Author : Harsh V. Pant

Published on Apr 05, 2024 Updated 0 Hours ago
ভারতের উচিত মলদ্বীপকে চিন-ঘনিষ্ঠ হওয়ার মূল্য বুঝিয়ে দেওয়া

মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, দিল্লি-মালে সম্পর্ককে খাদের কিনারা থেকে সরিয়ে আনার কোনও অভিপ্রায়ই তাঁর নেই। প্রকৃতপক্ষে, তিনি চিসফর থেকে ফিরে আসার পর বাগাড়ম্বরমূলক সমালোচনার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করেছেন। এমনকি যখন তাঁর মন্ত্রীরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করছিলেন, তখন মুইজ্জু চিনে তাঁর পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের সময় চিনকে তাঁঘনিষ্ঠ মিত্র ও উন্নয়নমূলক অংশীদার এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পগুলিকে ‘মলদ্বীপের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। চিন থেকে ফেরত আসার পর তিনি ভারতের বিরুদ্ধে প্রচ্ছন্ন আক্রমণ করে বলেন, ‘আমরা [মালদ্বীপ] আকারে ক্ষুদ্র হতে পারিকিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, কোনও রাষ্ট্রেরই আমাদের হুমকি দেওয়ার অধিকার আছে।’ এবং তার পরে তাঁর সরকারের তরফে সর্বশেষ সাবধানবাণী শোনানো হয় যেন নয়াদিল্লি ১৫ মার্চের মধ্যে দ্বীপপুঞ্জ দেশটি থেকে নিজের সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহার করে নেয়।

 

মুইজ্জু ইন্ডিয়া আউট’ (ভারত তাড়াও) মঞ্চ ব্যবহার করে নিজের প্রচার চালিয়েছিলেন এবং চিনেসঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে ছিলেন।

 

একাধিক দিক থেকে ভেবে দেখলে এর কোনটিই আশ্চর্যজনক নয়। মুইজ্জু ইন্ডিয়া আউট’ (ভারত তাড়াও) মঞ্চ ব্যবহার করে নিজের প্রচার চালিয়েছিলেন এবং চিনেসঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে ছিলেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে মলদ্বীপের রাষ্ট্রপতিত্ব গ্রহণ করার পর তিনি ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহারের দাবি জানান। সেই সময় প্রায় ৮০ জন সৈন্য প্রাথমিক ভাবে মানবিক ও দুর্যোগ ত্রাণের পাশাপাশি দুটি উদ্ধার ও অনুসন্ধানমূলক হেলিকপ্টার, ভারতের তরফে উপহার দেওয়া একটি ডর্নিয়ার বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য সেখানে অবস্থান করছিলেন। মুইজ্জু ভারতকে লক্ষ্য করে তাঁর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন এবং ইসলামিক কট্টরপন্থীদের মধ্যে সমর্থন পেয়েছেন।

ভারতকে গুরুত্ব না দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে মুইজ্জু দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার জন্য প্রথমে তুরস্ক এবং তার পর চিন সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর সরকার ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে মলদ্বীপের সমুদ্র পরিসরের জলরাশির সমীক্ষার জন্য একটি চুক্তি পুনর্নবীকরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং গত ডিসেম্বর মাসে কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে অংশ নেয়নি, যেখানে দেশটি ভারত, শ্রীলঙ্কা মরিশাসের মতোই একটি সদস্য রাষ্ট্র।

তাঁচিন সফরের সময় দুই দেশ একটি বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে স্বাক্ষর করেছে এবং মুইজ্জু চিনকে আরও পর্যটক প্রেরণের মাধ্যমে মলদ্বীপের এক নম্বর বাজার হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার প্রচেষ্টা আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি চিনেসঙ্গে স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তাঁর প্রশাসনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। এটি এমন একটি চুক্তি, যার বাস্তবায়নে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলি অনিচ্ছুক ছিলেন। এবং এমন একটি সময়ে যখন বিশ্বের একটি বড় অংশের বিআরআই-এর প্রতি মোহভঙ্গ হচ্ছে এবং চিনের নিজস্ব অর্থনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, সেই সময় মুইজ্জু বিআরআই প্রকল্পগুলি এবং মলদ্বীপের অর্থনীতির জন্য সেগুলির গুরুত্ব সম্পর্কে গুণগান করেছেন।

 

তাঁচিন সফরের সময় দুই দেশ একটি বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে স্বাক্ষর করেছে এবং মুইজ্জু চিনকে আরও পর্যটক প্রেরণের মাধ্যমে মলদ্বীপের এক নম্বর বাজার হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার প্রচেষ্টা আহ্বান জানিয়েছেন।

 

এই সবের মধ্য দিয়েমুইজ্জুর উস্কানি সংক্রান্ত নয়াদিল্লির সরকারি প্রতিক্রিয়া থিতু হয়ে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে, দোহায় কপ২৮ ওয়ার্ল্ড ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুইজ্জুর বৈঠকে সমঝোতায় আসার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। মুইজ্জু সরকারের মন্ত্রীরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করলেও এবং সোশ্যাল মিডিয়া ভারতকে আক্রমণ করলেও ভারত মাথা ঠান্ডা রেখেছিল। এবং সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জোর দিয়েছিলেন যে, রাজনীতি হল রাজনীতি: এবং এ কথা কোনও মতেই নিশ্চিত করা যায় না যে প্রতিটি দেশে প্রতি দিন প্রত্যেকে আমাদের সমর্থন করবে বা আমাদের সঙ্গে একমত হবে।’

ভারত মহাসাগরে মলদ্বীপের কৌশলগত গুরুত্ব ভারতীয় স্বার্থের জন্য মালেকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে, যেখানে ভারত তার প্রতিবেশী প্রথম পদ্ধতির মূল সুর বজায় রেখে মলদ্বীপকে সাহায্য করতে এসেছিল। এবং দক্ষিণ এশিয়া বৃহত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমস্ত দেশের মতো এ কথাও নয়াদিল্লিতে স্বীকৃত যে, চিন বেশির ভাগ দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠবে। প্রায়শই এই দেশগুলি সুবিধে মতো নয়াদিল্লি ও বেজিংকে পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে, যাতে তারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে। চিনের বিপরীতে ভারত প্রায়শই তার বেশির ভাগ প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিসরের অংশ, যার ফলে ভারত অন্তর্নিহিত অসুবিধার সম্মুখীন হয়।

তা সত্ত্বেও যখন সঙ্কটের সময় আসে, তখন ভারতই প্রথম প্রতিক্রিয়া দেখায়। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময়ে চিন দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনকারী ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে সাহায্য প্রদান করেছে। মুইজ্জু প্রস্তাব দিয়েছেন যে, তিনি মলদ্বীপের খাদ্য আমদানি বিদেশি স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবায় বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে ভারতের উপর বাণিজ্যিক নির্ভরতা কমাতে আগ্রহী। তবে তিনি যে দেশের সঙ্গেই যুক্ত হতে চাইবেন, তাদের অনেকেই ভারতের অংশীদার। ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়ে ভারতের অংশীদারিত্বের এমন একটি অন্তর্জাবিদ্যমান, যা মুইজ্জু সহজে উপেক্ষা করতে পারবেন না।

 

মুইজ্জু প্রস্তাব দিয়েছেন যে, তিনি মলদ্বীপের খাদ্য আমদানি বিদেশি স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবায় বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে ভারতের উপর বাণিজ্যিক নির্ভরতা কমাতে আগ্রহী।

 

তবে যদি উদ্দেশ্য হয় চিনকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেওয়া, তা হলে মুইজ্জুর উদ্বেগ প্রশমিত করতে নয়াদিল্লি যা করতে পারে, তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যদি মলদ্বীপের মোট ঋণে ৩৭ শতাংশ চিনা অংশীদারিত্বের তুলনায় মাত্র ৮০ জন ভারতীয় সৈন্যকে মলদ্বীপের স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি বলে মনে করা হয়, তা হলে মলদ্বীপের জনগণকেই মুইজ্জুর অগ্রাধিকারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মুইজ্জু সরকারকে তার নিজস্ব পরিসরে ছেড়ে দেওয়া এবং দক্ষিণ এশিয়া তার বাইরের অন্যান্য দেশও চিনা সম্পৃক্ততার মূল্য সম্পর্কে যে পাঠ শিখেছে, তা বুঝতে দেওয়া ভারতের জন্য সমীচীন। মলদ্বীপ থেকে তার কিছু সৈন্য ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ভারতের কৌশলগত স্বার্থগুলি খুব বেশি প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে তা দুটি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি আস্থা - যা মুইজ্জুর কাজে ক্ষুণ্ণ হয়েছে বিদেশনীতির এই অদূরদর্শিতার জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি বলে প্রমাণিত হবে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +