Author : Dhaval Desai

Published on Aug 29, 2025 Updated 0 Hours ago

বেঙ্গালুরুতে একটি প্রতিরোধযোগ্য ট্র্যাজেডি ভারতের দীর্ঘস্থায়ী ভিড় ব্যবস্থাপনার ফাঁকগুলিকে তুলে ধরেছে — আরও কতজন মারা গেলে নিরাপত্তাকে ভাগ্যের উপর না ছেড়ে নীতি হিসাবে গ্রহণ করা হবে?

মানব প্রবাহ, পদ্ধতিগত ত্রুটি: ভারতে গণসমাবেশে নিরাপত্তা পুনর্বিবেচনা

৫ জুন ২০২৫ তারিখে, বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরের রাস্তাগুলি উল্লাসে মেতে ওঠে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) ফ্র্যাঞ্চাইজি তাদের দলের প্রথম ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) জয়  উদযাপনের বিশাল পরিকল্পনা করেছিল। ৩৫,০০০ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামের প্রতিটি আসন দ্রুত পূর্ণ হয়ে যায় এবং প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা মানুষে ভরে যায়। বাইরে, ভিড় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ব্যারিকেডগুলি ভেঙে যায়। এরপর স্ট্যাম্পিড (‌আকস্মিক হুড়োহুড়ি ও পদদলিত হওয়া)‌-‌এর ঘটনায় এগারো জন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কিশোর বয়সী ছিলেন, মারা যান। আবারও, এই ঘটনার পরিণতিতে, ভারতের ভিড় ব্যবস্থাপনার মারাত্মক ফাটলগুলি উন্মোচিত হয়েছে।

এই নিবন্ধটি বেঙ্গালুরুর আকস্মিক হুড়োহুড়ি ও পদদলিত হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ বা প্রশাসনিক ব্যর্থতা মূল্যায়ন করার উদ্দেশ্যে নয় —
চলতি তদন্ত সেগুলি আবিষ্কার করবে। পরিবর্তে, এটি অতীতে এই জাতীয় অসংখ্য ঘটনায় প্রশাসন, প্রশাসনিক এবং নির্বাহী ব্যর্থতা বিশ্লেষণ করার জন্য, এবং এই জাতীয় ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য কার্যকর উপায়গুলি সনাক্ত করতে এই ট্র্যাজেডিকে এখানে একটি দৃষ্টিকোণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে, বিশ্বব্যাপী আকস্মিক হুড়োহুড়ির কারণে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটেছে।
সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছরের আগস্টে ইয়েমেনের সানায় একটি দাতব্য অনুষ্ঠানে ৮৫ জন মারা গিয়েছেন; ২০১৫ সালে হজে ২,৩০০ জন মারা যান — যা এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা; ২০২২ সালে সিওলে হ্যালোউইন উদযাপনের সময় ১৫৯ জন মারা যান, এবং ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার মালাংয়ে ফুটবলের গুন্ডামিকে কেন্দ্র করে পদদলিত হয়ে ১৩৫ জন প্রাণ হারান।

তবে, আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ভারতজুড়ে আকস্মিক হুড়োহুড়ি ও পদদলিত হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে ঘটে। গত ২০ বছরে, ভারতজুড়ে ১৮টি ঘটনায় পদদলিত হয়ে
১,২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের শহরগুলিতে এই ধরনের একাধিক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনার পরেই ঘটে একের পর এক ধাক্কা, শোক, রাজনৈতিকভাবে বলির পাঁঠা বানানো, এক ধরনের তদন্ত এবং শেষ পর্যন্ত নীরবতা।

বারবার আকস্মিক হুড়োহুড়ি বিশৃঙ্খলার কারণ

যে কোনও জায়গায় জমায়েত অনিয়ন্ত্রিত বিশৃঙ্খলার ঝুঁকিতে থাকে, যা তাদেরকে হুড়োহুড়ি ও পদদলিত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে। তবে, পরিকল্পনা ও শিক্ষার অভাব এবং পদক্ষেপ করতে ব্যর্থতা এই দুর্বলতাগুলিকে ট্র্যাজেডিতে রূপান্তরিত করে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ)
ভিড় ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা ব্যতীত, ভারতের কোনও রাজ্য বা শহরেরই বৃহৎ জনসমাগমের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও পরিচালনার জন্য একটি অভিন্ন প্রোটোকল নেই। উপরন্তু, এনডিএমএ এবং রাজ্য ও জেলা পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ হল নীতি নির্ধারণকারী ও সমন্বয়কারী সংস্থা। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়, যা কয়েক দিন বা সপ্তাহ ধরে অঞ্চলগুলিকে ধ্বংস করে দেয়, তাদের পরিষেবা অপরিহার্য। তবে কয়েক মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ভিড়ের কারণে পদদলনের ক্ষেত্রে তারা উপযুক্ত নাও হতে পারে। ফলস্বরূপ, ভিড় ব্যবস্থাপনার বোঝা  সাধারণত অতিরিক্ত চাপযুক্ত পুলিশ বাহিনী এবং নাগরিক কর্মকর্তাদের উপর পড়ে — যাদের অনেকেরই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।

বেশিরভাগ আকস্মিক হুড়োহুড়ি ও পদদলিত হওয়ার ঘটনা দুর্বল ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং জনতার আগমন সম্পর্কে আগাম ধারণা না করতে পারার ফলাফল। উদাহরণস্বরূপ, ৪ জুন ২০২৫ সালের আগের রাতে বেঙ্গালুরুর রাস্তায় বন্য উদযাপন স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল যে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি ভিড় জমে যাবে। তবুও, প্রবেশের কোনও সীমা ছিল না, কোনও প্রাক-নিবন্ধন ছিল না, এবং  পরিস্থিতি/ঘটনাটি যদি অস্থির হয়ে ওঠে তবে তা নিয়ন্ত্রণ করার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই, লক্ষ লক্ষ অনুরাগী প্রবেশের জন্য ধাক্কাধাক্কি  করেছিলেন।

একইভাবে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে
হাতরাসে হুড়োহুড়িজনিত দুর্ঘটনার সময় — যেখানে ১২০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু — হাজার হাজার মানুষ সংকীর্ণ, অনিয়ন্ত্রিত পথ দিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন, যার ফলে শ্বাসরোধের সৃষ্টি হয়। আয়োজকদের কাছে মাত্র ৮০,০০০ জন উপস্থিত থাকার অনুমতি ছিল, তবুও ২৫০,০০০ জনেরও বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিল।

সংকীর্ণ প্রস্থান, অনুপস্থিত সাইনবোর্ড এবং জনতার প্রবাহের মডেলিংয়ের অভাব এই ধরনের স্থানগুলিতে জমায়েতের ক্ষেত্রে সাধারণ ঘটনা — খোলা আকাশের নিচে হোক বা ঘেরা — এবং তার পরিণতিতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই স্থানগুলি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়।

বিশ্বব্যাপী স্টেডিয়াম এবং অন্য বৃহৎ স্থানগুলি ভিড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং তাদের ঘনত্ব ট্র্যাক করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করলেও, ভারতের কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে মানুষের তদারকির উপর নির্ভর করে। উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও — এমনকি ভারতের অভ্যন্তরেও, যেমন
মুম্বইতে গণপতি বিসর্জনের সময় এবং দিল্লিতে উচ্চ-নিরাপত্তায় প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের সময় ড্রোন ব্যবহার — এখনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সীমিত। ফলস্বরূপ, প্রাথমিক সতর্কতা, লাইভ সতর্কতা এবং রিয়েল-টাইম সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো ক্ষমতাগুলি এখনও অর্থপূর্ণভাবে সংহত করা হয়নি।

দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অপ্রতুল পরিকল্পনার ফলে প্রায়শই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থা কল্পনা করুন যেখানে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠানের আগে থেকে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ছে;‌ কর্তৃপক্ষকে রিয়েল-টাইম নজরদারি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা যানজটের হটস্পট সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছে;‌ অবিচ্ছিন্ন প্রবেশ ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে;‌ যথাযথ চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্ট্রেচারসহ জরুরি প্রতিক্রিয়া দলগুলি আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে;‌ প্রবেশ ও প্রস্থান গেটের কাছে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করা আছে;‌ এবং সমস্ত মূল রাস্তায় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু তেমন কিছুই ছিল না। একটি উদযাপন এবং একটি ট্র্যাজেডির মধ্যে পার্থক্য প্রায়শই তাড়াতাড়ি এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নেওয়া কয়েকটি সিদ্ধান্ত। কখনও কখনও, জীবন বাঁচাতে আরও কয়েক ফুট জায়গা, একটি অতিরিক্ত প্রস্থানবিন্দু, অথবা সময়মত ঘোষণার প্রয়োজন হয়।

প্রতিরোধের জন্য পদক্ষেপ

প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত কিছু ব্যবস্থা আকস্মিক হুড়োহুড়ি ও পদদলন প্রতিরোধ করতে এবং জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে।

ঝুঁকি মূল্যায়ন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: অনুমোদনের পূর্বশর্ত হিসাবে প্রতিটি বৃহৎ সমাবেশ — ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক — বাধ্যতামূলক ভিড় ঝুঁকির জন্য মূল্যায়ন করা উচিত। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত:

অতীতের তথ্য এবং বর্তমান প্রবণতার উপর ভিত্তি করে উপস্থিতির অনুমান: যদি কর্মকর্তারা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতেন — যেমন মুম্বইয়ের ভারতীয় ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের রোডশো পরিচালনা, যা সফলভাবে ৩০০,০০০ এরও বেশি লোকের ভিড় পরিচালনা করেছিল, তাহলে কি বেঙ্গালুরু ট্র্যাজেডি এড়ানো যেত না?
প্রত্যাশিত ভিড়ের আচরণের স্থান-নির্দিষ্ট এআই সিমুলেশন।
চাপের এলাকা এবং সম্ভাব্য বিপজ্জনক স্থান সনাক্তকরণ ও সীমানা নির্ধারণ।

এসওপি এবং মাল্টি-এজেন্সি প্রোটোকল: স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) অবশ্যই ভারত জুড়ে কোডেড এবং আইনত প্রয়োগ করতে হবে — প্রতিটি সংস্থার ভূমিকা (পুলিশ, অগ্নিনির্বাপণ, স্বাস্থ্য, নাগরিক সংস্থা, ইভেন্ট আয়োজক), প্রতি বর্গমিটারে সর্বাধিক অনুমোদিত ভিড়, এবং কখন তা সরাতে হবে (উদাহরণস্বরূপ, হঠাৎ ঢেউ, ব্যারিকেড লঙ্ঘন এবং গুন্ডামি) তার নির্দেশিকা। উদাহরণস্বরূপ, নিউ ইয়র্কে ভিড় ব্যবস্থাপনার জন্য একটি রাজ্যব্যাপী এসওপি রয়েছে, যার জন্য ১,০০০ বা তার বেশি লোকের আয়োজনকারী যে কোনো স্থাপনা, স্থান বা ইভেন্টের জন্য
প্রশিক্ষিত ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপক প্রয়োজন হয়।

প্রযুক্তি-চালিত নজরদারি: প্রযুক্তি এবং রিয়েল-টাইম এআই-চালিত বিশ্লেষণ, যেমন তাপ মানচিত্র ব্যবহার, মানুষের ত্রুটি নাটকীয়ভাবে হ্রাস করতে পারে। ড্রোন-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ভিড় জমা হওয়ার একটি লাইভ ভিউ প্রদান করতে পারে।
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি)-ট্যাগযুক্ত অ্যাক্সেস ভেন্যুতে প্রতিটি ব্যক্তির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। জিও-বেড়াযুক্ত ডিজিটাল পাস জারি করলে অননুমোদিত মানুষের সংখ্যা কমানো সম্ভব।

সকল প্রধান ইভেন্টের ভিড়ের ধরন, সরিয়ে নেওয়ার সময় এবং লজিস্টিকাল ফাঁকগুলির জন্য সতর্কতার সঙ্গে লগ ইন ও অধ্যয়ন করতে হবে। পূর্বাভাসের অভ্রান্ততা এবং পরিকল্পনার দক্ষতা উন্নত করার জন্য এই তথ্য এআই মডেলগুলিতে সরবরাহ করা উচিত।
 
নির্ধারিত বেরনোর পথ এবং সাইনবোর্ড: যে কোনও আবদ্ধ স্থান, স্টেডিয়াম বা খোলা মাঠে জরুরি গেট, বহুভাষিক সাইনবোর্ড এবং জনসাধারণের জন্য ঘোষণা ব্যবস্থাসহ একাধিক চিহ্নিত প্রবেশ/প্রস্থান পয়েন্ট থাকতে হবে। ভিড় ছত্রভঙ্গ করার জন্য তাদের পূর্ব-পরিকল্পিত চাপ-মুক্ত করার জন্য পথও থাকতে হবে।

রিয়েল-টাইম যোগাযোগ: রিয়েল-টাইম আপডেট হিসাবে পুশ নোটিফিকেশন থেকে শুরু করে লাউডস্পিকার সতর্কতা পর্যন্ত, বিলম্ব, ডাইভারশন এবং পরবর্তী যে কোনও বিপদ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে হবে।

চিকিৎসা প্রস্তুতি: প্রতিটি প্রবেশ এবং প্রস্থান গেটের কাছে অ্যাম্বুলেন্স সহ র‍্যাপিড অ্যাকশন মেডিকেল টিম (আরএএমটি) কৌশলগতভাবে রাখতে হবে। সংযোগকারী রাস্তাগুলিতে ট্র্যাফিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে নির্বিঘ্ন এবং দ্রুত চলাচল নিশ্চিত করা যায়। প্রতিটি ভেন্যুতে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষমতাসহ মোবাইল ট্রায়াজ ইউনিট থাকতে হবে এবং স্থানীয় হাসপাতালগুলিকে আগে থেকেই জরুরি সতর্কতায় রাখা উচিত। মিউনিখের
অক্টোবরফেস্ট থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে, যেখানে ২০২৪ সালে ৬.৭ মিলিয়ন দর্শনার্থী এসেছিলেন।

পুলিশিং ও গ্রাউন্ড কন্ট্রোল: পুলিশ বাহিনীকে প্রতিক্রিয়াশীল নিয়ন্ত্রণ থেকে সক্রিয় সমন্বয়ে রূপান্তরিত করতে হবে। নিবেদিত ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য
 অ-প্রাণঘাতী হস্তক্ষেপে প্রশিক্ষিত কর্মীদের সঙ্গে তাদের একটি পৃথক বিভাগ থাকতে হবে, কারণ এত বড় সমাবেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে কেবল লাঠি এবং ব্যারিকেড অকার্যকর হয়। প্রতিটি ভেন্যুতে স্থল বাহিনী, কমান্ড সেন্টার, মেডিকেল টিম এবং আয়োজকদের সঙ্গে সংযোগকারী একটি লাইভ যোগাযোগ গ্রিড থাকতে হবে।

বেসামরিক প্রতিরক্ষা এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী: সমস্ত গণ-উদ্যোগে বেসামরিক সমাজের স্বেচ্ছাসেবকদের (ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর, জাতীয় সমাজসেবা, দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এনজিও) একত্রিত করতে হবে, যারা মৌলিক দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া, জনতার মনোবিজ্ঞান, প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্থানান্তর পদ্ধতিতে প্রশিক্ষিত। প্রতিটি অনুষ্ঠানের আগে তাদের নির্দিষ্ট অঞ্চল এবং ভূমিকা চিহ্নিত করতে হবে এবং অবশ্যই ওয়াকি-টকি, প্রাথমিক চিকিৎসার কিট, রিফ্লেক্টিভ এমার্জেন্সি ভেস্ট ও স্ট্রেচার দিতে হবে।

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার: জাতীয়, রাজ্য ও স্থানীয় আইনগুলিতে নগর পরিকল্পনা এবং দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ার জন্য আইনি এবং সাংবিধানিক আদেশ হিসাবে ভিড় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে একীভূত করতে হবে। একই সঙ্গে, ভারতের একটি কেন্দ্রীভূত কাঠামো প্রয়োজন — একটি গণসমাবেশ সুরক্ষা কোড — যা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গণসমাবেশ সংক্রান্ত সমস্ত বিপদ ঝুঁকি মূল্যায়ন টুলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পরিকল্পনা, ঝুঁকি মূল্যায়ন, ভিড় প্রবাহ, জরুরি প্রতিক্রিয়া এবং সমন্বয়ের জন্য মানসম্মত পদ্ধতি নির্ধারণ করে। সমস্ত মহানগর এবং স্তর-১ শহরে ঝুঁকি শাসনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য ভারতকে জরুরিভাবে ইভেন্ট সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

পরিকাঠামোগত সংস্কার: স্টেডিয়াম, মন্দির, ঘাট এবং খোলা মাঠে ভিড় সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে পুনর্গঠন প্রয়োজন, যার মধ্যে প্রশস্ত গেট, আলোকিত সাইনবোর্ড, চাপ-মুক্ত করার মতো প্রস্থান এবং নির্ধারিত হোল্ডিং জোন রয়েছে।

উত্তরদায়িতা নির্ধারণ: আকস্মিক হুড়োহুড়ি ও পদদলিত হওয়ার ঘটনা হল প্রশাসনিক ব্যর্থতা, এবং সুরক্ষা প্রোটোকল উপেক্ষা করার জন্য অবশ্যই পরিণতি ডেকে আনতে হবে। দুর্ঘটনা-পরবর্তী তদন্ত এবং জবাবদিহিতা নির্ধারণ একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বহু-সংস্থা তদন্ত প্যানেলের উপর ন্যস্ত করতে হবে। এই অনুসন্ধানের ফলাফল অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে চালিত করবে—যদি অবহেলা প্রমাণিত হয় তবে শাস্তি, স্থগিতাদেশ এবং মামলা দায়ের করা হবে, এবং সরকারি তাকগুলিতে রদ্দি (বাতিল) প্রতিবেদন হিসাবে শেষ হয়ে যাবে না।

ক্ষতিপূরণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা: ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) -‌এর প্রসারের সাথে সাথে, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এক সপ্তাহের মধ্যে নিকট আত্মীয়দের কাছে এবং ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আহতদের কাছে পৌঁছতে হবে। সরকারকে অবশ্যই বেঁচে থাকা এবং পরিবারের জন্য মানসিক ও ট্রমা পরামর্শ নিশ্চিত করতে হবে। আহত এবং নিখোঁজদের জন্য ট্র্যাকিং সিস্টেমগুলি  রিয়েল টাইমে আপডেট করতে হবে, এবং জনসাধারণের জন্য প্রাপ্তিযোগ্য করতে হবে।

সংকট থেকে দায়বদ্ধতা

ভারত হল জনতার দেশ — এখানে মিছিল এবং তীর্থযাত্রা, ক্রিকেট এবং জনসম্প্রদায়ের উৎসব এবং গণতন্ত্র উচ্চস্বরে বেঁচে থাকে। এটি তার গণতন্ত্রের মাত্রা, তার উৎসবের প্রযুক্তিগত রঙ, এবং তার স্টেডিয়ামগুলির গর্জনে গর্ব অনুভব করে। যদি না জনসমাবেশ দূরদর্শিতা এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিচালিত হয়, তবে তাদের পরবর্তী শোক একটি পুনরাবৃত্তিমূলক বাস্তবতা হয়েই থাকবে। বেঙ্গালুরুর ঘটনা স্ট্যাম্পিডের শেষ ঘটনা হবে না, যদি না পরবর্তী ঘটনা প্রতিরোধের জন্য সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ করা হয়।



ধবল দেশাই অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.