Author : Sayantan Haldar

Published on Jul 18, 2025 Updated 0 Hours ago

ভারতের নতুন মহাসাগর দৃষ্টিভঙ্গি ভারত মহাসাগরে কৌশলগত ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দেয়, এবং বাণিজ্য, উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য সাগর-এর পরিধি প্রসারিত করে।

ভারতের মহাসাগর দৃষ্টিভঙ্গি: ভারত মহাসাগরে কৌশলগত ধারাবাহিকতা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৫ সালের মার্চ মাসে মরিশাসের জাতীয় দিবস উদযাপনে অতিথি হিসাবে মরিশাসে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারত মহাসাগরে ভারতের জন্য মরিশাস একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিকশিত হয়েছে। ২০১৫ সালে, প্রধানমন্ত্রী মোদী সাগর (এই অঞ্চলে সকলের জন্য নিরাপত্তা ও বৃদ্ধি) দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিলেন, যা তখন থেকে ভারত মহাসাগরের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য একটি নির্দেশক কৌশলগত কাঠামো হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের শুরুতে ভারত ও মরিশাস যৌথভাবে আগালেগা দ্বীপে একটি উন্নত বিমানঘাঁটিও তৈরি করেছিল, যা পশ্চিম ভারত মহাসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত আউটপোস্ট হিসাবে বিবেচিত হয়।


মহাসাগর-‌কে কেবল একটি আপগ্রেড হিসাবে নয়, বরং এই অঞ্চলের জন্য দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির ধারাবাহিকতা হিসাবে দেখা উচিত।



ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তার বিষয়ে ভারত ও মরিশাসের মধ্যে  ক্রমবর্ধমান সমন্বয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর মার্চ মাসে মরিশাস সফরকে এই অঞ্চলে ভারতের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর সুযোগ হিসাবে দেখা হয়েছিল। এই সফরের সময় তিনি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির —
মহাসাগর (অঞ্চল জুড়ে নিরাপত্তা ও বৃদ্ধির জন্য পারস্পরিক ও সামগ্রিক অগ্রগতি) — রূপরেখা তুলে ধরেন। তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী উন্নয়নের জন্য বাণিজ্য, স্থিতিশীল বৃদ্ধির জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং একটি ভাগ-‌করা ভবিষ্যতের জন্য পারস্পরিক সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। যদিও মহাসাগর পূর্ববর্তী সাগর দৃষ্টিভঙ্গির একটি উন্নয়ন বলে মনে হতে পারে, ভারত মহাসাগরে সাধারণ আঞ্চলিক স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ভারতের অব্যাহত প্রচেষ্টা এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিকতা প্রদর্শন করে। অন্য কথায়, মহাসাগর-‌কে কেবল একটি আপগ্রেড হিসাবে নয়, বরং এই অঞ্চলের জন্য দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির ধারাবাহিকতা হিসাবে দেখা উচিত।

ভারত মহাসাগরে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে এই অঞ্চলে একটি
শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল শৃঙ্খলা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই অঞ্চলে ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গি এই অঞ্চলের নিরাপত্তার ঐতিহ্যবাহী দিকগুলির বাইরেও অন্যান্য ক্ষেত্রে জড়িত থাকার অব্যাহত ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল বলে মনে হয়, এবং এতে ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলির উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উন্নয়নমূলক প্রয়োজনীয়তার দিকগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার এই পদ্ধতিটি ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলির সামনের চ্যালেঞ্জ এবং বাধ্যবাধকতার জটিলতাকে যথাযথভাবে ধারণ করে। যদিও এই অঞ্চলে সহযোগিতার কৌশল তৈরির জন্য নিরাপত্তা প্রকৃতপক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, আঞ্চলিক স্তরে সহযোগিতামূলক চিন্তাভাবনাও সমানভাবে  গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল বর্তমানে কোনও বড় ঐতিহ্যবাহী নৌ-সামরিক দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত। এর ফলে এই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা অ্যাজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দু অপ্রচলিত বিষয়গুলির দিকে স্থানান্তরিত হয়েছে, যার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উদ্ভূত মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর) প্রচেষ্টার একটি সম্মিলিত চিন্তাভাবনা তৈরি হয়েছে। এই এজেন্ডা প্রণয়নে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


ভারতের একটি পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদার বা প্রথম প্রতিক্রিয়া শক্তি হিসাবে অবস্থান করার লক্ষ্য হল ক্লায়েন্ট-প্যাট্রন গতিশীলতাকে দূর করা, যা নেট নিরাপত্তা 'প্রদানকারী' হিসাবে এর সম্পৃক্ততার মধ্যে স্পষ্ট হতে পারে।



তাছাড়া, ভারত মহাসাগর অঞ্চলের একটি নিরাপত্তা খেলোয়াড় হিসাবে তার পূর্ববর্তী কৌশলগত অবস্থানের বিপরীতে, যা তাকে একটি নেট নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, এখন ভারত একটি পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদার বা প্রথম প্রতিক্রিয়া শক্তি হিসাবে ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তনটি এই অঞ্চলে ভারত কীভাবে তার ভূমিকা কল্পনা করে সে সম্পর্কে সচেতন। ভারত মহাসাগর ভারত ও চিনের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান
প্রতিযোগিতারও সাক্ষী। ভারত মহাসাগরে ভারতের ভূমিকা এই অঞ্চলে তার ভৌত কেন্দ্রিকতার উপর নির্ভরশীল হলেও, চিন এই অঞ্চলে তার রাজনৈতিক প্রভাব ক্রমবর্ধমানভাবে প্রসারিত করার চেষ্টা করেছে, যদিও লেনদেনের ক্ষমতার ক্ষেত্রে। এটি স্বাভাবিকভাবেই ভারত মহাসাগরে ভারত ও চিনের অনুসরণ করা কৌশলগুলিতে প্রতিযোগিতার ইন্ধন জোগাচ্ছে। যদিও এই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের দ্বারা চিহ্নিত করা হচ্ছে, এটি লেনদেনের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল বলেও মনে হচ্ছে। অন্যদিকে, ভারত চ্যালেঞ্জের অভিন্নতা এবং একটি ভাগ করা ভবিষ্যতের উপর ভিত্তি করে এই অঞ্চলে নিজের জন্য একটি সৌম্য ভূমিকার পক্ষে কথা বলেছে। এই প্রেক্ষিতে, ভারতের একটি পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদার বা প্রথম প্রতিক্রিয়া শক্তি হিসাবে অবস্থান করার লক্ষ্য হল ক্লায়েন্ট-প্যাট্রন গতিশীলতাকে দূর করা, যা নেট নিরাপত্তা 'প্রদানকারী' হিসাবে এর সম্পৃক্ততার মধ্যে স্পষ্ট হতে পারে।

মহাসাগর দৃষ্টিভঙ্গিটি এই অঞ্চলে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ভারতের ভূমিকা আরও বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত। এটি দুটি ফ্রন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য ভারতের ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে তুলে ধরে। প্রথমত, এটি ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা স্থাপত্যকে সক্রিয়ভাবে গঠন করার জন্য ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরে, এবং দ্বিতীয়ত, এটি পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলিতে গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতের ইচ্ছা প্রদর্শন করে। অতএব, একভাবে, মহাসাগর ভারতের ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে
গ্লোবাল সাউথের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিকে একত্র করে।


ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য ভারতের সহযোগিতার ভৌগোলিক পরিধির একটি সুনির্দিষ্ট সম্প্রসারণ কার্যকর বলে মনে হচ্ছে।



তবে মহাসাগর দৃষ্টিভঙ্গি ভারত মহাসাগরে বহুমুখী সম্পৃক্ততা অনুসরণ করার ভারতের
কৌশলগত অভিপ্রায় শক্তিশালী করে কি না, তা অবশ্যই যাচাইয়ের যোগ্য। এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তিনটি মূল উদ্দেশ্য অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রথমত, এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রগুলিকে যুক্ত করার সম্ভাবনা আছে, যেমন সামুদ্রিক বাণিজ্য। দ্বিতীয়ত, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য ভারতের সহযোগিতার ভৌগোলিক পরিধির একটি সুনির্দিষ্ট সম্প্রসারণ কার্যকর বলে মনে হচ্ছে। তৃতীয়ত, এটি বৃহত্তর গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে সামুদ্রিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তাগুলিকে সংযুক্ত করার একটি প্রচেষ্টাকেও চিহ্নিত করে। তবে, ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গির ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কৌশল বিবেচনা করে, মহাসাগর এই অঞ্চলে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ভারতের প্রচেষ্টার একটি স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা বলে মনে হচ্ছে। সাগর মূলত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা সহজতর করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত কাঠামো প্রদানের চেষ্টা করেছিল। মহাসাগর আরও সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে সম্প্রসারণের এমন কৌশল তৈরি করতে চায়, যা পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলির দ্বারা চালিত এবং তার মধ্যেই প্রোথিত।



সায়ন্তন হালদার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের গবেষণা সহকারী।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.