহুপাক্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁর পূর্বসূরি জাস্টিন ট্রুডো ২০১৮ সালে কেবেকে অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনে অপমানিত হয়েছিলেন। কারণ ট্রাম্প সম্মেলন ছেড়ে চলে গিয়ে ট্রুডোকে ‘নিতান্তই অসৎ ও দুর্বল’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এ বছরও আবার ‘জি৬ বনাম ট্রাম্প’ পরিস্থিতির আশঙ্কা ছিল।
নবনির্বাচিত অর্থনীতিবিদ ও প্রাইম মিনিস্টার মার্ক কার্নি নির্বাচনের মাত্র ছ’সপ্তাহ পর এই বহুপাক্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন।
সেই আশঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে, তবে অপেক্ষাকৃত কম ধ্বংসাত্মক ভাবে। ট্রাম্প ২.০ শীর্ষ সম্মেলনে এসেছিলেন সমস্ত জি৭ অংশীদারের উপর কমপক্ষে ১০% শুল্ক আরোপ করে। এ ছাড়াও, তিনি সম্ভাব্য ‘৫১তম রাষ্ট্র’ কানাডা অথবা ‘ফ্রি রাইডিং’ ইউরোপীয়দের উপর আরও শুল্ক আরোপের পন্থা থেকে সম্পূর্ণ রূপে সরে আসেননি। ইরান সঙ্কটের ক্ষেত্রে ট্রাম্প শান্তিরক্ষী ও চুক্তিপ্রণেতার প্রধান হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করার জন্য তড়িঘড়ি দেশে ফিরে যান। তার পর হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে বলেছিল যে, প্রেসিডেন্ট আলবার্টায় একটি ‘দুর্দান্ত দিন’ কাটিয়েছেন এবং ভ্রমণের সময় অনেক সাফল্য অর্জন করেছেন। বাকি কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব দিয়ে আসেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের উপর।
বিদায় নেওয়ার আগে ট্রাম্প সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাইম মিনিস্টার কের স্টারমারের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে ব্রিটিশ মহাকাশ এবং অটো শিল্পের জন্য শুল্ক ছাড়ের বিনিময়ে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরও বেশি পরিমাণ মার্কিন গরুর মাংস এবং ইথানলের প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে। তবে জাপান এবং ইইউ-র প্রাপ্তির ভাণ্ডার শূন্যই থেকেছে এবং ‘ভবিষ্যতের সম্পৃক্ততা’র অস্পষ্ট কিছু প্রতিশ্রুতি মিলেছে। কানাডা ও মেক্সিকোর জন্য - যারা উভয়েই সিইউএসএমএ চুক্তির অংশীদার - দ্বিপাক্ষিক আলোচনা কিছুটা স্থিতিশীলতা আনলেও শুল্কের হুমকি রয়েই যায়।
ইরান সঙ্কট মোকাবিলার জন্য ট্রাম্প তড়িঘড়ি ফেরত যান এবং তাঁর জি৭ সহযোগীরা ট্রাম্পের উপর এই দায়িত্ব অর্পণ করতে পেরে খুশি ছি্লেন। জি৭ ইস্তেহারে ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি-সহ মধ্যপ্রাচ্যে শত্রুতা হ্রাস করা’র আহ্বান জানানো হলেও সেটিতে ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়নি, যা ট্রাম্পকে তাঁর দায়িত্ব পালন করা এবং কৃতিত্ব দাবি করার সুযোগ দিয়েছে।
অনুপস্থিতিও একটি ভাষ্য প্রদান করে। ২০১৪ সালে জি৮ থেকে বহিষ্কৃত রাশিয়া আলোচনার কক্ষে না থাকলেও কিয়েভে সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি করার জন্য রাশিয়া সম্মেলনের সময়টিকে বেছে নিয়েছিল। এমনটা ঘটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির তরফে জি৭-এর কাছে সমর্থন জোগানো সত্ত্বেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তীব্র সমালোচনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে এবং জি৭-কে ‘ইউক্রেনে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন’ প্রকাশ করতে বাধ্য করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, জি৭ ‘আর্থিক নিষেধাজ্ঞা-সহ রাশিয়ার উপর সর্বাধিক চাপ প্রয়োগের জন্য সমস্ত বিকল্প অন্বেষণে দৃঢ়’। আশ্চর্যজনক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর প্রতিরোধ করেছে।
অনুপস্থিত একমাত্র প্রধান অর্থনীতিসম্পন্ন দেশ ছিল চিন। জি৭ নেতারা যখন বন্ধ দরজার আড়ালে সরবরাহ শৃঙ্খল বৈচিত্র্য ও ঝুঁকিমুক্ত করার কথা নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখন নেতারা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে, কী ভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি উন্নত পশ্চিম অর্থনীতির নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করছে।
ভারতের জি৭ কূটনীতি
ভারত জি৭ সদস্য না হলেও এখন নিয়মিত আমন্ত্রিত দেশ এবং কৌশলগত ভাবে সেখানে উপস্থিত ছিল। ট্রাম্পের তড়িঘড়ি দেশে ফিরে যাওয়ার কারণে মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। তবে ট্রাম্পের কাছ থেকে মোদী একটি ফোন পেয়েছিলেন এবং ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ভারতের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য সময় নির্ধারণ করেছিলেন। মোদী এই ফোনালাপটি ব্যবহার করে ভারতের দ্ব্যর্থহীন মতবাদকে পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন এবং স্পষ্টতই বলেন যে, সন্ত্রাসবাদ হল যুদ্ধ। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় পক্ষের, বিশেষ করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মধ্যস্থতা অবাঞ্ছিত। তাই আসিম মুনিরের কাছে ট্রাম্পের দেওয়ার মতো এই ভারতীয় বার্তা যথেষ্ট স্পষ্ট ছিল।
মোদী এই ফোনালাপটি ব্যবহার করে ভারতের দ্ব্যর্থহীন মতবাদকে পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন এবং স্পষ্টতই বলেন যে, সন্ত্রাসবাদ হল যুদ্ধ। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় পক্ষের, বিশেষ করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মধ্যস্থতা অবাঞ্ছিত।
এ ছাড়াও মোদী অন্যান্য জি৭ নেতার সঙ্গে আলোচনা করেন এবং গ্লোবাল সাউথের পক্ষে ভারতের জি২০ উত্তরাধিকারকে অব্যাহত রাখেন। অপারেশন সিঁদুরের পর পর হওয়ার দরুন এই সম্মেলনে মোদী ভারতের নতুন সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করার সুযোগ পান।
বাক্বিতণ্ডার ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তবতা
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ছিল মোদী ও কার্নির মধ্যে প্রথম বৈঠক, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অচলাবস্থা কাটাতে সাহায্য করেছিল। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে পারস্পরিক অভিযোগে জড়িয়ে পড়া দুই দেশ - কূটনৈতিক বহিষ্কার ও রাজনৈতিক আলোচনার পরিসর ভেঙে পড়া - শীর্ষ সম্মেলনটিকে উদ্দেশ্যমূলক পুনর্সূচনার জন্য ব্যবহার করেছিল।
বিশ্বায়নবাদী মনোভাবাপন্ন টেকনোক্র্যাট কার্নি ব্রুকফিল্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর পূর্ববর্তী ভূমিকার সময় ভারত সফর করেননি। এই সংস্থাটি ভারতের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অন্যতম। তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিসরের সঙ্গে তাঁর পেশাদার পরিচিতি কথোপকথনে ভারসাম্য যোগ করে। বিক্ষুব্ধ প্রবাসী গোষ্ঠীগুলির তরফে ক্রমাগত চাপ সত্ত্বেও উভয় পক্ষই সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে হেঁটেছে।
বিবৃতিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে: নয়াদিল্লি ও অটোয়ায় হাইকমিশনারদের প্রত্যাবর্তন, স্থগিত মন্ত্রী-পর্যায়ের আলোচনা পুনরায় শুরু করা এবং দূষণহীন জ্বালানি, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বিষয়ে পুনর্নবীকৃত সহযোগিতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, স্থগিত প্রাথমিক অগ্রগতি বাণিজ্য চুক্তি (ইপিটিএ) নিয়ে আলোচনা আবার শুরু হবে, যা সম্ভাব্য ভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সিইপিএ) জন্য মঞ্চ তৈরি করবে।
এটি অবশ্যই কোনও স্বতঃস্ফূর্ত পুনর্নির্মাণ ছিল না এবং এই পরিস্থিতি তৈরিতে কয়েক মাস সময় লেগেছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রক, বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে নীরব কূটনীতি, ব্যাকচ্যানেল এবং ট্র্যাক-২ প্রচেষ্টা পথ প্রশস্ত করেছিল। নয়াদিল্লির জন্য রাজনৈতিক উত্তেজনা হ্রাস সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের কৌশলগত পরিসর তৈরি করেছিল। অটোয়ার জন্য খালিস্তান কর্মীদের কোনও বোঝা ছাড়াই একজন নতুন প্রাইম মিনিস্টারের আগমন নীতি পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে।
উভয় দেশই এখন প্রাতিষ্ঠানিক ধাক্কা সামলানোর কাজ করছে এবং রাজনৈতিক চাপানউতোর থেকে মুক্ত রাখার জন্য স্পষ্ট আইন প্রয়োগকারী নীতির পথে হাঁটছে।
এই পুনর্গঠন কূটনৈতিক ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করবে। উভয় দেশই এখন প্রাতিষ্ঠানিক ধাক্কা সামলানোর কাজ করছে এবং রাজনৈতিক চাপানউতোর থেকে মুক্ত রাখার জন্য স্পষ্ট আইন প্রয়োগকারী নীতির পথে হাঁটছে। সর্বোপরি, মোদী এক দশক আগে কানাডার প্রাক্তন প্রাইম মিনিস্টার স্টিফেন হার্পারের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এখন কাজ হল সেই কাঠামোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করা। এ বার জনগণ ও বাণিজ্যের মধ্যে ‘কার্যকরী সেতু’ দ্বারা চালিত স্বার্থ-ভিত্তিক বৃদ্ধির অগ্রগতির মাধ্যমেই এই কাজ করতে হবে।
কানানাস্কিসের জি৭ সম্মেলন দেখিয়েছে, বিশ্ব সঙ্কট ও পুনর্গঠনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ভারত ও কানাডার জন্য এটি ছিল মাসের পর মাসব্যাপী অভিযোগের পর বাস্তববাদী নতুন দিকনির্দেশনা বেছে নেওয়ার সঠিক মুহূর্ত।
ট্রাম্পের প্রতি মোদীর কৌশলগত বার্তা ও কার্নির সঙ্গে তাঁর বৈঠক আসলে এমন একটি সরকারকেই তুলে ধরে, যা বহুমেরুকৃত বিশ্বের আত্তীকরণ করেছে: যেখানে স্বার্থ সমাপতিত হয়, নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং বিশ্বব্যাপী বৈধতার পরিবর্তে জাতীয় স্বার্থের নিরিখে কূটনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
নয়াদিল্লি ও অটোয়ার জন্য, সামনের কাজ শুধু স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা নয়, বরং অংশীদারিত্বকে নতুন ভাবে কল্পনা করা। এই পুনর্গঠন সঠিক ভাবে হলে, মতবিরোধ থাকা গণতান্ত্রিক দেশগুলি কীভাবে আবারও যৌথ স্বার্থে একত্রিত হতে পারে, তার একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় টাইমস অফ ইন্ডিয়া-তে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Ajay Bisaria is a Distinguished Fellow at ORF. He is also a strategic consultant and commentator on international affairs. He has had a distinguished diplomatic ...
Read More +