Author : Sana Hashmi

Published on Feb 03, 2024 Updated 9 Hours ago

আজকের বিশ্বে, বৃহত্তর উন্নয়নমূলক উদ্বেগগুলির মোকাবিলা নিশ্চিত করতে প্রধান  ও মধ্যম শক্তিগুলির ভূমিকা আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ

মধ্যশক্তিগুলি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীল উন্নয়ন চালাচ্ছে

প্রধান ও মধ্যম শক্তির উত্থান একটি বহুমেরুবিশিষ্ট বিশ্বের সূচনার সংকেত দেয়। এশিয়ায় এই শক্তিগুলির উল্লেখযোগ্য অবস্থিতি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, এটি এশিয়া ও বৃহত্তর ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে বেশ কয়েকটি দেশের নতুন করে মনোযোগ আকর্ষণ করছে। যেহেতু এই দেশগুলি এশিয়া ও ইন্দোপ্যাসিফিকের দিকে তাদের ফোকাস পুনঃনির্দেশিত করেছে, এটি বর্ধিত সম্পৃক্ততা এবং অভিন্ন অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক লক্ষ্যগুলির ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতির সূচনা করেছে। যাই হোক, অঞ্চলটির সামনে চ্যালেঞ্জ কম নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রচিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, চিনের একটি আগ্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদেশনীতি গ্রহণ, চলতি রাশিয়াইউক্রেন দ্বন্দ্ব এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)র প্রতি মূল অংশীদারদের মনোযোগের অভাব অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে।

 

বৈশ্বিক দক্ষিণের বৈপরীত্যমূলক অগ্রাধিকার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে চলতি মহাশক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছেই, আর দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়াইউক্রেন দ্বন্দ্ব সমাধানের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিটি ক্রমাগত কিছু অনুভূত চাপের সমস্যা এবং গ্লোবাল সাউথের অভিন্ন উদ্বেগ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়। যদিও রাশিয়াইউক্রেন সংঘাত নিঃসন্দেহে পীড়াদায়ক, অনেক গ্লোবাল সাউথ দেশ বিশ্বাস করে যে এই সংঘাত তাদের নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য ততটা তাৎক্ষণিক হুমকির সৃষ্টি করে না যতটা পশ্চিমীদের জন্য করে। অনেকে বিশ্বাস করে যে এই দ্বন্দ্বে একটি অবস্থান গ্রহণ করা তাদের গুরুতর উদ্বেগগুলির মোকাবিলায়, তেমন কোনও অবদান রাখবে না যা ঋণ, খাদ্য ও শক্তি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। এই প্রেক্ষাপটে, স্থায়ী বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে, উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বগুলি প্রধান ও মধ্যম শক্তিসমূহের কৌশলগুলির কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান করে নিচ্ছে, আর তা চালিত হচ্ছে নিজেদের প্রভাব জাহির করা এবং উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলির স্বার্থ সমর্থন করার দায়বদ্ধতা দ্বারা৷

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে চলতি মহান শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছেই, আর দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়াইউক্রেন দ্বন্দ্ব সমাধানের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিটি ক্রমাগত কিছু অনুভূত চাপের সমস্যা এবং গ্লোবাল সাউথের অভিন্ন উদ্বেগ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়।

যেহেতু ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চল ক্রমবর্ধমান মনোযোগ এবং সমর্থন অর্জন করে চলেছে, তাই অনেক গ্লোবাল সাউথ দেশের জন্য মূল অংশীদারদের কাছ থেকে উন্নয়নমূলক সমস্যা ও উদ্বেগ সমাধানের লক্ষ্যে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা আশা করা সম্পূর্ণরূপে যুক্তিসঙ্গত। যাই হোক, গ্লোবাল সাউথের বেশ কয়েকটি দেশের পশ্চিমের উপর আস্থা সীমিত। এই অবিশ্বাসের জন্য আংশিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ যোগাযোগ ও মনোযোগের ইতিহাসকে দায়ী করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে এমন উদাহরণও আছে যেখানে কাজ আর কথার মধ্যে সামঞ্জস্যের অভাব দেখা গেছে। এর একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ হল ২০২৩ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পাপুয়া নিউ গিনিতে নির্ধারিত সফর বাতিল করা, যার কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল ঘরোয়া সমস্যা। এটি রাষ্ট্রপুঞ্জের নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থার প্রতি আস্থার অভাব দ্বারাও প্রভাবিত হয়, কারণ ভারতের মতো দেশগুলি এখন তারা যেটাকে বলে বহুপাক্ষিকতার একটি অকার্যকর রূপ সেটি মোকাবিলার জন্য সংস্কারের পক্ষে কথা বলেছে। ইতিমধ্যে, চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলতি প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী নীতির আলোকে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলি সক্রিয়ভাবে চিনের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে চাইছে এবং প্রধান এবং মধ্যম শক্তিগুলির দিকে ঝুঁকছে, যেগুলি আরও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। পশ্চিমীনেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলির উপর, এবং সেইসঙ্গে উন্নয়ন সমস্যাগুলি মোকাবিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের দায়বদ্ধতার প্রতি, তাদের আস্থা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। অর্থপূর্ণ অবদান রাখার ক্ষমতার অধিকারী মধ্যম শক্তিগুলির সঙ্গে সহযোগিতা এখন উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অপরিহার্য বলে বিবেচিত হচ্ছে।

 

এসডিজির পথে প্রধান ও মধ্যম শক্তি

যদিও ইন্দোপ্যাসিফিকের সমমনস্ক দেশগুলি উন্নয়নমূলক সমস্যা মোকাবিলা করতে এবং এসডিজি অর্জনের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ নির্ধারণে আগ্রহ দেখিয়েছে, এই প্রচেষ্টাগুলি বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এখনও বাস্তব ফলাফল দিতে পারেনি৷ উল্লেখযোগ্যভাবে, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক গোষ্ঠী কোয়াড নিজেকে একটি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক গোষ্ঠী হিসাবে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নাকরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছে। তা সত্ত্বেও, কোয়াড এখনও তার বিশ্বাসযোগ্যতা দৃঢ় করার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, কারণ এমন উদ্বেগ আছে যে এটি একটি চিনবিরোধী জোট হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। তবে একটি যৌথ পদ্ধতির কার্যকারিতার অভাব যদি থাকেও, অস্ট্রেলিয়ার মতো মধ্যম শক্তিগুলি একটি বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প উপস্থাপন করছে। এই বিকল্প পদ্ধতির উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে দুর্যোগ ত্রাণ প্রদান ও জলবায়ু অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা ও ব্লু কার্বন উদ্যোগ  বাস্তবায়ন নিয়ে সহযোগিতা।


ভারত, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক গোষ্ঠী কোয়াড নিজেকে একটি নিরাপত্তাকেন্দ্রিক গোষ্ঠী হিসাবে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নাকরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছে। 

ভারত, একটি উদীয়মান প্রধান শক্তি, এই অঞ্চল যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সেগুলির সমাধানে প্রয়াসী একটি দেশ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে। কীভাবে ক্রমবর্ধমান প্রধান শক্তি ও মধ্য শক্তি উভয়েই আঞ্চলিক আলোচনাকে সক্রিয়ভাবে প্রভাবিত করছে তার প্রধান উদাহরণ ছিল ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি এবং এর আলোচ্যসূচি। ২০২৩ সালের জুনে আমেরিকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘ভারতের জি২০ সভাপতিত্বে আমরা এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যতের চেতনার উপর জোর দিচ্ছি। আমরা গ্লোবাল সাউথের অগ্রাধিকারের জন্য একটি কণ্ঠস্বর দিচ্ছি।’’ শুধু মোদীই একটি আখ্যান তৈরির চেষ্টা করছেন, এমন নয়; বিষয়টি গ্লোবাল সাউথের বেশ কিছু নেতার দ্বারা সমর্থিত। উদাহরণস্বরূপ, পাপুয়া নিউ গিনি সফরের সময়, পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বলেছিলেন, “আমরা বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার দ্বন্দ্বের শিকার... আপনি (প্রধানমন্ত্রী মোদী) গ্লোবাল সাউথের নেতা। আমরা বৈশ্বিক ফোরামে আপনার (ভারত) নেতৃত্বের পিছনে দাঁড়াব।যদিও বাইডেনের পাপুয়া নিউ গিনি সফর বাতিলকে একটি হারানো সুযোগ হিসাবে দেখা হয়েছিল, এটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ভারতের বর্ধিত মনোযোগের কারণে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দিকে স্পটলাইট স্থানান্তরিত করেছিল। তাঁর কৃতিত্ব হল প্রধানমন্ত্রী মোদী দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রতিশ্রুতি পূরণ করছেন। পাপুয়া নিউ গিনি সফরের সময়, আট বছরের বিরতির পর তৃতীয় ফোরাম ফর ইন্ডিয়াপ্যাসিফিক আইল্যান্ডস কোঅপারেশন (এফআইপিআইসি) শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছিল, এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী স্থিতিশীল উপকূল ও মহাসাগর গবেষণা ইনস্টিটিউট (এসসিওআরআই) চালু করেছিলেন, যা জাতীয় সংস্থা উপকূলীয় গবেষণা কেন্দ্র, চেন্নাই দ্বারা সমর্থিত। জি২০তে আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তিকরণও ভারতের প্রতিশ্রুতি পূরণের উদাহরণ। অধিকন্তু, জি২০ নয়াদিল্লি নেতাদের ঘোষণাপত্রে এসডিজি অর্জনের দিকে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার উপর উল্লেখযোগ্য জোর দেওয়া হয়েছে।


কীভাবে ক্রমবর্ধমান প্রধান শক্তি ও মধ্য শক্তি উভয়েই আঞ্চলিক আলোচনাকে সক্রিয়ভাবে প্রভাবিত করছে তার প্রধান উদাহরণ ছিল ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি এবং এর আলোচ্যসূচি।

অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মধ্যশক্তিগুলি ২০৩০ সালের স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অ্যাজেন্ডা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বর্ধিত দায়িত্ব ক্রমশ বেশি করে অনুধাবন করছে। এ ক্ষেত্রে একটি সহযোগিতামূলক পদ্ধতি অনুসরণ করা অপরিহার্য। আজকের খণ্ডিত বিশ্বে, যেখানে প্রধান শক্তিগুলি বৃহত্তর উন্নয়নমূলক উদ্বেগের পরিবর্তে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেখানে কেউ যাতে পিছিয়ে না থাকে এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি কার্যকরভাবে যথাসময়ে সমাধান করা হয় তা নিশ্চিত করতে অন্য প্রধান ও মধ্য শক্তিগুলির ভূমিকা যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


সানা হাশমি তাইওয়ানএশিয়া এক্সচেঞ্জ ফাউন্ডেশন এবং জর্জ এইচ ডবলিউ বুশ ফাউন্ডেশন ফর ইউএস চায়না রিলেশনসএর ফেলো।

হৃষীকেশ রাম ভান্ডারী গ্লোবাল ইকনমিক গভর্ন্যান্স ইনিশিয়েটিভ-এর সহ-নির্দেশক।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.