Author : Ramanath Jha

Published on Jan 18, 2024 Updated 0 Hours ago

দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামোর সমস্যা মোকাবিলার জন্য রাজ্যগুলিকে তহবিল সরিয়ে রেখে, বিদ্যমান হাসপাতালে আরও সক্ষমতা তৈরি করে, এবং আরও নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করে এই ক্ষেত্রটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এখনও অবহেলিত: নানদের হাসপাতালের ঘটনা

ঔরঙ্গাবাদ থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের একটি জেলা শহর নানদের কিছুদিন আগে তার পাবলিক মেডিকেল ফেসিলিটিতে একটি মানবসৃষ্ট ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হয়েছিল। ১–২ অক্টোবরের মধ্যে জেলার প্রধান সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট ৩১ জন রোগী মারা যান। মৃতদের মধ্যে  ষোলটি শিশু এবং ১৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আশ্বাস দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। একজন ক্ষুব্ধ স্থানীয় সাংসদ  (এমপি) ভারপ্রাপ্ত ডিনকে হাসপাতালের টয়লেট পরিষ্কার করতে বাধ্য করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলেন। ঘটনাটি ডাক্তারদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং জটিল স্থানীয় পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। পরবর্তীকালে, তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন, ১৯৮৯–এর অধীনে ওই সাংসদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়।

কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ডিন বলেছেন যে, দূরদূরান্ত থেকে রোগীদের নিয়মিতভাবে
অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায় জেলা হাসপাতালে আনা হয়। যদি রোগীর সংখ্যা খুব বেশি বেড়ে যায়, তবে মৃত্যুর হারও বেড়ে যায়। চিকিৎসক ও হাসপাতালের অন্য কর্মচারীদের কোনও রকম দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় স্তরে সরকারি হাসপাতালে দিনে ১০ থেকে ২০ জন মারা যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। বেশিরভাগ শিশুই ছিল শূন্য থেকে চার দিন বয়সের অকালজাত শিশু, যাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ৫০ শতাংশ। হাসপাতালের শয্যা ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ওষুধ ও তহবিল সরবরাহ করা হয়। হাসপাতালে ৫০৮টি অনুমোদিত শয্যা রয়েছে, কিন্তু হাসপাতালে প্রায় ১,০৮০ জন রোগী ছিলেন, যার ফলে শয্যা, ওষুধ এবং অন্যান্য সহায়তা সামগ্রীর ঘাটতি তৈরি হয়।


কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ডিন বলেছেন যে, দূরদূরান্ত থেকে রোগীদের নিয়মিতভাবে অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায় জেলা হাসপাতালে আনা হয়।



হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে
স্বতঃপ্রণোদিত নোটিস জারি করে এবং রাজ্য সরকারকে হাসপাতালের জন্য বাজেটের বিধানের বিশদ সরবরাহ করতে বলে। ৬ অক্টোবর ২০২৩–এ একটি শুনানিতে অ্যাডভোকেট জেনারেল রাজ্য সরকারের দায়ের করা হলফনামার ভিত্তিতে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুকে একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। প্রথমত, বেশিরভাগ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় যখন তারা ইতিমধ্যেই গুরুতর অবস্থায় ছিল। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যাগত বোঝা ছিল বিশাল। তৃতীয়ত, রাজ্যের চিকিৎসা শিক্ষামন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে ডাক্তারের অভাব মৃত্যুর পিছনে অন্যতম কারণ। তিনি আরও যোগ করেছেন যে সঙ্কটটি পাঁচ দিনের সাপ্তাহিক ছুটির আগে ছিল, যার ফলে বেসরকারি হাসপাতালে কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য ঘাটতি হয়েছিল, এবং ফলস্বরূপ রোগীদের সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে হাসপাতালের কর্মীদের উপর  চরম অবহেলার দায় চাপানো যায় না। হাইকোর্ট ভিন্নমত পোষণ করে রাজ্য সরকারকে বলেছিল যে বহন–ক্ষমতার বাইরে অত্যধিক সংখ্যক রোগীর কারণে হাসপাতালটির উপর অতিরিক্ত বোঝা চেপেছিল, এ কথা বলে সরকার দায় এড়াতে পারে না। আরও বলা হয়, সরকারি এফিডেবিট থেকেই স্পষ্ট যে ‘‌আরও জনবলের’‌ প্রয়োজন আছে।

এই ট্র্যাজেডি, রাজ্য সরকারের অবস্থান এবং হাইকোর্টের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের আলোকে এই নিবন্ধটি পরিস্থিতির একটি পক্ষপাতহীন মূল্যায়নের প্রয়াস। শুরুতেই স্বীকার করা উচিত যে, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলি ভালভাবে দেখাশোনা করা হচ্ছে বলে মনে হয় না। অগস্ট মাসে মহারাষ্ট্রের থানে জেলার কালওয়াতে একটি সরকারি হাসপাতালে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল যেখানে ১৮ জন রোগী প্রাণ হারিয়েছিলেন। ২০২১ সালে ভোপালের একটি সরকারি হাসপাতাল আগুনে বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং চারটি ছোট শিশু মারা গিয়েছিল। একই বছরে, মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের সিভিল হাসপাতালেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, এবং কোভিড–১৯ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি ১১ জন রোগীর জীবনহানি ঘটে।
২০২১ সালের শুরুতে রাজ্যের ভান্ডারা জেলা হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট ১০টি শিশুর মৃত্যুর সাক্ষী ছিল। এগুলি নিছক কিছু দুঃখজনক ঘটনা যা সরকারি হাসপাতালে সম্প্রতি ঘটেছে।


অগস্ট মাসে মহারাষ্ট্রের থানে জেলার কালওয়াতে একটি সরকারি হাসপাতালে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল যেখানে ১৮ জন রোগী প্রাণ হারিয়েছিলেন। ২০২১ সালে ভোপালের একটি সরকারি হাসপাতাল আগুনে বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং চারটি ছোট শিশু মারা গিয়েছিল।


 
পরিকাঠামো সম্পর্কে একটি সত্য হল যে এটি নির্মাণ করা শুধুই সামগ্রিক কাজের একটি অংশ। জল সরবরাহ এবং রাস্তার মতো ভৌত পরিকাঠামো যেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গেসঙ্গে তৈরি করা এবং তারপর প্রসারিত করা প্রয়োজন, তেমনই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ অনুসারে হাসপাতালগুলিকে প্রসারিত করা এবং সজ্জিত করা প্রয়োজন। চিকিৎসা সুবিধার রক্ষণাবেক্ষণ হল অন্য একটি, এবং সম্ভবত আরও কঠিন একটি অংশ। প্রথমটি এককালীন বিনিয়োগ হলেও দ্বিতীয় অংশটি একটি চলমান প্রক্রিয়া৷ এর জন্য পরিকাঠামোর জীবনকাল জুড়ে বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ বরাদ্দ এবং জরুরি অবস্থা দেখা দিলে আকস্মিক বরাদ্দ প্রয়োজন। শুধুমাত্র হাসপাতালের কাঠামোরই নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না, হাসপাতালটি অবশ্যই মেডিক্যাল এবং প্যারামেডিক্যাল স্টাফ, সরঞ্জাম, বিছানা, অপারেশন থিয়েটার এবং অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা দিয়ে সজ্জিত হতে হবে। হাসপাতালগুলি অনেক বেশি সমালোচনার মুখে পড়ে, কারণ তারা মানুষের জীবন বাঁচায় এবং অসুস্থতা থেকে সুস্থতার দিকে নিয়ে যায়।

দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হাসপাতালগুলি আজ নিয়মিতভাবে
প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা রক্ষণাবেক্ষণ করে। যেহেতু হাসপাতালগুলি ২৪x৭ পরিষেবা প্রদান করে, রক্ষণাবেক্ষণের কাজগুলি বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং। এটি ভালভাবে নথিভুক্ত, এবং এর সঙ্গে ব্রেকডাউন পরিস্থিতি এড়াতে পরিদর্শন, সার্ভিসিং ও প্রতিস্থাপনের মতো পরিচ্ছন্নভাবে নির্ধারিত কার্যক্রম জড়িত। একটি  হাসপাতালে রক্ষণাবেক্ষণের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে বিল্ডিংয়ের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের অংশ নির্মাণ, প্লামিং, গরম করা ও বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা, এয়ার কন্ডিশনার, রেফ্রিজারেশন (এইচভিএসিআর) ও নিউমেটিক্স (সঙ্কুচিত গ্যাসে শক্তি), নিরাপত্তা, আলো এবং সমস্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণ।
 
এটা কোনও গোপন বিষয় নয় যে ভারতে সরকারি হাসপাতালগুলি রোগীর অতিরিক্ত সংখ্যার কারণে মারাত্মকভাবে চাপের মধ্যে রয়েছে। নানদেরের ক্ষেত্রে  স্থানীয় এনজিও–র
একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে সরকারি হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলি বিশাল সংখ্যক রোগী এবং খুব কম কর্মীর জোড়া সমস্যা দ্বারা বিপর্যস্ত হয়। আরও দেখা গিয়েছে যে সরঞ্জামের ঘাটতি নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে  (এনআইসিইউ) একাধিক শিশুকে একই ক্রেডলে রাখতে বাধ্য করে। দুর্ভাগ্যবশত, নানদের হাসপাতালের দুর্দশা কোনও বিচ্ছিন্ন পরিস্থিতি নয়। এটি দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের পরিস্থিতিকেই প্রতিফলিত করে।


এডিবি সমীক্ষা আরও ইঙ্গিত করেছে যে গ্রামীণ ও শহুরে নাগরিকদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করানোর মতো রোগীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

এই বিষয়টি সুপরিচিত যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যথেষ্ট বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতে জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় এখনও কম। যেহেতু স্বাস্থ্য রাজ্য তালিকাভুক্ত একটি বিষয়, প্রাথমিকভাবে রাজ্য সরকারগুলির উপর তাদের জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ভার পড়ে। ২০২২ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি) পরিচালিত একটি মূল্যায়নে দেখা গিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রটি আন্তঃজেলা বৈষম্যের কারণে জর্জরিত। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সংখ্যার ঘাটতি আছে, এবং সীমিত পরিসরের বিশেষজ্ঞ, অতিরিক্ত ভিড় ও পরিষেবার নিম্নমানের কারণে স্পষ্ট প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সমাধানটি স্পষ্টতই রয়েছে রাজ্যগুলির স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রকে অধিকতর অগ্রাধিকার দেওয়া এবং বিদ্যমান হাসপাতালগুলিতে আরও ক্ষমতা তৈরি করা বা আরও নতুন হাসপাতাল নির্মাণের মধ্যে।

এডিবি সমীক্ষা আরও ইঙ্গিত করেছে যে গ্রামীণ ও শহুরে নাগরিকদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করানোর মতো রোগীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রসারিত হয়েছে, এবং যে সচ্ছল নাগরিকেরা ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন তাঁরা সরকারি ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে বেসরকারি হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। দরিদ্রদের অবশ্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবহার করা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, সরকারগুলি যেহেতু দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে আসছে দারিদ্র্য দূর করা তাদের প্রাথমিক কাজ, তাই দরিদ্রদের প্রভাবিত করে এমন একটি প্রাথমিক ক্ষেত্রকে অবহেলা করা তাদের সাজে না। দুর্বল স্বাস্থ্যের পুরুষ ও মহিলারা স্পষ্টতই উৎপাদনশীল নাগরিক হতে পারেন না। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান সহজতর হবে, যদি রাষ্ট্রীয় সম্পদ অবাধ বিতরণের পরিবর্তে বিবেচনার সঙ্গে স্বাস্থ্যের মতো অতি–গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয়।

উপরন্তু, যেমনটি
পূর্বে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, জনস্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলিকে ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন ফর হসপিটালস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোভাইডারস (এনএবিএইচ)–এর অধীনে আনা উচিত। এটি ভারতের কোয়ালিটি কাউন্সিলের একটি সাংবিধানিক বোর্ড, যা অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতায় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলির জন্য অ্যাক্রেডিটেশন প্রোগ্রাম স্থাপন ও পরিচালনা করার জন্য গঠিত। এটি স্বীয় ও বাহ্যিক মূল্যায়নের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীর নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবার গুণমানের দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে আনবে।



রমানাথ ঝা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন ডিস্টিংগুইশড ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.