সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জাপানের কৌশলগত বার্তায় একটি শান্ত অথচ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিবর্তন ঘটেছে। টোকিয়োর কূটনীতিকরা বর্তমানে আরও পরিচিত ‘ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি)’-এর পরিবর্তে ‘আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে একটি মুক্ত ও অবাধ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা’-র বার্তা দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, জাপানের নেতা ও কূটনীতিকরা প্রায়শই ‘ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার’ বা ‘এফওআইও’-র পুনরাবৃত্তি করেন এবং মনে হয় ২০১৬ সাল থেকে রচিত ও সমর্থিত এফওআইপি-র তুলনায় সেটি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
এর কয়েকটি সাম্প্রতিক উদাহরণের অন্যতম হল জাপানের সংশোধিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশ করা হয়েছিল। এটিতে জাপানের জাতীয় স্বার্থ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘জাপান একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখবে ও তার বিকাশ ঘটাবে, বিশেষ করে সেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে, যেখানে জাপান অবস্থিত’। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ডায়েটে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার নীতি বক্তৃতাতেও ‘আইনের শাসনের ভিত্তিতে মুক্ত ও অবাধ আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা’র উপর জোর দেওয়া হয়, যা জাপান গ্রুপ অব সেভেন-এর (জি৭) হিরোশিমা শীর্ষ সম্মেলনে প্রকাশ করবে। উভয় ক্ষেত্রেই এফওআইপি-এর উল্লেখ শুধুমাত্র নামকরণের পরেই করা হয়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ডায়েটে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার নীতি বক্তৃতাতেও ‘আইনের শাসনের ভিত্তিতে মুক্ত ও অবাধ আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা’র উপর জোর দেওয়া হয়, যা জাপান গ্রুপ অব সেভেন-এর (জি৭) হিরোশিমা শীর্ষ সম্মেলনে প্রকাশ করবে।
এমনকি কিশিদা যখন ২০২৩ সালের মার্চ মাসে নয়াদিল্লিতে জাপানের ‘নিউ প্ল্যান ফর অ্যান এফওআইপি’ চালু করেছিলেন, সেখানেও শুধুমাত্র আলোচনার শেষের দিকে তিনি এফওআইপি-র কথা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেন। কিন্তু এফওআইপি-র উল্লেখ বিষয়টিকে এই গুরুত্ব দিয়েছিল যে, ‘আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা’ বজায় রাখা এবং শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জাপান এবং ভারতের বড় দায়িত্ব রয়েছে।
তা হলে কী ভাবে আমাদের ‘পুরনো’ এফওআইপি এবং ‘নতুন’ এফওআইও-এর মধ্যকার সম্পর্কটি উপলব্ধি করা উচিত? টোকিয়োর কৌশলগত নীতির নেপথ্যে যুক্তিটিই বা কী? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উত্পন্ন ‘ইতিহাসের বাঁকবদলকারী বিন্দু’ হিসাবে জাপান যা বর্ণনা করে, তার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ভাবে তুলনা করা হলে আলঙ্কারিক পরিবর্তনটি বোধগম্য। তবুও তা টোকিয়োর পরিবর্তন এবং বিশ্বকে দেখার জাপানের অনন্য উপায় থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। এই নিবন্ধটিতে এই প্রশ্ন এবং অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, কেন এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। নিবন্ধটিতে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, জাপানের এফওআইপি থেকে এফওআইও কৌশলগত বার্তা প্রেরণের বিবর্তনটি বৃহৎ শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের বাইরের জগতের জন্য কী অর্থ বহন করে।
‘ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার (এফওআইও)’-এর প্রেক্ষিতে জাপানের উদ্দেশ্য
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ২০০৭ সালে নয়াদিল্লিতে তাঁর ‘কনফ্লুয়েন্স অব দ্য টু সিজ’ বা ‘দুই সাগরের সঙ্গম’ ধারণাটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে জাপান একটি ইন্দো-প্যাসিফিক চিন্তাধারার নেতা এবং আদর্শগত শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। জাপানের এফওআইপি আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০১৬ সালের অগস্ট মাসে চালু হয়। সেটিতে স্বাধীনতা এবং অবাধ মূল্যবোধের উপর জোর দেওয়া হয় এবং টোকিয়োর কূটনৈতিক ও আদর্শগত চিন্তাধারার সংমেল দর্শানো হয়। ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটি একটি ‘কৌশলগত ভূগোল’ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জাপান ইন্দো-প্যাসিফিক ভূগোলের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ একটি কৌশল নির্মাণ করেছে।
যে কথা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয় তা হল, ২০১৭ সালের প্রথম দিকে টোকিয়ো তার আনুষ্ঠানিক বক্তৃতায় 'ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার’ (জিউ দে হিরাকারেতা কোকুসাই চিতসুজো) শব্দটি ব্যবহার করে। এই ‘নতুন’ পরিভাষাটি অবশ্য এফওআইপি-র অনেক আগে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক আখ্যানের প্রতিফলন। উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ অর্থবর্ষে এবং তার পরেও জাতীয় প্রতিরক্ষা কর্মসূচির নির্দেশিকার মূল নীতি হিসাবে ‘একটি মুক্ত ও অবাধ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা (...) বজায় রাখা ও তা শক্তিশালী করে তোলার জন্য উদ্ভূত হুমকি রোধ করা (...)’র উপর জোর দেওয়া হয়। এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসেই এই ভাবনার উত্থাপন হয়েছিল।
যেখানে এফওআইপি জাপানের প্রধান বৈদেশিক নীতির উদ্যোগে পরিণত হয়েছে, সেখানে এফওআইও-ও আনুষ্ঠানিক আলোচনায় একটি পুনরাবৃত্ত ভাবনা হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী কিশিদা ফরাসি লে ফিগারো সংবাদপত্রে লিখেছিলেন: ‘আইনের শাসনের প্রচারে সক্রিয় ভাবে সহযোগিতা করে জাপান এবং ইউরোপ একটি মুক্ত ও অবাধ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা (...) সমর্থনকে অপরিহার্য বলে মনে করে’ (অনুবাদ লেখক)। আর একটি উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী তোশিমিতসু মোতেগি গুয়াতেমালার সংবাদপত্র প্রেনসা লিব্রে-তে এক নিবন্ধ লেখেন, যার শিরোনাম ছিল ‘মধ্য আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে একটি মুক্ত এবং অবাধ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ এবং শক্তিশালীকরণ’ (অনুবাদ লেখক)। গুয়াতেমালার প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলরেখা থাকা সত্ত্বেও মোতেগির লেখায় ‘এফওআইপি’ বা ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’-এর উল্লেখ ছিল না।
জাপান তার ‘আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে একটি মুক্ত ও অবাধ আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা’র দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত রেখেছে, যেমনটি জি৭ চলাকালীন সভাপতিত্ব করার সময়ে জাপান আন্তর্জাতিক মঞ্চেও উপস্থাপন করেছিল।
এফওআইও ২০২২-২০২৩ সময়কালে গতি পেয়েছিল এবং সেটিকে প্রায়শই ‘সকল দেশের মধ্যে বিদ্যমান আইনের শাসন’ বাক্যাংশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। জাপান তার ‘আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে একটি মুক্ত ও অবাধ আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা’র দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত রেখেছে, যেমনটি জি৭ চলাকালীন সভাপতিত্ব করার সময়ে জাপান আন্তর্জাতিক মঞ্চেও উপস্থাপন করেছিল। তবু কিছু অভিনব পরিবর্তন ঘটার বদলে পূর্ববর্তী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী আরও সর্বজনীন এফওআইও ধারণা ধারাবাহিক ভাবে টোকিয়োর অঞ্চল-সীমাবদ্ধ এফওআইপি দৃষ্টিভঙ্গিকে অবহিত করেছে এবং সমর্থন জুগিয়েছে। যা বদলে গিয়েছে তা হল, জাপানের কৌশলগত বার্তাপ্রেরণের জোর। এফওআইপি-এর মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিকের নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনের পর টোকিয়ো বর্তমানে তার সর্বজনীন আবেদনময় এফওআইও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সমগ্র বিশ্বকে সম্পৃক্ত করতে প্রস্তুত।
ইন্দো-প্যাসিফিকের ঊর্ধ্বে উঠে
এফওআইও-এর সাম্প্রতিক প্রচার জাপানের কৌশলগত বার্তাপ্রেরণে একটি উল্লেখযোগ্য স্থানভিত্তিক পরিবর্তনকেই দর্শায়। জাপানের এফওআইও নিয়মভিত্তিক আদেশ সংক্রান্ত ‘পথের দিশারী’ এবং এফওআইপি-র নৈতিক অভিভাবক হিসাবে নিজের ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। দেশগুলির একটি সম্প্রদায় হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের অপরিহার্য উপাদানগুলির উপর মনোনিবেশ করার মধ্যেই এর শক্তি নিহিত।
এটি সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার উপর জোর দেয় এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মতো আরও বিতর্কিত বিষয়গুলিকে এড়িয়ে যায়। এই ভাবে এফওআইও জাপানের আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার জন্য ‘সাধারণ বৈশিষ্ট্য’ হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিশিদা ‘মানব মর্যাদা’ রক্ষা করে চললেও তাঁর বর্ণনা এবং অবস্থান পশ্চিমী উদারপন্থী নেতাদের থেকে তীব্র বিপরীত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক। টোকিয়োর এফওআইও বার্তা তাই স্পষ্টতই ইন্দো-প্যাসিফিকের ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর জন্য ব্যাপক সমর্থন তৈরি করার লক্ষ্য রাখে। এর ফলাফল হল এই যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ অনেক রাষ্ট্রীয় নেতাই প্রকাশ্যে জাপানের উদ্দেশ্য সমর্থন করেছেন।
এই বার্তায় বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি থাকলেও ‘আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে মুক্ত এবং অবাধ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা’ নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধা লক্ষ করা যায়। ‘মুক্ত এবং অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক’-এর তুলনায় এই ধারণা জনসাধারণের কাছে কম আবেদনমূলক হতে পারে। তবে আবে বলেছিলেন: ‘যখন আমি ‘মুক্ত এবং অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক’ শব্দবন্ধটি শুনি, তখন আমার মাথায় যে দৃশ্য ঘুরেফিরে আসে তা হল একটি বিস্তৃত সমুদ্রের দৃশ্যপট।’ জাপানের নতুন উদ্যোগ অবশ্যই এই ধরনের আবেগকে জাগিয়ে তুলতে যথেষ্ট নয়।
এফওআইও-এর সাম্প্রতিক প্রচার জাপানের কৌশলগত বার্তাপ্রেরণে একটি উল্লেখযোগ্য স্থানভিত্তিক পরিবর্তনকেই দর্শায়। জাপানের এফওআইও নিয়মভিত্তিক আদেশ সংক্রান্ত ‘পথের দিশারী’ এবং এফওআইপি-র নৈতিক অভিভাবক হিসাবে নিজের ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে।
তাই নিবন্ধের লেখকরা জাপানের নতুন ট্রেডমার্ক সংক্ষিপ্ত রূপ হিসাবে সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় ‘ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার’ বা সহজ ভাবে ‘এফওআইও’ (‘এফওআইওবিআরএল’ বা ‘এফওআইও-বিআরএল’ শব্দবন্ধের পরিবর্তে) প্রস্তাব করেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই, এফওআইও আন্তর্জাতিক আইনের শাসন এবং সংশ্লিষ্ট আইনি নীতিগুলির দ্বারা আবদ্ধ, যেগুলির কথা জাপান সর্বদাই উল্লেখ করে; বাস্তবে না হলেও চুক্তি, ঘোষণা এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলি তাত্ত্বিক অর্থে সর্বজনীন ভাবে সম্মত হয়েছে।
জাপানের নেতারা এবং নীতিনির্ধারকরা একটি শক্তিশালী ‘কৌশলগত চিন্তার ভাণ্ডার’ তৈরি করেছেন, যা বিশ্বের পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থিতিস্থাপক ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক স্তরে, এফওআইও-র উপর জোর জাপানকে ইন্দো-প্যাসিফিক ভৌগোলিক পরিসরের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন অঞ্চলগুলির সঙ্গে বাধাহীন ভাবে যোগাযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিগুলিকে জোরদার করার অনুমতি দেবে। জাপানের বিদেশমন্ত্রী গুয়াতেমালার প্রতি তাঁর বার্তায় এফওআইও-র উপর যথাযথ জোর দিয়েছেন। এটি ছিল জাপানের বর্তমান বার্তাপ্রেরণের একটি বাগ্মী অগ্রদূত। কারণ প্রতিবেশী গায়ানার বিরুদ্ধে ভেনেজুয়েলার সংশোধনবাদ জাপানের এফওআইও পদ্ধতির যথার্থতাকেই প্রদর্শন করেছে।
এফওআইপি এবং এফওআইও-র সমন্বয়সাধন
এফওআইও-র ব্যবহার ও ক্ষমতা তার খ্যাতনামা যুগ্মনীতি এফওআইপি থেকে অবিচ্ছেদ্য। এফওআইপি এবং এফওআইও একটি শক্তিশালী সমন্বয় খুঁজে পেতে পারে যদি জাপানের নেতারা দক্ষতার সঙ্গে তার ব্যবহার করেন। এফওআইও-র বিশ্বব্যাপী আবেদন সত্ত্বেও বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রশাসনগুলিকে টোকিয়োর ইন্দো-প্যাসিফিক উদ্যোগের দ্বারা উপলব্ধি করা কূটনৈতিক ও কৌশলগত সাফল্যগুলিকে বিনষ্ট করা উচিত নয়। নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক এখনও গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন কিশিদা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ‘নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জের’ সম্মুখীন। জাপান, ভারত এবং তার কোয়াড অংশীদারদের কোনও মতেই এফওআইপি - যার প্রবর্তক আসলে জাপান - বা এফওআইপি কর্মসূচি ও ভূগোল ত্যাগ করা উচিত নয়। ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ চিনের সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে একটি শঙ্কার প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে। এটি চিনের কমিউনিস্ট নেতৃত্ব দ্বারা ‘সি ফোম’ বা নেহাতই ‘সমুদ্রের ফেনা’ হিসাবে খারিজ করে দেওয়া সত্ত্বেও ব্রিটেন থেকে শুরু করে ভারত হয়ে জাপান পর্যন্ত প্রধানত রিমল্যান্ড স্টেট বা উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বৈধ সম্পৃক্ততার প্রতীক। এটি ভারতের দ্বারা গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান এবং কৌশলগত ভূমিকাকেও পরোক্ষ ভাবে তুলে ধরে: বিশ্ব জুড়ে ক্ষমতার ক্রমবর্ধমান বণ্টনে ভারত কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দো-প্যাসিফিকের সুস্পষ্ট উল্লেখগুলি এই অত্যাবশ্যক সত্যকে তুলে ধরে।
জাপান, ভারত এবং তার কোয়াড অংশীদারদের কোনও মতেই এফওআইপি - যার প্রবর্তক আসলে জাপান - বা এফওআইপি কর্মসূচি ও ভূগোল ত্যাগ করা উচিত নয়।
সংক্ষেপে বললে, জাপানের নীতিনির্ধারকদের বিভিন্ন ভৌগোলিক কৌশল নিয়ে আরও নমনীয় হওয়া উচিত। তাই টোকিয়োর উচিত ভবিষ্যতে ইন্দো-প্যাসিফিক ভৌগোলিক পরিসরকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং আপেক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেওয়া। এটিকে আরও কৌশলগত প্রভাব-সহ অন্যান্য পরিচিত ভৌগোলিক উদাহরণের সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে। ‘এশিয়া-প্যাসিফিক’, ‘ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিক’ এবং ‘ইস্ট এশিয়া’ - তাইওয়ানের মতো সংঘর্ষবিন্দুকে মাথায় রেখেই – এর কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এর প্রমাণ হিসাবে ফিলিপিন্স-সহ ‘এশিয়া-প্যাসিফিক কোয়াড’ বলে পরিচিত জোটটি ভারতের সঙ্গে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কোয়াড’-এর একটি অতিরিক্ত স্তর হয়ে উঠেছে।
জাপান এই হুমকির পরিবেশে অবস্থিত হওয়ার দরুন তার সামনে উপস্থিত চ্যালেঞ্জগুলিও পাহাড়প্রমাণ। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে অঞ্চল সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সঙ্গে ঐকমত্য তৈরির জন্য জাপানকে অবশ্যই এফওআইপি এবং এফওআইও-র জোরালো প্রচার করতে হবে। দেশগুলির বৃহত্তর বৃত্ত, বিশেষ করে রাজনৈতিক দক্ষিণের সঙ্গে ঐকমত্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জাপানের চেয়ে ভাল অবস্থানে অন্য কোনও দেশ নেই। এটি কেবল জাপানের জন্যই নয়, ক্রমবর্ধমান অস্থির এবং অপ্রত্যাশিত বিশ্বের জন্যও লাভজনক হবে।
- কেই হাকাতা জাপানের সেইকেই ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও নিরাপত্তার অধ্যাপক।
- তেরুয়াকি আইজাওয়া জাপানের ইয়োকোসুকার ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।
- ব্রেন্ডন জে ক্যানন সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আবু ধাবির খলিফা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.