Published on Dec 03, 2023 Updated 0 Hours ago

চিনা জাহাজ শি ইয়ান-৬-এর নোঙর করার বিষয়টি শ্রীলঙ্কাকে এক দিকে ভারত এবং অন্য দিকে চিনের সঙ্গে তার সম্পর্কের নিরিখে সূক্ষ্ম অনিশ্চয়তার সম্মুখে ফেলেছে।

ভারত-চিন কৌশলগত সমীকরণের ভারসাম্য বজায় রাখা কি এখন শ্রীলঙ্কার পক্ষে কঠিন বলে প্রমাণিত হচ্ছে?

সেপ্টেম্বর মাসের ২ ও ৩ তারিখে নির্ধারিত থাকলেও অনিবার্য পরিস্থিতি কারণ দর্শিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের শ্রীলঙ্কা সফর শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়েছে এবং তা এ বছর অক্টোবর মাসে একটি চিনা গুপ্তচর জাহাজ’-এর কলম্বো বন্দরে নোঙরের সম্ভাবনার সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে। দুই এশীয় বৃহৎ শক্তির সঙ্গে আয়োজক দেশটি তার কৌশলগত সমীকরণ বজায় রাখতে বেকায়দায় পড়েছে এমন এক সময়ে, যখন সেই সমীকরণ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। শ্রীলঙ্কার অস্থিতিশীল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য একগুচ্ছ অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারত ও চিনের উভয়ের সঙ্গে তালি মিলিয়ে চলা শ্রীলঙ্কার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জাপানের এশীয় শক্তি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমী বন্ধুদেশ। ভারত-চিনের বিদ্যমান দ্বন্দ্ব ও ভারত মহাসাগরের বিষয়ে কৌশলগত অবস্থান নেওয়ার সামর্থ্য থাকলে এমনটা শ্রীলঙ্কাকে অতি অবশ্যই করতে হবে।

এই সফর এমন এক প্রেক্ষিতে ঘটতে চলেছে, যখন শ্রীলঙ্কা এবং ভারত সর্বোচ্চ স্তরে জাতীয় গ্রিডগুলির আন্তঃসংযোগ ও একটি স্থল সেতুর নির্মাণ-সহ সংযোগ প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়নের জন্য সম্মত হয়েছে।

সফরের আগে ভারত এটিকে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছিল। সেই অনুসারে, রাজনাথ সিংয়ের প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে - যিনি সংবিধানের অধীনে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও বটে - এবং প্রধানমন্ত্রী দীনেশ গুণবর্ধনের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল এবং সেখানে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের সমস্ত দিক নিয়ে পর্যালোচনা করার সম্ভাবনা ছিল। নয়াদিল্লিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মন্ত্রকের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘এই সফর … শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিদ্যমান উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভারতের অব্যাহত প্রতিশ্রুতিকেই পুনর্ব্যক্ত করবে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের দৃঢ় বন্ধন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে

মন্ত্রক আরও বলেছিল, ‘সাক্ষাৎ চলাকালীন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্কের সমগ্র বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। রক্ষামন্ত্রী (প্রতিরক্ষা মন্ত্রী) মধ্য শ্রীলঙ্কার নুওয়ারা এলিয়া এবং দেশের পূর্ব অংশে অবস্থিত ত্রিনকোমালিত পরিদর্শনেও যাবেনকলম্বোর একটি দৈনিক ডেইলি মিরর অনুসারে, রাজনাথ সিং ত্রিনকোমালিতে সফর করবেন, যেখানে ভারত পেট্রোলিয়াম পণ্য স্থানান্তরের জন্য দুই দেশের মধ্যে সংযোগকারী একটি পাইপলাইন নির্মাণের চূড়ান্ত লক্ষ্যে কৌশলগত বিনিয়োগ শুরু করেছে... এই সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি এমন এক প্রেক্ষিতে ঘটতে চলেছে, যখন শ্রীলঙ্কা এবং ভারত সর্বোচ্চ স্তরে জাতীয় গ্রিডগুলির আন্তঃসংযোগ ও একটি স্থল সেতুর নির্মাণ-সহ সংযোগ প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়নের জন্য সম্মত হয়েছে।শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ভারত যৌথ ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন অয়েল ট্যাঙ্কার ফার্ম’-এর পুনর্বিকাশের জন্য স্বাক্ষর করেছিল।

একই ভাবে হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, কথা ছিল রাজনাথ সিং শ্রীলঙ্কা আয়োজিত অনুষ্ঠানে আইএনএস দিল্লি-কে অভ্যর্থনা জানাবেন। আইএনএস দিল্লি ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রথম দেশীয় ভাবে পরিকল্পিত এবং নির্মিত গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার। দু’দিনের সফরে সেটির শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার কথা ছিল। ভারতীয় নৌবাহিনীর বিবৃতি অনুযায়ী, ‘এ ছাড়া বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলিতে গুণমানসম্পন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য ভারতের আরোগ্য মৈত্রী উদ্যোগের অংশ হিসাবে রক্ষামন্ত্রী অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম হস্তান্তর করবেন, যা ভীষ্ম প্রকল্পের (ভারত হেলথ ইনিশিয়েটিভ ফর সহযোগ, হিত অ্যান্ড মৈত্রী) অন্তর্গত।

কলম্বোয় ভারতীয় হাইকমিশনের প্রেস বিবৃতি অনুসারে মন্ত্রী পর্যায়ের সফর স্থগিত করা হয় এবং জানানো হয় যে, দুই দেশের পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে তা অনুষ্ঠিত হবে নৌবাহিনীর জাহাজটি সময়সূচি অনুযায়ীই প্রস্থান করে। যাত্রার আগে আইএনএস দিল্লি এসএলএনএস বিজয়বাহুর সঙ্গে একটি সফল প্যাসেজ এক্সারসাইজ (প্যাসেক্স) পরিচালনা করেছিল, যার মধ্যে যোগাযোগ প্রশিক্ষণ এবং কৌশলগত চালচলনগত প্রশিক্ষণ অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রসঙ্গত, হাইকমিশনের বিবৃতিতে কলম্বো-বহির্ভূত স্থানগুলিতে মন্ত্রী-পর্যায়ের সফরের কথা উল্লেখ করা হয়নি বা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য সফরগত কর্মসূচির কোনও উল্লেখ ছিল না।

 

গুপ্তচর অভিযান না কি ডুবে যাওয়া জাহাজের জন্য?

বিগত বারো মাসের বেশি সময় ধরে শ্রীলঙ্কার কোনও একটি বন্দরে চিনা স্পাই শিপবা গুপ্তচর জাহাজকে নোঙর করতে দেওয়ার বিষয়ে কলম্বোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনাথ সিং-এর সফর এবং শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত হয়ে যাওয়াদুই বিষয়ই সম্পর্কিত বলে মনে করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সম্প্রতি এ কথা স্বীকার করেছে যে, তারা এ বিষয়ে চিনের তরফে অনুরোধ পেয়েছিলআগের এবং  বর্তমান জাহাজ নোঙরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফারাকটি হল এই যে, ইউয়ান ওয়াং-৫ চিন নিয়ন্ত্রিত হাম্বানটোটা বন্দরে দেশের দক্ষিণতম প্রান্তে নোঙর করেছে, যখন শি ইয়ান-৬ কলম্বো বন্দরে নোঙর করবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

গত বারের মতোই বেজিং অস্বীকার করেছে যে, নতুন জাহাজটি একটি গুপ্তচর অভিযানের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছিল এবং একই সঙ্গে বিবৃতি দিয়েছে যে, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সমুদ্র গবেষণামূলক অভিযানের অংশ, যার লক্ষ্য পনেরো শতকের চিনা অ্যাডমিরাল ঝেং হে-র ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান চালানো। শ্রীলঙ্কার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শ্রীলঙ্কা সফরের সময় তৎকালীন মাহিন্দা রাজাপক্ষ সরকারের মধ্যে এই বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছিল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বিক্রমসিংহে যখন ২০১৫-২০১৯ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন, তখন এই ধরনের তিনটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। তাই এটি ছিল অনুরূপ অভিযানে (ইউয়ান ওয়াং-৫ ব্যতীত) একটি চিনা গবেষণামূলক জাহাজ’-এর তৃতীয় সফর এবং একই সঙ্গে ২০২৬ সালে অভিযানমূলক চুক্তি শেষ হওয়ার আগে কমপক্ষে আরও একটি এ হেন অভিযান হওয়ার কথা রয়েছে। এই দেশ দুটি অর্থাৎ চিন ও শ্রীলঙ্কা ব্যতীত অন্য কোনও দেশই চিনা বিবৃতিকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে না।

যাই হোক, কলম্বো গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে, বিশেষ করে দি আইল্যান্ডে দাবি করা হচ্ছে যে, মূল চুক্তিটি দুবার সংশোধন করার পরে শি ইয়ান-৬ শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল অ্যাকোয়াটিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (এনএআরএ) সঙ্গে যৌথ গবেষণায় নিয়োজিত হবেশি ইয়ান-৬ ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন করা মোট পাঁচটি অভিযানের চতুর্থটিতে সম্পৃক্ত থাকবে। ঘটনাচক্রে আগের তিনটি সমীক্ষার মধ্যে একটি সমীক্ষায় একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষেসন্ধান পাওয়া গেলেও দি আইল্যান্ডের মতে এই ধ্বংসাবশেষ আদতে একটি নরওয়েজিয়ান জাহাজের বলে প্রমাণিত হয়। দি আইল্যান্ড-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলি অনুযায়ী উভয় পক্ষই গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং অভিযান’-এর ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করতে একটি যৌথ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হয়েছে। আগের তিনটি সমীক্ষা বিতর্ক ছাড়াই সম্পন্ন  হলেও নির্ধারিত চতুর্থ সমীক্ষাটি জনসাধারণের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে কারণ ভারত চিনা জাহাজের পরিদর্শন নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দি আইল্যান্ডের প্রতিবেদনের নানা সূত্র অনুসারে, বিষয়টি সর্বোচ্চ স্তরে বিবেচনাধীন থাকলেও একই সময়ে বিক্রমসিংহে সরকারও জেং হে প্রকল্পটি সামগ্রিক ভাবে পর্যালোচনা করছে

এই প্রতিবেদন অনুসারে, শ্রীলঙ্কার স্বাক্ষরকারীরা অ্যাটর্নি-জেনারেল অফিস থেকে বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র পেয়েছিলেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফ্রান্সও একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনে কতটা আগ্রহী ছিল এবং কলম্বোর তরফে রাজধানীর কাছাকাছি কোটেলাওয়ালা প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কেডিইউ) সঙ্গে না করে বরং ত্রিনকোমালিতে তা গড়ে তোলার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। ঘটনাচক্রে কলম্বো বন্দরে একটি ফরাসি গুপ্তচর জাহাজের সাম্প্রতিক সফর প্রায় সকলেরই নজরে এড়িয়ে গিয়েছে।

 

সূক্ষ্ম বার্তা

চিনা জাহাজটিকে নোঙর করার ব্যাপারে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে কলম্বোর প্রশাসন তার অবস্থান স্পষ্ট করে উঠতে পারেনি। ভারতীয় গণমাধ্যমের একটি অংশ তখন থেকেই দাবি করেছে যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সফর বাতিল/স্থগিত করাবিষয়টি নয়াদিল্লির তরফে শি ইয়ান-৬-এর সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে কলম্বোকে বার্তা পাঠানোর একটি সূক্ষ্ম উপায় ছিল যাই হোক, গত কয়েক মাস ধরে ভারত ও শ্রীলঙ্কা প্রতিরক্ষামূলক সহযোগিতার একাধিক স্তরে একত্রে কাজ করেছে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ভারতীয় বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভি আর চৌধুরী মে মাসে শ্রীলঙ্কায় একটি সরকারি সফরে যান, যেখানে তিনি তাতাঁ শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনীর প্রধানকে এএন-৩২ পরিবহবিমানের প্রপেলার প্রদান করেছিলেন। এর পরপর ১৫ অগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের  দিন ভারতীয় হাইকমিশনার গোপাল বাগালে শ্রীলঙ্কার তরফে অনুরোধমাফিক ভারতীয় নৌবাহিনীর ডর্নিয়ার ফিক্সড-উইং রিকনেসাঁ বিমানের দ্বিতীয়টি হস্তান্তর করেন, যা শ্রীলঙ্কার নজরদারির ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি করবে এবং শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনীর জন্য শক্তি গুণক হিসেবে কাজ করবে,’ যেমনটা ভারতীয় হাই কমিশনের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে। শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনও শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উদ্ধৃতি তুলে জানিয়েছে যে, কী ভাবে গত বছর দুই দক্ষিণ এশীয় ভারত মহাসাগরীয় প্রতিবেশী দেশ কলম্বোর জন্য বিনামূল্যে একটি ভাসমান বন্দরের সুবিধা পাওয়ার জন্য দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করলেও কোন পক্ষই আনুষ্ঠানিক ভাবে তা ঘোষণা করেনি।

এই বছরের জুন মাসে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতাকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় হাইকমিশন কলম্বোয় প্রথম ভারত-শ্রীলঙ্কা প্রতিরক্ষা সেমিনার ও প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল, যেখানে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও আন্তঃসহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রগুলিকে উন্নীত ও চিহ্নিত করাহয়। এ কথা চেন্নাইভিত্তিক দ্য হিন্দু-তেও প্রতিবেদিত হয়। সম্প্রতি কলম্বোয় ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং শ্রীলঙ্কা সশস্ত্র বাহিনীর সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আর একটি অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার গোপাল বাগালে ভারতের নেবারহুড ফার্স্ট পলিসি'র সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রীলঙ্কার সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টার প্রতি নয়াদিল্লির প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, কী ভাবে দুই সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম নানাবিধ পরিষেবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও আন্তঃকার্যক্ষমতার মনোভাব জাগিয়ে তুলেছে এবং তাদের শক্তিশালী বন্ধনের ভিত্তি নির্মাণ করেছে।

উভয় পক্ষের সদিচ্ছা

ভারত, চিন এবং শ্রীলঙ্কা সম্পর্কিত কূটনৈতিক প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ করে কলম্বোভিত্তিক ডেলি মিরর একটি সম্পাদকীয়তে প্রকাশ করেছে যে, ভারত কী ভাবে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সহায়তা প্যাকেজ বৃদ্ধি করেছে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেশটির ২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণকে সহজেই পরিশোধ করার দায়িত্ব নিয়েছে। অন্য দিকে, চিন সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতা হিসেবে রয়ে গিয়েছে এবং চিন ৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ দেশটির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ গণ বাহ্যিক ঋণের জন্য দায়বদ্ধ থেকেছে চিন শুধুমাত্র বিদ্যমান ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন ঋণ প্রদান করছিলতবে পরবর্তী কালে অন্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের খুশি করার জন্য এবং আইএমএফ-এর তরফে সুবিধা লাভের জন্য শ্রীলঙ্কার আবেদনকে খতিয়ে দেখতেঋণের বিষয়টি পুনঃনির্ধারণ করার ব্যাপারে সম্মত হয়।

সম্পাদকীয়তে শি ইয়ান-৬ পর্বের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, চিন কী ভাবে এটিকে শুধু মাত্র একটি গবেষণামূলক জাহাজ হিসেবে দাবি করলেও আমাদের সুবিশাল প্রতিবেশীভারত জাহাজটির প্রবেশাধিকার নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, ভারত অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং ঋণগ্রস্ত পরিস্থিতির কারণে শ্রীলঙ্কার অবস্থা সঙ্গীন জেনেও আশা করে যে, চিনা জাহাজকে আমাদের বন্দরে প্রবেশ করার বিষয়ে বাধা দেব।এর পাশাপাশি সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে যে, ‘ভারত শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে এর আগেও এ হেন দাবি করেছে।

যাই হোক, সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান নেতৃত্ব অতীতেও এ হেন সমস্যার মধ্যে সফল ভাবে পথ খুঁজে নিতে সক্ষম হয়েছে’ এবং আশা করে যে, আগামী দিনেও তারা চিন অথবা ভারতকারও রোষানলে না পড়েই বর্তমান সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে সক্ষম হবে। কারণ উভয় দেশের সদিচ্ছা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

 


ত্য মূর্তি চেন্নাইভিত্তিক নীতি বিশ্লেষক এবং রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.