Published on Feb 16, 2024 Updated 0 Hours ago

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অন্তর্বর্তী বাজেট ২০২৪ ভাল সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংখ্যা উপস্থাপন করে, এবং সেইসঙ্গে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা

আমি ফিরে আসব! অন্তর্বর্তী বাজেট ২০২৪ এবং তার বার্তা

নতুন কোনও কর নেই। কোনও রিবেট নেই। কোনও ডিডাকশন বা ছাড় নেই। কোনও মেগা প্রাক–নির্বাচনী সুবিধার ঘোষণা নেই, ভোট আদায়ের কোনও বড় পরিকল্পনাও নেই। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ষষ্ঠ বাজেট ছিল গত দশকের ঠান্ডা পুনর্বর্ণনা এবং ভবিষ্যতের পথের একটি উষ্ণ ঝলক। তবে, সর্বোপরি, এবং বিভিন্ন উপায়ে, এটি একটি রাজনৈতিক বক্তব্যকে তুলে ধরেছে: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার ২০২৪ সালে ফিরে আসবে।

সকালে প্রাক ১১টা স্লটে টিভি স্টুডিওগুলিতে যা ছিল হালকা আড্ডার বিষয়, তা কিছুক্ষণ পরেই বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। তাঁর ৫,২৫৭ শব্দের ৯৭ অনুচ্ছেদের বক্তৃতার চার–পঞ্চমাংশের কিছু বেশি পড়া হয়ে যাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী সীতারামন বলেন, “জুলাই মাসে পূর্ণ বাজেটে, আমাদের সরকার আমাদের ‘বিকশিত ভারত’–এর জন্য একটি বিশদ রোডম্যাপ উপস্থাপন করবে।” এর আগে
মোদীও একই কথা বলেছিলেন:  : ‘‌‘‌...নতুন সরকার গঠিত হলে আমরা একটি পূর্ণ বাজেট আনব।’‌’‌ অর্থনৈতিক বক্তব্য পেশের সময় এর রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাস দ্ব্যর্থহীন।


তাঁর ৫,২৫৭ শব্দের ৯৭ অনুচ্ছেদের বক্তৃতার চার–পঞ্চমাংশের কিছু বেশি পড়া হয়ে যাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী সীতারামন বলেন, “জুলাই মাসে পূর্ণ বাজেটে, আমাদের সরকার আমাদের ‘বিকশিত ভারত’–এর জন্য একটি বিশদ রোডম্যাপ উপস্থাপন করবে।”

যে সরকার তার নয় বছর আট মাসের শাসনকালে অনেক কিছু করেছে, এবং আপনি যার বিরুদ্ধে কম কথা বলার অভিযোগ করতে পারবেন না, সেই সরকারের এই অন্তর্বর্তী বাজেট বক্তৃতাটি আশ্চর্যজনকভাবে সংক্ষিপ্ত ছিল, যা একে পঞ্চম দীর্ঘতম স্থানে রেখেছে। এর স্থান হয়েছে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিংয়ের ফেব্রুয়ারি ২০০৪–এর ৫,০৪৪ শব্দের ভাষণ এবং তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬–এর ৬,০০২ শব্দের ভাষণের মাঝখানে।

কিন্তু যে সংখ্যাগুলি একটি অন্তর্বর্তী বাজেটকে — একটি দলিল যেখানে সরকারি অর্থায়ন বিবৃত হয় — প্রকৃত অর্থে সংজ্ঞায়িত করে, এখানে তার সংখ্যা চার। প্রথমত, ২০২৪–২৫-এর জন্য বাজেট করা কর্পোরেট কর ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১০ লক্ষ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে এবং বাজেটের ১৭ শতাংশ হয়েছে, যা ২০২১–২২ সালে ছিল ১৩ শতাংশ এবং পরবর্তী দুই বছরের প্রতিটিতে ১৫ শতাংশ। আরও ভাল, বাজেট ২০২৪–এ আয়কর প্রাপ্তি ১৩ শতাংশ বেড়েছে, এবং ১১.৬ লক্ষ কোটি টাকা–সহ এটি বাজেটের ১৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের থেকে একটি বড় ৪ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি। একত্রে এই দুটি গত বছরের ৩০ শতাংশের তুলনায় ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, এবং এই দুটি সংখ্যা দেখায় কীভাবে ২০২৪ সালের বাজেটে প্রত্যক্ষ করের অংশ বাড়ছে। তৃতীয়ত, পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) থেকে রাজস্ব উন্নীত হয়েছে বাজেটের ১৮ শতাংশে — ১০ লক্ষ কোটি টাকায়।

একত্রে এই তিনটির ভাগ — কর্পোরেট কর, আয় কর ও জিএসটি — ৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। কিন্তু, তা হলে কী কমেছে? ঋণ। বাজেটের ৩৪ শতাংশ থেকে সরকারি ঋণ ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকার এই নিম্নগামী অভিমুখ সরকারি ঋণের কারণে মূল্যস্ফীতির উপর যে চাপ পড়ে তা কমিয়ে দেবে। এর প্রভাব ইতিবাচক। বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রত্যাশার সঙ্গে ঋণের এই হ্রাসের ঘটনাকে যুক্ত করুন, তাহলে যা থাকে তা হল পরবর্তী দুই ত্রৈমাসিকের মধ্যে হ্রাসকৃত মূল্যস্ফীতির হারের পরে একটি নিম্ন সুদের হার।

আরও, রাজস্ব ঘাটতি নিম্নমুখী পথে রয়েছে। অর্থমন্ত্রী সীতারামন ২০২২ সালের বাজেটে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তা ৪.৫ শতাংশের দিকে যাচ্ছে। এটি ২০২৪ সালের বাজেটে ৫.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৩ সালের বাজেটের ৫.৮ শতাংশ থেকে কম, এবং প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকা কমেছে৷ একইভাবে, রাজস্ব ঘাটতি ২ শতাংশে নেমে এসেছে, অর্থাৎ উল্লেখযোগ্যভাবে ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে — ৮.৪ লক্ষ কোটি ভারতীয় রুপি থেকে ৬.৫ লক্ষ কোটি ভারতীয় রুপি৷


বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রত্যাশার সঙ্গে ঋণের এই হ্রাসের ঘটনাকে যুক্ত করুন, তাহলে তারপর যা থাকে তা হল পরবর্তী দুই ত্রৈমাসিকের মধ্যে হ্রাসকৃত মূল্যস্ফীতির হারের পরে একটি নিম্ন সুদের হার।

২০২৩ সালের বাজেটে অর্থমন্ত্রী সীতারামন মূলধন বিনিয়োগের জন্য ১০ লক্ষ কোটি টাকা বাজেট করেছিলেন, যা ২০১৯–২০–র তুলনায় তিনগুণ ছিল। ২০২৪ সালের বাজেটেও তিনি অ্যাকসিলেরেটর থেকে পা তোলেননি। মূলধন ব্যয়ের জন্য ব্যয় ১১.১ শতাংশ বাড়িয়ে ১১,১১,১১১ কোটি ভারতীয় রুপি (জিডিপির ৩.৪ শতাংশ) করা হয়েছে, যা ফিনল্যান্ডের অর্থনীতির প্রায় অর্ধেক। অতীতের মতো, এটি ভারতের বৃদ্ধির গল্পকে চালিত করবে ও বড় করে তুলবে।



২০২৪ সালের বাজেট এবং নির্বাচনের চারটি স্তম্ভ

কিন্তু ভাল অর্থনীতির গল্প সবসময় ভাল রাজনৈতিক গল্পে রূপান্তরিত হয় না। ক্ষমতা ধরে রাখতে ভোটারদের বারবার বোঝাতে হবে। এইভাবে, গরিব, মহিলা, যুব ও অন্নদাতা (কৃষক) হল বাজেট ২০২৪ এবং নির্বাচন ২০২৪–এর চারটি স্তম্ভ।
দরিদ্রদের জন্য রয়েছে ৩৪ লক্ষ কোটি ভারতীয় রুপির সরাসরি সুবিধা স্থানান্তর (যা সুইজারল্যান্ডের জিডিপির চেয়ে বেশি)। মহিলাদের জন্য ৩০০ মিলিয়ন মুদ্রা যোজনা ঋণ, স্টেম কোর্সে ৪৩ শতাংশ মহিলা অন্তর্ভুক্তি–সহ উচ্চ শিক্ষায় উচ্চতর মহিলা তালিকাভুক্তি, মহিলাদের জন্য লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার এক–তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে গ্রামীণ এলাকায় ৭০ শতাংশ ঘর একক বা যৌথ মালিকানায় নারীদের দেওয়া হচ্ছে।

তরুণদের জন্য, জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ চালু হয়েছে, ১৪ মিলিয়ন তরুণ প্রশিক্ষিত হয়েছে, বেশ কয়েকটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে, এবং ২২ লাখ কোটি টাকার (আয়ারল্যান্ডের জিডিপির চেয়ে বেশি) ৪৩০ মিলিয়ন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকদের জন্য ৪০ মিলিয়ন কৃষকের শস্য বিমা হয়েছে, এবং ইলেকট্রনিক ন্যাশনাল এগ্রিকালচার মার্কেট ১,৩৬১টি মন্ডিকে একীভূত করে ১৮ মিলিয়ন কৃষককে পরিষেবা প্রদান করেছে।


তরুণদের জন্য, জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ চালু হয়েছে, ১৪ মিলিয়ন তরুণ প্রশিক্ষিত হয়েছে, বেশ কয়েকটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে, এবং ২২ লাখ কোটি টাকার (আয়ারল্যান্ডের জিডিপির চেয়ে বেশি) ৪৩০ মিলিয়ন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। 

অর্থমন্ত্রী সীতারামন আগের ইউপিএ সরকারের কথা বলে ভোটারদের জন্য কিছু সরাসরি বার্তা দিয়েছেন। তিনি ২০১৪ সালে তাঁদের ক্ষমতায় আসা থেকে ‘অর্থনীতিকে ধাপে ধাপে মেরামত করার দায়িত্ব’‌ সম্পর্কে কথা বলেন। তা অতিক্রম করার পর, ‘‌‘‌আমরা তখন ২০১৪ সাল পর্যন্ত কোথায় ছিলাম, এবং এখন কোথায় আছি তা দেখার জন্য এখনই উপযুক্ত সময়, শুধু সেই বছরগুলির অব্যবস্থাপনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার উদ্দেশ্যে। সরকার হাউসের টেবিলে একটি শ্বেতপত্র রাখবে।” এই সময়ের মধ্যে ভারত যেহেতু ‘ভঙ্গুর পাঁচ’‌ তালিকা থেকে শীর্ষ পাঁচের তালিকায় এবং ইউপিএ থেকে এনডিএ–তে স্থানান্তরিত হয়েছে, তাই শ্বেতপত্রটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দুটোই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জীবনযাপন ও ব্যবসা করার স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট ২০২৪–এ ২০১০ আর্থিক বছর পর্যন্ত ২৫,০০০ ভারতীয় রুপি এবং ২০১১ থেকে ২০১৫ আর্থিক বছরের জন্য ১০,০০০ ভারতীয় রুপি পর্যন্ত সমস্ত বকেয়া প্রত্যক্ষ করের দাবি প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ পরিমাণটি খুব বেশি নাও হতে পারে, তবে এই ‘‌‘‌ক্ষুদ্র, অ–যাচাইকৃত, অমীমাংসিত বা বিতর্কিত প্রত্যক্ষ করের দাবিগুলির থেকে মুক্তি ব্যবসা ও ব্যক্তিদের উপর চাপ কমিয়ে দেবে, যার মধ্যে অনেকগুলির শুরু সেই ১৯৬২ সালে, কিন্তু সেগুলি কাগজে–কলমে থেকে গিয়েছে।’‌’‌ এটি একটি আত্মবিশ্বাস–উদ্রেককারী পদক্ষেপ।

অবশেষে, অমৃত কালের মাধ্যমে একটি বিকশিত ভারতের কল্পনা, যখন ভারত একটি উন্নত অর্থনীতি হবে, একটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক স্লোগান হিসাবে স্থান পেয়েছে। সীতারামন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর ‘‌জয় জওয়ান জয় কিষাণ’‌ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর ‘‌জয় জওয়ান জয় কিষাণ জয় বিজ্ঞান’‌–কে প্রধানমন্ত্রী মোদী “আরও প্রসারিত করে করেছেন ‘‌জয় জওয়ান জয় কিষাণ জয় বিজ্ঞান ও জয় অনুসন্ধান’‌, যেহেতু উদ্ভাবনই উন্নয়নের ভিত্তি।"


অমৃত কালের মাধ্যমে একটি বিকশিত ভারতের কল্পনা, যখন ভারত একটি উন্নত অর্থনীতি হবে, একটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক স্লোগান হিসাবে স্থান পেয়েছে।

স্লোগান ও সংখ্যার বাইরে তাকালে, সীতারামনের বাজেট ২০২৪ ভারতের রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে কোনও গর্জনরত লাউডস্পিকার নয়। এটি ইয়ারপডের একটি মৃদু সেট, যা ভোটারদের অর্থনৈতিক অতীতের ভারসাম্যপূর্ণ পুনর্বর্ণনা দেয় এবং একটি আত্মবিশ্বাসী রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে শক্তি জোগায়। অন্য কথায়, এটি এমন একটি বাজেট যেখানে মোদী সরকার বলছে: ‘‌‘‌আমি ফিরে আসব!’‌’‌



গৌতম চিকারমানে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.