Author : Ayjaz Wani

Published on Jul 25, 2024 Updated 0 Hours ago
মধ্য এশিয়ায় আইএসকেপি-র নিয়োগ কৌশল এবং দুর্বলতা

আইএসকেপি ক্রমবর্ধমান অরক্ষিত অবস্থাকে পুঁজি করেছে এবং বিভিন্ন নিয়োগ কৌশল ব্যবহার করে মধ্য এশিয়ার অসংখ্য নাগরিককে তাদের আন্দোলনে যোগদানের জন্য আকৃষ্ট করেছে

২২ মার্চ ২০২৪-এ রাশিয়া কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হয়েছিল। একাধিক বন্দুকধারী মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে হামলা চালালে ১১৫ জনেরও বেশি নিহত এবং ১৮৭ জনেরও বেশি আহত হন। ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি) সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদী হামলাটির দায় স্বীকার করে। ভয়ঙ্কর হামলার পর রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে, এবং রাশিয়ান রাজনীতিবিদ আলেকজান্ডার খিনশটাইনের মতে এর মধ্যে চারজন তাজিক পাসপোর্টধারী বন্দুকধারী। একইভাবে, ৭ মার্চ রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী আইএসকেপি-র সঙ্গে যুক্ত দুই কাজাখ নাগরিককে হত্যা করে যারা একটি সিনাগগে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনা করছিল।


আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন মধ্য এশিয়ার ব্যক্তিদের থেকে আইএসকেপি-‌র নিয়োগ প্রচেষ্টার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সময়ের হিসাবে মিলে গিয়েছে।



জানুয়ারিতে ইরানে আইএসকেপির আত্মঘাতী হামলায় ৯২ জন নিহত এবং ১০২ জন আহত হন। হামলার এক সপ্তাহ পরে, ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রক দাবি করেছে যে আইএসকেপি আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের একজন তাজিক নাগরিক এবং হামলার মূল পরিকল্পনাকারীও একজন তাজিক নাগরিক যিনি ইরান ত্যাগ করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাজিক রিক্রুটরা গত বছর দক্ষিণ ইরানের শিরাজের একটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় জড়িত ছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইএসকেপি নানা ধরনের অরক্ষিত অবস্থাকে পুঁজি করেছে এবং বিভিন্ন নিয়োগ কৌশল ব্যবহার করে মধ্য এশিয়ার অসংখ্য নাগরিককে তাদের আন্দোলনে যোগদানের জন্য আকৃষ্ট করেছে। পরবর্তীকালে, আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন মধ্য এশিয়ার ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে আইএসকেপি-‌র নিয়োগ প্রচেষ্টার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সময়ের হিসাবে মিলে গিয়েছে।

মধ্য এশিয়া আইএসকেপি-‌র জন্য একটি উর্বর ভূমি ছিল

২০১৫ সালের প্রথম দিকে, তাজিক এলিট স্পেশাল ফোর্সের প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কর্নেল গুলমুরোদ কালিমভ নিখোঁজ হন এবং ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস)-‌র দলে যোগ দেন। কালিমভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কোর্স সহ বিস্তৃত সন্ত্রাসবিরোধী প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন অত্যন্ত দক্ষ স্নাইপার ছিলেন। ২০১৬ সালে আইসিস-এ যোগদানকারী ৫,০০০ মধ্য এশিয়ার যোদ্ধার মধ্যে কালিমভের শিবিরত্যাগ ছিল সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত। উজবেকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি নিযুক্ত হয়েছে, সংখ্যার হিসাবে ১৫০০ জন, তারপরে তাজিকিস্তানের ১,০৯৪ জন এবং কিরগিজস্তানের ৮৬৩ জন, যার মধ্যে ১৮৮ জন মহিলা৷


দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান-পাকিস্তান (আফ-পাক) অঞ্চলে আইএসকেপি‌-‌র উত্থান আল-কায়েদা, তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি), তালিবান ও ইসলামিক মুভমেন্ট অফ উজবেকিস্তান (আইএমইউ)-‌এর অসন্তুষ্ট জঙ্গিদের আকৃষ্ট করেছিল। তালিবান ক্ষমতায় আসার পরে ক্রমবর্ধমান দলত্যাগের মধ্যে ২০২২ সালে আইএসকেপি-র আনুমানিক শক্তি ছিল ১,৫০০ থেকে ৪,০০০ যোদ্ধা, যা সন্ত্রাসবাদী দলটিকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলের বাইরে বিশেষ করে মধ্য এশিয়ায় তার কার্যক্রম প্রসারিত করতে সহায়তা করেছিল। এই সম্প্রসারণটি এলাকার মধ্যে আইএসকেপি নিয়োগের বৃদ্ধির সঙ্গে মিলে যায়, বিশেষ করে উজবেক ও তাজিকদের মধ্যে। আইএসকেপি-তে উজবেক ও তাজিক যোদ্ধাদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গেসঙ্গে গোষ্ঠীটি প্রতিবেশী মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে হামলা চালাতে শুরু করে। ১৮ এপ্রিল ২০২২-এ, আইএসকেপি উজবেকিস্তানের টারমেজে একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ শানায়, এবং ৭ মে ২০২২-এ তাজিকিস্তানের অনির্দিষ্ট সামরিক বস্তুকে লক্ষ্য করে আফগানিস্তানের খাজা ঘর জেলা থেকে আরও সাতটি রকেট নিক্ষেপ করে।


তালিবানের ক্ষমতায় আসার পরে ক্রমবর্ধমান দলত্যাগের মধ্যে ২০২২ সালে আইএসকেপি-র আনুমানিক শক্তি ছিল ১,৫০০ থেকে ৪,০০০ যোদ্ধা, যা সন্ত্রাসবাদী দলটিকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলের বাইরে বিশেষ করে মধ্য এশিয়ায় তার কার্যক্রম প্রসারিত করতে সহায়তা করেছিল।



২০২১ সালের আগস্টে তালিবানের আফগানিস্তান দখলের পরিপ্রেক্ষিতে আইএসকেপি নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রগুলিতে উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করার সুযোগটি ব্যবহার করে। তাদের বহুমুখী কৌশল অনলাইন প্ল্যাটফর্মের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, যেখানে তারা তাজিক এবং উজবেকের মতো স্থানীয় ভাষায় প্রচার চালায়। আইএসকেপি সম্ভাব্য নিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিদ্যমান আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষোভকে কাজে লাগায়। টারমেজ আক্রমণের পরে এই পদ্ধতিটি স্পষ্ট হয়েছিল; টেলিগ্রামে আইএসকেপি-পন্থী চ্যানেল, যেমন তাজিক "ডেইলি নিউজ অফ দ্য মুজাহিদিন অফ খিলাফত" এবং "দ্য আর্মি অফ ভিক্টোরিয়াস সেক্ট" দ্রুত অফিসিয়াল আল-আজাইম ফাউন্ডেশন লোগো-‌সহ আইএসকেপি বিবৃতি পোস্ট করেছে। একইভাবে, উজবেক-ভাষার "তাওহিদ চ্যানেল" "দ্য ব্লেসড অ্যাটাক অফ টারমেজ" শিরোনামে একটি ২৪ মিনিটের ভিডিও প্রকাশ করে, যা আক্রমণটিকে মধ্য এশিয়া প্রজাতন্ত্রগুলির বিরুদ্ধে একটি মহা জিহাদের সূচনা হিসাবে প্রচার করেছে। আইএসকেপির "আল-আজাইম" প্রচার শাখা, তাজিক ও উজবেক শাখা সহ, নিয়োগ, তহবিল সংগ্রহ এবং আক্রমণের জন্য মধ্য এশিয়াকে লক্ষ্য করে।

তাজিকিস্তান: আইএসকেপি নিয়োগের একটি নতুন কেন্দ্র

মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যে তাজিকিস্তান একটি অকার্যকর আইনি ব্যবস্থা, ব্যাপক দুর্নীতি এবং একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের সমস্যাগুলির মুখে দাঁড়িয়ে আছে।  প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রহমান ১৯৯২ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং কয়েক বছর ধরে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স পার্টি অব তাজিকিস্তান (আইআরপিটি)-‌ সহ তাজিকিস্তানের বেশিরভাগ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে, ১৯৯৭ সালে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটায় একটি শান্তি চুক্তির অংশ হিসাবে আইআরপিটি-কে সরকারে গ্রহণ এবং পার্লামেন্টে আসনের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট রহমান আইআরপিটি-কে একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ঘোষণা করেন, যা তাজিকিস্তানকে রাজনৈতিক ইসলামের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।


গুরুতরভাবে সীমিত রাজনৈতিক অধিকার, আর্থ-সামাজিক অসুবিধা, এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে একটি দীর্ঘ, অরক্ষিত সীমান্ত, তাজিকিস্তানকে এবং এর তরুণদের আইএসকেপি মতাদর্শের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।



এর বেশির ভাগ সদস্যই এখন হয় কারাবন্দি অথবা নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন, এবং তাঁরা আইএসকেপি নিয়োগের সফট টার্গেট। উপরন্তু, গুরুতরভাবে সীমিত রাজনৈতিক অধিকার, আর্থ-সামাজিক অসুবিধা, এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে একটি দীর্ঘ, অরক্ষিত সীমান্ত, তাজিকিস্তানকে এবং এর তরুণদের আইএসকেপি মতাদর্শের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। যেহেতু তাজিকিস্তানের আইএসকেপি নিয়োগকারীরা বৃহত্তর ইউরেশীয় অঞ্চল, বিশেষ করে তুর্কিয়ে ও ইরানের মানুষের মতো একই সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্ম ভাগ করে, তাই তারা আরও সহজে মিশে যেতে পারে। এটি তাদের নিরাপত্তা পরীক্ষার সময় সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় এবং একক-নেকড়ে আক্রমণ চালানোর সুযোগ দেয়।

তালিবান সন্ত্রাস দমন প্রচেষ্টায় অগ্রগতি করেছে, এবং অনেক তাজিক ও পাকিস্তানি আইএসকেপি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। পরবর্তীকালে, আইএসকেপি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে তার ঘাঁটি বজায় রেখে বৃহত্তর মধ্য এশিয়া, তুর্কিয়ে, ইরান ও ইউরোপ জুড়ে আক্রমণ চালানোর জন্য তাজিকদের এবং তাদের ভাগ করা সাংস্কৃতিক দুর্বলতা ব্যবহার করেছে। নীচের সারণীটি ‌আইএসকেপি আক্রমণে তাজিক নাগরিকদের বর্ধিত সম্পৃক্ততা দেখায়।

 

 

বছর

দেশ

আইএসকেপি নিযুক্ত তাজিকদের জড়িত থাকার বিবরণ

এপ্রিল, ২০২০

জার্মানি

আইএসকেপির সঙ্গে তাজিক জাতীয় সংযোগকারীদের গ্রেপ্তার

অক্টোবর ২০২২

ইরান

তাজিক নাগরিক জড়িত

ফেব্রুয়ারি ২০২৩

তুর্কিয়ে

 আইএসকেপির কথিত ট্রান্সক্সিয়ানা বিভাগের তাজিক নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল

জুন ২০২৩

তুর্কিয়ে

তাজিক নাগরিককে আইএসকেপি-র জন্য ব্যক্তিদের নিয়োগের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়

জুলাই ২০২৩

জার্মানি নেদারল্যান্ডস

 তাজিকিস্তানের ছয়জন এবং তুর্কমেনিস্তান ও কিরগিজস্তানের অন্য তিনজন-‌সহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

ডিসেম্বর ২০২৩

 কিরগিজস্তান

 দুই আইএসকেপি অপারেটিভকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

ডিসেম্বর ২০২৩

জার্মানি অস্ট্রিয়া

আইএসকেপি সংযোগে দুই তাজিক অপারেটিভকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিসেম্বর ২০২৩

রাশিয়া

আইএসকেপির সঙ্গে যুক্ত পাঁচ তাজিককে হামলার পরিকল্পনার জন্য দীর্ঘ কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।

জানুয়ারি ২০২৪

ইরান

তাজিক নাগরিক আইএসকেপি বোমা হামলায় জড়িত ছিল।

জানুয়ারি ২০২৪

তুর্কিয়ে

চার্চকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, যার জন্য তাজিকিস্তানের একজন সহ দুইজন আইএসকেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

সূত্র: বিভিন্ন প্রতিবেদন ও সংবাদপত্রের লেখকদের থেকে সংকলিত।

ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিশেষ করে গাজায় চলতি সংঘর্ষ, এই অঞ্চলে জিহাদের আহ্বানের জন্ম দিয়েছে। তুর্কমেনিস্তান বাদে মধ্য এশিয়ার দেশগুলির নেতারা গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার নিন্দা করেছেন। তাঁরা এটিকে একটি সন্ত্রাসবাদী কাজ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের বক্তব্যের লক্ষ্য এই অঞ্চলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ইজরায়েল-বিরোধী মনোভাব নিয়ন্ত্রণ করা। এই নেতারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অনুমতি দিয়েছেন এবং ইজরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বানকে সমর্থন করেছেন। অন্যদিকে, মধ্য এশিয়ার আইএসকেপি এবং আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীগুলি ইজরায়েলের বিরুদ্ধে এই ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকে কাজে লাগাচ্ছে নিয়োগ, তহবিল সংগ্রহ এবং জিহাদ ও বলিদানে জড়িত থাকার জন্য। আইএসকেপি মধ্য এশিয়ায় এবং বিশেষ করে তাজিকিস্তানে শক্তিশালী হয়েছে। যদিও আইএসকেপি-র ফোকাস আফগানিস্তান-পাকিস্তান অঞ্চলে রয়ে গেছে, মধ্য এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান নিয়োগ সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে সমগ্র ইউরেশীয় অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।



আইজাজ ওয়ানি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.