Author : Manoj Joshi

Published on Jan 24, 2022 Updated 0 Hours ago

দেশ জুড়ে আপত্তিকর ভাবে হিন্দু ত্যাগীদের পরিচায়ক গেরুয়া পরিধান করে এক দল লোক প্রচারের আড়ালে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতা লুকিয়ে রেখে মানুষকে প্ররোচিত করে চলেছেন। গত মাসে হরিদ্বারে অনুষ্ঠিত এক ধর্মীয় সম্মেলনে একাধিক বক্তৃতার মূল সুর ছিল মুসলিমদের ‘খতম করা’ সম্বন্ধীয়। এই ঘটনাকে বিক্ষিপ্ত হিন্দুত্ব প্রচারকারী মৌলবাদীদের অন্তঃসারশূন্য বক্তৃতা বলে উপেক্ষা করা সহজ হলেও, বর্তমানে এটা আর স্পষ্ট নয় যে, এই প্ররোচনাকারীরা কি আদৌ বিক্ষিপ্ত না কি এরাই হিন্দু ধর্মের অগ্রণী অংশ?

ধর্মনিরপেক্ষতার বাতাবরণ নষ্ট হলে ভারত একটি দেশ হিসেবে ভেঙে পড়বে

শার্লক হোমসের একটি বিখ্যাত গল্পের বিষয় হল ‘এমন একটি কুকুর যে ঘেউ ঘেউ করে না’। হোমস রহস্যের সমাধান করেন এই বলে যে প্রহরী কুকুরটি খুনিকে চিনত। একই রকম ভাবে, আমরা এ দেশে বসবাসকারী মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের উপরে অসংখ্য মৌখিক ও শারীরিক আক্রমণ লক্ষ করে চলেছি। কিন্তু যারা দেশ শাসন করেন,আইনশৃংখলা রক্ষা করেন, তাঁরা কিছু দেখতে পাচ্ছেন বলে মনে হয় না। বোধহয়, শার্লক হোমসের গল্পের কুকুরের মতোই তাঁরাও আক্রমণকারীদের পরিচিত এবং উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই তাঁরা কামড়ানো দূর অস্ত, চিৎকার করারও কোনও কারণ দেখছেন না।

বিগত কয়েক বছর যাবৎ এই ছবি আস্তে আস্তে ফুটে উঠলেও বর্তমান সময়ে অবস্থা চরমে পৌঁছেছে। এ বারে খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস পালন বন্ধ করতে নির্লজ্জ ভাবে চেষ্টা চালানো হয়। কর্নাটক, অসম এবং হরিয়ানায় চার্চগুলির উপরে আক্রমণ চালিয়ে সেগুলিকে তছনছ করে দেওয়া হয়।

খ্রিস্টান জনসেবামূলক কাজ এবং বিদ্যালয়গুলির উপরে ধর্মান্তরকরণের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু দেড়শো বছর ব্রিটিশদের ‘খ্রিস্টান’ শাসনের পরেও কেন এ দেশের মাত্র ২% মানুষ এই ধর্মাবলম্বী সে বিষয়ে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

মুসলমানদের অবস্থাও শোচনীয়। তথাকথিত গো-রক্ষা গোষ্ঠীর লোকজন দ্বারা নির্যাতন এবং খুনের একাধিক ঘটনার পরে বর্তমানে মুসলমানদের নিধন করার জন্য খোলাখুলি ভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। গুরুগ্রামে মুসলমানদের শুক্রবারের নমাজ পাঠ বন্ধ করার জন্য ধারাবাহিক প্রচার চালানো হচ্ছে।

এই মুহূর্তে দেশের সর্বাধিক আধিপত্য বিশিষ্ট মতবাদ, ‘হিন্দুত্ব’, সম্পূর্ণ অশিক্ষিত না হলেও প্রকৃত ইতিহাসের এক অর্ধশিক্ষিত ধারণার উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই মুহূর্তে একটি উদ্ভট মতবাদ গড়ে তোলা হচ্ছে যে, বর্তমানে দেশের মুসলিম অধিবাসীরা ব্যক্তিগত ভাবে সেই সকল নৃশংসতার জন্য দায়ী যা আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে কোনও মুসলমান শাসক বা আক্রমণকারী দ্বারা করা। খ্রিস্টান জনসেবামূলক কাজ এবং বিদ্যালয়গুলির উপরে ধর্মান্তরকরণের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু দেড়শো বছর ব্রিটিশদের ‘খ্রিস্টান’ শাসনের পরেও কেন এ দেশের মাত্র ২% মানুষ এই ধর্মাবলম্বী সে বিষয়ে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

আরও মারাত্মক ঘটনা, এমন কিছু লোক এই ধরনের প্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যারা হিন্দু ত্যাগীদের পরিচায়ক গেরুয়া পরিধান করে তার আড়ালে হিংসায় প্ররোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি হরিদ্বারে অনুষ্ঠিত এক ধর্মীয় সম্মেলনে একাধিক বক্তৃতার মূল সুর ছিল মুসলিমদের ‘খতম করা’র প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধীয়। এই ঘটনাকে বিক্ষিপ্ত হিন্দুত্ব প্রচারকারী মৌলবাদীদের অন্তঃসারশূন্য বক্তৃতা বলে উপেক্ষা করা সহজ হলেও, বর্তমানে এটা আর স্পষ্ট নয় যে, এই প্ররোচনাকারীরা কি আদৌ বিক্ষিপ্ত না কি এরাই হিন্দু ধর্মের অগ্রণী অংশ?

এখনও পর্যন্ত হিন্দুত্বের সমর্থকেরা এই উপাদানগুলিকে ব্যবহার করছেন ভোট পাওয়ার জন্য। কিন্তু এটাই যদি চলতে থাকে তা হলে যে আমাদের চেনা ভারতবর্ষ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এক বার এ দেশের মানচিত্রের দিকে তাকান। পরিধি বরাবর তিনটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য বর্তমান: মেঘালয়, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ড। অরুণাচল প্রদেশে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ভালই। জম্মু ও কাশ্মীরে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পঞ্জাব একটি শিখ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য।

একাধিক রাজ্য এবং কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকার এখনও পর্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করে চলেছে এবং জানুয়ারি মাসে অ্যান্টি সি এ এ দাঙ্গা ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সাম্প্রদায়িক গণহিংসার ঘটনা ঘটতে দেয়নি।

পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে যদি গণহিংসা এবং জাতিভিত্তিক নৃশংসতার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, কারণ এমনটা হলে আক্রান্ত মানুষেরা তা মুখ বুজে সহ্য করবেন না। নাগোরনো-কারাবাখ, সার্বিয়া বা প্যালেস্তাইনে জাতিগত ভাবে নৃশংসতা চলানো এক কথা এবং তেমনটা ভারতে করতে চাওয়া আর এক — বিশেষ করে যে দেশে মুসলমানদের সংখ্যা ২০ কোটিরও বেশি। এবং তাঁদের উপস্থিতি দেশের প্রায় সর্বত্র। যেমনটা নাসিরুদ্দিন শাহ একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি সে রকমটা দাঁড়ালে আমরাও লড়াইয়ে নামব’। এবং বলা বাহুল্য যে, এমনটা হলে দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিন্যাস লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।

এ কথাও মনে রাখা প্রয়োজন যে কোনও বর্ষীয়ান আর এস এস বা বিজেপি নেতাই প্রকাশ্যে এমনটা করার পক্ষে সমর্থন জানাননি। একাধিক রাজ্য এবং কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকার এখনও পর্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করে চলেছে এবং জানুয়ারি মাসে অ্যান্টি সি এ এ দাঙ্গা ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সাম্প্রদায়িক গণহিংসার ঘটনা ঘটতে দেয়নি। কিন্তু পাশাপাশি তারা গণপিটুনি, ভয় দেখানো এবং নিগ্রহের মতো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে যা দেশে দোষ করেও ছাড় পেয়ে যাওয়ার মতো এক ঘৃণ্য বাতাবরণ গড়ে তুলেছে।

মন্দির নির্মাণের মাধ্যমে ধর্মীয় প্রচার নির্বাচন জেতার জন্য এক সুবিধাজনক অস্ত্র, কিন্তু তা কোনও ধর্মকর্মের নজির নয়। এই সেই হিন্দুত্ব যার মূল লক্ষ্য হল রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন এবং প্রয়োজনে তারা উত্তর-পূর্বে খ্রিস্টান দলগুলির সঙ্গে, পঞ্জাবে অকালিদের সঙ্গে এবং কাশ্মীরে পিডিপি-র সঙ্গে জোট বাঁধতেও পিছপা হয়নি।

দেশের এক ব্যাপক অংশে মুসলমান বিরোধী প্রচার হিন্দুত্ববাদীদের জন্য লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। গোধরার ঘটনাকে ব্যবহার করে গুজরাট নির্বাচনকে — যা মোদীর রাজনৈতিক কেরিয়ারের সোপান — প্রভাবিত করা হয়। তখন থেকেই মুসলমান বিরোধী প্ররোচনা এবং কার্যকলাপকে ব্যবহার করে জাতিগত বিভেদ বৃদ্ধি এবং হিন্দু ভোটের মেরুকরণ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, বিশেষত দেশের হিন্দিভাষী বিস্তৃত অঞ্চলে।

অধিকাংশ হিন্দুত্ববাদীরাই বাইরে না প্রকাশ করলেও মনে মনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের এক প্রকার দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে গণ্য করার পক্ষপাতী — যেমনটা পাকিস্তান বা সৌদি আরবে ঘটে থাকে।

অধিকাংশ হিন্দুত্ববাদীই বাইরে না প্রকাশ করলেও মনে মনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের এক প্রকার দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে গণ্য করার পক্ষপাতী — যেমনটা পাকিস্তান বা সৌদি আরবে ঘটে থাকে। কিন্তু এর জন্য যে মূল্য চোকাতে হবে, তা নিয়ে তাঁদের কোনও ধারণাই নেই। অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার দিক থেকে শীর্ষ দেশগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠতে চাওয়া কোনও দেশের পক্ষেই লক্ষ লক্ষ কু-অভিসন্ধিযুক্ত মানুষকে নিয়ে চলা সম্ভব নয় যাঁরা অবিরাম সামাজিক এবং রাজনৈতিক দুশ্চিন্তার উৎস হিসেবে কাজ করবেন।

যেমনটা গত বছর জুন মাসে একটি পিউ সমীক্ষায় উঠে এসেছে — ভারতীয় ধর্মগুলির এক অনন্য রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বর্তমান। অধিকাংশ মানুষই — হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান এবং শিখ — ভীষণ রকম ভাবে রক্ষণশীল এবং বন্ধুত্ব, বিবাহ ও বাসস্থান বিষয়ে নিজেদের গোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যেই সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাসী। কিন্তু তারা সকলেই অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার মূল ধারণায় বিশ্বাসী। সমীক্ষাটিতে দেখা গেছে যে, ধর্মান্তরকরণের সংখ্যাও খুবই কম।

ভোট রাজনীতির সুবিধা তোলার জন্য হিন্দু জাতীয়তাবাদের ব্যবহার করে শাসকদল এবং তাদের ধ্বজাধারীরা সমাজের জটিল ভারসাম্য নষ্ট করছে এবং এর ফলাফল যে কী হতে পারে, সেটি সম্পর্কে তাঁদের কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই।

এই ঘটনাপ্রবাহ এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট স্থিতিস্থাপকতার পরিচয় দিয়েছে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, ১৯৯০-এর দশকে মুসলিম মৌলবাদের জোয়ারের সময়ে ভারতীয় মুসলমানরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চরমপন্থার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হননি। কিন্তু বর্তমানে এই মানুষেরা ক্রমাগত পক্ষপাত এবং শাসানির শিকার হচ্ছেন। এই আক্রমণ তাঁরা আর কত দিন সহ্য করতে পারবেন, তা স্পষ্ট না হলেও ভারতীয় গণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তিতে ভাঙন ধরানোর ফলাফল যে মারাত্মক হবে, সে কথা বলাই বাহুল্য।


এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয় দ্য ট্রিবিউনএ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.