Published on Apr 15, 2023 Updated 0 Hours ago

পারস্য উপসাগরে চিন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এই অঞ্চলে আঞ্চলিক, মহাদেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির মধ্যে সম্পর্কের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে

ভারত, চিন এবং পারস্য উপসাগরে ঘটনাপ্রবাহ

এশিয়ায় ‘বৃহৎ শক্তির সক্রিয়তা’ ধীরে ধীরে ইন্দো-প্যাসিফিকের পূর্বে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দিকে প্রসারিত হয়েছে। অঞ্চলটির দেশগুলির সঙ্গে ভারত এবং চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও সহযোগিতা – যা বিশ্বের জ্বালানির কেন্দ্র – এই অঞ্চলে আঞ্চলিক, মহাদেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির মধ্যে সম্পর্কের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। উপসাগরীয় অঞ্চলে চিনের নতুন উদ্যোগ দেশের চিরাচরিত বৈদেশিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যা ক্রমশ নীরবে অভিযোজিত হয়েছে এবং কয়েক বছর পর ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতেও সক্ষম হয়েছে। এটি পারস্য উপসাগর জুড়ে একটি নতুন আঞ্চলিক ব্যবস্থা গঠনের সূচনার ইঙ্গিত দেয়।

২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে ইরান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’-এর পর্যায়ে প্রবেশ করলেও গত দুই দশকে এগুলি ধীরে ধীরে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রকৃত পক্ষে, উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিলেও বাস্তবে সহযোগিতার ধারাটি আগের তুলনায় আজ কম প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১৭ সালের ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে কমে ২০২২ সালে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সম্পর্কের পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে।

প্রকৃত পক্ষে, উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিলেও বাস্তবে সহযোগিতার ধারাটি আগের তুলনায় আজ কম প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

ইরান ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার স্তর উন্নত করার প্রস্তাবিত উপায়গুলির মধ্যে একটি ছিল ভারতের উদ্যোগ নেওয়া এবং ইরান ও তার দক্ষিণ প্রান্তের প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও উপস্থিতির কথা বিবেচনা করে এবং পারস্য উপসাগরের দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশটির কূটনৈতিক ক্ষমতার কারণে – উভয়েই ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহী – এটি ভারত এবং এর পশ্চিমী প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্কের নিরিখে নতুন ক্ষমতা তৈরি করতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত আইটুইউটু – ভারত, ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোষ্ঠী ও একটি ইন্দো-আব্রাহামিক জোট, এবং ভারত-মধ্যপ্রাচ্য খাদ্য করিডোর-এর মতো নতুন উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা করেছে, যার লক্ষ্য হল পারস্য উপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল পর্যন্ত এর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা। ইজরায়েলের হাইফায় বন্দর সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং মিশরের সঙ্গে সহযোগিতার সম্প্রসারণ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তার ভূমিকা বৃদ্ধিতে ভারতের আগ্রহকেই প্রদর্শন করে।

ভারতীয় বৈদেশিক নীতিনির্ধারণ ব্যবস্থা মধ্য এশিয়ার কেন্দ্রীয় জোটে ইরানের অবস্থানকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছে এবং উত্তরে (আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া, ককেশাস এবং রাশিয়া-সহ) একচেটিয়া প্রবেশাধিকারের পথ হিসেবে চাবাহার বন্দরকে কাজে লাগিয়েছে। এটি বিবেচনা করা উচিত যে ইরান আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডোরে (আইএনএসটিসি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হওয়া ছাড়াও, বহু শতাব্দী ধরে সর্বদা পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে সংযোগকারী সেতু রূপে কাজ করে এসেছে। এক দিকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে দেশটির সংযোগ এবং ইরাক ও তুর্কিয়ের সঙ্গে স্থল সংযোগ হওয়ার পাশাপাশি সিরিয়া এবং লেবাননের মতো অঞ্চলস্থিত অন্যান্য দেশের ঐতিহাসিক সংযোগ ইরানকে একটি সংযোগসূত্র হিসাবে কাজ করতে সক্ষম করেছে।

ইজরায়েলের হাইফায় বন্দর সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং মিশরের সঙ্গে সহযোগিতার সম্প্রসারণ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তার ভূমিকা বৃদ্ধিতে ভারতের আগ্রহকেই প্রদর্শন করে।

জ্বালানির লভ্যতাকে সুনিশ্চিত করতে এবং আঞ্চলিক বাজারে তার অর্থনৈতিক উপস্থিতি বজায় রাখতে চিন নিঃসন্দেহে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে তার উপস্থিতিকে সুদৃঢ় করতে চায়। এই দুটি বিষয় ছাড়াও চিন পূর্ব থেকে পশ্চিমে তার পরিবহণ পথকেও সম্প্রসারণ করতে ইচ্ছুক। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে চিনের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়েছে, যা ১৯৭০-এর দশকে রিচার্ড নিক্সনের সভাপতিত্বের অধীনে ‘যুগ্ম স্তম্ভ’-এর মার্কিন মতবাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। এ কথা এ দিকেই ইঙ্গিত দেয় যে, একটি স্থিতিশীল উপস্থিতি এবং নিরাপদে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সম্পদ, বাজার এবং পথের লভ্যতার জন্য এখনও একটি একচেটিয়া নীতি গ্রহণ করা এবং এই অঞ্চলের সমস্ত শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতামূলক ধারণার নেতৃত্ব নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। সর্বোপরি, এই বৃহৎশক্তিটি বিশ্বের উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনা স্থাপনের ভিত্তি প্রদান করার ক্ষমতা রাখে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সমসাময়িক সম্পর্কের ইতিহাস জুড়ে নয়াদিল্লি ১৯৮০-এর দশকে তাদের আট বছর দীর্ঘ যুদ্ধের সময় ইরান ও ইরাকের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি বজায় করেছে। ১৯০০ এবং ১৯৮০-এর দশকের মধ্যে ইরানের খুজেস্তান, বুশেহর এবং হরমোজগান প্রদেশ থেকে শুরু করে ১৯৭০ সাল থেকে এই অঞ্চলের দক্ষিণের দেশগুলিতে– পারস্য উপসাগরের উভয় দিকেই লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের ঐতিহাসিক উপস্থিতি পশ্চিম এশীয় সমাজের সঙ্গে ভারতীয় জনগণের সামাজিক বন্ধনকে নির্দেশ করে। সেই হিসেবে দেখতে গেলে ভারতের নতুন এবং ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তার প্রতিবেশী অঞ্চলে আরও এক বার একটি স্থিতিশীল ভূমিকা পালন করার ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.