Published on Jun 05, 2025 Updated 0 Hours ago

রাসায়নিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি এখনও ভারতে সুরক্ষিত রাসায়নিক যুদ্ধকে শক্তিশালী করার জন্য একটি সতর্কতামূলক আখ্যান হিসাবে কাজ করে চলেছে।

ভোপাল থেকে শিক্ষা: রাসায়নিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা

ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির চার দশক পর, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট অবশেষে দুর্ঘটনাস্থলে ফেলে আসা বিপজ্জনক বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ দেয়। ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে ঘটেছিল, এবং একে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প বিপর্যয়গুলির মধ্যে একটি হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। ইউনিয়ন কার্বাইড কর্পোরেশন (ইউসিসি)-‌এর মালিকানাধীন একটি কীটনাশক কারখানা থেকে মিথাইল আইসোসায়ানেট (এমআইসি) গ্যাসের লিকেজ লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিষাক্ত রাসায়নিকের মারাত্মক সংস্পর্শে এনেছিল, যার ফলে আনুমানিক ৩,৭৮৭ জন মারা যান। পরবর্তী কয়েক বছর ধরে ১৫,০০০-‌এরও বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্যও এই গ্যাস লিকেজকে দায়ী করা হয়েছিল। ৫০০,০০০-এরও বেশি ব্যক্তি বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন, যার দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য-ক্ষতিকারক প্রভাব শ্বাসযন্ত্র, দৃষ্টিশক্তি, স্নায়বিক অবস্থা এবং প্রজননের উপর পড়েছিল।

ঘটনার সময়, ভোপাল এই অনুপাতের একটি দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এর
জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো দুর্বল ছিল, বিশুদ্ধ জলের প্রাপ্তিযোগ্যতা সীমিত ছিল, এবং কোনও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল না। প্রধান হাসপাতালগুলিতে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক এবং শয্যার অভাব ছিল, যা জরুরি ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আরও জটিল আকার ধারণ করেছিল। ভোপাল বিপর্যয়ের পর প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল গণ-দূষণমুক্তকরণ কার্যকর করার অসুবিধা। এলাকার ক্রমাগত দূষণের ফলে এর বাসিন্দারা অসুস্থতা এবং কো-‌মরবিডিটির সম্মুখীন হচ্ছেন।


ভোপাল বিপর্যয়ের পর প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল গণ-দূষণমুক্তকরণ কার্যকর করার অসুবিধা।

 

ভারতীয় বিচার বিভাগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ইউসিসি দুর্যোগের জন্য নৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করে, এবং ৩,০০০ জন নিহতের জন্য, এবং ১০২,০০০ জনের স্থায়ী অক্ষমতার দাবির ভিত্তিতে, বিতরণের জন্য ভারত সরকারকে
৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে সম্মত হয়। তবে, ভারতে ক্ষতির তুলনায় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ইউসিসি কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের তুলনায় এই ক্ষতিপূরণ কম ছিল। কোম্পানিটি কখনও বিষাক্ত গ্যাসের সঠিক উপাদান প্রকাশ করেনি, যদিও শুধু এমআইসি নয়, সায়ানাইড বিষক্রিয়াও জড়িত ছিল বলে প্রমাণ থেকে জানা যায়  — যেমন লিক হওয়া ট্যাঙ্কের তাপমাত্রা এবং ইউসিসি-‌র প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য সোডিয়াম থায়োসালফেট সুপারিশ করা, যা সায়ানাইড বিষক্রিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ইউসিসি শুধু আইনি পদক্ষেপ এড়ায়নি বা ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতেই ব্যর্থ হয়নি, বরং ভোপাল প্ল্যান্টের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এবং স্থানটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিষ্কার করতেও ব্যর্থ হয়েছে।

এই ঘটনাটি কর্পোরেট দায়িত্বের অভাব এবং ব্যবসা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্দেশিকা নীতিমালা প্রয়োগের মধ্যে স্পষ্ট বৈপরীত্য তুলে ধরে। সেইসঙ্গেই এটি ভবিষ্যতে রাসায়নিক বিপর্যয় এবং ইচ্ছাকৃত আক্রমণের ক্ষেত্রে এই নির্দেশিকাগুলিকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

রাসায়নিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ

সীমিত জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং বেসরকারি পক্ষকে দায় নিতে বাধ্য করার অসুবিধার বাইরে, ভোপাল বিপর্যয় বিষাক্ত যৌগ দ্বারা দূষিত বৃহৎ উন্মুক্ত জনগোষ্ঠীকে দূষণমুক্ত করার আয়তনগত সমস্যা ও জটিলতা প্রদর্শন করেছে। এটি রাসায়নিক অস্ত্র আক্রমণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সনাক্ত করা যতটা কঠিন ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের ঘটনায়, আরও দূষণ রোধ করার জন্য নিয়ন্ত্রণ এলাকা স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ।


সীমিত জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং বেসরকারি পক্ষকে দায় নিতে বাধ্য করার অসুবিধার বাইরে, ভোপাল বিপর্যয় বিষাক্ত যৌগ দ্বারা দূষিত বৃহৎ উন্মুক্ত জনগোষ্ঠীকে দূষণমুক্ত করার আয়দনগত সমস্যা ও জটিলতা প্রদর্শন করেছে।



যদিও গত ৪০ বছরে ভারত সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষমতা ও ব্যাপ্তির উন্নতি হয়েছে, তবুও দুর্যোগ প্রশমনের ক্ষেত্রে দেশের পদ্ধতিতে বেশ কিছু ফাঁক রয়ে গেছে।
 
প্রতিরোধের চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর ভারতের মনোযোগ: ভোপাল বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া ভারতের সক্রিয় প্রতিরোধে অংশগ্রহণের পরিবর্তে প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রবণতাকে তুলে ধরে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (ডিআরডিও) মতো প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বারা বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিব্যবস্থা গোত্রের অগ্রগতি সত্ত্বেও, দুর্যোগস্থল পরিষ্কার করা এখনও একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এনডিএমএ দ্বারা বর্ণিত প্রতিরোধমূলক আইন এবং ডিআরডিও দ্বারা প্রয়োজনীয় টেস্টার কিটের বিধান থাকলেও এগুলির বাস্তবায়ন স্বেচ্ছানির্ভর এবং তৃতীয় পক্ষ দ্বারা যাচাইযোগ্য নয়। তৃতীয় পক্ষের নিরীক্ষা এবং বেসরকারি পক্ষের জন্য জবাবদিহিতা ব্যবস্থার এই অভাবের কারণে ভারত এখনও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হয়।

ভোপাল বিপর্যয় ভারতের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য দুর্বলতাগুলিকেও তুলে ধরে, বিশেষ করে বৃহৎ আকারের রাসায়নিক দুর্ঘটনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে। অনেক কেন্দ্রে রাসায়নিক দূষণে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, বিশেষ করে আক্রান্তের সংখ্যা যদি বিপুল হয়।

ওপিসিডব্লিউ এবং এনএসিডব্লিউসি-র সীমিত ভূমিকা: ভারত
ইউনাইটেড নেশনস অফিস ‌অফ ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন (ইউএনডিআরআর)-‌এর সদস্য; তবে, ইউএনডিআরআর শুধুমাত্র ভোপাল বিপর্যয়ের পরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অতএব, ভোপাল দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়া, অব্যাহত দূষণের চ্যালেঞ্জ, এবং ইউসিসি কর্তৃক চালিত জবাবদিহিতার অভাব স্পষ্ট করে তুলেছে যে এমনকি এই বিশ্বব্যাপী ফোরাম এবং তাদের অভ্যন্তরীণ প্রতিনিধিত্বও সীমিত ছিল।

আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা এবং কনভেনশনগুলির সঙ্গে আরও ভালভাবে অনুবর্তিতা নিশ্চিত করার জন্য রাসায়নিক বিপর্যয় তত্ত্বাবধানকারী বিশ্বব্যাপী পক্ষগুলিকে ভারতে তাদের কার্যক্রম আরও প্রসারিত করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে
রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা (ওপিসিডব্লিউ) এবং রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের জাতীয় কর্তৃপক্ষ (এনএসিডব্লিউসি), যা রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন (সিডব্লিউসি) আইনের ভারতীয় রূপ। সিডব্লিউসি এবং ওপিসিডব্লিউ শুধুমাত্র ১৯৯৭ সালে কার্যকর হয়েছিল, এবং ভারতীয় সিডব্লিউসি আইন এবং এনএসিডব্লিউসি ২০০০ সালে তৈরি হয়েছিল, ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির এক দশক পরে। যদিও এনএসিডব্লিউসি ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল কাউন্সিল (আইসিসি), ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড নারকোটিক্স (এনএসিইএন), এবং এমনকি ইনস্টিটিউট অফ পেস্টিসাইড ফরমুলেশন টেকনোলজি (আইপিএফটি)-‌সহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, তবুও নির্ধারিত রাসায়নিকের ক্ষতিকারক ব্যবহারের উপর এর সীমিত মনোযোগ ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি মোকাবিলা বা সম্ভাব্য ভবিষ্যতের বিপর্যয় প্রতিরোধে ভারতের পূর্ববর্তী পদক্ষেপকে সহায়তা করতে পারেনি।


সিডব্লিউসি এবং ওপিসিডব্লিউ শুধুমাত্র ১৯৯৭ সালে কার্যকর হয়েছিল, এবং ভারতীয় সিডব্লিউসি আইন এবং এনএসিডব্লিউসি ২০০০ সালে তৈরি হয়েছিল, ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির এক দশক পরে।



বেশিরভাগ রাসায়নিক ক্ষতি শিল্পের কারণে ঘটে, যার মধ্যে রয়েছে অ-নির্ধারিত বা সহজেই প্রাপ্তিযোগ্য শিল্প-গ্রেড রাসায়নিকের ব্যবহার। কাজেই ক্ষতিকর ব্যক্তিদের দ্বারা রাসায়নিক আক্রমণের বাইরে এনএসিডব্লিউসি-এর পরিধি প্রসারিত করা হলে তা রাসায়নিক দূষণের বিস্তৃত পরিধি মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে, এবং রাসায়নিক আক্রমণের মতো প্রভাব ফেলতে পারে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য বেসরকারি পক্ষগুলিকে দায়বদ্ধ করবে।

ভোপাল থেকে শিক্ষা প্রসারিত করা

যদিও ভারত সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় পদক্ষেপ করেছে, বিশেষ করে রাসায়নিক সংরক্ষণ, বাণিজ্য, পরিবহণ এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে, বিষাক্ত রাসায়নিক  ব্যবহারকারী শিল্পগুলিতে কঠোর নিরাপত্তা পরীক্ষা এবং জরুরি মহড়ার মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা উচিত। ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির স্থানটি পরিষ্কার করতে যে দীর্ঘ সময় লেগেছে তা বিবেচনা করে দুর্যোগ এবং আক্রমণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির নিয়মিত সংশোধন অপরিহার্য। প্রাথমিকভাবে, এনডিএমএ এবং এনএসিডব্লিউসি-কে নিম্নলিখিত প্রচেষ্টার জন্য আরও নিবিড়ভাবে কাজ  করতে হবে:

আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি এবং সমন্বয় বৃদ্ধি: রাসায়নিক দূষণের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিশ্বব্যাপী সক্ষমতা বিকাশের জন্য ভোপাল থেকে শিক্ষা নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলির একটি, বিশেষ করে রাসায়নিক অস্ত্র সম্পর্কিত। তবে, যে কোনও ধরনের রাসায়নিক দূষণের ক্ষেত্রে দায় নির্ধারণ করা কঠিন হয়। তাই, সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা, যাতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি জোরদার করা যায়, পরিকাঠামো উন্নত করা যায়, এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থা এবং চিকিৎসা সুবিধাগুলির মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা  যায়।

উন্নত শনাক্তকরণ এবং দূষণমুক্তকরণ প্রযুক্তি গ্রহণ: ভারতকে অবশ্যই  উন্নত শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক, জৈবিক, রেডিওলজিক্যাল এবং নিউক্লিয়ার (সিবিআরএন) প্রতিরক্ষার জন্য ডিআরডিও ইতিমধ্যেই এই ধরনের উপকরণে বিনিয়োগ করছে। তবে এই ধরনের আক্রমণ এবং অবাঞ্ছিত নির্গমনের প্রকৃতি এটিকে শুধু একটি প্রতিরক্ষা সমস্যা নয়, বরং একটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিরোধের সমস্যাও করে তোলে, কারণ ইচ্ছাকৃত এবং অনিচ্ছাকৃত উভয় ধরনের দুর্যোগই একই ক্ষতি করে। এর মধ্যে দূষিত এলাকায় প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য স্যুট অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এতে আক্রান্ত অঞ্চল এবং জনসংখ্যা দ্রুত শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা করার জন্য শনাক্তকরণ ক্ষমতাসহ হ্যান্ডহেল্ড সেন্সর ও ড্রোনও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

সংকট ব্যবস্থাপনা এবং বহু-সংস্থা সমন্বয় জোরদার করা: ভোপাল দুর্যোগের প্রতিক্রিয়ায় একটি প্রধান ত্রুটি ছিল ত্রাণ প্রচেষ্টায় জড়িত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। ভবিষ্যতে রাসায়নিক দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ায় বিলম্ব এবং দুর্বল দক্ষতা রোধ করার জন্য ভারতকে অবশ্যই এমন একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে যা সমস্ত প্রয়োজনীয় অংশীদার, যেমন সরকারি সংস্থা, সামরিক পরিষেবা, জরুরি  প্রতিক্রিয়া দল, চিকিৎসা কর্মী এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় করতে সহায়তা করবে। এই কাঠামোটি নিশ্চিত করবে যে, প্রতিটি সম্ভাব্য জড়িত পক্ষ তাদের ভূমিকা জানবে, এবং সংকটের সময় তাদের নিজেদের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগের পথ থাকবে। এই ধরনের একটি সংস্থা দুর্যোগের সময় স্বল্প সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তবে এই ধরনের কর্তৃপক্ষের কাঠামো আগে থেকেই প্রস্তুত করা উচিত এবং এনডিএমএ দ্বারা এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই কাঠামোতে রাসায়নিক দূষণের জন্য আকস্মিক পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা সম্পদ, কর্মী এবং চিকিৎসা সহায়তা একত্রিত করার জন্য নির্দিষ্ট প্রোটোকলের রূপরেখা দেবে। এই পরিকল্পনাগুলি ঘন ঘন পর্যালোচনা এবং সংশোধন করা উচিত, যাতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যবহারযোগ্য থাকে। আন্তর্জাতিক পক্ষগুলিকে রাসায়নিক এবং শিল্প কারখানা সহ গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোর তৃতীয় পক্ষের নিরীক্ষা মেনে চলতে হবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে প্রক্রিয়াগুলি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ।

জবাবদিহিতা এবং নিয়ন্ত্রক অনুবর্তিতা উন্নত করা: ভোপাল ট্র্যাজেডি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকাণ্ডের জন্য, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে রাসায়নিক নির্গমন এবং শিল্প দুর্ঘটনার জন্য দায়বদ্ধতা অনুসরণের ক্ষেত্রে ত্রুটিগুলি বড় করে তুলে ধরেছিল। শিল্প সুরক্ষা এবং রাসায়নিক বিপদ সম্পর্কিত আইন অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে। ভারতের উচিত প্রতিরোধমূলক আইন প্রয়োগের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তাছাড়া বিপজ্জনক পদার্থের নিরাপদ ব্যবস্থাপনার জন্য সমস্ত কোম্পানিকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। বেসরকারি ক্ষেত্রের জবাবদিহিতা নিশ্চিত  করার জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্ব শুল্ক সংস্থা, ইউএনডিআরআর এবং ওপিসিডব্লিউ-এর সঙ্গে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ এবং পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠা: ভোপাল ট্র্যাজেডি ভারতের জনস্বাস্থ্যের গুরুতর ঘাটতিগুলিকে তুলে ধরে, বিশেষ করে বৃহৎ আকারের রাসায়নিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের সীমিত ক্ষমতার ক্ষেত্রে। যে কোনও আকারের রাসায়নিক ঘটনার কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে ভারতকে তার জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করতে হবে। এর মধ্যে গণ-‌রাসায়নিক সংস্পর্শের ক্ষেত্রে হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলির জন্য আরও ভাল সরঞ্জাম ও সংস্থান অন্তর্ভুক্ত থাকবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের রাসায়নিক দূষণের কার্যকরভাবে চিকিৎসা করার জন্য প্রশিক্ষণও দিতে হবে। অতিরিক্তভাবে, চিকিৎসা কর্মীদের রাসায়নিক সংস্পর্শের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবহারের বিষয়ে শিক্ষিত করতে হবে, এবং রাসায়নিক বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলি শনাক্ত করার জন্য  প্রশিক্ষণ দিতে হবে।


শিল্প সুরক্ষা এবং রাসায়নিক বিপদ সম্পর্কিত আইন অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে। ভারতের উচিত প্রতিরোধমূলক আইন প্রয়োগের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তাছাড়া বিপজ্জনক পদার্থের নিরাপদ ব্যবস্থাপনার জন্য সমস্ত কোম্পানিকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।



ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি রাসায়নিক বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে ভারতের ক্ষমতার ফাঁকগুলি উন্মোচিত করেছে। এটি আরও ভাল প্রস্তুতি, শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং বর্ধিত সমন্বয়ের জন্য রাসায়নিক সুরক্ষা ও রাসায়নিক নিরাপত্তার মধ্যে সমন্বয় তৈরির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। এই সুপারিশগুলি অনুসরণ করে ভারত শিল্প দুর্ঘটনা বা রাসায়নিক যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট রাসায়নিক ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি শক্তিশালী এবং আরও সক্রিয় কৌশল তৈরি করতে পারে।



শ্রবিষ্ঠা অজয়কুমার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি ‌অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগী ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.