সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত উভয়ই প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রগুলিকে বিভিন্ন হুমকির বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা নির্মাণে সহায়তা করার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। গণমাধ্যমে স্থিতিস্থাপকতা নির্মাণ করতে এবং এই অঞ্চলে ক্ষতিকারক শক্তি দ্বারা প্রচারিত ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রগুলি একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক গণমাধ্যম পরিসরে আর্থিক এবং দক্ষতাগত সীমাবদ্ধতা অনলাইনে তথ্যের দ্রুত প্রসারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার কাজটিকে কঠিন করে তোলে। ইতিমধ্যে বৃত্তি, প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও অন্যান্য আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে চিনের সহায়তা এমন প্রভাব তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যা অন্যান্য বিদেশি অংশীদারিত্বকে দুর্বল করে চিনের প্রচার এবং আখ্যানের বিস্তারকে সক্ষম করবে। এই দ্বীপদেশগুলির বহিরাগত অংশীদারদের সমর্থন প্রয়োজন, যারা গণতন্ত্রের স্তম্ভ হিসাবে গণমাধ্যমকে সমুন্নত রাখতে চায়, স্বাধীন চিন্তার অখণ্ডতা রক্ষা করতে ও বিদ্বেষপূর্ণ তথ্য সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আগ্রহী।
ইতিমধ্যে বৃত্তি, প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও অন্যান্য আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে চিনের সহায়তা এমন প্রভাব তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যা অন্যান্য বিদেশি অংশীদারিত্বকে দুর্বল করে চিনের প্রচার এবং আখ্যানের বিস্তারকে সক্ষম করবে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলিতে অবিশ্বাস্য রকমের দুর্নীতি সংক্রান্ত গুজব, রাজনৈতিক উত্থান এবং আর্থিক সুযোগগুলি তথ্য পরিসরে সম্প্রসারিত হয়েছে। বিভ্রান্তির মধ্যে এমন কিছু সাংবাদিক সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সাংবাদিকরাই স্বীকার করে নিয়েছেন, অনবধানতাবশত ভুল তথ্যের প্রচার করেছেন। এই ভুলগুলি – যা চিরাচরিত গণমাধ্যমের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করে - প্রায়শই উত্সগুলি সঠিক ভাবে পরীক্ষা করার অনভিজ্ঞতা এবং অপ্রতুল সময় থেকেই উত্থিত।
প্রথাগত গণমাধ্যমের প্রতি অবিশ্বাস মিথ্যা আখ্যানকে জোরদার করে তোলার পরিসর প্রদান করে এবং ক্ষতিকারক শক্তিদের তথ্য ও জনসংখ্যা হেরফের করার সুযোগ প্রদান করে। কিছু সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন বেশ কয়েকটি উদাহরণ উঠে এসেছে, যেখানে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি সত্যকে চাপা দিতে, গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করতে এবং অনলাইনে ভুল তথ্য প্রচার করতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ ব্যাপী গণতন্ত্র ও অংশীদারিত্বকে খর্ব করার চেষ্টা করেছে।
ইচ্ছাকৃত বা অসাবধানতাবশত ভুল তথ্য সম্প্রচারের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা বৃহত্তর আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ছোট দ্বীপদেশগুলিতে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করা যেতে পারে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে, এ হেন উদ্বেগ থাকলেও ভারতের সমৃদ্ধ গণমাধ্যমের পরিসরের মাত্রা, জটিলতা ও বৈচিত্র্য শক্তিশালী সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য নানাবিধ সুযোগ প্রদান করে। ভুল তথ্যের শনাক্তকরণ, উত্স পরীক্ষা ও জটিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে আরও প্রশিক্ষণকে স্বাগত জানানো হবে: মুষ্টিমেয় সাংবাদিকদের বিদেশ ভ্রমণের বৃত্তি বা প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করার বদলে দেশের অভ্যন্তরে স্থানীয় গণমাধ্যম-পেশাদারদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য এমনটা করা হবে।
ইচ্ছাকৃত বা অসাবধানতাবশত ভুল তথ্য সম্প্রচারের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা বৃহত্তর আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ছোট দ্বীপদেশগুলিতে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করা যেতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-এর (এবিসিআইডি) সহায়তা - যা গণমাধ্যম-পেশাদারদের সাধনী, প্রশিক্ষণ, বিনিময় ও অন্যান্য উদ্যোগের বিধানকে সম্পৃক্ত করলেও প্রধানত অস্ট্রেলীয় সরকার দ্বারা অর্থায়িত - প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অত্যন্ত মূল্যবান হলেও এবিসিআইডি-র প্রতিটি দ্বীপদেশে পৌঁছনো এবং সব উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণকে সফল করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও ক্ষমতার অভাব রয়েছে। সম্প্রতি, ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন মিডিয়া অ্যাকশন এই অঞ্চলে তাদের প্রথম অভিযানে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও আরও অংশীদারদের সম্পৃক্ত করার জন্য বিপুল পরিসর রয়েছে এবং গণমাধ্যম সংস্থাগুলির তরফে আরও সমর্থনের প্রয়োজন।
এই অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমের সম্পৃক্ততার দীর্ঘ ইতিহাস থেকে অনেক কিছুই শেখার রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সম্প্রচারের উপস্থিতির নিরিখে সাম্প্রতিক হ্রাসের প্রভাব, যা চিনের মতো অন্যান্য শক্তির জন্য পরিসর সৃষ্টি করেছে। গণমাধ্যমের সমর্থনের জন্য ভারত সমগ্র অঞ্চল জুড়ে অস্ট্রেলিয়ার গভীর সংযোগের সুবিধা নিতে পারে।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম-পেশাদারদের অস্ট্রেলীয় এবং ভারত সরকার দ্বারা অর্থায়ন করা জরুরি, যাতে তারা প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশগুলির গণমাধ্যম-পেশাদারদের শৃঙ্খল তৈরি করার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উপায়ে গণমাধ্যম শিল্পের চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত মতামত এবং অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান করতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরের অনেক অংশে এটিকে ‘তালানোয়া’ (যার অর্থ ‘কথা’ বা ‘আলাপ-আলোচনা’) হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
এই শৃঙ্খলগুলির মাধ্যমে সাংবাদিক এবং অন্য গণমাধ্যম-পেশাদাররা নিজেদের আখ্যান ভাগ করে নিতে এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। যে আউটলেটগুলি বৃহত্তর বৈচিত্র্য ও লিঙ্গ সমতার প্রচার করে, - যেমন শুধু মাত্র নারী দ্বারা পরিচালিত খবর লহরিয়া অনলাইন নেটওয়ার্ক – তাদেরও এ হেন আদান-প্রদানগুলিতে অংশ নেওয়া উচিত। এই ধরনের পদক্ষেপ গণমাধ্যমে নারীর প্রতিনিধিত্বকে শক্তিশালী করার বিদ্যমান প্রচেষ্টার উপর ভিত্তি করে গ্রহণ করা যেতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া ও ভারতও দ্বীপদেশগুলিকে অনলাইন গণমাধ্যম থেকে আসা আয়ের নিরিখে বৃহৎ আশা প্রদান করতে পারে। বেশ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম জুড়ে অস্ট্রেলীয় গ্রাহক বেসের আকার নিউজ মিডিয়া বার্গেনিং কোডের মাধ্যমে চিরাচরিত মিডিয়া আউটলেটগুলির জন্য মেটা ও গুগলের মতো সংস্থাগুলি থেকে প্রাপ্ত সোশ্যাল মিডিয়ার আয়ের একটি অংশ নিয়ে দর কষাকষি করার সুযোগ প্রদান করে এবং এটি এমন এক ধারণা, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। রাজস্ব সুরক্ষিত করার জন্য একটি আঞ্চলিক পদ্ধতির বিকাশে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ ফোরামের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া উচিত। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীদের দেশ ভারত এ বিষয়ে সুনিশ্চিত করতে পারে, যাতে ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশগুলিও পিছিয়ে না পড়ে।
যে আউটলেটগুলি বৃহত্তর বৈচিত্র্য ও লিঙ্গ সমতার প্রচার করে, - যেমন শুধু মাত্র নারী দ্বারা পরিচালিত খবর লাহরিয়া অনলাইন নেটওয়ার্ক – তাদেরও এ হেন আদান-প্রদানগুলিতে অংশ নেওয়া উচিত।
গণমাধ্যম সংক্রান্ত উন্নয়নে সহায়তা করার পাশাপাশি গুজব মোকাবিলার ক্ষেত্রে অনলাইন প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে, যার জন্য রাজনৈতিক স্তরে সহযোগিতা প্রয়োজন। অনলাইন প্রতারণার পদ্ধতিগুলি দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে এবং টেক্সট ও ডিপ-ফেক ইমেজারি তৈরির জন্য এআই-এর ব্যবহার করে। যে সব দ্বীপরাষ্ট্রে এখনও ইন্টারনেট সংযোগের প্রক্রিয়া চলছে, সে দেশের মানুষদের মধ্যে প্রতারণার স্তরটি শনাক্ত করার কাজ কঠিন হবে।
চিনের মতো ক্ষতিকারক শক্তিগুলিকে বিচ্ছিন্ন ভাবে গুজব ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। মিশ্র হুমকিগুলি ইন্দো-প্যাসিফিকব্যাপী সরকারগুলিকে আক্রমণ ও দুর্বল করার লক্ষ্যে ঘটে থাকে। অর্থনৈতিক কড়াকড়ি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, বেআইনি মৎস্যশিকার এবং সাইবার আক্রমণের ঘটনাগুলি এই অঞ্চল জুড়ে সংঘটিত হচ্ছে। রাষ্ট্র এবং অ-রাষ্ট্রীয় উভয় পক্ষ দ্বারা সূচিত এই আক্রমণগুলির বিরুদ্ধে একটি সুসমন্বিত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন।
অন্য গবেষকরা একটি ইন্দো-প্যাসিফিক হাইব্রিড থ্রেট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব করেছেন, যেটি আঞ্চলিক সরকার, ব্যবসা এবং সুশীল সমাজকে এই অঞ্চলে ঝুঁকির পরিসর সম্পর্কে ধারণা করতে, স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে এবং ক্ষতিকারক কার্যকলাপের মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত এই হুমকি মোকাবিলায় একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান করতে পারে। অস্ট্রেলিয়া দ্বারা সমর্থিত প্যাসিফিক ফিউশন সেন্টারের মতো বিদ্যমান কাঠামোর সঙ্গে তা সহযোগিতা করতে পারে।
গুজবের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শুধু ভুল তথ্য শনাক্ত করাই জরুরি নয়। এমনটা করার জন্য সমমনস্ক অংশীদারদের মধ্যে এই বিষয়গুলি নিয়ে বোঝাপড়া থাকা জরুরি যে, কী ভাবে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হেরফের ও হস্তক্ষেপ করার জন্য গুজবের ব্যবহার করা হয়, সরাসরি বা অন্যান্য মিশ্র হুমকি কার্যকলাপের সঙ্গে তা কী ভাবে সমাপতিত হয় এবং কী ভাবে এই দেশগুলি এবং অন্যরা এর গুজবের দরুন ঝুঁকির মুখে পড়ে। আর্থিক স্বাধীনতার মাধ্যমে স্থিতিস্থাপকতা নির্মাণ ও ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠস্বরকে জোরদার করার মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলির বৃহত্তম অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার বিষয়টি শুরু করা উচিত।
এই নিবন্ধটি ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স-এর সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট’স ডিফেন্স প্রোগ্রাম-এর আওতায় লেখা হয়েছে। এই নিবন্ধে প্রকাশিত সমস্ত মতামত একান্তই লেখকের।
লেখক ‘কলকাতা ডায়লগ: অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড ইন্ডিয়া ওয়ার্কিং টুগেদার টু বিল্ড আইল্যান্ড স্টেট রেজিলিয়েন্স’-এ গুজব ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।
ব্লেক জনসন অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট-এর সাইবার, টেকনোলজি অ্যান্ড সিকিউরিটি গ্রুপের সিনিয়র অ্যানালিস্ট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.