Author : Swati Prabhu

Published on Aug 01, 2023 Updated 0 Hours ago

বছরের পর বছর ধরে ভারতের বিদেশ নীতির উদ্দেশ্যগুলি পিআইসি-র আখ্যানকে উপেক্ষা করলেও অতিমারি-পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থায় তা পরিবর্তিত হচ্ছে

পাপুয়া নিউ গিনিতে ভারতের প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রাধান্য

মে মাসের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাপুয়া নিউ গিনিতে (পিএনজি) উদ্বোধনী সফরের সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের কর্মসূচিতে বেশ কয়েকটি অগ্রাধিকার প্রাধান্য পেয়েছে। কূটনৈতিক মহলে এ নিয়ে প্রত্যাশা তুঙ্গে। কারণ এটি একটি যুগান্তকারী সফর এবং কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য এমনটা প্রথম। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যেমন বলেছেন, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিধি এবং তার সম্প্রসারণ কর্মসূচির তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই সফরটি এমন সময়ে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, যখন বিদ্যমান যুদ্ধের ফলে ইউরোপের মাটিতে তেলের দাম বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক যুদ্ধ, এজেন্ডা ২০৩০-এর বৈঠক ইত্যাদির মতো একাধিক প্রতিবন্ধকতা উঠে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফর থার্ড ফোরাম ফর ইন্ডিয়া-প্যাসিফিক আইল্যান্ড কোঅপারেশনকেও (এফআইপিআইসি) একসূত্রে গেঁথেছে, যেটি ভারত পোর্ট মোরেসবিতে পিএনজি-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে আয়োজন করেছে। এফআইপিআইসি-এর সঙ্গে সাযুজ্য রেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২৪ মে কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাতে দ্বীপরাষ্ট্রে আসেন। পিএনজি-তে বাইডেন এবং মোদীর একসঙ্গে উপস্থিতি ‘ঐতিহাসিক ভাবে প্রথম’। পিএনজি-র প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে এটিকে ‘প্রশান্ত মহাসাগরের বৃহত্তম দেশে আন্তর্জাতিক পরাশক্তির ভবিষ্যৎমূলক বৈঠক’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

ভারতের কেন পিআইসি-তে মনোযোগ দেওয়া উচিত?

মেলানেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া এবং পলিনেশিয়া নামে তিনটি বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত প্যাসিফিক দ্বীপদেশগুলি (পিআইসি) দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে এমন ভাবে অবস্থিত, যা কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক দশক ধরে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক-ষষ্ঠাংশের বাসসমৃদ্ধ এই দ্বীপগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনের (ইউকে) মতো প্রধান বিদেশি শক্তিগুলির প্রভাব এবং আগ্রহের অভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে।

এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ভারতীয় বাগিচা কর্মীদের (প্ল্যানটেশন ওয়ার্কার্স) অভিবাসনের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক যুগে সূচিত হয়। বছরের পর বছর ধরে নয়াদিল্লির বিদেশ নীতির তালিকায় পিআইসি আখ্যানের প্রতি খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়নি। প্রাকৃতিক খনিজ ও হাইড্রোকার্বনের সহজাত সম্পদ সমৃদ্ধ এই দ্বীপগুলি সুবিশাল জীববৈচিত্র্য, বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক জীবন এবং বিস্তৃত ম্যানগ্রোভের জন্য পরিচিত। উল্লেখযোগ্য ভাবে সম্পদ আহরণের আকারে এই অঞ্চলে চিনের প্রবেশ দক্ষিণ চিন সাগরে নৌবাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অধীনে বিনিয়োগ প্রতিবেশীদের অস্বস্তিতে ফেলেছে। একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসাবে ভারত ধীরে ধীরে পিআইসিগুলির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে এবং ১৯৯১ সালের পূর্ববর্তী লুক ইস্ট নীতিকে ২০১৪ সালে অ্যাক্ট ইস্ট নীতিতে পুনর্নামকরণ করেছে।

জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, ডিজিটাল স্বাস্থ্য, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস-সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য ভারত বার্ষিক ২ লক্ষ মার্কিন ডলারের অনুদানমূলক সহায়তা বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভূ-কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে এফআইপিআইসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনকে মোকাবিলা করার উপায় হিসাবে মনে করে। তাইওয়ান প্রসঙ্গে বেজিং আমেরিকার প্রভাব খর্ব করার জন্য ফেডারেটেড স্টেটস অফ মাইক্রোনেশিয়ার (এফএসএম) মতো এই দ্বীপদেশগুলির সমর্থন পেতেও আগ্রহী। মাইক্রোনেশিয়ার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডেভিড প্যানুয়েলোর প্রকাশিত সাম্প্রতিক চিঠিটি ‘ঘুষ ও গুন্ডামি’ দ্বারা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান চিনা হস্তক্ষেপের কথাই তুলে ধরেছে।

এই দু’টি দেশে একটি শক্তিশালী অভিবাসী উপস্থিতির আলোকে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দক্ষিণ-প্রশান্ত মহাসাগরে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

এখনও পর্যন্ত ফিজি এবং পিএনজি-র সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও বাকি পিআইসি-র সঙ্গে অংশীদারিত্ব ততটা জোরদার নয়। এই দু’টি দেশে একটি শক্তিশালী অভিবাসী উপস্থিতির আলোকে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দক্ষিণ-প্রশান্ত মহাসাগরে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। জনসংখ্যা এবং অঞ্চল উভয় দিক থেকেই পিএনজি হল বৃহত্তম পিআইসি, যার প্রায় ৪৬৩ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে ৭.১ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করেন। উন্নয়নমূলক সহযোগিতার জন্য দেশটির বর্তমান বাজেট বরাদ্দের অধীনে ভারত পরিকাঠামোগত অগ্রগতির উদ্দেশ্যে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান বা লাইন অব ক্রেডিটের প্রস্তাব দিয়েছে। এর পাশাপাশি দূষণহীন রূপান্তর ও জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা ইত্যাদির মতো ক্ষেত্রব্যাপী উদ্বেগগুলি এই অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

উন্নয়নমূলক কূটনীতি: পিএনজিতে ভারত

উন্নয়নমূলক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি পশ্চিম এমনকি চিনের তুলনায় ভিন্ন এবং অনন্য। বিশেষজ্ঞরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, ভারতের অংশীদারিত্বের মডেল জৈব প্রকৃতির, চিনা বা পশ্চিমের চেয়ে স্বতন্ত্র।

উন্নয়নমূলক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি পশ্চিম, এমনকি চিনের তুলনায় ভিন্ন এবং অনন্য। বিশেষজ্ঞরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, ভারতের অংশীদারিত্বের মডেল জৈব প্রকৃতির, চিনা বা পশ্চিমের চেয়ে স্বতন্ত্র। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরের উন্নয়নশীল দ্বীপগুলিকে আকৃষ্ট করতে বাধ্য। এর পাশাপাশি ভারতের বিদেশ নীতির মূল বিষয়গুলি বর্তমানে ‘উন্নয়নের জন্য কূটনীতি’ ধারণাকে কেন্দ্র করে ক্রমান্বয়ে আকার নিচ্ছে, যেমনটা বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নির্দেশ দিয়েছিলেন। বৈদেশিক নীতির এই ‘ইন্ডিয়া ওয়ে’ বা ‘ভারত পথ’ বৃহত্তর গ্লোবাল সাউথের জন্য উপযুক্ত। নয়াদিল্লিতে ২০২১ ব্রিকস অ্যাকাডেমিক ফোরামের সময় ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী অতিমারি-পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য হিসাবে ‘মানবকেন্দ্রিক বিশ্বায়ন’ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন: ‘ভারত গ্লোবাল সাউথের অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে উন্নয়নমূলক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে এমন একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা তৈরি করার প্রচেষ্টায় এক গঠনমূলক অবদানকারী। দেশটি বিশেষ করে অতিমারি চলাকালীন মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স (আইএসএ) এবং কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিডিআরআই) উদ্যোগের মাধ্যমে এবং একই সঙ্গে কূটনৈতিক পরিবেশে প্রথম প্রতিক্রিয়াকারী (ভ্যাকসিন মৈত্রীর মাধ্যমে) ও সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে কাজ করেছে।’

প্রাকৃতিক খনিজ সমৃদ্ধ এবং এশিয়ার বিভিন্ন অংশে ৮ মিলিয়ন টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানি করা সত্ত্বেও পিএনজি-র জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যের মধ্যেই বসবাস করেন। পিএনজি গণতন্ত্রের ঘাটতি, স্বল্প সম্পদহীন স্বাস্থ্য পরিষেবা, দুর্নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নারী ও মেয়েদের প্রতি হিংসা-সহ নানাবিধ সমস্যা দ্বারা জর্জরিত, যা অতিমারি-পরবর্তী বিশ্বে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নিঃসন্দেহে দেশটি সংযোগ, স্বাস্থ্য পরিষেবা, প্রযুক্তি, স্থিতিশীল কৃষি, সক্ষমতা নির্মাণ এবং প্রশিক্ষণে দক্ষিণ-চালিত অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নিরিখে ভারতের জন্য সম্ভাব্য পথ উন্মুক্ত করে দেয়। জি২০ সভাপতিত্ব ভারতকে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার পাশাপাশি এফআইপিআইসি-কে নয়াদিল্লির জন্য উদীয়মান বিশ্ব ব্যবস্থায় নিজেকে পুনরুদ্ধার করার একটি উপযুক্ত সুযোগ করে দিয়েছে। এ ছাড়াও ভারতের জন্য তার অ্যাক্ট ইস্ট নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং এটিকে অ্যাক্ট ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে রূপান্তরিত করার উপযুক্ত সময় এসেছে।


ডক্টর স্বাতী প্রভু সেন্টার ফর নিউ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির (সিএনইডি) অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.