Author : Nilanjan Ghosh

Published on Sep 26, 2025 Updated 0 Hours ago

পরিবেশের জন্য জীবনধারা, বা লাইফ (‌LiFE)‌, দায়িত্বশীল উপভোগ, পরিবেশগত সচেতনতা এবং প্রকৃতির পুনর্জন্ম ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ টেকসই জীবনযাত্রার আহ্বান জানায়।

ভারতের অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পদের প্রয়োজন

বৃদ্ধি নিয়ে মোহাবেশ বা গ্রোথ ফেটিশিজম, যা জিডিপি বৃদ্ধিকে অর্থনৈতিক অগ্রগতির চূড়ান্ত পরিমাপ হিসেবে বিবেচনা করে, তা বিশ্বব্যাপী দক্ষিণের উন্নয়ন পথকে চিহ্নিত করেছে। ভারত সহ ব্রিকস দেশগুলি এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক। একটি প্যারাডাইম হিসাবে দেখার দৃষ্টিকোণ থেকে, এই দৃষ্টিভঙ্গিকে কম করে বললেও বলতে হয় হ্রাসবাদী, যেখানে উন্নয়নের জটিল বহুমাত্রিক ধারণাটি একক সংখ্যাসূচক চলরাশিতে (‌নিউমারিকল ভেরিয়েবল)‌ হ্রাস পেয়েছে। বৃদ্ধির এই ধরনের লাগামহীন, নির্বোধ সাধনা প্রায়শই বৃদ্ধির মূল্যকে ঝাপসা করে দেয়, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত করা, বৈষম্যকে আরও গভীর করা, এবং একটি অবনতিশীল বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা।


বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য ভারতের ভৌত মূলধন সম্প্রসারণের প্রয়োজন, কারণ অতীতে এর বৃদ্ধি মূলত ব্যক্তিগত উপভোগের দ্বারা চালিত হয়েছে।



জলবায়ু পরিবর্তন মূলত একটি পরিবেশগত সমস্যা নয়, বরং একটি উন্নয়নমূলক সমস্যা। এটি লাগামহীন বৃদ্ধির পরিবেশগত এবং সামাজিক মূল্যের হিসাব কষতে পদ্ধতিগত ব্যর্থতা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এবং তবুও, কোভিড-১৯ অতিমারির পরে, গ্লোবাল সাউথের বেশিরভাগ পুনরুদ্ধার কৌশল একই পুরনো নীলনকশাকে শক্তিশালী করেছে: উচ্চ মূলধন ব্যয়, পরিকাঠামো সম্প্রসারণ এবং সম্পদ-নিবিড়  নগরায়ণ। উদাহরণস্বরূপ, অতিমারি-পূর্ব স্তরের তুলনায় অতিমারি-পরবর্তী সময়ে ২০২২-২৩ সালে ভারতের মূলধন ব্যয় ৩৫%-‌এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন নয় যে এই ধরনের সম্প্রসারণের প্রয়োজন নেই। বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য ভারতের ভৌত মূলধন সম্প্রসারণের প্রয়োজন, কারণ অতীতে এর বৃদ্ধি মূলত ব্যক্তিগত উপভোগের দ্বারা চালিত হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের বিনিয়োগ প্রায়শই প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের — বন, জলাভূমি ও তৃণভূমি — মূল্যে আসে।

এই বিরোধিতা স্পষ্ট: যদিও দেশগুলি নেট-শূন্য নির্গমনের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করে, তারা একইসঙ্গে বিশাল জমি সাফাই করে যা নির্মাণ এবং শিল্প সম্প্রসারণের জন্য কার্বন সিঙ্ক হিসাবে কাজ করে। এই ধরনের বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস সেই জলবায়ু প্রশমন প্রচেষ্টাগুলিকেই দুর্বল করে দেয় যা এই রূপান্তরগুলি সমর্থন করতে চায়।

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর হিসাবে ‘‌সবুজ রূপান্তর’‌-‌এর হ্রাসবাদী সংজ্ঞা এই সত্যটিকে উপেক্ষা করে যে জীবনযাত্রার পছন্দ, উপভোগের ধরন এবং ভূমি-ব্যবহার অনুশীলনগুলি যে কোনও জলবায়ু কৌশলের সাফল্য নির্ধারণে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সবুজ বৃদ্ধি, যা প্রায়শই অর্থনীতি ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটি জয়-জয় (‌উইন-‌উইন)‌ পরিস্থিতি হিসাবে উপস্থাপিত হয় — ধরে নেয় যে জিডিপি-‌কে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার থেকে আলাদা করা যেতে পারে। যাই হোক, ২০১৬ সালে ওয়ার্ড ও সহকর্মীদের দ্বারা করা গবেষণাগুলি নিশ্চিত করে যে এই ধরনের বিযুক্তকরণ দীর্ঘমেয়াদে অভিজ্ঞতাগতভাবে প্রমাণিত বা অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয়।


সবুজ বৃদ্ধি, যা প্রায়শই অর্থনীতি ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটি জয়-জয় (‌উইন-‌উইন)‌ পরিস্থিতি হিসাবে উপস্থাপিত হয় — ধরে নেয় যে জিডিপি-‌কে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার থেকে আলাদা করা যেতে পারে।



এই প্রেক্ষিতে, গ্লাসগোতে কপ২৬-এ লাইফ (‌LiFE) — পরিবেশের জন্য জীবনধারা — নিয়ে বিশ্বব্যাপী গণআন্দোলনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বান একটি বিকল্প উন্নয়ন পথ প্রদান করে বলে মনে হচ্ছে। এটি দায়িত্বশীল উপভোগ, পরিবেশগত সচেতনতা এবং প্রকৃতির পুনর্জন্ম ক্ষমতার স‌ঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ টেকসই জীবনধারার আহ্বান জানায়। এই প্রক্রিয়ায়, লাইফ সমস্ত স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)-‌এর সঙ্গে যুক্ত। এই পদ্ধতিটি বৃদ্ধির উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বাতিল করে না; বরং, এটি দেশ এবং ব্যক্তি উভয়কেই প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অগ্রগতির জন্য তাদের পথ পুনর্গঠন করতে বলে।

অনেকেই লাইফ-‌কে পশ্চিমী বৃদ্ধিক্ষয় (‌ডিগ্রোথ)‌ দর্শনের সাথে চিহ্নিত করবেন, যদিও এগুলি মৌলিকভাবে ভিন্ন। বৃদ্ধিক্ষয় অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ইচ্ছাকৃত মন্দার পক্ষে দাঁড়ায় এবং পরিবেশগত ভারসাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও পুনর্বণ্টনের উপর জোর দেয়। যদিও এটি প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের বিপাকীয় সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য লাইফ-এর আহ্বানের অনুরূপ, তবে বর্তমান জীবনযাত্রার পদ্ধতি থেকে পিছিয়ে যাওয়ার পক্ষে সমর্থন করার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি স্বর ও লক্ষ্য হিসাবে আরও চরমপন্থী।

বৃদ্ধিক্ষয় প্রায়শই বৈশ্বিক দক্ষিণের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে। যেসব অঞ্চলে দারিদ্র্য, অনানুষ্ঠানিকতা এবং অনুন্নয়ন অব্যাহত থাকে, সেখানে পদ্ধতিগত সুরক্ষা জাল ছাড়া বৃদ্ধিক্ষয়ের দিকে কঠিন পরিবর্তন অস্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে পারে, যেমনটি শ্রীলঙ্কায় প্রমাণিত হয়েছে। এই ধরনের প্রেক্ষাপটে, লাইফ প্রতিটি দেশ এবং জনসম্প্রদায়কে তাদের পথ নির্ধারণ করতে দেয়, যদি  তারা তাদের জীবনযাত্রাকে পরিবেশগত সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে।

তিনটি প্যারাডাইম — এসডিজি, লাইফ ও বৃদ্ধিক্ষয় — একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণার উপর একত্রিত হয়: জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষা, এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা।


লাইফ আকাঙ্ক্ষা ও পথের বৈচিত্র্যকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কম মতবাদযুক্ত কাঠামোর কথা বলে



তবে বৃদ্ধিক্ষয় ‘‌স্থিতিশীল উন্নয়ন’-‌এর‌ ধারণাটিকেই প্রত্যাখ্যান করে, এবং যুক্তি দেয় যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির যে কোনও সাধনা, এমনকি সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত হলেও, মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ থাকে। বিপরীতে, লাইফ আকাঙ্ক্ষা ও পথের বৈচিত্র্যকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কম মতবাদযুক্ত কাঠামোর কথা বলে।

তাই ভারতের চ্যালেঞ্জ হল বৃদ্ধি ও বৃদ্ধিক্ষয়ের মধ্যে একটি বেছে নেওয়া নয়, বরং এই দ্বিধাকে সম্পূর্ণভাবে অতিক্রম করা। ভারতকে এমন একটি উন্নয়নমূলক পথ নির্ধারণ করতে হবে যা ২০৪৭ সালের মধ্যে তার বিকশিত ভারত লক্ষ্য অর্জনের জন্য বৃদ্ধির প্রয়োজনকে স্বীকার করে, তবে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে নয়, যা প্রাকৃতিক মূলধনের অবক্ষয় এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের দিকে নিয়ে যায়।

অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পদের দর্শনকে আরও ‌মাইক্রো-‌স্তরে গ্রহণ করা প্রয়োজন, যার মধ্যে রয়েছে কর্পোরেট ক্ষেত্র। মূলধন চারটি রূপই স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সহ স্থিতিশীল উন্নয়নের বিভিন্ন রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত। অভিজ্ঞতাগত বিশ্লেষণ দেখায় যে ইএসজি পরামিতিগুলির সঙ্গে আরও ভালভাবে সম্মতিযুক্ত সংস্থাগুলি অন্যদের তুলনায় ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে।

ভারতের জলবায়ু অভিযোজন অর্থায়নকেও শক্তিশালী করতে হবে, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বারা মূলত উপেক্ষা করা একটি খাত। এর জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে অভিযোজন প্রকল্পগুলির জন্য একটি সঠিকভাবে প্রদর্শিত আরওআই-‌সহ অভিযোজনের জন্য একটি বাজার তৈরি করতে হবে, অভিযোজন অর্থায়নে প্রবেশের জন্য সিএসআর ব্যয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাধ্যতামূলক করতে হবে, এবং জনহিতকর অর্থায়ন ব্যবহার করতে হবে।

অন্য কথায়, ভারতের জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক উন্নয়ন স্থাপত্যের জন্য বৃদ্ধি কৌশল এবং আয় ও সামাজিক বৈষম্য কমাতে আগ্রাসী পদক্ষেপ প্রয়োজন।



এই ভাষ্যটি প্রথম
বিজনেস টুডে -‌তে প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.