Author : Ramanath Jha

Published on Oct 13, 2025 Updated 0 Hours ago

চিনের জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, এবং ভারতের জনসংখ্যা ২০৬৩ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে। উভয়ের জন্যই, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উত্তরাধিকার এখন অপরিবর্তনীয় বাস্তবতার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত।

ভারত, চিন এবং জনসংখ্যার বিপদ

১৯৫০-এর দশকে চিন এবং ভারত উভয় দেশেই জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি দেখা যায়। উভয় সরকারই জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক কল্যাণের জন্য বিপদ হিসেবে মূল্যায়ন করে অবাধ জনসংখ্যা বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য জনবিন্যাস পুনর্গঠনের চেষ্টা চালায়। তাদের নীতির প্রভাব দেশগুলির জন্য, বিশেষ করে ভারতের জন্য, কিছু শিক্ষা রাখে।

১৯৫১ সালে, চিনের জনসংখ্যা ছিল ৫৫৩.৭৫ মিলিয়ন এবং ভারতের ৩৬১.০৮ মিলিয়ন। যাই হোক, রাষ্ট্রপুঞ্জ (ইউএন) তার
বিশ্ব জনসংখ্যা সম্ভাবনা ২০২২-এ যেমন ঘোষণা করেছিল, ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ ভারতের জনসংখ্যা ১.৪২ বিলিয়নে পৌঁছেছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চিনকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ২০২২ সালে চিন তার সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ১.৪২ বিলিয়নে পৌঁছেছে, যার পর তার জনসংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করে। অন্যদিকে, ২০৬৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে জনসংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১.৬৭ বিলিয়নে পৌঁছবে। তবে, ২০৬৩ সালের পরে, ভারত যখন এই সীমায় পৌঁছে যাবে, তখন থেকে এর জনসংখ্যা পতনের পর্যায়ে প্রবেশ করবে।


১৯৫৩ সালে চিত্তাকর্ষক মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা কার্যকর করা হয়েছিল, যা উল্লেখযোগ্যভাবে মৃত্যুহার হ্রাস করেছিল, এবং ১৯৭০ সালের মধ্যে চিনে আরও ২৫ কোটি মানুষ যুক্ত হয়েছিল।



১৯৫০-এর দশকে, চিনা নেতৃত্ব তাদের জনসংখ্যাকে তাদের শক্তি হিসেবে দেখে ঘোষণা করেছিল যে “
মানুষই সকল সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান” । ১৯৫৩ সালে চিত্তাকর্ষক মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা কার্যকর করা হয়েছিল, যা উল্লেখযোগ্যভাবে মৃত্যুহার হ্রাস করেছিল, এবং ১৯৭০ সালের মধ্যে চিনে আরও ২৫০ মিলিয়ন  মানুষ যুক্ত হয়েছিল। এই দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি চিনা সরকারকে আতঙ্কিত করেছিল, কারণ এটি জনসেবাগুলির উপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করছিল। ১৯৭০-এর দশকে এটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে সাহায্য করেছিল। তবে, তাদের 'লেটার, লংগার, ফিউ' প্রচারণা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি, এবং ১৯৮২ সালের মধ্যে চিনের জনসংখ্যা ১ বিলিয়ন 1 billion  ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১৯৮২ সালে, চিন দেশে 'এক সন্তান নীতি'র বাস্তবায়ন করে, দম্পতিদের শুধুমাত্র একটি সন্তান ধারণের নির্দেশ দেয়, এবং তাদের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে পুরস্কৃত করে। একইসঙ্গে, এটি একাধিক সন্তানের দম্পতিদের উপর প্রতিটি অতিরিক্ত সন্তানের জন্য আর্থিক কর আরোপ, জোরপূর্বক গর্ভপাত ও বন্ধ্যাকরণ এবং তীব্র সামাজিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করে।

‘এক সন্তান নীতি’ — যা অত্যন্ত কঠোরতার সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়েছিল — অপ্রত্যাশিত পরিণতির দিকে চালিত করে, এবং এর ফলে চিনের জনসংখ্যায় গুরুতর
ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এর প্রজনন হার ১৯৭০ সালে ৬.১ থেকে কমে ২০২০ সালে ১.২৮ এ দাঁড়িয়েছে, যা প্রতিস্থাপন হারের অনেক নিচে। ছেলেদের প্রতি সাংস্কৃতিক অগ্রাধিকারের ফলে ব্যাপক লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়; বয়স্কদের অনুপাত তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়; তুলনামূলকভাবে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা কম বৃদ্ধি পায়, যার ফলে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং ভোক্তা বাজার সংকুচিত হয়। কর্মক্ষম জনসংখ্যার বিশাল হ্রাস, বয়স্কদের যত্নের ক্রমবর্ধমান ব্যয়, এবং চিনের অর্থনীতির উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকূল পরিণতি দেখে চিনা কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। অতএব, ২০১৩ সাল থেকে, চিন তার ‘এক সন্তান নীতি’ প্রত্যাহার করতে শুরু করে, এবং শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে এটি বন্ধ করে দেয়। ২০২২ সালের পর, প্রচুর পরিমাণে প্রণোদনা দিয়ে 'তিন সন্তান নীতি’ গৃহীত হয়। তবে, নীতিগত পরিবর্তন জনসংখ্যাগত সমস্যা দূর করতে ব্যর্থ হয়। আবাসনের দাম বেড়ে যায়  এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে চিনা জনগণ বৃহত্তর পরিবার গঠন/পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকে। কোভিড-১৯ অতিমারি এবং চিনের শূন্য-কোভিড উদ্যোগ  পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। এখন অনুমান করা হচ্ছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে চিনে ১০ কোটি মানুষ কমতে পারে, যার ফলে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১.৩ বিলিয়নে নেমে আসবে। শতাব্দীর শেষ নাগাদ, জনসংখ্যা তীব্রভাবে কমে ৭৭ কোটি ১০ লাখে নেমে আসতে পারে, যা ২১০০ সালে ভারতের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে।


কর্মক্ষম জনসংখ্যার বিশাল হ্রাস, বার্ধক্যজনিত চিকিৎসার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, এবং চিনের অর্থনীতির উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকূল পরিণতি দেখে চিনা কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।



১৯৫১ সালে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ৩৬.০৮ কোটি, যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ভারত সরকার এটিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে একটি গুরুতর বাধা হিসেবে বিবেচনা করে এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য
জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি (১৯৫২) চালু করে। ১৯৬০-এর দশকে এটি প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্প্রসারণ করে এবং প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করে। ১৯৭৪ সালের মধ্যে জন্মহার ৩.৯ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল। তবে, এই নীতিগত হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও, ১৯৭১ সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা ৫৪.৭৯ কোটিতে পৌঁছে যায়। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, ভারত সরকার জোর করে বন্ধ্যাকরণের আকারে বলপূর্বক পরিবার পরিকল্পনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে। এর ফলে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যার ফলে নীতিটি দ্রুত পরিত্যাগ করা হয়। ১৯৭০-এর দশকের পর, একটি নতুন পরিবার কল্যাণ বিভাগ চালু করা হয়, এবং তারপর আসে ২০০০ সালের জাতীয় জনসংখ্যা নীতি, যার লক্ষ্য ছিল অপূর্ণ গর্ভনিরোধক চাহিদা পূরণ করা এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে স্থিতিশীল জনসংখ্যা অর্জন করা।

যদিও ভারতের জনসংখ্যা নীতির সামগ্রিক প্রভাব উল্লেখযোগ্য ছিল, তবুও চিনের ক্ষেত্রে এর প্রভাব ততটা চরম ছিল না। ২০২৪ সালে ভারতের মোট প্রজনন হার  প্রতি মহিলা
৫.৭৩ জন্ম থেকে কমে ১.৯৬-এ দাঁড়িয়েছে। চিনের বিপরীতে, ভারতে বলপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা স্বল্পস্থায়ী ছিল। এর লিঙ্গ অনুপাত বিকৃত হয়নি এবং জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ ছিল। তবুও, অনুমান অনুসারে, ভারতের জনসংখ্যা শুধু ২০৬৩ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে এবং এর পরে তা হ্রাস পাবে। তবে, এর অনেক আগে, বয়স্ক জনসংখ্যা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে কর্মী সংখ্যা কম হবে এবং বৃহত্তর জনসংখ্যার জন্য বার্ধক্যজনিত যত্নের প্রয়োজন হবে।

উদ্ধৃত উদাহরণগুলি দেখায় যে প্রজনন পুনর্গঠন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নাও দিতে পারে এবং বাস্তবে বিপরীতমুখীও হতে পারে। এগুলি আরও প্রকাশ করে যে এই জাতীয় নীতিগুলিকে বিপরীত করা হলে তা অকার্যকর প্রমাণিত হতে পারে, কারণ বাস্তবতা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন নারীর ক্ষমতায়নের পরিপূরক হয়, তাদের বৃহত্তর শারীরিক কর্তৃত্ব প্রদান করে, এবং তাদের বৃহত্তর পরিবার গড়ে তোলার দায়িত্ব কমিয়ে আনে, যা প্রায়শই তাদের উপর অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়। বৃহত্তর পরিবার গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থকে সমর্থন করার আহ্বান অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যেমনটি সমগ্র উন্নত পশ্চিমী সমাজের পাশাপাশি জাপান ও চিনেও দেখা যায়।


অর্থনৈতিক উন্নয়ন নারীর ক্ষমতায়নের পরিপূরক হয়, তাদের বৃহত্তর শারীরিক কর্তৃত্ব প্রদান করে, এবং তাদের বৃহত্তর পরিবার গড়ে তোলার দায়িত্ব কমিয়ে আনে, যা প্রায়শই তাদের উপর অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়।



ভারতের জন্য মূল বিষয় হল, প্রজনন হার প্রতিস্থাপন স্তরের নিচে পৌঁছে যাওয়ার পর জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতাকে বিপরীত করা একটি কঠিন কাজ হবে। মানব ইতিহাসে কোনও দেশই এটি করতে
সফল হয়নি। অতএব, ভারতকে প্রথমে যা করতে হবে তা হল পরিস্থিতির অবনতি যাতে না-‌হয় তার ব্যবস্থা করা। সরকারকে অবিলম্বে দেশজুড়ে তার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগগুলি বন্ধ করে দিতে হবে। পরিবার এবং বিবাহের প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করা দরকার, এবং প্রজনন বৃদ্ধির  ও তিন সন্তানের পরিবারগুলিকে বাস্তব সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টাকে শীর্ষ সরকারি বিনিয়োগে পরিণত করা উচিত, যাতে শিশুটি ব্যয়/বোঝা হওয়ার পরিবর্তে একটি সম্পদ হয়ে ওঠে। দেশগুলি জন‌বিন্যাসকে উপেক্ষা করলে বিপদ ডেকে আনবে।



রমানাথ ঝা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিংগুইশড ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.