Author : Kriti M. Shah

Published on Mar 01, 2024 Updated 0 Hours ago

সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহযোগিতার অভাব কীভাবে কূটনৈতিক ও বাস্তব সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে, ইরান–পাকিস্তান হানা তার প্রধান উদাহরণ।

ইরান, পাকিস্তান এবং বৃহত্তর বালোচ প্রশ্ন

ইরানের লক্ষ্যবস্তু ছিল জইশ আল–আদল, যারা ইরানের সিস্তান–বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা চায়। এর সদস্যরা হল সুন্নি বালোচ, শিয়া অধ্যুষিত ইরানের একটি জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। সাবেক জুনদাল্লাহ গোষ্ঠীর এই শাখাটি ইরানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর হামলার জন্য দায়ী, যার মধ্যে আছে কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলা, সেইসঙ্গে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে অপহরণ ও হত্যার চেষ্টা। সবচেয়ে সাম্প্রতিক হামলায়, যার জন্য ইরান প্রতিশোধ নিয়েছে, একটি থানায় ১১ জন ইরানি নিরাপত্তা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ২০০৭ সালের একটি সাক্ষাৎকারে গোষ্ঠীর এখন নিহত নেতা আব্দুলমালেক রিগি বলেছিলেন যে তাঁর দল ইরানে তাঁদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি–সহ বালোচ জনগণের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।


সাবেক জুনদাল্লাহ গোষ্ঠীর এই শাখাটি ইরানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর হামলার জন্য দায়ী, যার মধ্যে আছে কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলা, সেইসঙ্গে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে অপহরণ ও হত্যার চেষ্টা।

দাবি করা হয়েছে, ইরানে পাকিস্তানের হামলা বালোচ লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) ও বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)–কে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। উভয় গোষ্ঠীর বিবৃত লক্ষ্য হল পাকিস্তানি রাষ্ট্র কর্তৃক অর্থনৈতিক ও সম্পদ শোষণ থেকে বালোচ জনগণের সুরক্ষা। আরব সাগরের সীমানায় বেলুচিস্তানের কৌশলগত অবস্থানের কারণে এখানে দক্ষিণ আফগানিস্তান ও পূর্ব ইরানের বাণিজ্যপথ অবস্থিত, এবং এই অঞ্চলটি অতীতে বিভিন্ন শাসকের কাছে সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ ছিল — তা পারস্য, আফগান, শিখ বা ব্রিটিশ, যেই হোক না কেন। ১৯৪৭ সাল থেকে, তৎকালীন কালাত রাজ্য (বর্তমান বেলুচিস্তান) নামে অভিহিত অঞ্চলটির পাকিস্তানি অধিগ্রহণের পর থেকে, বালোচ প্রতিরোধ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন–সহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছে।

বিএলএফ, দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রাচীনতর, ১৯৬০–এর দশকের শেষ থেকে বালোচ বিদ্রোহের অগ্রভাগে রয়েছে। অন্যদিকে, বিএলএ একটি আরও হিংস্র ও র‌্যাডিক্যাল গোষ্ঠী, যেটি সম্পদের আরও ভাল অংশ ও বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সামরিক কনভয় ও কর্মীদের আক্রমণ করে, চিনা প্রকৌশলীদের অপহরণ করে এবং অ–সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর লোকদের হত্যা করে।

বছরের পর বছর ধরে যা
বেলুচিস্তানে চরমপন্থা বৃদ্ধির দিকে চালিত করেছে তা হল প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন খনিজ ও হাইড্রোকার্বনের অর্থনৈতিক শোষণ; রাজনৈতিক ও সামরিক নিপীড়ন; স্বায়ত্তশাসনের অভাব; এবং আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানে উগ্র ইসলাম প্রচার করতে এবং বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিচ্ছিন্ন করতে লস্কর–ই–জাংভির মতো গোষ্ঠীগুলিকে ব্যবহার করলেও বিএলএফ ও বিএলএ–র মতো গোষ্ঠীগুলি একই ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে সহযোগিতা এবং একসঙ্গে কাজ করার জন্য পরিচিত। বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দরে চিন–পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর (সিপিইসি) এবং এর ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পের উন্নয়ন বালোচ জনগণের দমন এবং বেলুচিস্তানের ‘উপনিবেশীকরণ’‌-এর তীব্রতা বাড়িয়েছে, কারণ স্থানীয়রা এই ‘‌মহা’‌ উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল ভোগ করেননি।


পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জইশ আল-আদলের সম্ভবত একধরনের দখল আছে, অন্যদিকে বিএলএফ এবং বিএলএ-রও সিস্তান-বেলুচিস্তানে সমর্থন থাকবে।

এই অঞ্চলের ইতিহাস এবং গোষ্ঠীগুলির আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে, তেহরানের নেতারা জইশ আল‌–আদলের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতা জারি করতে পারে এবং পুরো বিষয়টা সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞাত থাকার ভান করতে পারে, কিন্তু উভয় দেশের সন্দেহ সম্ভবত বৈধ হতে পারে। অন্য কথায়, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জইশ আল–আদলের সম্ভবত এক ধরনের দখল আছে, অন্যদিকে বিএলএফ ও বিএলএ–রও সিস্তান–বেলুচিস্তানে সমর্থন আছে। এই অঞ্চলের বালোচ জনগণ এবং উপজাতিরা দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত দ্বারা বিভক্ত হলেও উভয় দিকের মানুষের মধ্যে দৈনন্দিন পণ্যের আদান–প্রদানের পাশাপাশি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত ও ধর্মীয় বন্ধন ইরান ও পাকিস্তান উভয়ের জন্যই উদ্বেগের বিষয়।

জইশ আল–আদল ইরানের জাতিগত, ভাষাগত এবং ধর্মীয় বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে;‌ অন্যদিকে বিএলএ ও বিএলএফ তাদের জমির অর্থনৈতিক শোষণ এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের অভাবের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে; কিন্তু গোষ্ঠীগুলির একে অপরের সঙ্গে তাদের দেশগুলি যা বিশ্বাস করে তার চেয়ে আরও বেশি মিল থাকতে পারে।

একে অপরের দেশে ‘‌লক্ষ্যযুক্ত নির্ভুল হামলা’‌ তাই রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বাগাড়ম্বর ছাড়া কিছুই নয়। ইরান বর্তমানে গাজায় তার প্রক্সি গ্রুপ হামাসের মাধ্যমে এবং আরও নানাভাবে একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে, আর পাকিস্তানের তার পঙ্গু অর্থনীতি ও ব্যর্থ গণতন্ত্রের সঙ্গে সাধারণ নির্বাচনে যাওয়ার আগে শক্তির একটা মুখোশ পরার প্রয়োজন ছিল। কোন দেশেরই দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের প্রয়োজন নেই, এমনকি কম তীব্রতার লড়াইয়ের সামর্থ্যও তাদের নেই। বালোচ জনগণের সমস্যা এবং অভিযোগগুলি বাস্তব। যদিও জইশ আল–আদল, বিএলএ ও বিএলএফের মতো গোষ্ঠীগুলি তাদের কণ্ঠস্বর প্রসারিত করার জন্য চরম, সহিংস ও নৃশংস উপায় অবলম্বন করলেও তাদের লক্ষ্য অর্জনে অ–কার্যকর থাকবে।


ইরান বর্তমানে গাজায় তার প্রক্সি গ্রুপ হামাসের মাধ্যমে এবং আরও নানাভাবে একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে, আর পাকিস্তানের তার পঙ্গু অর্থনীতি ও ব্যর্থ গণতন্ত্রের সঙ্গে সাধারণ নির্বাচনে যাওয়ার আগে শক্তির একটা মুখোশ পরার প্রয়োজন ছিল।

এই প্রথম ইরান পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে বা পাকিস্তানে ইরান–বিরোধী উপাদানগুলিকে হত্যা করেছে তা নয়, তবে এটি প্রথমবারের মতো জানা গিয়েছে। পাকিস্তানের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতের জন্য একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করলেও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ সহযোগিতার অনুপস্থিতি কীভাবে কূটনৈতিক ও বাস্তব জমিতে সংঘাতে পরিণত হতে পারে এটি তার একটি প্রধান উদাহরণ।

গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের যুদ্ধ এবং লোহিত সাগরে হুতিদের হামলার মধ্যে দিয়ে পশ্চিম এশিয়ার সংঘাত যখন একটি বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, এটি অত্যন্ত সম্ভাব্য যে জইশ আল–আদল, বিএলএ বা বিএলএফের মতো স্থানীয় অভিযোগ নিয়ে সক্রিয় গোষ্ঠীগুলি শিয়া–সুন্নি বা ইসলাম–ইহুদি ধর্মের বৃহত্তর ‘‌গ্লোবাল জিহাদ’‌ প্রকল্পে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। অন্য কথায়, গোষ্ঠীগুলির জন্য তাদের নিজ নিজ দেশের বিরুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর লক্ষ্যগুলিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে জোট গঠন, পক্ষ নেওয়া এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি বা উগ্র মতাদর্শের গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে হাত মেলানোর সুযোগ রয়েছে, যেমন তালিবান।



কৃতি এম শাহ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের একজন সহযোগী ফেলো ছিলেন

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.