-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ইউনিকর্ন মাস্ট প্রযুক্তিতে ভারত ও জাপানের অংশীদারিত্ব দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তার বিষয়ে এক যৌথ উদ্বেগের প্রতীক।
দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে, ভারত ও জাপান ২০২৪ সালের শেষের দিকে ইউনিফায়েড কমপ্লেক্স রেডিও অ্যান্টেনা (ইউনিকর্ন) মাস্টের সহ-উন্নয়নের জন্য একটি বাস্তবায়ন স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই সিদ্ধান্তটি ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং উভয় দেশের নৌ-সক্ষমতার উপর বর্ধিত মনোযোগের প্রেক্ষিতে এসেছে। এই চুক্তির কেন্দ্রে রয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক, যা নয়াদিল্লি ও টোকিওর মধ্যে আঞ্চলিক অগ্রাধিকারের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সারিবদ্ধতা তুলে ধরে। ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে এই অঞ্চলের মূল যে উদ্বেগগুলি উঠে এসেছে, সেগুলি একটি স্থিতিশীল নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা এবং নৌ-চলাচলের স্বাধীনতার জন্য একটি নিরাপদ নেটওয়ার্কের প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত।
এই চুক্তির কেন্দ্রে রয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক, যা নয়াদিল্লি ও টোকিওর মধ্যে আঞ্চলিক অগ্রাধিকারের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সারিবদ্ধতা তুলে ধরে।
মূলত উন্নত নৌ-অভিযানের জন্য তৈরি ইউনিকর্ন মাস্ট প্রযুক্তি সামুদ্রিক নজরদারিতে রাডারের নজর এড়ানোর (স্টেলথ) গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যপূরণে সহায়তা করে। এটি একটি জাহাজের ডেকের বিভিন্ন বিন্দু থেকে একাধিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অ্যান্টেনাকে একটি একক, নিবিড় কাঠামোতে সংযুক্ত করে। এই উদ্ভাবন ব্যান্ডউইডথের ব্যবহারকে ব্যাপকভাবে সর্বোত্তম পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং বিস্তৃত ফ্রিকোয়েন্সি জুড়ে নিরাপদ, উচ্চগতির যোগাযোগ সহজতর করে। এই কারণে এটি ইন্দো-প্যাসিফিকের বিতর্কিত জলে আধুনিক নৌবহরের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নোরা-৫০ নামে পরিচিত এই অ্যান্টেনাটি ভারতীয় সংস্থা ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড তৈরি করবে জাপানের ইয়োকোহামা রাবার, এনইসি কর্পোরেশন ও সাম্পা কোগিও কেকে -এর সঙ্গে মিলে। এর আগে জাপানি মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্সের মোগামি-শ্রেণীর ফ্রিগেটে এই ধরনের সমন্বিত মাস্টের প্রয়োগ দেখা গিয়েছিল, যেখানে তারা কোস্টগার্ড চলাচল, ডেটা সংগ্রহ ও স্টেলথ অপারেশনে সহায়তা করেছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, জাহাজ থেকে একাধিক অ্যান্টেনা অপসারণ করে ইউনিকর্ন মাস্ট রাডার প্রস্থচ্ছেদ (ক্রস-সেকশন) হ্রাস করে এবং স্টেলথ ক্ষমতা উন্নত করে, যা দেশগুলিকে আধুনিক নৌ-সক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়।
ভারতের জন্য, এই সহযোগিতা তার নৌ-আধুনিকীকরণ কর্মসূচিতে উন্নত জাপানি প্রযুক্তির সংহতকরণের সুযোগ করে দেয়। অন্যদিকে, জাপানের জন্য, এই অংশীদারিত্ব ভারতের সঙ্গে তার প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার একটি সুযোগ। ভারত হল তার এমন একটি কৌশলগত অংশীদার যে এই অঞ্চলে সংশোধনবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবদান রাখতে পারে। এই প্রকল্পটি জাপানের ২০২২-পরবর্তী জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলেও অন্তর্ভুক্ত, যা প্রতিরক্ষা রপ্তানি বৃদ্ধি এবং সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে স্থিতিশীল সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির উপর জোর দেয়।
কোয়াড ক্রমবর্ধমানভাবে সামুদ্রিক পরিসর সচেতনতার জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ ফর মেরিটাইম ডোমেন অ্যাওয়ারনেস-এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে সামুদ্রিক নিরাপত্তার উপর জোর দিচ্ছে, যার লক্ষ্য রিয়েল-টাইম নজরদারি এবং সামুদ্রিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা।
নয়াদিল্লির জন্য, ভারত মহাসাগর কৌশলগত গুরুত্বের প্রাথমিক থিয়েটার, যা বাণিজ্য ও জ্বালানি সরবরাহের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। একইভাবে, জাপান মালাক্কা প্রণালীর মতো ভারত মহাসাগরের বাধাস্থলগুলির মাধ্যমে জ্বালানি আমদানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ইউনিকর্ন মাস্টের সহ-উন্নয়ন উভয় দেশের নৌ-সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথগুলিকে আরও কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষণ ও সুরক্ষার সুযোগ করে দেয়। চুক্তিটি বৃহত্তর আঞ্চলিক কাঠামোর জন্যও কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। ভারত ও জাপান উভয়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চতুর্ভুজ নিরাপত্তা সংলাপের (কোয়াড) সদস্য। কোয়াড ক্রমবর্ধমানভাবে সামুদ্রিক পরিসর সচেতনতার জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ ফর মেরিটাইম ডোমেন অ্যাওয়ারনেস -এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে সামুদ্রিক নিরাপত্তার উপর জোর দিচ্ছে, যার লক্ষ্য রিয়েল-টাইম নজরদারি এবং সামুদ্রিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা। ভারতীয় ও জাপানি নৌ-প্ল্যাটফর্মে ইউনিকর্ন মাস্টের একীকরণ এই প্রচেষ্টাগুলিকে পরিপূরণ করে, কোয়াড কাঠামোর মধ্যে আন্তঃকার্যক্ষমতা উন্নত করে, এবং অবৈধ মাছ ধরা, জলদস্যুতা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
প্রযুক্তিগতভাবে, এই চুক্তিটি ইনফরমেশন ফিউশন সেন্টার ফর দ্য ইন্ডিয়ান ওশন রিজিয়ন-এ ভারতের নেতৃত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে সামুদ্রিক পরিসর সচেতনতা তথ্য ভাগ করে নেওয়ার কেন্দ্র। ইউনিকর্ন মাস্ট দ্বারা প্রদত্ত বর্ধিত যোগাযোগ এবং স্টেলথ ক্ষমতা ভারতকে আঞ্চলিক উদ্যোগগুলিতে আরও কার্যকরভাবে অবদান রাখতে সক্ষম করবে, এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে (আইওআর) একটি সুরক্ষা-প্রদানকারী হিসাবে তার ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করবে। জাপানের জন্য, এই সহযোগিতা ভারত মহাসাগরে তার নৌ-উপস্থিতিকে শক্তিশালী করবে, যেখানে এটি ঐতিহাসিকভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের তুলনায় সীমিত ভূমিকা পালন করেছে। এই বর্ধিত ভূমিকা টোকিওর একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে, এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটগুলিতে বৃহত্তর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
ইউনিকর্ন মাস্ট দ্বারা প্রদত্ত বর্ধিত যোগাযোগ এবং স্টেলথ ক্ষমতা ভারতকে আঞ্চলিক উদ্যোগগুলিতে আরও কার্যকরভাবে অবদান রাখতে সক্ষম করবে, এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে (আইওআর) একটি সুরক্ষা-প্রদানকারী হিসাবে তার ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করবে।
ইউনিকর্ন মাস্ট চুক্তির তাৎপর্য প্রযুক্তিগত একীকরণের বাইরেও বিস্তৃত: এটি বিশ্বে দ্বৈত-ব্যবহারের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সূক্ষ্ম প্রকৃতির কারণে ভারত ও জাপানের মধ্যে আস্থার গভীর স্তরকে তুলে ধরে। জাপানের ভারতের সঙ্গে এই ধরনের নৌ-প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে সহ-বিকাশের সিদ্ধান্ত একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে ভারতের প্রতি তার ক্রমবর্ধমান আস্থাকে প্রতিফলিত করে। জাপানের শান্তিবাদ ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি হস্তান্তরে সংশয়ের ইতিহাস দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের সন্ধানে একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে, জাপানের প্রতিরক্ষা অবস্থানের সাম্প্রতিক পরিবর্তন, যা প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সময় থেকে শুরু হয়ে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার অধীনে অব্যাহত ছিল, টোকিওকে উদীয়মান বিপদের বিরুদ্ধে আরও সক্রিয় অবস্থান নিতে সক্ষম করেছে। নয়াদিল্লির সঙ্গে এই সহযোগিতার মাধ্যমে, টোকিও শুধু তার প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের পরিধি বৃদ্ধি করে না, বরং ভারতের সঙ্গে তার কৌশলগত সারিবদ্ধতাকেও শক্তিশালী করে। এই ঘটনাটি জাপানের প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্রমবর্ধমান গতিশীলতাকেও তুলে ধরে। ঐতিহাসিকভাবে দেশীয় উৎপাদন ও মার্কিন-কেন্দ্রিক জোটের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে থাকা জাপান এখন অন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তার অংশীদারিত্বকে বৈচিত্র্যময় করতে শুরু করেছে। ইউনিকর্ন মাস্টের উন্নয়ন এই পরিবর্তনের উদাহরণ, যা জাপানকে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা পরিবেশ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসাবে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। এই সহযোগিতা প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বে বৈচিত্র্য আনা, রাশিয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী সরবরাহকারীদের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা, এবং জাপান ও ফ্রান্সের মতো প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশগুলির সঙ্গে জড়িত থাকার ভারতীয় কৌশলকেও কাজে লাগায়।
ইউনিকর্ন মাস্টের উন্নয়ন এই পরিবর্তনের উদাহরণ, যা জাপানকে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা পরিবেশ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসাবে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়।
ইউনিকর্ন মাস্ট চুক্তি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক ক্ষেত্র সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জরুরি প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। নিরাপদ, উচ্চগতির যোগাযোগসম্পন্ন, এবং উন্নত স্টেলথ ক্ষমতা সক্ষমকারী এই প্রযুক্তিটি নৌ-প্রস্তুতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে। এই প্রকল্পটি পারস্পরিক বিশ্বাস ও একটি দূরদর্শী কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নিয়মভিত্তিক সামুদ্রিক শৃঙ্খলার প্রতি একটি যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতীক। এটি দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি এই অঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্রের মধ্যে গভীর প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করে।
প্রত্নশ্রী বসু কলকাতার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ইন্দো-প্যাসিফিক উইথ দ্য স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রাম অ্যান্ড দ্য সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোম্যাসির একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
তৃপ্তি নেব অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন রিসার্চ ইন্টার্ন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Pratnashree Basu is an Associate Fellow, Indo-Pacific at Observer Research Foundation, Kolkata, with the Strategic Studies Programme and the Centre for New Economic Diplomacy. She ...
Read More +