Image Source: Getty
২০২৩ সালে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সৌদি আরব, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে এবং চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে মোকাবিলা করতে ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট ইকনোমিক করিডোরের (আইএমইসি) প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হয়েছিল। আইএমইসি-র লক্ষ্য হল ৪৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্মিলিত জিডিপিকে একটি বিস্তৃত অবকাঠামো শৃঙ্খলের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং উচ্চ-দক্ষ বাণিজ্য পথ, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, ডিজিটাল অবকাঠামো ও উন্নত আন্তর্জাতিক যোগাযোগ শৃঙ্খলগুলিতে মনোযোগ দেওয়া। তবে সফল হওয়ার জন্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলিকে অবশ্যই তাদের বাস্তবায়ন কৌশলগুলিকে ভূ-রাজনৈতিক এবং লজিস্টিক চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে হবে।
২০২৩ সালের শেষের দিকে জি২০ সম্মেলনের সময় ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট ইকনোমিক করিডোর (আইএমইসি) প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সৌদি আরব, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই উদ্যোগটির লক্ষ্য ছিল চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) একটি কৌশলগত প্রতিক্রিয়া ও বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে তুলে ধরা।
আইএমইসি-র লক্ষ্য হল ৪৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্মিলিত জিডিপিকে একটি বিস্তৃত অবকাঠামো শৃঙ্খলের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং উচ্চ-দক্ষ বাণিজ্য পথ, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, ডিজিটাল অবকাঠামো ও উন্নত আন্তর্জাতিক যোগাযোগ শৃঙ্খলগুলিতে মনোযোগ দেওয়া।
আইএমইসি দেশগুলির সঙ্গে সংযুক্ত জিডিপি ৪৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারসম্পন্ন একটি বিস্তৃত অবকাঠামো শৃঙ্খল তৈরি করতে চায়, যার মধ্যে রয়েছে শিপিং লেন, রেলপথ, সমুদ্রের তলদেশে কেবল এবং সৌর গ্রিড। এই উদ্যোগটির বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য দক্ষতা বৃদ্ধি ও জ্বালানি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আইএমইসি বেশ কয়েকটি ভূ-রাজনৈতিক, অবকাঠামোগত এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তাই সাফল্য পেতে গেলে এই সমস্যাগুলির সমাধান অবশ্যই করতে হবে।
আইএমইসি মহান প্রতিশ্রুতি বহন করলেও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে নিশ্চিত নয়। করিডোরটি মধ্যপ্রাচ্যের মতো ভূ-রাজনৈতিক ভাবে সংবেদনশীল এলাকার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গাজার যুদ্ধ প্রকল্পের অগ্রগতি বিলম্বিত করেছে। অবকাঠামোগত বাধাও রয়েছে অর্থাৎ কিছু অংশগ্রহণকারী দেশে রেল এবং বন্দর সুবিধাগুলিতে উল্লেখযোগ্য সংস্কারের প্রয়োজন। এ ছাড়াও প্রত্যাশিত দক্ষতা লাভে বিলম্ব হতে পারে।
আন্তঃসংযুক্ত পরিবহণের উপর নির্ভরতা – অর্থাৎ রেল, সমুদ্র এবং সড়ক পরিবহণের সমন্বয় - লজিস্টিক জটিলতাও তৈরি করতে পারে। আইএমইসি-এর লক্ষ্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শিপিং সময় কমানো হলেও ৩০ শতাংশ খরচ কমানোর দাবিটি নিয়ে বিতর্ক রয়েই যায়। কারণ আইএমইসি-র সঙ্গে জড়িত আন্তঃসংযুক্ত পরিবহণের অতিরিক্ত খরচ, ট্রান্সশিপমেন্ট এবং সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার কারণে ব্যয় বাড়তে পারে। এই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও করিডোরটি তার প্রতিশ্রুত দক্ষতা বজায় রাখতে পারে কি না, তার উপর প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে।
করিডোরটি মধ্যপ্রাচ্যের মতো ভূ-রাজনৈতিক ভাবে সংবেদনশীল এলাকার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আইএমইসি চিনের বিআরআই-এর প্রত্যক্ষ বিকল্প না হলেও এটি চিনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার অংশ অবশ্যই। বিআরআই-এর বিপরীতে - যা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অবকাঠামোগত অর্থায়নের উপর ব্যাপক ভাবে মনোনিবেশ করেছে - আইএমইসি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, দূষণহীন জ্বালানি সমাধান এবং ডিজিটাল অবকাঠামোকে অগ্রাধিকার দিয়ে উচ্চ-দক্ষ বাণিজ্য পথের একটি শৃঙ্খল স্থাপন করতে চায়।
গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, বিআরআই বিনিয়োগের বিভিন্ন গতিপথও রয়েছে। কোভিড-১৯ অতিমারির উত্থানের ফলে ২০২০ সালে বিআরআই প্রকল্পে চিনা বিনিয়োগের তীব্র পতন ঘটেছে এবং ২০২৩ সালে পাওয়া তথ্য দূষণহীন জ্বালানি ও প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু স্থিতিশীল জ্বালানি সমাধান ও সংযোগের উপর আইএমইসি-এর মনোযোগ বিআরআই প্রকল্পগুলির সঙ্গে যুক্ত ঋণের ফাঁদ এড়াতে চাওয়া দেশগুলির জন্য আইএমইসি-কে একটি আকর্ষণীয় বিকল্প করে তুলতে পারে।
আইএমইসি প্রকল্পটি তার উচ্চাভিলাষী দূষণহীন জ্বালানি ও অবকাঠামো পরিকল্পনার জন্য মনোযোগ আকর্ষণ করলেও এটিকে অবশ্যই পরিবেশগত ও সামাজিক-রাজনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে। সৌর গ্রিড ও হাইড্রোজেন করিডোর বিকাশ করা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির অভিমুখে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। তবে এই বিশাল অবকাঠামো নির্মাণের পরিবেশগত দিকটিও একটি উদ্বেগের বিষয়।
করিডোরটির লক্ষ্য দূষণহীন হাইড্রোজেন বাণিজ্যকে উন্নত করা হলেও ব্যাপক পরিমাণে দূষণহীন হাইড্রোজেন উত্পাদন এবং দীর্ঘ দূরত্ব জুড়ে পরিবহণের সম্ভাব্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে এই জ্বালানি যাতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে উত্পাদন করা যায়, সে কথা তা নিশ্চিত করার জন্য ক্রমাগত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
আইএমইসি প্রকল্পটি তার উচ্চাভিলাষী দূষণহীন জ্বালানি ও অবকাঠামো পরিকল্পনার জন্য মনোযোগ আকর্ষণ করলেও এটিকে অবশ্যই পরিবেশগত ও সামাজিক-রাজনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে।
আইএমইসি-র উল্লেখযোগ্য অবদানগুলির মধ্যে অন্যতম হতে পারে সুয়েজ খালের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চোকপয়েন্টের উপর বিশ্ব অর্থনীতির নির্ভরতা হ্রাস করা। করিডোরটি একটি বিকল্প পথের প্রস্তাব করে, যা যানজট কমাতে পারে এবং ভারত ও তার অংশীদারদের জন্য বাণিজ্য স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে পারে। কিন্তু আইএমইসি একটি বিকল্প রুট প্রস্তাব করলেও সুয়েজ খালটি সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিস্থাপন করার সম্ভাবনা নেই, অন্তত পক্ষে বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণের কথা বিবেচনা করলে এমনটাই মনে হয়। আইএমইসি কিছুটা স্বস্তি দিতে পারলেও সুয়েজ খাল তার কেন্দ্রীয়তা এবং প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামোর কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণই থাকবে।
আইএমইসি একটি ২০০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ কেবল সিস্টেম অর্থাৎ ট্রান্স ইউরোপ এশিয়া সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেছে, যার লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ শৃঙ্খলগুলিকে শক্তিশালী করা। এ কথা প্রদত্ত যে, বিশ্বের ৯৫ শতাংশ যোগাযোগ সমুদ্রের তলদেশে কেবলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। তাই এই প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক ডেটা ট্রান্সমিশনের নিরাপত্তার উন্নতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
আইএমইসি-তে ভারতের সম্পৃক্ততা তার ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক দক্ষতাকে প্রতিফলিত করে। করিডোরটি ভারতকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মূল দেশগুলির সঙ্গে তার ভূ-রাজনৈতিক জোট জোরদার করার সুযোগ দেয় এবং একই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যে চিনের প্রভাব মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে। একই ভাবে, আইএমইসি-র অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সুবিধার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যাবে যে, ভারত বিশ্ব বাণিজ্য শৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে তার ভূমিকাকে সুসংহত করতে পারে।
করিডোরটি ভারতকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মূল দেশগুলির সঙ্গে তার ভূ-রাজনৈতিক জোট জোরদার করার সুযোগ দেয় এবং একই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যে চিনের প্রভাব মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে।
করিডোরটি ভারতের ডিজিটাল পাবলিক কাঠামোরও প্রচার করবে। এটি এমন একটি কাঠামো যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে এবং ডিজিটাল লেনদেনকে প্রবাহিত করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। আইএমইসি-তে ডিজিটাল পাবলিক কাঠামোকে সমন্বিত করার মাধ্যমে ভারত আন্তঃসীমান্ত ডিজিটাল বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মান স্থাপন করতে পারে।
আইএমইসি ভারতের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শৃঙ্খলে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি বাণিজ্য দক্ষতা, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং ডিজিটাল সংযোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য একটি ব্যাপক কৌশলের প্রস্তাবনা দেয়। আইএমইসি-র সফল হওয়ার জন্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলিকে অবশ্যই একটি কার্যকরী বাস্তবায়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সাযুজ্যপুর্ণ হতে হবে, যা এ হেন চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করবে। শুধুমাত্র তা করার মাধ্যমেই আইএমইসি বিশ্ব বাণিজ্য চালনা করা, জ্বালানির স্থানান্তর সুরক্ষিত করা এবং বিদ্যমান বাণিজ্য পথের একটি শক্তিশালী বিকল্প প্রস্তাব করার সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ইস্ট এশিয়া ফোরাম-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.