-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতের আফ্রিকা কৌশল কি একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গঠনে বিশ্ব প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারে?
আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বর্ণনা করার জন্য "দীর্ঘস্থায়ী", "গভীরভাবে প্রোথিত", "ভাগ-করে নেওয়া স্বার্থ", "অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা", "সংহতি", "স্বাভাবিক অংশীদার", এবং "ঐতিহাসিক" হল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কিছু শব্দ। ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি আফ্রিকান ইউনিয়নের জি২০-র স্থায়ী সদস্য হিসাবে প্রবেশ দিয়ে চিহ্নিত হয়েছিল, যেটি একটি অভিজাত বিশ্ব মঞ্চ। এটি এমন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যা লক্ষ লক্ষ আফ্রিকানকে প্রভাবিত করেছিল, কিন্তু আফ্রিকানদের এখানে কোনও বক্তব্য বলার সুযোগ ছিল না। বিভিন্ন জি২০ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ফোন করার মাধ্যমে জি২০-তে এইউ-এর অন্তর্ভুক্তির জন্য তাঁর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার কারণে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। ভারতের প্রচেষ্টাগুলি বিশ্ব মঞ্চে আফ্রিকার বৃহত্তর ভূমিকাকে স্থায়ী সমর্থন জোগানোর পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথের উদ্বেগগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য নিজের জি২০ প্রেসিডেন্সি ব্যবহার করার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী মোদী উগান্ডার পার্লামেন্টে তাঁর ভাষণে ঘোষণা করেছিলেন যে আফ্রিকা "ভারতের অগ্রাধিকারের শীর্ষে থাকবে"। সম্প্রতি, আফ্রিকা দিবস উদযাপনে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তৃতা শুধু আফ্রিকা নয়, সমস্ত আফ্রিকাবাসী, অর্থাৎ আফ্রিকার প্রতিটি পুরুষ, মহিলা ও শিশুর প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতা ও সংহতির অনুরূপ আবেগের প্রতিধ্বনি করেছে।
ভারতের প্রচেষ্টাগুলি বিশ্ব মঞ্চে আফ্রিকার বৃহত্তর ভূমিকার জন্য স্থায়ী সমর্থন জোগানোর পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথের উদ্বেগগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য নিজের জি২০ প্রেসিডেন্সি ব্যবহার করার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
আফ্রিকার প্রতি ভারতের দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির সঙ্গে তাল মিলিয়েছে ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক। ভারত বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও চিনের পরে আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, এবং ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে দ্বিমুখী বাণিজ্যের মূল্য প্রায় ৮২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে হিসাব করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আফ্রিকাতে ভারতীয় বিনিয়োগও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এফডিআই স্টকের ক্ষেত্রে ভারত এখন আফ্রিকায় দশম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী। ভারতের উন্নয়ন সহযোগিতাও ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে দ্রুত প্রসারিত হয়েছে, এবং আফ্রিকান দেশগুলি ভারতের লাইন অফ ক্রেডিট প্রোগ্রামের প্রধান সুবিধাভোগী হয়েছে। যদিও পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে চিন নেতৃত্ব দেয়, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আফ্রিকার পরিকাঠামোর জন্য চিনা অর্থায়ন নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। অন্য দিকে, পরিকাঠামো উন্নয়ন আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের উন্নয়ন অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত, ভারত আফ্রিকার ৪৩টি দেশে ২০৬টি প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এবং ৬৫টি প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ১২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারত তার আইটিইসি প্রোগ্রাম, বৃত্তি প্রদান, ও মহাদেশে প্রতিষ্ঠান-নির্মাণের মাধ্যমে আফ্রিকার সক্ষমতা তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
ভারত যদিও আফ্রিকার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে অনেক কিছু করেছে, প্রশ্ন হল ভারত কি আফ্রিকার পছন্দের অংশীদার? এটা সত্য যে ভারত আফ্রিকা মহাদেশে তার বহু পুরনো সংহতির জন্য অসাধারণ শুভেচ্ছা উপভোগ করে, কিন্তু এর কি যথেষ্ট সুবিধা আছে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া কঠিন, বিশেষ করে এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য সমস্ত বড় বৈশ্বিক শক্তির প্রয়াসের প্রেক্ষাপটে। যাই হোক, নয়াদিল্লিতে তৃতীয় ভারত-আফ্রিকা ফোরাম শীর্ষ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজন করার ৯ বছর পরেও চতুর্থ ভারত-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করতে না-পারা আফ্রিকাতে ভারতের প্রভাবের অভাবের প্রতিফলন। ভারত-আফ্রিকা ফোরাম শীর্ষ বৈঠক আয়োজনে অযৌক্তিক বিলম্বের পিছনে প্রায়ই কোভিড-১৯ অতিমারি এবং নির্বাচনের সময়সূচিকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যাই হোক, আফ্রিকান ইউনিয়ন কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিন (২০২১), তুর্কিয়ে (২০২১), ইইউ (২০২২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (২০২২), জাপান (২০২২) ও রাশিয়া (২০২৩)-র মতো অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি শীর্ষ সম্মেলন করেছে। ফোরাম ফর চায়না আফ্রিকা কো-অপারেশন (এফওসিএসি) ২০২৪ শীর্ষ সম্মেলন সেপ্টেম্বর ২০২৪-এর জন্য নির্ধারিত হয়েছে৷ ভারত আফ্রিকার অগ্রাধিকারের শীর্ষে নেই৷
ভারত তার ভ্যাকসিন মৈত্রী কর্মসূচি নিয়ে অতিমারি চলাকালীন দক্ষতার সাথে কাজ করেছিল, তার চিকিৎসা কূটনীতি ও খাদ্যের চালানের মাধ্যমে আফ্রিকার সাহায্যে এসেছিল, এবং আফ্রিকাতে তার উন্নয়ন সহযোগিতা বাড়িয়েছে।
ভারতীয় নেতৃত্ব আফ্রিকায় ভারতের উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য অত্যন্ত গর্বিত, কিন্তু ভারত কি আফ্রিকার উন্নয়নের ভূচিত্রে শুধুমাত্র আরও এক অংশগ্রহণকারী হিসাবে রয়েছে? আফ্রিকায় ভারতের উন্নয়ন উদ্যোগের প্রভাব ঠিক কী? ভারত তার ভ্যাকসিন মৈত্রী কর্মসূচি নিয়ে অতিমারি চলাকালীন দক্ষতার সাথে কাজ করেছিল, তার চিকিৎসা কূটনীতি ও খাদ্যের চালানের মাধ্যমে আফ্রিকার সাহায্যে এসেছিল, এবং আফ্রিকাতে তার উন্নয়ন সহযোগিতা বাড়িয়েছে। কিন্তু মহাদেশে যে সব নাটকীয় পরিবর্তন ঘটছে তার প্রেক্ষাপটে আফ্রিকার প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে।
চিত্র ১: সাব-সাহারান আফ্রিকার প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির হার (২০১০ থেকে ২০২২)
সূত্র: বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্যের ভিত্তিতে হিসাব
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আফ্রিকায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বেশিরভাগ আফ্রিকান দেশ একাধিক ধাক্কার সঙ্গে লড়াই করছে, যা ২০১৫ সালে পণ্যের দামের ধাক্কা দিয়ে শুরু হয়েছিল। তারপরে এসেছে কোভিড-১৯ অতিমারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, যা শক্তি, খাদ্য ও সারের দাম আকাশচুম্বী করেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আফ্রিকার জিডিপি বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে (চিত্র ১)। ইউএনসিটিএডি-র বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্ট ২০২৪ অনুসারে, ২০২৩ সালে আফ্রিকায় এফডিআই প্রবাহ ৩ শতাংশ কমেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বাদে, আফ্রিকার সমস্ত অঞ্চলে ২০২৩ সালে এফডিআই প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। আগের বছরগুলির উন্নয়নের লাভ হারিয়ে গিয়েছে, এবং এসডিজি সম্পূর্ণভাবে নাগালের বাইরে বলে মনে হচ্ছে। আফ্রিকা প্রায় ৩৫টি অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে গুরুতর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং হত্যা করেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে, আফ্রিকা সম্পর্কে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন রয়েছে। ভারতীয় পক্ষের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চতুর্থ ভারত-আফ্রিকা ফোরাম শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য চাপ দেওয়া উচিত। চতুর্থ ভারত-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে ভারত ও আফ্রিকার উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ, আকাঙ্ক্ষা এবং তরুণ ও প্রায়-তরুণ জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে অংশীদারিত্বের ভবিষ্যৎ অ্যাজেন্ডাও তুলে ধরা উচিত। যদিও ভারত-আফ্রিকা আলোচনার ধারাবাহিকতা কাঙ্ক্ষিত, তবে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং সংহতির উপর খুব বেশি জোর দেওয়া ভারতের পক্ষে কাজ নাও করতে পারে। ভারতকে অবশ্যই ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে অংশীদারিত্বের জন্য একটি দূরদর্শী অ্যাজেন্ডা তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে, যা প্রায় ২.৮ বিলিয়ন ভারতীয় ও আফ্রিকান জনগণের সম্মিলিত জনসংখ্যার প্রত্যাশা পূরণ করে।
সক্ষমতা বৃদ্ধি যখন আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন ভারত ও আফ্রিকা উভয়েরই এখন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বৃহত্তর বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের বৃহৎ যুব জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর জন্য একটি ব্যাপক কৌশল প্রয়োজন, বিশেষ করে আগামী দশকগুলিতে পশ্চিমে বার্ধক্যপীড়িত জনসংখ্যার প্রেক্ষাপটে।
চতুর্থ ভারত-আফ্রিকা ফোরাম শীর্ষ সম্মেলনের উচিত উন্নয়নের জন্য মানব পুঁজি ও প্রযুক্তির জন্য একটি ভাগ-করা কৌশল প্রণয়ন করা। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশক থেকে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ভারত-আফ্রিকা উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ভিত্তি। যাই হোক, এখন সময় এসেছে কীভাবে ভারত ও আফ্রিকা উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে তার একটি বিশদ রোডম্যাপ তৈরি করার। জটিল উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত ও আফ্রিকার উচিত তাদের শক্তি যোগ করা এবং একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। এই কাজটি সম্ভব করার জন্য দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন। সক্ষমতা বৃদ্ধি যখন আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন ভারত ও আফ্রিকা উভয়েরই এখন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বৃহত্তর বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের বৃহৎ যুব জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর জন্য একটি ব্যাপক কৌশল প্রয়োজন, বিশেষ করে আগামী দশকগুলিতে পশ্চিমে বার্ধক্যপীড়িত জনসংখ্যার প্রেক্ষাপটে। সহজভাবে বলতে গেলে, এই নিবন্ধের শুরুতে তালিকাভুক্ত শব্দগুলির চেয়ে এগিয়ে আরও কিছু শব্দ তুলে আনা প্রয়োজন। কেউ কি শুনছেন?
মালঞ্চ চক্রবর্তী অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো ও ডেপুটি ডিরেক্টর (রিসার্চ)
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Dr Malancha Chakrabarty is Senior Fellow and Deputy Director (Research) at the Observer Research Foundation where she coordinates the research centre Centre for New Economic ...
Read More +