Published on Aug 06, 2022 Updated 0 Hours ago

অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্ব জুড়েই অনলাইনে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন ও শোষণের (ও সি এস এ ই) ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত একাধিক উপায়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করলেও কাজ করার আরও পরিসর রয়েছে।

লাঞ্ছনার অতিমারি: ভারত কী ভাবে অনলাইন নির্যাতন থেকে শিশুদের রক্ষা করছে

২০২০ সালের প্রথম দিক থেকে অতিমারির কারণে লকডাউন এবং স্কুল বন্ধ থাকার ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি সংখ্যক শিশু ইন্টারনেটে অতিরিক্ত সময় কাটাতে শুরু করেছে। ইউনিসেফের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বর্ধিত স্ক্রিন টাইম শিশুদের অনলাইন সুরক্ষাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে এবং ক্ষতিকর আচরণ ও বিষয়বস্তুর সামনে তাদের আরও বেশি করে অরক্ষিত করে তুলেছে।

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বিশ্বব্যাপী শিশুদের উপর অনলাইন যৌন নির্যাতন এবং শোষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে ভারতে শিশুদের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধের ঘটনা ২০১৯ সালের তুলনায় ৪০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে৷ এই অপরাধগুলির প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু যৌন নির্যাতনের উপাদানের (সি এস এ এম) প্রকাশ এবং প্রসারে জড়িত৷ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বর্ধিত ব্যবহার, অনলাইন ক্লাসের ব্যাপক প্রচলন এবং শিক্ষামূলক অ্যাপের ব্যবহার শিশুদের অনলাইন সুরক্ষার নিরিখে আশঙ্কার কারণ রূপে উঠে এসেছে।

ও সি এস এ ই-তে সি এস এ এম উৎপাদন ও বিতরণের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে; শিশুদের যৌনবিষয়ক কথোপকথনে প্রলুব্ধ করা বা তাদের ব্যবহার করে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি করা; বাস্তব জগতে লাঞ্ছনাকারীর সঙ্গে দেখা করার জন্য শিশুদের প্রলুব্ধ করা; লাঞ্ছনাকারী দ্বারা প্রদর্শনবাদ; এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি শিশুকে পতিতাবৃত্তিতে বা যৌন পাচারে যুক্ত করা।

ইউনিসেফ দ্বারা চিহ্নিত শিশু সম্পর্কিত অনলাইন ঝুঁকিগুলির ছ’টি শ্রেণির মধ্যে যৌন নির্যাতন এবং যৌন শোষণকে একজোটে বিবেচনা করা যেতে পারে এবং এটিকে অনলাইন শিশু যৌন নির্যাতন ও শোষণ (ও সি এস এ ই) হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। ও সি এস এ ই-তে সি এস এ এম উৎপাদন ও বিতরণের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে; শিশুদের যৌনবিষয়ক কথোপকথনে প্রলুব্ধ করা বা তাদের ব্যবহার করে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি করা; বাস্তব জগতে লাঞ্ছনাকারীর সঙ্গে দেখা করার জন্য শিশুদের প্রলুব্ধ করা; লাঞ্ছনাকারী দ্বারা প্রদর্শনবাদ; এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি শিশুকে পতিতাবৃত্তিতে বা যৌন পাচারে যুক্ত করা।(১)

শিশুদের অনলাইন সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান

ভারত ১৯৯০ সালের শিশু অধিকার সংক্রান্ত ইউ এন কনভেনশনের (সি আর সি) প্রাথমিক সমর্থনকারীদের অন্যতম এবং ২০০২ সালে এটি সি আর সি-র দ্বিতীয় ঐচ্ছিক প্রোটোকলে যোগ দেয় যা শিশুদের বিরুদ্ধে অনলাইন এবং অফলাইন অপরাধের জন্য সি আর সি-র প্রবিধানগুলিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

ভারত অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো নির্মাণ করেছে৷ এর মধ্যে রয়েছে যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে শিশুদের সুরক্ষা (পি ও সি এস ও বা পকসো) আইন, ২০১২; তথ্যপ্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০০৮ যা সেই সব অপরাধকে চিহ্নিত করে যেখানে  শিশুরা সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত, এবং এই ভাবে আই টি আইন, ২০০০-এর পরিসরকে প্রশস্ত করে; এবং সাম্প্রতিক তথ্যপ্রযুক্তি (ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস এবং ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) বিধিমালা, ২০২১ যার লক্ষ্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সি এস এ এম-এর প্রচার রোধ করা। এর পাশাপাশি, ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং অনৈতিক পাচার প্রতিরোধ আইনের ধারাগুলিও শিশুদের যৌন হয়রানি, মানহানি, অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন; অনলাইন শোষণ, শিশু পাচার, অশ্লীল উপাদানের বিক্রয় এবং প্রচারের মতো ও সি এস এ ই-এর ঘটনার প্রতিবেদন করার একটি ভিত্তি প্রদান করে।

অতিমারির প্রথম বছরে ৩০টি দেশের মধ্যে পরিচালিত ২০২০ সালের চাইল্ড সেফটি অনলাইন ইনডেক্স সমীক্ষায় ‘শিশুদের জন্য সর্বোত্তম অনলাইন সুরক্ষা’র নিরিখে ভারত নবম স্থানে (একটি ‘গড়’-রেটিংয়ের ভিত্তিতে) থাকলেও শিশুদের ‘সাইবার ঝুঁকির তীব্রতা’র মুখোমুখি হওয়ার নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

অতিমারির প্রথম বছরে ৩০টি দেশের মধ্যে পরিচালিত ২০২০ সালের চাইল্ড সেফটি অনলাইন ইনডেক্স সমীক্ষায় ‘শিশুদের জন্য সর্বোত্তম অনলাইন সুরক্ষা’র নিরিখে ভারত নবম স্থানে (একটি ‘গড়’-রেটিংয়ের ভিত্তিতে) থাকলেও শিশুদের ‘সাইবার ঝুঁকির তীব্রতা’র মুখোমুখি হওয়ার নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এটি এ কথাই দর্শায় যে, ভারতের শিশুরা ব্যাপক মাত্রায় এবং বিস্তৃত পরিসরে সাইবার ঝুঁকির সম্মুখীন হলেও দেশটিতে এই ঝুঁকিগুলির সঙ্গে মোকাবিলা করার সক্ষমতা ‘মধ্যম মানের’।

  • অতিমারি চলাকালীন ও সি এস এ ই-র বিরুদ্ধে লড়াই

অতিমারি চলাকালীন ভারত ও সি এস এ ই-র প্রবাহের বিরুদ্ধে চার রকম ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এটি শিশুদের বিরুদ্ধে অনলাইন অপরাধ রিপোর্ট করার জন্য প্রচলিত ব্যবস্থাগুলি নিয়ে নতুন  করে প্রচার চালিয়েছে; অনলাইনে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সি এস এম এ-র উপস্থিতি চিহ্নিত করে পদক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে; স্কুলগুলিকে সংবেদনশীল করে তোলার উপর নজর দিয়েছে, এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির (এল ই এ এস) সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং শিশুদের সুরক্ষার ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

  • ও সি এস এ ই রিপোর্টিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা

ভারতে স্বপ্রতিবেদিত ও সি এস এ ই-র দু’টি প্রধান প্রক্রিয়া হল: পকসো ই-বক্স, যা একটি ভার্চুয়াল অভিযোগ ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া এবং ন্যাশনাল সাইবারক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল (এন সি আর পি)। এই দু’টি প্রক্রিয়াই অতিমারির আগে থেকেই সক্রিয় রয়েছে। ২০২০ সালের গোড়ার দিক থেকে শিশু অধিকার সুরক্ষার জন্য জাতীয় কমিশন (এন সি পি সি আর) এবং জাতীয় মহিলা কমিশন এই রিপোর্টিং প্ল্যাটফর্ম এবং পকসো ও আই টি আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করেছে, দেশব্যাপী পদ্ধতিগত ভাবে প্রচার, পক্ষ সমর্থন এবং অংশীদারদের সম্পৃক্ততার জন্য কর্মসূচিগুলি চালু করেছে। অতিমারি চলাকালীন আরও একটি প্রক্রিয়া হল ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এন সি আর বি) এবং আমেরিকার ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়েটেড চিলড্রেন-এর (এন সি এম ই সি) মধ্যে ২০১৯ সাল থেকে কার্যকর তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা। এন সি আর বি আসলে এনসিএমইসি থেকে টিপলাইন রিপোর্ট পায়, যা পরে রাজ্য স্তরের এল ই এ এস-এর সঙ্গে ভাগ করে নেয় এবং তাদের পদক্ষেপ করতে উত্সাহিত করে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিধি অনুসারে, সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যস্থতাকারীদের তাদের ব্যবহারকারীদের সি এস এ এম-এর প্রকাশ ও প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বলা হয়; মধ্যস্থতাকারীদের জন্য সি এস এ এম শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া তৈরি বাধ্যতামূলক করা এবং এই ধরনের বিষয়বস্তুতে ব্যবহারকারীর অ্যাক্সেস ব্লক করতে বলা হয়।

এই উদ্যোগগুলি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু ভারতের ও সি এস এ ই রিপোর্টিং মঞ্চগুলি সম্পর্কে গণসচেতনতার অভাব  একটি বড় চ্যালেঞ্জ যার ফলে এখনও অপরাধ সংক্রান্ত স্বপ্রতিবেদিত ঘটনার সংখ্যা অবিশ্বাস্য রকমের কম। ২০২০-২১ সালে পকসো ই-বক্স ১৫১টি অভিযোগ নথিভুক্ত করেছে এবং ২০২০ সালে এন সি আর পি শিশুদের বিরুদ্ধে ১১০২টি সাইবার অপরাধের ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে। এর উলটো দিকে দাঁড়িয়ে এন সি আর বি শুধু মাত্র ২০২০ সালে এন সি এম ই সি থেকে ও সি এস এ ই সংক্রান্ত ২,৭২৫,৫১৮টি অভিযোগ পেয়েছে।

  • সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সি এস এ এম চিহ্নিতকরণের চেষ্টা

বিতর্কিত তথ্য প্রযুক্তি (ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস এবং ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) বিধিমালা, ২০২১ অতিমারি চলাকালীন সোশ্যাল মিডিয়ায় সি এস এ এম-এর সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় একটি একক নতুন আইন প্রণয়ন করে। তথ্যপ্রযুক্তি বিধি অনুসারে, সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যস্থতাকারীদের তাদের ব্যবহারকারীদের সি এস এ এম-এর প্রকাশ ও প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বলা হয়; মধ্যস্থতাকারীদের জন্য সি এস এ এম শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া তৈরি বাধ্যতামূলক করা এবং এই ধরনের বিষয়বস্তুতে ব্যবহারকারীর অ্যাক্সেস ব্লক করতে বলা হয়। আরও নির্দিষ্ট ভাবে, সি এস এ এম বা যৌন সুস্পষ্ট উপাদান সম্পর্কিত কোনও অপরাধের তদন্ত বা বিচারের জন্য মধ্যস্থতাকারী এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটির উপরে সেই অশ্লীল উপাদানের প্রথম সৃষ্টিকারীকে খুঁজে বার করার দায় ন্যস্ত হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তির নিয়মগুলি সমস্যাজনক। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে এই ধরনের অশ্লীল উপাদান খুঁজে বার করতে সাহায্য করার জন্য তাদের প্ল্যাটফর্মের সমস্ত অনলাইন যোগাযোগের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করে তাদের এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের প্রথা ভাঙতে হবে। এ ছাড়াও নিয়মগুলি খুঁজে বার করার পদ্ধতি কার্যকর করার জন্য আইনটি কোনও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার পরামর্শ দেয় না। এর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি আইন যা থেকে বিধিগুলি তৈরি হয়, তা সরকারকে প্ল্যাটফর্মগুলিতে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নির্দেশ করার ক্ষমতা দেয় না। ফলে নিয়মগুলির বৈধতা বিতর্কিত হয়ে ওঠে। এ ভাবে নীতিগত দিক থেকে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত নিয়মগুলি ও সি এস এ ই মোকাবিলা করার চেষ্টা করলেও সমস্যাগুলি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেগুলির বাস্তবায়ন ঠিক কেমন ভাবে হবে, সেই সম্পর্কে ধোঁয়াশা রয়েছে।

  • স্কুলগুলিকে সংবেদনশীল করে তোলা

ও সি এস এ ই এবং শিশুদের অন্যান্য অনলাইন ঝুঁকি সম্পর্কে স্কুলগুলিকে সংবেদনশীল করে তোলা ভারতের অতিমারি প্রতিক্রিয়ার মূল কেন্দ্রবিন্দু। এন সি পি সি আর এবং শিক্ষা মন্ত্রক উভয়েই স্কুল সুরক্ষা সংক্রান্ত আচরণবিধি গড়ে তুলেছে এবং তার প্রচার চালিয়েছে যা শিশুদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিদ্যমান নির্দেশিকা, আইন এবং রিপোর্টিং প্রক্রিয়ার সংমিশ্রণ হিসেবে কাজ করে। সেন্ট্রাল বোর্ড ফর সেকেন্ডারি এডুকেশন এবং ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এর মতো শীর্ষ সংস্থাগুলিও অনলাইনে শিশু সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্রবান্ধব হ্যান্ডবুক প্রকাশ করেছে এবং সাইবার সুরক্ষা বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করেছে।

এন সি পি সি আর এবং শিক্ষামন্ত্রক উভয়েই স্কুল সুরক্ষা সংক্রান্ত আচরণবিধি গড়ে তুলেছে এবং তার প্রচার চালিয়েছে যা শিশুদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিদ্যমান নির্দেশিকা, আইন এবং রিপোর্টিং প্রক্রিয়ার সংমিশ্রণ হিসেবে কাজ করে।

এই কেন্দ্রচালিত উদ্যোগগুলি স্কুলকে তাদের প্রশাসক এবং শিক্ষকদের অনলাইন শিশু সুরক্ষা সম্পর্কে সংবেদনশীল করে তোলার জন্য এবং স্কুলের শিশুদের প্রত্যক্ষ ভাবে সংবেদনশীল করার উদ্দেশ্যে দায়বদ্ধ করতে চায়। যদিও এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, রাজ্য সরকারগুলি রাজ্য স্তরের স্কুলগুলিতে একই রকমের প্রক্রিয়া প্রচলন সুনিশ্চিত করবে। স্কুলগুলির জন্য রাজ্য সাইবার সুরক্ষা পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া গড়ে তোলা এটিকে আরও ব্যাপক সমর্থন জোগাতে পারে।

  • মানবিক এবং প্রযুক্তিগত ক্ষমতা শক্তিকরণ

অবশেষে অতিমারি চলাকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পরিচালিত ‘নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ’ প্রকল্পের অধীনে এল ই এ এবং বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এক নতুন উদ্দীপনাকে তুলে ধরেছে। অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকেই ও সি এস এ সি মোকাবিলা করার জন্য বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলি দ্বারা গৃহীত প্রযুক্তিগত উদ্যোগ মানবিক ক্ষমতা তৈরির প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারতে গুগল এবং ফেসবুক উভয়েই তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সি এস এ এম দূর করার ব্যবস্থা করেছে এবং শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা সম্পর্কে শিক্ষিত করার জন্য কর্মসূচি চালু করেছে।

সামনের পথ

ভারত অতিমারির তৃতীয় বছরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে তার ও সি এস এ ই প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাগুলিকে শক্তিশালী করতে পারে, তার মূল্যায়ন করা জরুরি। ও সি এস এ ই প্রতিরোধ আইন, সংস্থান এবং রিপোর্টিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে সীমিত সচেতনতা একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবেদনশীলতার প্রচেষ্টা অবশ্যই স্পষ্টত দৃশ্যমান এবং স্থিতিশীল হওয়া জরুরি। অনলাইন শিশু সুরক্ষাকে কেবলমাত্র অতিমারি দ্বারা সৃষ্ট সঙ্কটের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়।

স্কুলে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং যৌন শিক্ষা পাঠ্যক্রমের ও সি এস এ ই-র মডিউলগুলির অন্তর্ভুক্তিকরণ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির সম্মুখে থাকা শিশুদের সংবেদনশীল করে তোলার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। এবং এ কথাও সুনিশ্চিত করতে হবে যে, কেন্দ্রীয় ভাবে উৎপাদিত শিক্ষা সংক্রান্ত উপাদানগুলি যেন একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় উপলব্ধ করে তোলা যায়।

ভারতীয় গণমাধ্যম দ্বারা সমর্থিত দেশব্যাপী পর্যায়ক্রমিক সর্বাত্মক সচেতনতামূলক প্রচার জনসাধারণের মনোযোগ তৈরির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করতে পারে। এর পাশাপাশি স্কুলে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং যৌনশিক্ষা পাঠ্যক্রমে ও সি এস এ ই বিষয়ক মডিউলগুলির অন্তর্ভুক্তিকরণ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির সম্মুখে থাকা শিশুদের সংবেদনশীল করে তোলার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। এবং এ কথাও সুনিশ্চিত করতে হবে যে, কেন্দ্রীয় ভাবে উৎপাদিত শিক্ষা সংক্রান্ত উপাদানগুলি যেন একাধিক আঞ্চলিক ভাষায় উপলব্ধ করে তোলা যায়। তৃতীয়ত, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে ভারতের উদ্বেগজনক ভাবে জমে থাকা ঘটনা / অভিযোগ জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা প্রয়োজন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও সি এস এ ই-র মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা চালানো উচিত।

ও সি এস এ ই-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও সামিল হতে হবে। ২০২১ সালের তথ্য প্রযুক্তি আইনটির একটি সংবেদনশীল এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন, যাতে সেগুলিকে সোশ্যাল মিডিয়া মধ্যস্থতাকারীদের দ্বারা বাস্তবে প্রয়োগ করা যায়। এই নিয়মগুলির সাম্প্রতিক প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনগুলিতে ইতিবাচক ফলাফল থাকতে পারে এমন কয়েকটি পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হলেও চিহ্নিতকরণ এবং ডিক্রিপশন সম্পর্কে বিতর্কিত ধারাগুলি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। এর পাশাপাশি ভারত এখনও পর্যন্ত সি এস এ এম-এ অ্যাক্সেস ব্লক করার প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের রাজি করাতে মোটের উপর ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।

অবশেষে, ভারতও আরও বহির্মুখী দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করতে পারে এবং অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষার জন্য দ্বিপাক্ষিক অথবা বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বিবেচনা করা যেতে পারে, যেগুলি ও সি এস এ ই-কে মোকাবিলা করার নিরিখে তাদের শক্তিশালী প্রক্রিয়াগুলির জন্য পরিচিত এবং যাদের সঙ্গে ভারত ইতিমধ্যেই সাইবার ও প্রযুক্তি উদ্যোগের একটি পরিসরে সহযোগিতা করছে৷ জ্ঞানের আদান-প্রদান, এল ই এ-র ক্ষমতা বিকাশ এবং সি এস এ এম অপরাধীদের কার্যকলাপকে ব্যাহত করতে একসঙ্গে কাজ করা উভয় অংশীদারের জন্য লাভজনক হতে পারে এবং শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও অধিকতর সুরক্ষিত সাইবার স্পেস তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।

[i] কে সঞ্জয় কুমার, ‘ইজ ইয়োর চাইল্ড সেফ?’ (কোঝিকোড়: দ্য বুক পিপল, ২০১৭) পৃষ্ঠা ৪৬–৫৮

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.