২০২৩ সালের গোড়ার দিকে ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) সিক্সথ অ্যাসেসমেন্ট (এআর৬) সিন্থেসিস রিপোর্ট বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের (জিএইচজিই) কঠোর, অবিলম্বিত ও দীর্ঘস্থায়ী হ্রাসের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিল। এই ফলাফলগুলি বিবেচনা করে, কপ২৮ ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স তার প্রথম গ্লোবাল স্টকটেক রিপোর্টে বিশ্বব্যাপী 'জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে স্থানান্তর'-এর পক্ষে দাঁড়াতে শুরু করে। [১] কপ২৮ যখন ভবিষ্যতের পদক্ষেপের ভিত্তি স্থাপন করেছে, সেই সময় ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিয়েল বলেন, "আমরা দুবাইতে জীবাশ্ম জ্বালানি যুগ পিছনে ফেলে যেতে পারিনি, তবে এর ফলাফলটি হবে শেষের শুরু।" প্রয়োজনীয় আর্থিক ও সময় ব্যয় বিবেচনা করে, কপ২৮ প্রস্তাবিত উত্তরণে জলবায়ু অর্থায়নের অতি-গুরুত্বপূর্ণ ও অনুঘটক ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করেছিল। এই কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে, কপ২৯ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স অ্যাকশন ফান্ড (সিএফএএফ) (অন্যদের মধ্যে) প্রকাশ করেছে, যা কপ২৮ করেনি।
জুলাই ২০২৪-এ ঘোষণার সাথে সাথে সিএফএএফ-কে প্রথম বেসরকারি-সরকারি অংশীদারিত্ব তহবিল হিসাবে চালু করা হয়েছিল, যা জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ ও সংস্থাগুলিকে ক্ষতির জন্য আংশিকভাবে দায়বদ্ধ করে বার্ষিক কিস্তিতে সবুজ অর্থায়নে অবদান রাখার আহ্বান জানায়।
জুলাই ২০২৪-এ ঘোষণার সাথে সাথে সিএফএএফ -কে প্রথম বেসরকারি-সরকারি অংশীদারিত্ব তহবিল হিসাবে চালু করা হয়েছিল, যা জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ ও সংস্থাগুলিকে ক্ষতির জন্য আংশিকভাবে দায়বদ্ধ করে বার্ষিক কিস্তিতে সবুজ অর্থায়নে অবদান রাখার আহ্বান জানায়। উদ্যোগটির নেতৃত্বে থেকে আজারবাইজান নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠাতা অবদানকারী হিসাবে স্থাপন করেছে। অভিযোজন, প্রশমন, এবং গবেষণা ও উন্নয়ন ছাড়াও, সিএফএএফ ক্ষুদ্র ও মাঝারি নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনকারীদের অফ-টেক গ্যারান্টি প্রদান করতে, এবং সবুজ শিল্প প্রকল্পগুলির জন্য প্রাথমিক ক্ষতি বহন করতে তার সংস্থানগুলি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে। তহবিলের আরেকটি বড় বিনিয়োগের ক্ষেত্র হল নেট-শূন্য নির্গমন লক্ষ্য। উপরন্তু, ৫০ শতাংশ অবদান যাবে ১.৫-ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য পরবর্তী প্রজন্মের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি)-এর বিকাশের সুবিধার্থে। এই প্রস্তাবগুলি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন চ্যালেঞ্জগুলি প্রশমিত করতে অর্থ প্রদানের উপর সিএফএএফ-এর দৃঢ় মনোযোগের সঙ্গে সারিবদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনের অবদানকারী হিসাবে শুধু কয়লা নয়, তেল ও গ্যাস উৎপাদকদেরও প্রকাশ্য অন্তর্ভুক্তিতে এটি স্পষ্ট দৃশ্যমান। পূর্বে, পেট্রোলিয়াম উত্পাদকদেরকে আন্তর্জাতিক স্তরে জলবায়ু প্রচেষ্টায় স্পষ্টভাবে জড়িত হতে বলা হয়নি। পেট্রোলিয়াম উৎপাদকদের কাছ থেকে অবদান দাবি করে সিএফএএফ মূলত একটি দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত জবাবদিহিতার পথ তৈরি করেছে, যা পেট্রোডলার রাজস্বকে সবুজ অর্থায়নে পুনর্নির্দেশিত করতে পারে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে, সিএফএএফ সম্ভাব্যভাবে 'পেট্রোডলার রিসাইক্লিং'-এর জন্য একটি নতুন মান ও সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে পারে।
পেট্রোডলার রিসাইক্লিং একটি নতুন আকার নিতে পারে
যদিও 'রিসাইক্লিং' সাধারণত পরিবেশবান্ধব অনুশীলনের সঙ্গে যুক্ত একটি শব্দ, 'পেট্রোডলার রিসাইক্লিং' বলতে বোঝায় তেল রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত অতিরিক্ত রাজস্ব বিশ্ব অর্থনীতিতে বিদেশে-অধিষ্ঠিত সম্পদের মাধ্যমে, যেমন ইউএস ট্রেজারি বন্ড এবং আমদানি, পুনরায় বিনিয়োগ করাকে, এবং তার পাশাপাশি থাকে দেশের মধ্যে উপভোগ ও বিনিয়োগ। ১৯৭০-এর দশকে এর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পেট্রোলিয়াম-উৎপাদনকারী দেশগুলি এই পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতি বজায় রেখেছে, যখন তাদের রপ্তানি আয়ের উচ্চতর মাত্রা স্পর্শ করা অব্যাহত রয়েছে। ওপেকের অফিসিয়াল তথ্য অনুসারে, গত দুই দশক ধরে আসল ওপেক রেফারেন্স বাস্কেটের দাম ১৯৭০-এর দশকের স্তরের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ফলস্বরূপ, শুধু ওপেক সদস্যরাই ২০০৫ সাল থেকে বেশিরভাগ বছরে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি এবং ২০২৩ সালেই প্রায় ৬৭৯.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে শুধুমাত্র পেট্রোলিয়াম রপ্তানির মাধ্যমে। ঐতিহাসিক প্রবণতা এবং বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, পেট্রোলিয়াম উৎপাদন অব্যাহত থাকার সঙ্গে এই সিসমিক রেভেনিউ পূর্বনির্ধারিত উপায়গুলির মাধ্যমে সংগৃহীত এবং পুনর্ব্যবহৃত হতে থাকবে, অর্থাৎ, জলবায়ু সক্রিয়তার দিকে নয়। তেল ও গ্যাস উৎপাদকদের এই তহবিলকে পুঁজি করতে উৎসাহিত করে সিএফএএফ-এর প্রস্তাবিত পদ্ধতি এতে পরিবর্তন আনতে পারে। পেট্রোডলারগুলি শেষ পর্যন্ত পেট্রোপণ্য উৎপাদনের কারণে তৈরি হওয়া জলবায়ু চাপ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
শুধু ওপেক সদস্যরাই ২০০৫ সাল থেকে বেশিরভাগ বছরে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা তার বেশি এবং ২০২৩ সালেই প্রায় ৬৭৯.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে শুধুমাত্র পেট্রোলিয়াম রপ্তানির মাধ্যমে।
সিএফএএফ-এর একটি নতুন পথ তৈরি করার প্রচেষ্টা
যখন পেট্রোলিয়াম আয় ক্রমাগত উচ্চতর হচ্ছে, সেই সময় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রাও বাড়ছে। ২০২৩ ছিল আরেকটি রেকর্ড-ব্রেকিং বছর, যখন বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের ১.৪৫±০.১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে পৌঁছেছিল। বর্তমান পেট্রোলিয়াম উৎপাদন বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের (জিএইচজিই) প্রায় ১৫%-এর জন্য দায়ী বলে অনুমান করা হয়, অর্থাৎ প্রায় ৫.১ বিলিয়ন টন জিএইচজিই। এমনকি স্থানান্তরের সময়েও, পেট্রোলিয়াম পণ্য থেকে দূরে সরে যাওয়া ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হবে, এবং পরবর্তী উৎপাদন রিসাইক্লিং চ্যানেলে বিপুল পরিমাণ পেট্রোডলারকে আমন্ত্রণ জানাতে থাকবে। তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসা এবং আর্থিক চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে, এই রাজস্বকে জরুরি জলবায়ু চ্যালেঞ্জ প্রশমিত করতে এবং অন্যান্য অভিযোজিত ব্যবস্থার জন্য রাখতে হবে। এইভাবে, সবুজ প্রকল্পে বিনিয়োগের দিকে 'পুনর্ব্যবহার' চ্যানেলের দিক পরিবর্তন করা সিএফএএফ-এর একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ।
যেহেতু তহবিলটি কপ২৯-এর পরে অবদানের জন্য নিজেকে উন্মুক্ত করেছে, এটি প্রাথমিকভাবে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহের এবং তারপরে সদস্যদের কাছ থেকে বার্ষিক কিস্তি আশা করে। যদিও এই মুহূর্তে স্বেচ্ছানির্ভর, সিএফএএফ আসন্ন বছরগুলিতে পেট্রোডলারের পুনর্ব্যবহারযোগ্য নতুন মান তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় ভিতকে শক্তপোক্ত করছে। যাই হোক, প্রতি বছর ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রাজস্ব আয় করে এমন একটি শিল্প থেকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনের লক্ষ্য মোটামুটি ক্ষুদ্র এবং 'অত্যন্ত শালীন', বিশেষ করে সৃষ্ট প্রতিকূলতার গুরুতর অবস্থা এবং তা প্রশমনের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের কথা বিবেচনা করে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) ‘‘নেট জিরো স্থানান্তরে তেল ও গ্যাস অপারেশন থেকে নির্গমন’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, পরবর্তী দশকের মধ্যে নির্গমনের তীব্রতা অর্ধেক করতে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। এই বিস্ময়কর পরিসংখ্যান বিবেচনা করে, সিএফএএফ এর বর্তমান লক্ষ্যটি নম্র এবং অতি ক্ষুদ্র বলে মনে হচ্ছে। যদি প্রাথমিক তহবিল লক্ষ্য হয় ভবিষ্যতের অবদানের জন্য একটি নোঙ্গর তৈরি করা, সেক্ষেত্রেও তহবিলের নগদ প্রবাহ তার লক্ষ্যের দিকে কার্যকরভাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুব কম হতে পারে। তা সত্ত্বেও, সিএফএএফ তার তহবিল সংগ্রহ শুরু করার সময় এর অর্থ চিত্তাকর্ষক গভীরতায় পৌঁছতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) ‘নেট জিরো স্থানান্তরে তেল ও গ্যাস অপারেশন থেকে নির্গমন’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, পরবর্তী দশকের মধ্যে নির্গমনের তীব্রতা অর্ধেক করতে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
'শেষের শুরু'কে একত্রিত করা
যদিও কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে সরে যাওয়া জলবায়ু সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য সমাধান, এগুলি অবিলম্বে ঘটবে না। যখন আমরা ধীরে ধীরে এই পরিবর্তনটি কার্যকর করি, সৃষ্ট ক্ষতি পূরণের জন্য গৃহীত প্রশমনমূলক পদক্ষেপগুলি ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শেষের কয়েক দশকে পেট্রোলিয়াম উৎপাদকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় জবাবদিহিতা তৈরি করার একটি অপরিহার্য উপায় হল সিএফএএফ-এর প্রক্রিয়া। জলবায়ু সঙ্কট যে আমূল পরিবর্তন দাবি করে, তেমন না-হলেও পেট্রোডলার রিসাইক্লিং কার্যক্রমের বর্তমান স্থিতাবস্থা থেকে একটি নির্দিষ্ট স্থানান্তর। এই উদ্যোগের সঙ্গে কপ২৯ একটি নতুন পুনর্ব্যবহারযোগ্য পথ তৈরির সম্ভাব্য বাধাগুলি পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছে। এই পথটি পরবর্তী বছরগুলিতে সংহত করা যেতে পারে এবং জলবায়ুর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী আরও বাড়ানো যেতে পারে। তহবিল সংগ্রহের অগ্রগতির সময় সিএফএএফ-এর প্রতিক্রিয়া এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ, এবং একটি সবুজ অর্থায়ন চ্যানেল পেট্রোডলার পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার একটি আদর্শ উপায় হয়ে উঠতে পারে কি না সে সম্পর্কে স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করবে।
দিয়া শাহ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন রিসার্চ ইন্টার্ন
[১] ইউএনএফসিসিসি কনফারেন্স অফ দ্য প্যারিস এগ্রিমেন্ট (সিএমএ), আউটকাম অফ দ্য ফার্স্ট গ্লোবাল স্টকটেক। খসড়া সিদ্ধান্ত -/সিএমএ.৫. প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব, রাষ্ট্রপুঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন — সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন, ২০২৩, https://unfccc.int/documents/636608.
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.