এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।
এমন এক সময়ে যখন একটি রুশ পারমাণবিক ডুবোজাহাজ ফ্লোরিডা থেকে মাত্র ৯০ মাইল দক্ষিণে কিউবায় আটকে আছে, তখন অন্য দিকে জি৭ নেতারা বিশ্বের অন্যতম ধনী পশ্চিমী গণতন্ত্রের গোষ্ঠীটির ৫০তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ইতালিতে একত্র হয়েছেন। মার্কিন-রাশিয়া উত্তেজনা এক দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে এবং আর এক দিকে জি৭-এর ইতালির সভাপতিত্ব বিশ্বকে এই ইঙ্গিতই দেওয়ার চেষ্টা করেছে যে, এই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলিকে আর কোনও মতেই ‘ওয়েস্ট ভার্সাস রেস্ট’ বা ‘পশ্চিম বনাম অবশিষ্ট বিশ্ব’ নামক আখ্যানে সীমাবদ্ধ করা যাবে না।
আপুলিয়ার প্রতীক
ইতালীয়রা প্রতীকী ভাবেই ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের সেই আপুলিয়ায় এই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেন, যা ঐতিহাসিক ভাবে পূর্ব ও পশ্চিম সংস্কৃতির মধ্যে সেতু হিসেবে পরিচিত। এই প্রতীকী বার্তা সেই সব বৃহত্তর গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিকেই দেওয়া হয়েছে, যারা সাধারণত অ-পশ্চিমী রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত। জি৭ আসলে উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি নিরাপত্তার নিরিখে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সহযোগিতাকে গভীরতর করতে প্রস্তুত এবং সেই বার্তাই দিতে আগ্রহী। পশ্চিম এবং অবশিষ্ট বিশ্বের মধ্যকার এই সহযোগিতাকে শক্তিশালী করতে ইতালি ১৫ জন নেতাকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যার মধ্যে ছ’টি দেশ জি২০-র সদস্য এবং পাঁচটি আফ্রিকান দেশও রয়েছে।
এই প্রতীকী বার্তা সেই সব বৃহত্তর গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিকেই দেওয়া হয়েছে, যারা সাধারণত অ-পশ্চিমী রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত। জি৭ আসলে উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি নিরাপত্তার নিরিখে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সহযোগিতাকে গভীরতর করতে প্রস্তুত এবং সেই বার্তাই দিতে আগ্রহী।
জি৭-এ যোগদানকারী আফ্রিকান দেশগুলি ইতালির মাধ্যমে ইউরোপ ও আফ্রিকার শক্তি সঞ্চালন অবকাঠামোকে সংযুক্ত করে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহের সমস্যা সমাধানে ইতালির অগ্রাধিকারের নিরিখে মৌলিক অবশ্যই।
জি২০-র ছয় অতিথি দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তুরস্ক। আর্জেন্টিনা ছাড়াও - যেখানে ইতালীয় বংশোদ্ভূত প্রবাসীদের বিপুল জনসংখ্যা বাস করে - অন্যান্য জি২০ আমন্ত্রিত দেশ জি৭-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এবং নিরাপত্তার প্রভাব বজায় রাখে। মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কই একমাত্র ন্যাটো সদস্য। ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষে সৌদি আরবের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভারত, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা জি৭-এর কৌশলগত সমীকরণের আওতায় পড়ে। কারণ সেই দেশগুলি হয় গ্লোবাল সাউথের মূল প্রতিনিধি হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করেছে, নয়তো জি২০ সভাপতিত্বের সাম্প্রতিক ধারক বা আগামিদিনে সভাপতিত্ব করবে। জি৭ এবং জি২০-র মধ্যে শুধুমাত্র সংযোগকারী মঞ্চ হিসাবে কাজ করার পরিবর্তে এই তিনটি দেশ জি৭-এর জন্য একটি গভীর তাৎপর্য বহন করে। কারণ এই তিনটি দেশ সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যারা প্রতিপক্ষ রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে আবার ব্রিকস গোষ্ঠী গঠন করে।
গ্লোবাল সাউথের স্বর
গ্লোবাল সাউথের নিরিখে জি৭-এর সমীকরণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ভারত এবং ২০১৯ সাল থেকে গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের নিয়মিত উপস্থিতি দেখা যায়। শুধুমাত্র রাশিয়ার উপর তাদের নিষেধাজ্ঞা শাসনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক শাসন কাঠামোর যান্ত্রিকীকরণেও ভারত সত্যিকার অর্থে পশ্চিমের সঙ্গে সেতুবন্ধন করে।
নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা বজায় রাখার সময় গ্লোবাল সাউথের জন্য আলোচনার মূল শক্তি হিসাবে ভারতের ক্রমবর্ধমান মর্যাদা দেশটিকে একটি বিবর্তিত জি৭-এর প্রাকৃতিক সহযোগী করে তোলে, যার নীতি আরও সমতাবাদী হওয়ার লক্ষ্যে আসীন। আপুলিয়া শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারত শিল্পোন্নত জি৭-এর সামনে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির উদ্বেগগুলিকে তুলে ধরার কাজে অব্যাহত থাকবে। রাশিয়ার প্রতি ভারতের অবস্থান তার নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থের দ্বারা নির্ধারিত হলেও দেশে অভ্যন্তরীণ ভাবে পুনঃনির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর আপুলিয়াকে তাঁর প্রথম বিদেশ সফর হিসাবে বেছে নেওয়া এই ইঙ্গিতই দেয় যে, ভারত জি৭-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব বজায় রেখে চলেছে। জি৭-এর প্রতি নীতিগত সঙ্গতি দেওয়ার জন্য ভারত কৌশলগত ভাবে তার অভ্যন্তরীণ তেলের চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি আবার রুশ তেলের মূল্যসীমাও মেনে চলে।
রাশিয়ার প্রতি ভারতের অবস্থান তার নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থের দ্বারা নির্ধারিত হলেও দেশে অভ্যন্তরীণ ভাবে পুনঃনির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর আপুলিয়াকে তাঁর প্রথম বিদেশ সফর হিসাবে বেছে নেওয়া এই ইঙ্গিতই দেয় যে, ভারত জি৭-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব বজায় রেখে চলেছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১২তম দফার নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে জি৭ এবং ভারতের স্বার্থের মধ্যে এক সংঘর্ষের সময় একটি মূল ক্ষেত্র প্রকাশ্যে উঠে আসে, যখন জি৭ দেশগুলি রাশিয়া থেকে উৎপন্ন হিরার উপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যা আবার ভারতের অভ্যন্তরীণ হিরা রফতানি শিল্পকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। কারণ ভারত কাঁচামাল হিসাবে রাশিয়ার হিরা ব্যবহার করে থাকে। আশা করা হচ্ছে যে, আপুলিয়াতে ভারতের উপস্থিতি জি৭-এর সঙ্গে একটি সাধারণ বোঝাপড়ায় পৌঁছনোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে, যা এই সমস্যার সমাধানের দিকে চালিত করবে।
যেহেতু আপুলিয়া গ্লোবাল সাউথকে অগ্রাধিকার দেয়, তাই এটি দেখার যে, শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল ইতালির কর্মসূচির শীর্ষে থাকা উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির জন্য আক্ষরিক অর্থেই লাভজনক কি না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ন্যাটো সদস্যদের রাশিয়ার ভূখণ্ডে সীমিত সামরিক হামলা চালানোর জন্য ইউক্রেনকে তাদের অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে নিবিড় ভাবে অনুসরণ করার কারণে কর্মসূচি এবং কার্যকলাপের মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলির প্রাধান্য বজায় রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। গণতন্ত্র হিসেবে তাইওয়ানের স্বীকৃতির দাবি এবং পশ্চিম ও তাইওয়ানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে পরিচালিত শক্তি প্রদর্শনের পর চিন তাইওয়ানকে প্রায় নিশানা করে ফেলেছে। এ হেন পরিস্থিতিতে এটিই জি৭ নেতাদের প্রথম বৈঠক। আর যে বিষয়টির উপর জি৭-এর নেতৃ দেশগুলি মনোযোগ দিতে বাধ্য, তা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তরফে আটক করা রুশ সম্পদকে অর্থাৎ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের বিষয়টির রূপরেখা চূড়ান্ত করা, যা ইউক্রেনকে প্রদান করা হবে।
জি৭ রাশিয়া এবং চিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় আপুলিয়াতে ভারত একটি অংশীদার গণতন্ত্র হিসাবে অংশগ্রহণ করবে, যা অভিন্ন সাধারণ মূল্যবোধের কথাই বলে, অথচ তার দেশীয় জনসংখ্যা এবং বৃহত্তর গ্লোবাল সাউথের আওয়াজ তুলে ধরে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করার জন্য যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.