Author : Vikrom Mathur

Published on Mar 19, 2024 Updated 0 Hours ago

দক্ষ শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ফলে পরিচ্ছন্ন শক্তির দিকে ভারতের স্থিতিশীল উত্তরণের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে

ভারতের পরিচ্ছন্ন শক্তি রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী নারী

এই নিবন্ধটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস সিরিজের অংশ



ভারতকে তার উচ্চাভিলাষী জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনের জন্য অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে লিঙ্গ ব্যবধান বন্ধ করাতে আরও বড় এবং দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। সবুজ অর্থনীতির দিকে একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত উত্তরণ বাস্তবায়িত হতে পারে নারীদের জলবায়ু কর্মকাণ্ডে, বিশেষ করে পরিচ্ছন্ন শক্তি রূপান্তরের, মূল অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নারীতে বিনিয়োগ করুন: অগ্রগতি ত্বরান্বিত করুন’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী।

জলবায়ু পরিবর্তন লিঙ্গ-নিরপেক্ষ সমস্যা নয়। এটি অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারী ও মেয়ে সহ প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলিকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে। অনুমান করা হয় যে জলবায়ু পরিবর্তন আগামী ২৫বছরে 
আরও ১৫৮ মিলিয়ন নারী ও মেয়েকে  দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে। গৃহস্থালির শক্তি, খাদ্য, জল এবং পরিচর্যার কাজের সঙ্গে জড়িত বিদ্যমান ভূমিকা ও দায়িত্বের কারণে মহিলারা প্রায়শই উচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন হন। এই ভূমিকা বিদ্যমান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিয়মের কারণে প্ররোচিত হয়।

গৃহস্থালির শক্তি, খাদ্য, জল এবং পরিচর্যার কাজের সঙ্গে জড়িত বিদ্যমান ভূমিকা ও দায়িত্বের কারণে মহিলারা প্রায়শই উচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন হন।



এতে সন্দেহ নেই যে নারীদের জন্য বিনিয়োগ এবং লিঙ্গ-ব্যবধান ‌দূর করা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। ভারতের জিডিপিতে নারী কর্মশক্তির অবদান মাত্র ১৮ শতাংশ। দক্ষ শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ফলে দেশের বৃদ্ধির হার বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

শ্রমশক্তিতে নারীদের কম প্রতিনিধিত্ব বিভিন্ন ক্ষেত্রজুড়ে বিরাজমান। উদাহরণস্বরূপ, ছাদে স্থাপিত সৌরশক্তির ক্ষেত্রে, মহিলারা ভারতে 
কর্মশক্তির মাত্র ১১ শতাংশ, যা বিশ্বব্যাপী গড় ৩২ শতাংশের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম। মহিলাদের অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রশাসনিক ও সহায়তা পরিষেবাগুলির মতো 'নারীসুলভ' পরিষেবাগুলিতে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয়, এবং প্রযুক্তিগত অবস্থানগুলিতে এখনও পুরুষদের আধিপত্য রয়েছে। ভারতে মহিলা স্নাতকের উচ্চ হার থাকা সত্ত্বেও, বেশ কিছু পদ্ধতিগত বাধা মহিলাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (স্টেম) ক্ষেত্রে কর্মজীবন অনুসরণ করতে নিরুৎসাহিত করে।


ভারতে বিশ্বের 
সর্বাধিক সংখ্যক মহিলা স্টেম স্নাতক রয়েছে, এবং প্রতি বছর এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে৷ এই অব্যবহৃত মানব পুঁজি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি ম্যাজিক বুলেট হতে পারে। যাই হোক, বাস্তবতা হল যেসব মহিলা স্টেম-এ কর্মজীবন বেছে নেন, তাঁরা তাঁদের পুরুষ সমকক্ষদের তুলনায় অনেক কম বেতন পান, এবং ধীরে ধীরে কর্মশক্তি থেকে বাদ পড়ে যান বা কর্মজীবনের পথ পরিবর্তন করেন। এটি একটি গুরুতর উদ্বেগ এবং ভারতের জলবায়ু লক্ষ্যগুলির উপর এর প্রভাব রয়েছে৷

মহিলাদের অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবেভাবে প্রশাসনিক ও সহায়তা পরিষেবাগুলির মতো 'নারীসুলভ' পরিষেবাগুলিতে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয়, এবং প্রযুক্তিগত অবস্থানগুলিতে এখনও পুরুষদের আধিপত্য রয়েছে।



যদিও নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, তবুও উল্লেখযোগ্য আইনি, কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক বাধা রয়েছে যেগুলির গুরুতর আত্মদর্শন প্রয়োজন। এই নিবন্ধটি এমন কয়েকটি পদ্ধতিগত বাধার উপর নজর দেয় যেগুলির উপর অবিলম্বে আলোকপাত করা প্রয়োজন৷


জেন্ডার স্মার্ট বা লিঙ্গ-সপ্রতিভ জলবায়ু অর্থায়নের অভাব

কপ২৭-এ 
লিঙ্গ-সপ্রতিভ জলবায়ু অর্থায়নের উপর নজর বাড়ানো হয়েছে, যা নারীদের উদ্যোক্তা, সম্প্রদায়ের নেতা, পরিবারের প্রধান এবং ভোক্তা হিসাবে ক্ষমতায়িত করার মতো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহ্বান জানায়। এই লিঙ্গ-সপ্রতিভ বিনিয়োগগুলি স্বীকার করে যে মহিলারা প্রায়শই জলবায়ু ক্রিয়াকলাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অনুঘটক ভূমিকা পালন করেন, বিশেষ করে তাঁদের ব্যবসায়, জনসম্প্রদায়ে এবং বাড়িতে অভিযোজন প্রক্রিয়া তৈরিতে। নারীদের নেতৃত্বাধীন কোম্পানিগুলির ব্যবসায়িক অনুশীলনের মধ্যে স্থিতিশীল অনুশীলন গ্রহণ করা এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর সম্ভাবনা বেশি। নারী নেতৃত্ব এবং জলবায়ু উদ্ভাবনের মধ্যে এই শক্তিশালী পারস্পরিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য।


অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, লিঙ্গ-সপ্রতিভ জলবায়ু অর্থায়নের উপর জোর দেওয়ার খুব কম প্রচেষ্টা রয়েছে। জলবায়ু ক্রিয়াকলাপে লিঙ্গের বিষয়টি একটি 'অ্যাড-অন' হিসাবে দেখা হয় এবং প্রকৃতপক্ষে মূল জলবায়ু কথোপকথনের অংশ হয়ে ওঠে না। নারী-নেতৃত্বাধীন ব্যবসাগুলি এখনও তাদের পুরুষ সহযোগীদের তুলনায় পর্যাপ্ত তহবিল পায় না। এমনকি কৃষির মতো ক্ষেত্রেও, যেখানে নারীদের একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হয়, সেখানে প্রাপ্তিযোগ্য অর্থায়ন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নারী কৃষকরা প্রায়শই পিছিয়ে থাকেন।


নারীদের নেতৃত্বাধীন কোম্পানিগুলির ব্যবসায়িক অনুশীলনের মধ্যে স্থিতিশীল অনুশীলন গ্রহণ করা এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর সম্ভাবনা বেশি। 



লিঙ্গসমতাকে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে স্বতন্ত্র একটি সমস্যা হিসাবে দেখা যায় না, এবং দেখা উচিতও নয়। লিঙ্গসমতার অগ্রগতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য প্রচেষ্টা অবশ্যই একযোগে চালাতে হবে। এটি অবশ্যই জলবায়ু বিনিয়োগে পর্যাপ্তভাবে প্রতিফলিত হতে হবে।


লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্তির জন্য অপ্রতুল মানব সম্পদ নীতি

এখন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তন নীতি এবং প্রক্রিয়াগুলিতে মহিলাদের সীমিত অংশগ্রহণের অর্থ হল জলবায়ু কর্ম পরিকল্পনা লিঙ্গ-‌সংবেদনশীল ছিল না। পরিচ্ছন্ন শক্তির ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্ব এবং ব্যবস্থাপনার ভূমিকায় নারীদের ব্যাপকভাবে কম প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) অনুযায়ী, যা জ্বালানি-সম্পর্কিত খাতে কোম্পানিগুলির বিশ্লেষণ করেছে, তা দেখায় যে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পদে মহিলাদের অনুপাত 
 ১৪ শতাংশেরও কম। সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের ভূমিকায় নারীরা না–থাকলে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নির্দিষ্ট দুর্বলতাগুলি মোকাবিলায় লক্ষ্যযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ কম। ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো ছাড়াও লিঙ্গ-‌পক্ষপাত কমানোর জন্য দক্ষ হস্তক্ষেপের মধ্যে রয়েছে বৈচিত্র্য-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতার বণ্টনে স্বচ্ছতা প্রসারিত করা।


কর্মক্ষেত্রে মানব সম্পদ নীতি এবং লিঙ্গ-‌বৈষম্যের সম্পর্কের উপর আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে জলবায়ু কথোপকথনে। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ-‌বৈষম্য মোকাবিলায় মানবসম্পদ নীতিগুলিকে আইনত বাধ্যতামূলক প্রয়োজনীয়তার বাইরে যেতে হবে। যদিও পিতামাতার ছুটি, কাজের সময় সংক্রান্ত নমনীয়তা এবং লিঙ্গ-সংবেদনশীল রিপোর্টিং প্রক্রিয়ার মতো বেশ কয়েকটি নীতি বিদ্যমান, সেগুলিতে প্রায়শই অন্তর্নিহিত লিঙ্গ–পক্ষপাত যুক্ত থাকে। এই পক্ষপাতগুলি প্রায়শই কিছু ভূমিকায় মহিলাদের ক্ষমতা সম্পর্কে ভুল ধারণার জন্ম দেয়।

পরিচর্যা কাজের জন্য স্বীকৃতির অভাব

পরিচর্যার কাজ ঘিরে সামাজিক নিয়মগুলি জলবায়ু কর্মের ক্ষেত্রে একটি প্রধান বাধা। গ্রামীণ এলাকার মহিলারা 
দিনে প্রায় ১৪ ঘণ্টা অবৈতনিক পরিচর্যার কাজে ব্যয় করেন, যা প্রকৃত কাজ হিসাবে দেখা হয় না। এটি প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা কার্যক্রমের মতো পরিচ্ছন্ন উদ্যোগের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজের জন্য যে সময় উৎসর্গ করা যেতে পারে তাকে প্রভাবিত করে। শক্তির ভোক্তা, উৎপাদক, উদ্যোক্তা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসাবে, একটি স্থিতিশীল ও পরিচ্ছন্ন শক্তি পরিবর্তনে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে মানব সম্পদ নীতি এবং লিঙ্গ বৈষম্যের মধ্যে সম্পর্কের উপর আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে জলবায়ু কথোপকথনে।



সম্ভাব্য লিঙ্গ-‌ব্যবধান মোকাবিলা করার অর্থ হল পরিচর্যা-‌কেন্দ্রিক দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক নিয়ম পরিবর্তন করা। পরিচর্যার কাজে পুরুষদের অংশগ্রহণ আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য 'পরিচর্যা হল নারীর কাজ' এই ধারণার বিরুদ্ধে লড়াই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এমন প্রমাণ রয়েছে যে পরিচ্ছন্ন শক্তি মূল্যশৃঙ্খল জুড়ে মহিলাদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি হল মূল অনুপস্থিত সংযোগ, যা এই ক্ষেত্রটিতে একটি স্থিতিশীল পরিবর্তনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তাঁরা শুধুমাত্র গৃহস্থালি ও জনসম্প্রদায়ের শক্তির চাহিদা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞানই রাখেন না, অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় তাঁরা সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন। যেহেতু পরিচ্ছন্ন শক্তি উত্তরণে বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন বাড়ছে, এটি মহিলাদের জড়িত করা এবং লিঙ্গ ব্যবধান হ্রাস করার জন্য অবৈতনিক পরিচর্যা কাজের মতো সমস্যাগুলি সমাধান করার একটি উপযুক্ত মুহূর্ত।


উপসংহারে, পরিচ্ছন্ন শক্তির দিকে ভারতের স্থিতিশীল পরিবর্তনের জন্য কর্মশক্তিতে মহিলাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতকে অবশ্যই লিঙ্গ বৈষম্যকেন্দ্রিক পদ্ধতিগত বাধাগুলি দূর করার পথে নেতৃত্ব দিতে হবে, যা স্থিতিশীল ভবিষ্যতের দিকে অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।



বিক্রম মাথুর অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.